গল্পের নাম - বৃষ্টির ফোঁটা। (নিজের লিখা) || 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা ❤️


IMG_20211018_214428.jpg


এই ছবিটা কুমিল্লা যেতে যেতেই তুলা। গাড়িতে বসতে বসতে হাঁফফাঁস লাগছিলো।তার উপর বাইরে ধুলা তাই গাড়ির কাঁচ ও নামানো যাচ্ছিলোনা। কিন্তু হঠাৎ এক পসলা বৃষ্টি আসতেই চারিদিকে কেমন যেনো একটা প্রশান্তির ছায়া নেমে এলো। চোখ বন্ধ করে গাড়ির জানালার কাঁচে বৃষ্টির ফোটা পরার শব্দ শুনছিলাম। তখন হঠাৎ কি করে যেনো মাথায় একটা গল্প আসলো। ভাবলাম লিখেই ফেলি,


বৃষ্টির ফোঁটা


আকমল সাহেব এখন অনেক বড় সাহেব। তবে এই নামের ঠিক পাশটায় সাহেব শব্দটা বসাতে তার বেশ খাটুনি হয়েছে। আকমল সাহেবের ছোট বেলা খুব একটা সুখকর কাটেনি বললেই চলে। খুব একটা বললেও বোধহয় ভুল হবে।তার ছোট বেলায় সুখের কোনো আনা গোণা ছিলো না বললেই একদম সঠিক বলা চলে।
আকমল সাহেবের আজ এসব কথা হঠাৎ মনে পরতোনা। আজ মনে পরলো এক কারণে,
আকমল সাহেব তার ছোট পরির মতো মেয়েকে নিয়ে বেরিয়েছেন পার্কে যাবে বলে।শুক্রবারের ঝকঝকে আকাশের বিকেল, রোদ একদম নেই বললেই চলে, চারপাশটাও একদম ঠান্ডা। প্রতি শুক্রবারেই আকমল সাহেবের মেয়ে রিনার বায়না থাকে পার্কে যাবার।রিনা আর রিনার বাবা গাড়িতেই ছিলো, গাড়িও চলছিলো যথারীতি পার্কের উদ্দেশ্যে। রাস্তা মোটামোটি ফাঁকাই বলা চলে। তবে ড্রাইভারের মা ফোন দিয়েছে। আকমল সাহেবের আবার মন বেশ ভালো। তাই তিনি বললেন গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে কথা বলে আসতে।আর এই বলে আকমল সাহেব বাইরের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।হঠাৎ রাস্তার ওপারে দেখলেন এক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট ছেলে, ছোট বলতে বয়স প্রায় তেরো কি চৌদ্দর কাছাকাছি। শীতে কাঁপছে ছেলেটা। পরণে ছেড়া হাফ প্যান্ট আর গায়ে কিছুই নেই।হঠাৎ ছেলেটার পাশ দিয়ে এক ভদ্রলোক হেঁটে যাচ্ছিলো আর ফোন বের করতে গিয়ে ভদ্রলোকের মানিব্যাগটা পরে গেলো।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভিতরে অনেক টাকা। ওই ছেলেটা তাড়াতারি মানিব্যাগটা দিলো লোকটাকে ডেকে। কিন্তু লোকটা খুব বিরক্তিভরা মুখ নিয়ে দুই আঙ্গুলে মানিব্যাগটা ধরে টিস্যু দিয়ে মুছতে লাগলো। আর ছেলেটাকে ধমকাতে লাগলো এই বলে যে,
" ডাক দিলেই তো পারতিছ। তোর হাতের সব কালি তো এখন আমার মানিব্যাগ এ লাগিয়ে দিলি। জানিস এই মানিব্যাগ এর দাম কতো।ফকিরের বাচ্চা তো এসব বুঝবি কি করে। দেখলেই হাত দিতে হবে। যত্তসব! "
এই বলে হনহন করে হাঁটা দিলো।ছেলেটা ভেবেছিলো হয়তো ভদ্রলোক খুশি হয়ে তাকে কিছু টাকা দিবে।কিন্তু হলো তার উল্টো টাই!
ছেলেটা উদাসীন হয়ে তাকিয়ে রইলো অন্যদিকে।
আকমল সাহেবের এবার ভেসে উঠলো তার ছেলেবেলা,

আকমল সাহেব গাড়ি পরিষ্কারের কাজ করতো এক বাড়িতে। বেশ বুদ্ধিমান ছিলেন আকমল সাহেব।এই বই,ওই বই পড়তে পড়তে ইংরেজি পর্যন্ত পড়তে পারতো এমন ছিলো। তো আকমল সাহেব যার গাড়ি পরিষ্কার করতো সেই লোকটা ছিলো অনেক বেশি খারাপ লোক। লোকটার দুই মেয়ে, দুই মেয়েই দেশের বাইরে থাকে। আর বউ মারা গেছে বহু বছর আগে।এখন একাই থাকতো, সাথে থাকতো আকমল সাহেব। তো ওই লোকের এলাহী ব্যাপার স্যাপার ধরণের টাকা পয়সা। কিন্তু আকমল সাহেবকে খেতে দিতো নষ্ট,বাসি খাবার দাবার। বেতন ও ঠিক মতো দিতোনা। এখনকার আকমল সাহেব তো আর তখন আকমল সাহেব ছিলোনা। তখন ছিলো শুধুই আকমল। ওই লোক প্রায় ই আকমল সাহেবকে মারধর করতো, খেতে দিতো না একটু কাজ ভুল হলেই।
একদিন আকমল সাহেবকে অনেক মারধর করছিলো ওই লোক। আকমল সাহেব প্রায় মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো,পা ধরে মাফ চাচ্ছিলো।সেদিন ভুল ছিলো শুধু গাড়ির ভেতরটা পরিষ্কার করতে ভুলে গেছিলো তাই। হঠাৎ আকমল সাহেব হাতের পাশে একটা বড় পাথরের টুকরো পেলো, শো পিস ছিলো তা। তা দিয়েই আকমল সাহেব উঠে ওই লোকের মাথায় জোরে বারি মারে। আর লোকটা ওখানেই পরে যায় ধপ করে, গড়িয়ে যেতে লাগলো লাল টকটকে রক্ত।
আকমল সাহেব আর তাকায়নি ওই লোকের দিকে।
লোকটির আলমারি,ড্রয়ার সব হাতিয়ে অনেক লাখ টাকা বের করলো।সেই সাথে লোকটির স্ত্রীর সব গয়না।গয়না কম হলেও ত্রিশ থেকে চল্লিশ ভরি হবে। সব নিয়ে আকমল সাহেব অন্য জেলায় চলে যায় সেই রাতেই। সে আর সেই শহরে ফিরে যায়নি।
এরপর আকমল সাহেব পড়াশোনা, নিজের ছোট ব্যবসা শুরু করে। সেই তখন থেকেই কষ্ট করতে করতে আকমল সাহেব আজ এই পর্যায়ে। ওই খুনের আগে বা পরে আকমল সাহেব আজ পর্যন্ত আর কোনো খারাপ কাজ করেননি। আজকে আকমল সাহেব সফল একজন ব্যবসায়ী।

আকমল সাহেব আজকে ছেলেটাকে দেখে এসব ভাবছে। কারণ আকমল সাহেবের সেদিনের ওই জঘণ্য অপরাধের কারণ হচ্ছে ওই বড়লোক লোকটাই। যার কারণে আকমল সাহেব ওই খারাপ কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলো।
আর আজকের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিও পথে হেঁটে যাওয়া লোকটির সাহায্যই করতে চেয়েছিলো।কিন্তু তার বদলে পেলো তিরষ্কার।
আকমল সাহেব ভাবতে লাগলো,
সব মানুষ আসলে নিজ থেকে খারাপ হয়না, পরিস্থিতি তাকে খারাপ বানায়। মানুষটার চারপাশটা তাকে খারাপ বানায়, মানুষ মাঝেমধ্যে বাধ্য হয় খারাপ হতে।

এসব ভাবতে ভাবতেই ড্রাইভার পার্কের সামনে গাড়ি থামালো।আর আকমল সাহেব মেয়ে রিনাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।


গল্প থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা


কোনো অসহায় ভালো মানুষকে এতোটাও নির্যাতন করা উচিত নয়। যাতে সে একসময় খারাপ মানুষ হতে বাধ্য হয়।
মানুষকে ভালোবাসতে হয়,সুন্দর ভাষায় বোঝাতে হয়।


আমি শাহাদাত হোসেন। আমি একজন বাঙ্গালী এবং নিজেকে এভাবে পরিচয় দিতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছি। আমার শখ ঘুরাঘুরি করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ভ্রমণ,মুভি দেখা, খাওয়া দাওয়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট এসব ই। আমি নিজেকে সবসময় স্বচ্ছ ভাবে সবার সামনে তুলে ধরতেই পছন্দ করি। এবং কোনো ভুল করলে ক্ষমা চাইতে কখনোই দ্বিধাবোধ করিনা। আমি চাই নতুনের সাথে পরিচিত হবো,শিখবো,একসাথে চলবো। আশা করি আপনাদের ভালো কিছু উপহার দিবো।

ধন্যবাদান্তে, @sahadathossen


Sort:  

কোনো অসহায় ভালো মানুষকে এতোটাও নির্যাতন করা উচিত নয়। যাতে সে একসময় খারাপ মানুষ হতে বাধ্য হয়।
মানুষকে ভালোবাসতে হয়,সুন্দর ভাষায় বোঝাতে হয়।

ভাইয়া এই কথাটা ঠিক বলেছেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের কার্যকলাপ দেখে তাদের আচরণের দিকে তাকিয়ে, নিজের আচরণ টা ওই রকম করতে হয়।

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 63768.57
ETH 2478.16
USDT 1.00
SBD 2.54