গল্পের নাম - " মনের গরীব। "|| 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা ❤️


আজকে আমি হাজির হয়েছি একটি গল্প নিয়ে। গল্প লিখতে ভালা লাগোটা আমার বহুদিন এর। কেও যদি জিজ্ঞেস করে তোমার গল্প লিখার কারণ কি? তাহলে আমার একটাই উত্তর আসবে তা হলো জানিনা।
তাহলে আজকের গল্পটা শুরু করা যাক।


গল্পের নামঃ- মনের গরীব


মনের গরীব


IMG_20211104_225301.jpg


একটা ছেলে, নাম তার সোহেল। সে ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে ভাত খাচ্ছে। প্লেটে দিকে তাকালে তরকারির জায়গায় আলু ভর্তা আর ডাল ছাড়া কোনোদিন ই কিছু দেখা যায়না। কারণ টা সবার অজানা না।গরীব ঘরের ছেলে মাছ, মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তাই নেই। এই গরীব হওয়ার লজ্জাটার জন্য সে কখনোই বন্ধুদের সাথে একসাথে বসে খবার খায় না কারণ অনেকেই অনেক কিছু খায় কিন্তু সে তো প্রতিদিন সেই আলু ভর্তা আর ডাল ই খাবে। নতুন কিছুই তার প্লেটে সে কল্পনা করতে পারেনা।
যথারীতি সোহেল ভাত খেয়ে রুমে এসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। সোহেল আর তিনজন বন্ধু একটি মেস ভাড়া করে ভার্সিটির পাশেই থাকে। খুবই জীর্ণশীর্ণ একটি ঘর। অল্প টাকায় এইটা পাওয়া গেছে তা ই অনেক।হঠাৎ সোহেলের রুমে হম্বিতম্বি হয়ে বাড়িটার দারোয়ান চাচা ঢুকলো।
ঢুকেই হাওমাও করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,

" বাবা সোহেল। আমার মেয়েটা হাসপাতালে। একটু আগেই এক্সিডেন্ট করছে,আমারে তুমি কিছু সাহায্য করো। কেও টাকা দিতাসে না।"
সোহেল পাশ ফিরে মানিব্যাগটা খুলে দেখে দুইটা একশ টাকার নোট, একটা পাঁচশো টাকার নোট আর কয়েকটা ভাংতি টাকা পয়সা মাত্র।কিন্তু কথা হচ্ছে এই টাকা গুলাই এই মাসের শেষ সম্বল। তার উপর আজকে মাসের মাত্র দশ তারিখ। তাও সে দারোয়ান চাচাতে পাঁচশো টাকার নোট টা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
" চাচা মাফ করবেন। আর নেই, থাকলে অবশ্যই দিতাম।"

দারোয়ান চাচা দ্রুত ই রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। এর পর পর ই রুমে ঢুকলো সোহেলের রুম মেট মাসুদ। ভালোই টাকা পয়সা তার। সে এসে সোহেলকে বলতে লাগলো,

"কিরে সোহেল!তোর মাথায় কি কোনো সমস্যা আছে?মানুষ মানুষকে পাঁচশো টাকা দেয়?এইযে দেখ আমার ব্যাগ এ তিন হাজার টাকা আছে। একটাকাও দি নাই। তার মেয়ের এক্সিডেন্ট হইলে আমাদের কি?
তুই কেনো এতো গুলা টাকা দিতে গেলি?"

সোহেল মুচকি হেসে বললো আরে বাদ দে।

এরপর সোহেল উঠে হাত মুখ ধুঁয়ে পড়াতে গেলো। সে প্রায় আশি টাকার ভাড়া বাঁচিয়ে এরপর টিউশনিটা করায়। সে প্রকান্ড বড় লোক বাড়ির এক ছেলেকে পড়ায়। বাড়িটা এতোই বিশাল যে সে বাড়িটাতে ঢুকলেই তার কেমন একটা সংকোচ লাগে কারণ তার পরণের কাপড়,তার চলনের সাথে এই এই বাড়ি একেবারেই যায়না। ভুল বললাম!
বাড়িটার সাথে সে যায়না।
সোহেল ঢুকে রুমে বসে বুয়া কে আস্তে করে বললো ইমন কে ডেকে দিতে। ইমন তার ছাত্র।
আজকে বেশ গরম পরেছে, তাই জন্য বুয়া থেকে এক গ্লাস পানি চাইলো।
বুয়া ভেতরে চলে গেলো। ইমন ও আসছে না তাই সোহেল ভাবলো একটু বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসলে ভালো লাগবে। তাই সে রুম থেকে বের করে বাথরুমে ঢুকার সময় ই শুনতে পেলো ইমনের মা এর কথা।
ইমনের বুয়া কে বলছে,

"গরীব তো যা দেখে তাই চায়। মাস্টারের ঘরে কি ফ্রিজ আছে?কিন্তু এই বাড়িতে ঢুকলেই তার ঠান্ডা পানি খাওয়া বেরে যায়। এসব গরীব গুলোর এসব ছোটলোকি কাজ একদম ভালো লাগে না।"

এটা শুনেই সোহেল চোখটা মাটির দিকে নামিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো।টেপের পানিতে শরীরের গরম লাগার সাথে সাথে চোখের পানি টাও ধুঁয়ে নিলো। কারণ সে জানে তার কাঁদতে নেই।
বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলো টেবিলে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি। সে পানির গ্লাসটা হাত দিয়ে ধরে গ্লাসের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো এবং মনে মনে ভাবতে লাগলো এই এক গ্লাস পানির জন্যই এতো কথা!
এরপর সে ওই পানি আর মুখে দেয়নি, দিতে পারেনি। এরপর ইমন আসলো। ইমন এসেই সোহেলের সামনে বসে বলে উঠলো,
"স্যার এই শার্ট আর কয়দিন পড়বেন আপনি?"

প্রশ্নটা শুনেই সোহেলের মুখটা লজ্জায় এতুটুকু হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,

"আসলে বুয়া আসেনি তো তাই কাপড় ধোঁয়া হয়নি। "

এটা বলেই ঝটপট বই বের করলো। এরপর পড়ানো শুরু করে দিলো। সোহেল খুব বেশি ভালো পড়ায়। প্রায় তিন ঘন্টা পড়ালো। এরপর বলবো বেতন টা নিয়ে আসতে। এই বেতন এর একটাকাও সে নেয় না। পুরো তিন হাজার ই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় মা বোনের কাছে।
ইমন গিয়ে মাকে বলবো। একটু পরেই ইমন এর মা রুমে ঢুকে টাকা গুলো এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
" দেখো সোহেল। আমি এখানে ৪০০ টাকা কম দিলাম।মাসে তুমি দুই দিন আসো নাই। তুমি মাসে পনেরো দিন পড়াও। আর দুই দিনের বেতন হচ্ছে ৪০০ টাকা। সেই জন্য ৪০০ টাকা কেটে রাখলাম।এই নাও টাকা। "
এটা বলেই ইমন এর মা চলে গেলো রুম থেকে।সোহেল টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। ওই ৪০০ টাকায় তার মা এর ওষুধ খরচ হতো।

ইমন স্যার এর মুখ থেকে বলে উঠলো,
" আরে স্যার এতো চিন্তা করেন কেনো। ৪০০ টাকা তো আমি প্রতিদিন রেস্টুরেন্ট এর বিল ও দি। "

এইটা শুনেই সোহেল শুধু মনে মনে ভাবলো,
এ কেমন পৃথিবী আমাদের!
আসলে আমি গরীব নাকি ওরা?
আসলে আমি তো শুধু টাকা পয়সা দিয়ে গরীব। আর তারা তো একেবারে মনের দিক থেকেই গরীব।
এটা ভেবেই সোহেল বিদায় নিয়ে ওইদিনের মতো চলে আসলো।


সকলকে জানাই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।আমি কোনো ভুল করলে মার্জনা করবেন, ভুল ধরিয়ে দিবেন।
নিজেদের মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমার পাশে থাকবেন।

ধন্যবাদান্তে, @sahadathossen


Sort:  
 3 years ago 

আপনার লেখা প্রত্যেকটি গল্প আমার খুবই ভালো লাগে।তাই একদমে পড়ে ফেললাম।সমাজের কিছু বড়লোক এইরকম নিচু মনমানসিকতা সম্পন্ন।ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57431.51
ETH 3085.99
USDT 1.00
SBD 2.35