হঠাৎ মৃত্যু, পর্ব - ২(শেষ)|| 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা ❤️


IMG_20220109_114713.jpg


আজকে আমি হাজির হয়েছি একটি লিখা নিয়ে। লিখতে ভালা লাগোটা আমার বহুদিন এর। কেও যদি জিজ্ঞেস করে তোমার লিখার কারণ কি? তাহলে আমার একটাই উত্তর আসবে তা হলো জানিনা।
তাহলে আজকের লিখাটা শুরু করি।গতকাল এই গল্পটির ১ম পর্ব দিয়েছিলাম,আজ দ্বিতীয় পর্ব। আজকের লিখার বিষয় হলো "হঠাৎ মৃত্যু "।


হঠাৎ মৃত্যু


অফিসে ঢুকেই শুনলেন অফিসের বস রিটায়ার্ড এ চলে গেছেন মানে রফিক সাহেবের বন্ধু।
এখন তো রফিক সাহেব বিপদে পরে গেলেন কারণ চাকরিটা বন্ধুই দিয়েছিলেন।
হিসেব মতে,
রফিক সাহেবের এখন চাকরি করার বয়স কোনোভাবেই নেই।
তাও বন্ধুর হাতে পায়ে ধরে চাকরিটা নিয়েছিলেন।

ধীরে ধীরে ঢুকলেন অফিসে,বুকটা দুপদুপ করে কাঁপছে,এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলোনা,বন্ধুটাও কিছুই বললোনা।
যদি এই অবস্থায় চাকরি থেকে বের করে দেয় তাহলে তো না খেয়ে মরতে হবে।সারাজীবন এতো বোঝা টানতে টানতে কোনো সঞ্চয় বলতে একটা বাড়ি আর ব্যাংক এ অল্প কিছু পয়সা কড়ি আছে।যদি হিসাব করতে বসা হয় তাহলে সে পয়সা কড়িতে হয়তো এক বছর ও চলবেনা তাদের।
এমন অবস্থায় কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই স্যার এর রুমে ঢুকলেন।

বস এর রুমে ঢুকতে একটু বিরক্তই লাগছিলো কারণ নিজের মেয়ের বয়সী এক ছেলেকে বস ডাকতে হওয়াটাও যথেষ্ট অপমানজনক।

রফিক সাহেব আসবো বলতেই ভেতর থেকে ভারী কণ্ঠে বলে উঠলেন আসেন,ভেতরে আসেন।

রফিক সাহেব কাঁচুমাচু করে ঢুকলেন, ঢুকতেই বন্ধুর ছেলে বলে উঠলেন রফিক সাহেব শুনলাম আপনার নাকি রিটায়ার্ড এর বয়স অনেক আগেই চলে গেছে তাও আপনি চাকরি করছেন!

রফিক সাহেব এবার কি বলবেন ভেবে পেলেন না!
কারণ
কথা তো সত্যি এবং অফিসে এমন কোনো কর্মচারী নাই যে রিটায়ার্ড করার পর ও চাকরি করছে।
এবং
তিনি অন্যদের তুলনায় কাজ ও কম করেন।
তাই কাঁচু মাচু হয়ে বললেন আসলে স্যার আমার সংসারে অনেক সমস্যা,পাঁচটা মেয়ে বাসায় সেই সাথে মেয়ের বাচ্চারাও।
খুব বিপদে পরে আপনার আব্বাকে চাকরির কথা বলেছিলাম।আপনার আব্বা আমার খুব ভালো বন্ধু তাই চাকরিটা দিলেন।

এইবার বস বললেন -
আচ্ছা বুঝলাম,
আসলে রফিক সাহেব আবেগ দিয়ে তো কাজ চলেনা।
আপনার জায়গায় আমি অন্য কাওকে নিলে আমার অনেক কাজ আগাবে।তাও যখন আব্বা রেখেছে তাহলে থাকুন তবে এই কাজ দিয়ে তো সম্ভব নয়।
আজ থেকে কাজের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
এই ফাইল গুলো নিয়ে যান,রি চেক করে আমাকে দিবেন।
সব ভুলে ভরা,কাজ না করেই মাইনে নিতে নিতে এই হাল।

রফিক সাহেব মাথা নত করে বেরিয়ে এলেন।
তার সারাজীবনে তাকে এইভাবে অপমান হয় হয়নি।
মনে পরে ছোট বেলায় এই ছেলেই কত আদুরে স্বরে আংকেল ডাকতো!
আর এখন নাম ধরে ডাকছে,
জীভে আটকাচ্ছেওনা!

আস্তে আস্তে করে রফিক সাহেব তার চেয়ারে গিয়ে বসলেন।আজকের মধ্যেই ফাইলের সব ভুল ঠিক করতে হবে।
মনে মনে ভাবলেন ঠিক ই তো, এই বয়সে কে আর চাকরি দিতো!টাকার তুলনায় কাজ ও করি কম।

কাজ শেষ করতে করতে প্রায় রাতের আটটা বাজলো।
মাঝে দুপুরের দিকে একবার বড় মেয়ের ছোট মেয়েটা ফোন দিলো।ফোন দিয়ে বললো নানাভাই আইস্ক্রিম খাব।
রফিক সাহেবের ও খারাপ লাগলো কারণ রফিক সাহেব সবসময় এমন ঝাড়ি দেন যে কারণে বাচ্চাগুলো সেভাবে কাছে আসেনা।আজ ও আইসক্রিম এর কথা বলেছে কাঁপা কাঁপা গলায়।
আসলে অভাবটা এমন ভাবে ধরেছে যে আর কোনোদিকে মন ও দিতে পারেনা।

কাজ শেষ করে টেবিলে গুছিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবলো ছোট মেয়েটার জন্যে একটা বিরিয়ানির প্যাকেট নিবে।
পাঁচ নাম্বার মেয়ে হওয়াতে বিরক্তির কারণে মেয়েটার শখ আহ্লাদ কোনোদিনো পূরণ হয়নি।
মেয়েটা সামনেও সেভাবে আসে না।

সেসব ভাবতে ভাবতেই রাস্তা পার হওয়ার সময় সামনে থেকে আসা বাস মেরে দিয়ে চলে গেলো রফিক সাহেবকে!!
নিমিষেই থমকে গেলো -
আইসক্রিম আনার তাড়া,
বিরিয়ানীর প্যাকেট আনার তাড়া,
বাড়ি ফেরার তাড়া,
৯ সদস্যের সংসারের বোঝা বহনের তাড়া!

হঠাৎ মৃত্যুতে শেষ হয়ে গেলো সব কিছু।
কিছু কিছু হঠাৎ মৃত্যু এমন ই হয়.........

সকলকে জানাই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।
নিজেদের মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমার পাশে থাকবেন।

Sort:  
 3 years ago 

সবচেয়ে সুনিশ্চিত বিষয় হলো মৃত্যু,,আর সবচেয়ে অনিশ্চিত বিষয় হলো মৃত্যুর সময় কি অদ্ভুত।আসলে হটাৎ মৃত্যুর খবর শুনলে মন টাও অনেক খারাপ হয়ে যায়।আর আপনার লেখা টা আজকে এই হটাৎ মৃত্যু নিয়েই দারুন লিখেছেন ভাই।

চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

গল্পটি এত দ্রুত শেষ হবে আমি কখনো আশা করছিলাম না। সত্যি কথা বলতে কি অফিসে কাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া আর দেওয়া উচিত। তবে রফিক সাহেব আমাদের বাস্তব সমাজের প্রতিচ্ছবি ।তার মত অনেক পরিবারই অনেক সদস্য বোঝা বইতে হয়। পরিবারের যখন একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি থাকে এবং সেই শুধুমাত্র রোজগার করে তখন তার পক্ষের কঠিন হয়ে পড়ে পরিবার চালানো। যে বয়সে তার সুখ পাওয়ার কথা ছিল যে বয়সে নাতি নাতনির সাথে ঘরে বসে আড্ডা দেওয়ার কথা ছিল এই বয়সেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন বিষয়টা আমার খুব খারাপ লেগেছে। তাছাড়া তাড়াহুড়া করতে গিয়ে তার মৃত্যুর আমি মেনে নিতে পারিনি । খুব খারাপ লাগছে
রফিক সাহেবের এভাবে মৃত্যু এবং তার পরিবারের কথা ভেবে ।আপনি সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আমার খুব ভালো লেগেছেন।

আমাদের চারপাশে এমন অনেক নাম না জানা রফিক সাহেবকে দেখেই এই গল্পটা মাথায় আসলো আমার।ধন্যবাদ এতো সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 57941.45
ETH 2579.63
USDT 1.00
SBD 2.39