ইতি, তোমার ভালোবাসার ফারহান। || ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁকের জন্য
১৭ই পৌষ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
"ইতি, তোমার ভালোবাসার ফারহান।" |
---|
প্রিয় প্রিয়া,
৮ বছর হ্যাঁ ঠিক ৮ বছরের একটা টুকরো সম্পর্ক আমাদের। এই সময়ের মধ্যে অনেক ঝড় ঝাপটা এসেছে আমাদের জীবনে। কিন্তু দিন শেষে আমরা দুজনে কেউ কারো হাতটা ছেড়ে যাই নি। এর কারণ কি তুমি জানো? হাহা তুমি তো জানবেই! ভালোবাসি তোমাকে, অনেক বেশি ভালোবাসি। যতটা ভালোবাসলে জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকে না। তোমার সাথে সম্পর্কটা শুরু হয় একটা অদ্ভুত ঝগড়া থেকেই। কিন্তু শত্রুতাপূর্ণ একটা সম্পর্ক যে মিষ্টি সম্পর্কে পরিনত হবে তা কখনোই ভাবতে পারি নি। সবই হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমি তোমাকে পেয়েছি একজন পারফেক্ট জীবন সঙ্গিনী হিসেবে। কখনোই তুমি হাত ছেড়ে দেও নি, আগলে রেখেছিলে তোমার ওই মিষ্টি মায়ার বাধঁনে। আচ্ছা, তোমার কি মনে আছে? যেদিন আমাদের ব্যবসাটায় বড় একটা ধাক্কা এসেছিলো! ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি! হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি বেচেঁ থাকার।
সেদিন তুমি কিভাবে আমাকে আবার এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছো। তুমি হয়তো এসব কিছুই ভুলে গেছো, তবে ভুলে যাই নি আমি। একটা জিনিস আমাকে বড় চিন্তা ফেলে দিয়েছিলো, যেদিন আমরা কক্সবাজারে গিয়েছিলাম আমাদের জীবনের সুন্দরতম সময় কাটানোর জন্য। কিন্তু বাসের ভুলের কারণে আর আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার ফলে মাঝ পথেই তোমাকে রেখে এসেছিলাম। সেদিন আমি যে দুচিন্তায় পড়েছিলাম তা আমি তোমাকে কখনোই বোঝাতে পারবো না। ভাগ্যিস, তোমার সাথে তোমার ওই বোনটি ছিলো, আমি সেদিন অনেক কেদেছিলাম। এই বুঝি তোমাকে হারিয়ে ফেললাম। কিছু সময়ের জন্য রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। বার বার নিজেকে দোষারোপ করতেছিলাম কিভাবে পেরেছি আমি ঘুমিয়ে যেতে! কিন্তু সেই তুমি আমাকে কোনো দোষারোপ না করে বলেছিলে, "তুমি ঘুমে বিভোর ছিলে, তাই আর তোমাকে ডাকি নি।"
জীবন বড়ই অদ্ভুত জানো? কখন কিভাবে কি হয়ে যায় বলা মুশকিল। আমাদের জীবন তো বেশ ভালোই চলছিলো। আমাদের ঘরকে আলোকিত করে একটা ফুটফুটে বাবু এলো। দেখতে একদম তোমার ফটোকপি। হয়তো আরেকটা তোমাকে পেলাম। আমার মনে তখন আনন্দের জোয়ার চলতেছিলো। কিন্তু জোয়ার আসার পর যে ভাটা আসে, তা আমার মনের মধ্যেই ছিলো না। এটাই হয়তো আমাদের জন্য কাল হয়ে আসলো। তোমার যেহেতু সিজারে বাবু হয়েছে, সেহেতু তোমার কাটাঁ সেই জায়গাতে ইনফেকশন হয়ে গেছে তা আমি কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারি নি। বাসায় আসার পর তোমার ঘাঁ যেনো শুকানোর বদলে আরো বাড়তে লাগলো। এদিকে আমার মনের মধ্যে ভয় কাজ করছিলো, তোমার যেনো কিছু না হয়।
ডক্টরের কাছে তোমাকে নিলে তারা জানায়, ইনফেকশনের কারণে তোমার ক্যান্সার হয়েছে। সেই সময়টাতে যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিলো। কিভাবে কি করবো, আমি কোথায় যাবো। কার কাছে আমি স্বান্তনা চাইবো কিছুই বুঝে উঠতে পারি নি। আমরা যেহেতু বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম সেহেতু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন একটা জীবন যাপন করতেছিলাম। তাই বাবা-মাকে ফোন করে স্বান্তনা চাওয়ার মতো সাহস আমার ছিলো না। শুধুমাত্র তোমার কথা চিন্তা করেই আমি ফোন দেই একটু খানি স্বান্তনার আশায়। কিন্তু, জানো সেদিন আমাকে কেউ'ই স্বান্তনা দেয় নি। বরং, অপমান করে কল কেটে দিয়েছে। আমি যতবার ফোন দিতাম, ঠিক ততবার কেটে দিয়েছে। একদিকে তুমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছো, আর অন্যদিকে সেই ফুটফুটে বাবুকে নিয়ে আমি এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করেছি তোমাকে বাঁচানোর জন্য। সবার কাছে আকুতি মিনুতি করেছি, সাহায্য চেয়েছি একটু খানি। আমার তো টাকার অভাব ছিলো না, কিন্তু অভাব ছিলো আমাদের পাশে থেকে স্বান্তনা দেওয়ার মতো মানুষের।
একটা সময়ে আমি যেনো মানুষিক রোগীর মতো আচরণ করতেছিলাম। একদিন যখন বাবুকে নিয়ে বাহির থেকে তোমার জন্য তোমার প্রিয় সেই বকুল ফুল ও রজনীগন্ধার বুকে নিয়ে তোমার কাছে যাচ্ছিলাম। করিডোরে ঠিক সে সময়ে ডাক্তার জানায় তুমি আর নেই। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গিয়েছো ওই অজানার রাজ্যে। সেদিন যেনো আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো। আমি যেনো অতল সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছিলাম তখন। একদিকে কান্নার্ত বাবু, অন্যদিকে তোমার পড়ে থাকা নিথর দেহ। আমি কোথায় যাবো, কি করবো। কিছুই বুঝে উঠতে পারি নি। এরপর ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে তোমাকে রেখে আসি অন্ধকার সেই কবরে। আমি ও তোমার ফটোকপি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাই এই দেশ ছেড়ে।
আজকে ঠিক ৪০ টা বছর পর দাঁড়িয়ে আছি তোমার কবরের ঠিক উত্তর পাশটায় যেপাশে তুমি মাথা করে ঘুমিয়ে আছো। জানো, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটুও কমে যায় নি, বরং তোমার রেখে যাওয়া উপহারটাকে সম্বল করে বেচেঁ থাকার আশা পেয়েছি। তোমাকে ভালোবাসার কোনো কারণ নেই। তুমি আমার এই ভাঙ্গা টুকরো হৃদয়ের প্রতিটা স্তরে রয়ে গেছো। তোমার সে জায়গা আর অন্য কেউ দখল করে নিতে পারে নি। ভালোবাসি প্রিয়া, তোমাকে খুব ভালোবাসি। এখন শুধু তোমার কাছে যাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনছি। ভালো থেকো তুমি, যেখানেই থাকো ভালো থেকো। খুব শীঘ্রই আমি আসছি।
ইতি,
তোমার ভালোবাসার ফারহান।
আশা করি, আমার এই ব্লগটি আপনাদের ভালো লেগেছে। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
আমার সম্পর্কে কিছু কথাঃ-
আমি মোঃ আবু হেনা সরকার। আর আমার ডাক নাম সাগর। আমি একজন স্বাধীন চেতনাময়ী ছেলে। যে সবসময় স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেই। আমি লিখতে, পড়তে, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি, বিশ্লেষন এবং কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে ভীষণ আগ্রহী ও ভালোবাসি। আমি একজন মিশুক ছেলে। সবার সাথে মিশতে আমার অনেক ভালো লাগে।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভালোবাসার স্ফুরণ ঘটেছে আপনার লেখনির মধ্যে। প্রতিটি মানুষের জীবনে ভালোবাসার কিছু স্মৃতি বিজরিত বিষয় লুকিয়ে থাকে। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যার কাছে পৃথিবীর সবকিছু মূল্যহীন হয়ে পড়ে। সেটাই ভালোবাসার প্রকৃত স্বার্থকতা।আপনার ভালোবাসার গল্পটি পড়ে ভালোই লাগলো শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। ❤️❤️
আপনি অনেক সুন্দর ভাবে আপনার মনে জমে থাকা কথাগুলো মন্তব্য আকারে প্রকাশ করলেন ভাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 💜
https://twitter.com/sagor520028/status/1477365882691088384?s=20
ভাইয়া আপনি আপনার লেখনীর মধ্যে সুন্দর রোমান্টিক ভালোবাসার মাধুর্য ছড়িয়ে দিয়েছেন। পোস্টটি পড়তেই আমার অনেক অনেক ভালো লেগেছে। এভাবে ভালোবাসায় পরিপূর্ণতা লাভ করুক প্রতিটি মানুষের 💓💓। খুবই সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাইয়া আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই, খুব সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন। 💜❤️
লেখা টি দারুন এবং হৃদয়বিদারক। যদিও বাস্তবতা সব সময় এইরকমই হয়। ধন্যবাদ।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। খুব সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন ❤️
বাহ!! গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। ভালোবাসা তো এমনই হওয়া উচিত যেখানে একজন অপরজনকে ছেড়ে যাবেনা। তবে গল্পের শেষের দিকে অবশ্য খারাপ লাগলো। প্রিয়া বেচেঁ থাকলে হয়তো আরও ভালো লাগতো। ফারহান এখনও প্রিয়াকেই ভালোবাসে। জাস্ট অসাধারণ ভাই ❤️।
আপনার মন্তব্যটি যথার্থ ও গঠনমূলক হয়েছে ভাই। আমার অনেক ভালো লেগেছে এটি। ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিত। ❤️