এমন একটা সময় ছিলো যখন বাঁশের কঞ্চি কলমের মতো কেটে কালির খালি দোয়াতে কাঠ পোড়ানো কয়লা গুঁড়ো করে পানি দিয়ে গুলে কালি বানিয়ে তাল পাতায় অ, আ, ক, খ লিখত মানুষ। তারপরেই চক ও শ্লেটের আবির্ভাব হয়। ছাত্রজীবনের শুরুতে অর্থাৎ শৈশবে আমরা অনেকেই লেখা শুরু করি শ্লেটে চক দিয়ে। চক দিয়ে শ্লেটে লেখার পর অর্থাৎ হাতে খড়ির অধ্যায় শেষ করে কাগজে পেন্সিল দিয়ে লেখার অধ্যায় শুরু হয়। অর্থাৎ শৈশবে লেখার জন্যে জন্য কলম হিসেবে কাঠপেন্সিলের সঙ্গেই প্রথম পরিচয় ঘটে মানুষের। কাঠপেন্সিল যে শুধু শৈশবে লেখার কাজে ব্যবহৃত হয় তা কিন্তু নয়। খাতায় রুল করা, ছবি আঁকা, হিসাবের কাজে ব্যবহার করা, অডিটে ব্যবহার করা ইত্যাদি অনেক কাজেই কাঠপেন্সিল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাঠপেন্সিলের একটা বিশেষগুণ রয়েছে, যেটি হচ্ছেঃ কাঠপেন্সিল দিয়ে লেখা যেকোনো অক্ষর, শব্দ বা বাক্যে লেখার পর রাবার দিয়ে মোছা যায়। কিন্তু কলম দিয়ে সেটি সম্ভব নয়। আর এই বিশেষগুণটির কারণে শৈশবে লেখা শেখার জন্যে এবং এ ছাড়াও বিভিন্ন বিশেষ কাজে ব্যবহার করার জন্যে কাঠপেন্সিল সমাদৃত হয়ে আসছে।
বর্তমানে আমরা যে পেন্সিল দিয়ে লিখি তা আসে খনিজ পদার্থ থেকে। কাঠপেন্সিলের কাঠের মধ্যে যে সিস থাকে তা এক প্রকার খনিজদ্রব্য থেকে তৈরি যার, নাম গ্রাফাইট। গ্রাফাইট হচ্ছে একটি মৌল পদার্থ। কয়লা বা কাঠ কয়লা অঙ্গার এর একটি বিশিষ্ট শ্রেণি। অঙ্গার নানা অবস্থায় থাকতে পারে। অঙ্গার দুই বা ততোধিক প্রকারের থাকতে পারে। হীরা ও গ্রাফাইট অঙ্গারেরই প্রকারভেদ। গ্রাফাইট হীরার মতো উজ্জ্বল রঙের নয়। গ্রাফাইটের রঙ ধূসর বর্ণের আর হীরার রঙ উজ্জ্বল। গ্রাফাইট সব দেশেই কম বেশি পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি গ্রাফাইট পাওয়া যায় সিংহলে। সেই গ্রাফাইট দিয়েই তৈরি হয় কাঠপেন্সিল। সবচেয়ে মজার কথা হলো এই গ্রাফাইটকে আগেরকার মানুষরা মনে করত সিসা। তাই গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি পেন্সিলকে লেড পেন্সিল বলতো। লেড ইংরেজী শব্দ। তাই এই পেন্সিলের নাম ছিলো লেড পেন্সিল।
আজকে থেকে প্রায় পাঁচশত বছর আগে মানুষ সর্বপ্রথম পেন্সিল তৈরি করতে শিখে। কিন্তু সেগুলো আজকালের পেন্সিলের মতো ছিলো না। একটি গ্রাফাইট খন্ডকে সরু কতগুলো করে তাই দিয়ে লেখার কাজ চালাত তখনকার মানুষেরা। এভাবে অনেক দিন চালিয়েছে। তারপর গ্রাফাইট কেটে আরো চিকন করে তারওপর নরম কাঠের আবরণ দেয়ার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়। পেন্সিল ছাড়াও গ্রাফাইট আরও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই কৃত্রিম উপায়ে গ্রাফাইট তৈরি করতে হচ্ছে।
১৮৯৬ সালে অ্যাডওয়ার্ড এ কেশন নামে পেন্সিলভানিয়ার একজন বৈজ্ঞানিক এই গ্রাফাইট তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এতে সহজ উপায়ে গ্রাফাইট পাওয়া যায় এবং তা দিয়ে মানুষের প্রয়োজন মেটানোও সম্ভব হয়েছে। আর এই কৃত্রিম উপায়ে গ্রাফাইট তৈরি করতে মাত্র তিনটি উপাদানের প্রয়োজন হয়।বিচুর্ণ কোক, বালু ও কাঠের গুঁড়ো। এ সব দ্রব্য একসঙ্গে মিলিয়ে বিদ্যুৎ চুলোয় প্রায় ৪০০০ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করলে বিশুদ্ধ গ্রাফাইট তৈরি হয়ে যায়।
আজকাল কিন্তু গ্রাফাইট কেটে পেন্সিল তৈরি হয় না। কাঠের মধ্যে যে গ্রাফাইট থাকে তা শুধু গ্রাফাইটই নয়। গ্রাফাইটকে ভালো করে গুঁড়ো করে নিয়ে এর সঙ্গে পরিমাণমতো কাদামাটি মিশিয়ে ছোট ছোট ছাঁচের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এসব ছাঁচে সরু সরু লম্বা দন্ড তৈরি হয় যাকে আমরা পেন্সিলের সিস বলি। গ্রাফাইটের গুঁড়োর সঙ্গে কাদামাটির পরিমাণ কমিয়ে বা বাড়িয়ে নরম্বা শক্ত উভয় প্রকার সিস তৈরি করা যায়। নরম সিস তৈরি করতে হলে গ্রাফাইটের গুঁড়োর সাথে অল্প পরিমাণ কাদামাটি মেশাতে হয় এবং পরিমিত উত্তাপ দিতে হয় আর শক্ত সিস তৈরি করতে হলে কাদামাটির মাত্রা ও উত্তাপ দুই-ই বাড়াতে হয়। পেন্সিল তৈরির এই গ্রাফাইটটি সিংহল ছাড়া সাইবেরিয়া, আমেরিকা ও ইতালিতেও পাওয়া যায়। আর এই গ্রাফাইটকে কাঠপেন্সিলের উপযুক্ত সিস তৈরি করে সরু নরম কাঠের দণ্ডের মধ্যে ঢুকিয়েই তৈরি হলো আমাদের আজকের এই কাঠপেন্সিল।
লেখাটি তথ্যবহুল একটি প্রবন্ধ । এই ধরণের লেখা আরো চাই :)
জ্বি ভাইয়া।
আমি আমার সেরাটা দিয়ে আরো নতুন নতুন প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করবো।
পোস্টটা সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।