গল্পের নাম আত্মবিশ্বাস। গল্পটা আত্মবিশ্বাসের।|| 10% Beneficiaries @shy-fox ||


প্রথমেই সবাইকে জানাই সালাম,আদাব। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আশা করছি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকলেই ভালো এবং সুস্থ আছি।


❤️ সবার জন্য অবিরাম ভালোবাসা♥


আমি আজকে একটি গল্প লিখছি আপনাদের উদ্দেশ্যে। গল্পটা সম্পূর্ণই আমার নিজের লিখা এবং গল্পটা এর আগে কোথাও লিখিনি এবং দিই নি। আশা করি গল্পটি সবার ভালো লাগবে। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক,



আত্মবিশ্বাস!



IMG_20211031_231627.jpg

কভারটি তৈরি করেছি
কেনভা এবং স্নেপসিড এপস দিয়ে।


রুবেল আর হিমেল দুই ভাই। রুবেল বড় ভাই আর হিমেল রুবেলের পাঁচ মিনিটের বড় ছোট।রুবেল, হিমেল মালিবাগের বড়সড় ফ্ল্যাটে থাকে বাবা, মা এর সাথেই। বাবা জেলার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী।অভাব বলতে কিছুই কোনোদিন টের পায়নি রুবেল, হিমেল।কথার কথা যেমন বলে, " সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মিয়েছে "।রুবেল,হিমেলের ব্যাপারটিও ঠিক তেমন ই। বাবা, মা আর দুই ভাই এর সুখের সংসার বলা চলে। তবে সুখের সংসার এও কোথাও যেনো একটা অসুখ রয়ে গেছে!
অসুখটা বেশ স্বাভাবিক এ সমাজের চোখে। তবে অনেকটা স্বাভাবিক বলা ও যায় না।
রুবেল পড়ে কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে আর হিমেল ও পরে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষেই। রুবেলের পড়াশোনার বিষয় কলা আর হিমেলের পড়াশোনার বিষয় বিজ্ঞান।
এখন কি ভাবছেন?
এতো বড় লোকের বড় ছেলের তো বিজ্ঞান নিয়েই পড়ার কথা। তাইনা?
হ্যা, সমাজের বর্তমান চিত্র কল্পনা করে আপনি ঠিক ভাবছেন তবে সমাজ এর নোংরা চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে বিবেক দিয়ে ভাবলে ব্যাপারটা একদম ই স্বাভাবিক।
তবে যেহেতু সমাজের চোখে অস্বাভাবিক সেহেতু আমাদের চোখেও অস্বাভাবিক ই ধরি কারণ আমাদের বিবেক অনেকটা ঘুণে ধরা আজকাল।
কাহিনীটা এই নিয়েই,
রুবেল খুব ভালো স্টুডেন্ট।মাধ্যমিক বেশ ভালো ভাবেই পার করেছে।আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে সে বোর্ড টপার আর হিমেল কোনো রকমের টেনে টুনে ভালো করে। মাধ্যমিকেও এক বিষয়ে অল্পের জন্য ফেইল করেনি।
তবে রুবেল কোনো কালেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়নি। না চাওয়াটা একেবারেই কারণ ছাড়া। সকলেরই একটি মনের ইচ্ছা থাকে, ঠিক তেমনটা রুবেলের ও। আর হিমেলের পছন্দ বিজ্ঞান। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় সমস্যার সৃষ্টি হলো
যেহেতু হিমেলের নাম্বার খুবই কম সেহেতু কলেজ হিমেলকে বিজ্ঞান বিষয় দিতে নারাজ তবে যেহেতু তার বাবা অনেক প্রভাবশালী আর বড় ব্যবসায়ী যেহেতু কলেজ ফান্ডে ডোনেশন দেওয়াতে এই কাজ একেবারেই সহজ হয়ে গিয়েছে। আর ওইদিকে রুবেল নিজের ইচ্ছা মতোই কলায় ভর্তি হয়েছে।
সমস্যাটা শুরু হয় এখান থেকেই,
হিমেল রেজাল্ট খারাপ করা সত্ত্বেও বাবা - মা এর তাকে নিয়ে সমস্যা নেই। কারণ সে এখন বিজ্ঞান নিয়ে পরছে। আর ওইদিন যত সমস্যা বাবা মা এর তা হলো রুবেলকে নিয়ে।
রুবেল, হিমেলের বাবা মিস্টার আলফাজের বিশাল ব্যবসা, বিশাল বিশাল নামী দামী লোকের সাথে প্রতিদিন উঠা বসা।সেহেতু হিমেলের বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার কথা খুব গর্ব করেই বলে। কিন্তু রুবেলকে আজকাল বাবা মা এর দুজন এর ই কেমন যেনো বিরক্ত লাগে কারণ রুবেল কলা নিয়ে পড়ছে এটা বলতেই যেনো সবার অনেক বেশি সংকোচ। আমাদের সমাজের অবশ্য একটা খুব ভালো নিয়ম আছে। নিয়মটা হলো যারা কলা নিয়ে পরে ওরা হলো নিচের স্ট্যাটাস এর লোক,পড়ালেখা কম জানে এমনটাই।
এসবের কারণেই রুবেলের বাবা মা এর ভালোবাসায় ও যেনো ধুম করে ভাটা পরলো! আজকাল কোনো বড় অনুষ্ঠানে বাবা, মা রুবেলকে আর নিতে চায়না তবে হিমেল যেতে না চাইলেও জোর করে নেয়।
রুবেল মনে মনে এসব নিয়ে খুব কষ্ট পায়। সে ভাবে আমার বিষয় যদি এতোই নিম্ন মানের হতো তাহলে এই বিষয় রাখলো কেনো!!
রুবেলের বাবা, মা রুবেল একটু ভুল করলেই বলতে থাকে, " পড়িস তো ওই ফকিরের বাচ্চারা পড়ে ওই বিষয় নিয়ে। তুই আর কি ঠিক কাজ করবি"।
এই ব্যবহার এ রুবেল কখনোই অভ্যস্ত ছিলোনা ।
কিছু হলেই কথা শোনাতে থাকে বাবা মা। মাঝেমধ্যে বলে, " তোর মতো ছেলে কেনো আমাদের হলো!তোকে নিয়ে কোথাও যাওয়া পর্যন্ত যায়না। বড় ছেলে কি নিয়ে পড়ে বললে আমার মাথাটা হেট হয়ে যায়। তুই মরিস না কেনো। "
আসলে রুবেলের বাবা মা এর কাছে তার চেয়ে সমাজের লোকের মুখে বাহ বাহ পাওয়া বা বড়লোক সেজে থাকাটাই মূল বিষয়। রুবেলের মনের অবস্থা তাদের কাছে কিছুই না।
তবে রুবেল সবটাই নিরবে সহ্য করে। আজকাল তো বাবা মা রুবেলের সাথে খুব দরকার ছাড়া কথাই বলে না। রুবেলের কোনো টিচার কে পর্যন্ত চিনে না।অন্যদিকে হিমেল কোন বিষয় কার কাছে পড়ে সবটা তার বাবা মা এর ঠোঁটের আগায়। মাঝেমধ্যে দেখা যায় হিমেলের জন্য মোটা অংকের ডোনেশন দিচ্ছে বাবা। ওইযে পাশ করানোর জন্য!
আর এইদিকে রুবেলের বাবা মা রুবেলকে অপমান করতেই থাকে,ছোট করতেই থাকে এটা ওটা নিয়ে।
তাও রুবেলের আত্মবিশ্বাস ছিলো সে জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারবে একদিন তাই সে সব নিরবেই সহ্য করতে থাকে। এভাবে করতে করতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে। প্রথম দিন রুবেল পরীক্ষার হলে গিয়েছে একাই আর হিমেলের সাথে বাবা মা দুইজন ই।এভাবে একদিন পরীক্ষাও শেষ হয়ে যায়। এরপর রেজাল্ট এর পালা।
রেজাল্ট এ দেখা যায় রুবেল আবার ও বোর্ড এ টপ করেছে আর হিমেল মোটামোটি পাশ। তাও তার বাবা-মা রুবেলকে কথা শুনিয়ে বলে, " ওসব বাংলা টাংলা সবাই পারে। "
সেদিন ও রুবেল কিছুই বলেনি। এভাবে করতে করতে রুবেল ঢাকার সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পায় আর হিমেলকে সেই বরাবরের মতো ডোনেশন দিয়ে মেডিকেলে ঢুকায়।
দুজনের পড়াশোনা এভাবেই চলতে থাকে। বাবা মা এর হিমেলকে নিয়ে অনেক গর্ব,সে ডাক্তারি পড়ছে। সবাইকে খুব ঘটা করে বলে আর রুবেলের কথা উঠলেই চেপে যায়। অন্য কথার শুরু করে!
একদিন রুবেল ঠিক করেছে হোস্টলে এ থাকবে কারণ দিন দিন পরিবারের প্রতি বিরক্ত চলে আসছে।যেই ভাবা সেই কাজ, রুবেল হোস্টেলে চলে যায়। কয়েক বছরের মধ্যেই পড়াশোনা শেষ করে এরপর আরো দুই এক বছর পর বিসিএস দেয় আর সে টিকেও যায়।
ওইদিকে হিমেল পড়ছে টাকার উপরেই। তবে তা আর কয়দিন। যতই টাকা দিক একদম শেষে এসে সে ফাইনাল পরীক্ষা আর পাশ করে উঠতে পারেনা। এমন কয়েক বছর যেতে যেতে বাবা ও খুব বড় লস খায় শেয়ার মার্কেটে। ধীরে ধীরে পয়সার পরিমাণ কমতে থাকে।
আর এইদিকে রুবেলের একটা পর একটা প্রমোশন হতেই থাকে। রাগ থেকে আর বাবা মা এর সাথে বাড়ি থেকে চলে আসার পর থেকে আর যোগাযোগ করেনি।

একদিন রুবেল তার অফিসে বসে কাজ করছিলো। হঠাৎ শুনে অফিসের বাইরে একটু গন্ডগোলের শব্দ। রুবেল একটু কৌতুহলি হয়ে উঠলো কারণ সরকারি অফিসের ভিতর সচরাচর এভাবে শব্দ হয়না। সে হাতের কাজ রেখে নিচে এসে দেখে তার ছোট ভাই হিমেল!!
সে অফিসের এক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করেছে তাই জন্য মেয়েটা ভালোই মেরেছে। মেয়ে সরকারি অফিসার, বুঝতেই পারছেন ব্যাপারটা।
রুবেল একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে আছে। এখন সে পরিচয় ও দিতে পারছেনা কোনোভাবে। তাই রুবেল সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে বললো সে দেখছে ব্যাপারটা, তাই বলে হিমেলের সামনে এসে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কোয়ার্টারে নিয়ে চলে।
এইবার ঘরের ভিতর রুবেল হিমেলের দিকে তাকিয়ে আছে আর হিমেল মেঝের দিকে। রুবেল জিজ্ঞেস করলো তুই তো ডাক্তারি পরছিলি তাহলে এই অবস্থা কেনো?
হিমেল আস্তে করে বললো, ফাইনাল পাশ কর‍তে পারিনি।
বাবা ও লস খেয়ে মাকে নিয়ে গ্রামে চলে গেছে। আমি একটা কম্পিউটার এর দোকানে কাজ করি। এটা শুনেই রুবেল একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো আর তার চোখে ভেসে উঠলো বাবা মা এর চেহারা..
এর পরের দিন রুবেল হিমেলকে নিয়ে গ্রামের পথে রওনা দেয়।এরপর গ্রামের বাড়িতে ঢুকে দেখে মা শাক কাটছে আর বাবা শুয়ে আছে। দুজন ই রুবেলকে আর রুবেলের বেশভূষা দেখে চোখ বড় করে করে তাকিয়ে আছে!
কারো মুখেই আর কোনো কথা নেই......



গল্প থেকে শিক্ষা



আমাদের সমাজের একটি বড় রোগ এই বিষয় নির্বাচনটা। কেও ই স্বীকার করেনা তবে সব কিছু চোখের সামনেই ঘটে।আমি গল্পটি লিখেছি কাল্পনিক। গল্পের সবটা সত্যি না হলেও মূল বিষয়টা কিন্তু সত্যি ই!
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। পড়ালেখা সবটাই সমান।পড়াশোনায় ছোট বড় নেই।নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করলে প্রতিটা বিষয় নিয়েই দেশ সেরা হওয়া যায়।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাবা মা ই সন্তানের ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন বুনে রাখে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হবে।আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, এই চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে আসুন। যার যা ইচ্ছা তাকে তা নিয়েই পড়তে দিন। তাহলেই সে উন্নতি করতে পারবে।
আর সব কিছুর মূলে হচ্ছে আত্মবিশ্বাস!!



বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ সবার পরিবার সমান নয়। আমি কিছু পরিবারের চিত্র তুলে ধরলাম শুধুমাত্র।


সকলকে জানাই আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।আমি কোনো ভুল করলে মার্জনা করবেন, ভুল ধরিয়ে দিবেন।
নিজেদের মূল্যবান কমেন্টের মাধ্যমে আমার পাশে থাকবেন।



আমি শাহাদাত হোসেন। আমি একজন বাঙ্গালী এবং নিজেকে এভাবে পরিচয় দিতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছি। আমার শখ ঘুরাঘুরি করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ভ্রমণ,মুভি দেখা, খাওয়া দাওয়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট এসব ই। আমি নিজেকে সবসময় স্বচ্ছ ভাবে সবার সামনে তুলে ধরতেই পছন্দ করি। এবং কোনো ভুল করলে ক্ষমা চাইতে কখনোই দ্বিধাবোধ করিনা। আমি চাই নতুনের সাথে পরিচিত হবো,শিখবো,একসাথে চলবো। আশা করি আপনাদের ভালো কিছু উপহার দিবো।


ধন্যবাদান্তে, @sahadathossen


Sort:  
 3 years ago 

আমি মনে করি আমাদের আশেপাশে এমন অনেক হিমেল রয়েছে যারা বাবা-মায়ের অতিরিক্ত আদর পেয়ে নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক রুবেল রয়েছে যারা বাবা-মায়ের অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়। তবে আপনার গল্পের রুবেল সফলতা অর্জন করেছে যা পড়ে ভালো লাগল। কারণ পজেটিভ পড়লে মানুষ পজেটিভ শিখবে এবং পজিটিভ জানবেন। আপনার গল্প লেখা গুলো ভালোই হয়।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

আপনার পোস্ট গুলো আমি মাঝে মাঝে দেখি
খুবই ভালো লাগে পড়ে
আজকের গল্পটিও দারুণ 👌

আসলে আমাদের সব সময় উচিত পজিটিভ কিছু চিন্তা করা
যা হিমেল এর এই গল্পে প্রমাণিত

ধন্যবাদ ভাই।
এভাবে উৎসাহ দিলে খুব ভালো লাগে।

 3 years ago 

একদমে পড়ে ফেললাম আপনার লেখা গল্পটি।সমাজের বাস্তব চিত্র সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।আসলে বেশি আদর করলে গোল্লায় যায় সেটাই হয়েছিল হিমেলের ক্ষেত্রে অন্যদিকে রুবেল তার ধৈর্য্য ও পরিশ্রমের দ্বারা সফল হয়েছিল।ধন্যবাদ আপনাকে।

বেশি আদর সকলের জন্যই খারাপ।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 55629.86
ETH 2914.29
USDT 1.00
SBD 2.28