প্রসঙ্গঃ "বাংলার বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্প" // আমার বাংলা ব্লগ // ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁকের জন্য
৫ই মাঘ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
প্রসঙ্গঃ "বাংলার বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্প" |
---|
আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভালো আছেন?আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। টাইটেল ও থ্যাম্বনেইল দেখে হয়তো আপনারা বুঝে গেছেন আজকে আমি কি নিয়ে আলোচনা করবো।**আজকের এই ব্লগটি ইন্টারেষ্টিং হতে চলেছে, আশা করি হাতে সময় নিয়ে ধৈর্য্যসহকারে আপনারা এই ব্লগটি পড়বেন। আশা করি আজকের এই ব্লগটি আপনারদের ভালো লাগবে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাকঃ** -
আমাদের এই দেশে বা এই বঙ্গে এমন অনেক কিছুই আছে যা দিন দিন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আর এমনভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে যেটাকে আর চাইলেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তার মধ্যে মাটি দিয়ে তৈরিকৃত জিনিসপত্র খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাচ্ছে। আর তাঁর হারিয়ে যাওয়ার পেছনে আমাদেরই দায় বেশি। আজকের পুরো ব্লগটি নিয়ে থাকছি বাংলাদেশে মৃৎশিল্প নিয়ে। আমাদের এই দেশে একটা সময়ে প্রচুর পরিমাণে বাড়ির আসবাবপত্র ও জিনিসপত্র তৈরি হতো, কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর থেকে এসব জিনিসপত্র ব্যবহার দিন দিন ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
যার কারণে বিলুপ্তির পথে আজকে বাংলাদেশের মৃৎশিল্প। চাইলেও এখন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। আর উপায় থাকলেও সেটা কি টিকিয়ে রাখার জন্য বর্তমানে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। যার কারণে ক্রমশই বিলুপ্তির পথে এই মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের বড় নিদর্শন হচ্ছে টেরাকোটা। টেরাকোটা এর অর্থ হচ্ছে মাটির দেয়াল এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নকশা করা এবং এই নকশা কে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের রং এর কারুকার্য করা। আমার কাছে অর্থাৎ আমার ব্যক্তিগতভাবে এইসব কারুকার্য বা মৃৎশিল্প অনেক ভালো লাগে। আমি যেহেতু গ্রাম থেকে বড় হয়েছি সেহেতু এসব কারুকার্য দেখে দেখে বড় হয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে আমাদের গ্রামে এর বিন্দুমাত্র ছিটে ফোটাও নেই।
এক তথ্য হতে জানা যায়ঃ-
মৃৎশিল্প হলো বিশেষ এঁটেলমাটি বা কাদামাটি, চীনামাটি ইত্যাদির সাহায্যে হাড়ি-পাতিল ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করার শিল্প, যাতে বস্তুগুলো টেকসই ও মজবুত করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন তাদেরকে কুম্ভকার বা চলিত বাংলায় কুমার এবং যে কর্মশালাতে তারা এগুলি তৈরি করেন তাকে কুম্ভশালা বা কুমারশালা বলা হয়।
ছবিতে আমরা যে দুজনকে দেখতে পাচ্ছি মূলত এরাই কুম্ভগার বা খাটি বাংলা ভাষায় কুমার বলা হয়। এই ধরনের লোক যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন এই শিল্পের চর্চা হবে। কিন্তু এই বয়সের লোকগুলো মারা গেলে আমার মনে হয়, এই শিল্পগুলোর ও অবসান হয়ে যাবে। কেননা, এই শিল্পকে চর্চা করার মতো ছেলে বা মেয়ে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
এই যেমন ধরেন একটা সময়ে আমাদের গ্রামেই কত কুমার ছিলো, কিন্তু এখন সেই সব কুমারদের বিলুপ্তি ঘটেছে। এর কারণ হচ্ছে, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় আর নিজেকে যুক্ত করেন নি। এর কারণ হিসেব করলে দেখা যাবে, এই পেশায় যারা থাকে তারা তাদের সঠিক সন্মানটুকু ও পায় না। যার কারণে বাধ্য হয়েই অনেকে এই পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয়ত্ব এই পেশা ছাড়ার কারণ হচ্ছে, মুজুরি বা সামগ্রিক পণ্য দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি। তারা এই মৃৎশিল্পের মাধ্যমে যা রোজগার করে তা দিয়ে তাদের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে উঠে যার কারণে অনেকে বাধ্য হয়েই এই পেশাকে ছেড়ে দেয়।
কেউ কি বলতে পারবেন কেন এই শিল্প আমাদের জন্য জরুরি? এমন কি কেউ আছেন ? তো যাই হোক আমি বিষয়টি ক্লিয়ার করে দেই। আমরা বর্তমানে মাটির হাড়িপাতিল ও জিনিসপত্রে বদলে যেসব মেলামাইন বা স্টিল এর হাড়িপাতিল ব্যবহার করি এগুলো কি দিয়ে তৈরি হয় তাতো আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। মেলামাইন মূলত হাড় দিয়ে তৈরি করা হয়, সেই হাড় টা মানুষ বা পশু যেকারোরই হতে পারে। আবার পশুর দিকে গেলে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের পশুর হাড় থাকতে পারে। সেটাকে আর আলাদাভাবে উল্লেখ্য নাই বা করলাম। এবার আসি স্টিল বা সিলভার এর হাড়িপাতিল এর বিষয়েঃ- এগুলো মূলত বিষাক্ত ধাতু। আমরা যখন উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করি, তখন এগুলো অনেক ক্ষুদ্র পরিমাণে গলে গিয়ে আমাদের খাবারের সাথে আমাদের পেটে চলে যেতে পারে। যেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে মোটেও উপকারী নয়।
তাই মাটির হাঁড়িপাতিল বা মৃৎশিল্প আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে খুবই জরুরি। কেননা, আমাদের এই শরীর মাটির তৈরি আর মাটিতেই ক্ষয়। তাই খাবারের সাথে যদি মাটি আমাদের শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে তাহলে সহজেই হজম হতে পারে আর তা সহজেই শরীর থেকে বেড়িয়ে যেতে পারে। তাই এই মৃৎশিল্পকে ঠিকিয়ে রাখতে হলে, কুমার বা কুম্ভকারদের যথাযথ সন্মাম দিতে হবে, দাম দিতে হবে। আর এই শিল্প চর্চার জন্যে সরকারীভাবে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
Camera | Location |
---|---|
Redmi 10 | Dinajpur |
আশা করি, আমার এই ব্লগটি আপনাদের ভালো লেগেছে। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
আমার সম্পর্কে কিছু কথাঃ-
আমি মোঃ আবু হেনা সরকার। আর আমার ডাক নাম সাগর। আমি একজন স্বাধীন চেতনাময়ী ছেলে। যে সবসময় স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেই। আমি লিখতে, পড়তে, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, বিশ্লেষন এবং কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ভীষণ আগ্রহী ও ভালোবাসি। আমি একজন মিশুক ছেলে। সবার সাথে মিশতে আমার অনেক ভালো লাগে।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
সত্যি ভাইয়া খুব সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছেন। বাংলার বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্প, প্রায় নয় ভাইয়া বলতে গেলে পুরো পুরি শেষ। সব কিছুর জন্য আমরাই দায়ী। কারণ আমাদের মাঝে আধুনিকতার ছুঁয়ায়। হারিয়ে ফেলছি আমাদের এই মৃৎশিল্প।
ভাইয়া আপনার পোস্ট টা আমার কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে বিষয়ে করে ফটোগ্রাফি গুলো।
আপনার জন্য অনেক দুআ ও শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
আপনিও ঠিক কথাই বলেছেন আপু, আসলেই হারিয়েই যাচ্ছে মৃৎশিল্প। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
সত্যি এ গুলো বিলুপ্ত প্রায়। তবে কিছু কিছু জায়গায় এ গুলো দেখা যায়। বাংলার বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্প সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছেন। সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। শুভকামনা আপনার জন্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
সত্যি কথা বলতে আমি নিজেও কখনো সরাসরি মৃৎশিল্প তৈরি করতে দেখিনি।তবে ছবিতে দেখেছি অনেক। যাইহোক পুনরায় আপনার মাধ্যমে দেখতে পেরে অনেক ভালো লাগলো। এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আর অবশ্যই পরবর্তীতে গেলে আমাকে নিয়ে যেতে ভুইলো না 🤪
আপনাকেও পরবর্তী সময়ে নিয়ে যাবো, চিন্তা করিয়েন নাহ প্লিজ।
সত্যিই ভাই অসাধারণ একটি বিষয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ।আমাদের কাছ থেকে মৃত শিল্প প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে । আমরা এর কদর করিনা । যখন এটা আমাদের কাছ থেকে পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে । তখনই আমরা এর কদর করবো। মানুষ মাত্রই এরকম , যখন কাছে থাকে তখন এর দাম বোঝা যায় না , যখন থাকেনা তখন এর দাম বাড়ে। যাই হোক খুবই বিস্তরভাবে বিষয়টি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন । ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন।
কুমারপাড়া গুলো বিলুপ্তির পথে।কেউ কেউ বেছে নিয়েছেন, অন্য পেষা। হাজার হাজার বছর পরেও মানুষ জানবে।এমন একটা শিল্পের কথা। বেচে থাক মৃৎশিল্প লেখনিতে এই কামনায়
সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনা এগিয়ে নিয়ে যাক আমাদের সবাইকে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। 🥰
দোয়া করবেন।
মৃৎশিল্প গুলো দেখে খুবই চমৎকার লাগল ভাই ।বর্তমানে মৃৎশিল্প বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে । তবুও আপনি এত সুন্দর করে আমাদের মাঝে এই শিল্পটি উপস্থাপন করেছেন যা দেখে আসলেই আমি মুগ্ধ হয়েছি ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন।এই পরিচিত শিল্পটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে অনেক কুমাদের এই জিনিসগুলো অনেক প্রচলন ছিলো এখন আর মাটির জিনিস খুব একটা দেখা যায় না। আমাদের এই শিল্পাটিকে টিকিয়ে রাখা উচিত কারণ এটা বাঙালির ঔতিহ্য। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
মৃৎশিল্প এবং মৃৎশিল্পীরা আমাদের বাংলার গর্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এটাই সত্য যে এই শিল্প আজ মোটামুটি বিলুপ্তির পথে। এর পেছনে পারিবারিক যেমন কারণ রয়েছে তার সাথে আরও রয়েছে সরকারি সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। ভালো লাগলো আপনি এ ধরনের একটি লেখা আজকে পোস্ট করেছেন। এই শিল্পকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করি।
আট দশ বছর আগেও আমাদের এলাকার আশেপাশে প্রায় 3/4 টি কুমার বাড়ি ছিল কিন্তু এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র একটি। এ থেকেই বোঝা যায় এ শিল্পের অবস্থান এখন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখনই ব্যবস্থা নিতে না পারলে অচিরেই হারিয়ে যাব এই শিল্প। সুন্দর একটি বিষয় শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ