আনন্দের ভাগাভাগি || 10% Beneficiary To @shy-fox 🦊

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা

সবাই কেমন আছেন? আশা করছি মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছেন সবাই। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

kids-783520_1920.jpg

image source

এ বছর ঈদে বেশ লম্বা ছুটি রয়েছে। রায়হান এর বাবা-মা ঠিক করলেন ঈদের ছুটিটা এবার গ্রামের বাড়িতেই কাটাবেন। অফিসের কাজের চাপ এ বেশ কয়েক বছর থেকেই গ্রামে যাওয়া হয় না তাদের।

রায়হানের জন্ম শহরেই। গ্রামে তাদের বিশাল বাড়ি রয়েছে। বাবা চাকরির সুবাদে শহরে থাকে। গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হয় না তাদের। রায়হান হাতেগোনা দু একবারই তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলো। ঈদ গুলো শহরেই কাটে তাদের। এবার রায়হান যখন শুনলো এ বছর ঈদ তারা গ্রামের বাড়িতে করবে তার খুশি আটকায় কে।

শহরে কাটানো ঈদ মানেই তো পার্কে ঘুরতে যাওয়া, আর ঘোরা শেষে রেস্টুরেন্ট এ খাওয়া দাওয়া করে বাসায় ফিরে আসা। রায়হানদের গ্রামে ঈদের সময় বিরাট মেলা বসে। আর গ্রামের মেলা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধারণ করে। এই মেলায় নানারকম মাটির তৈরি জিনিস, বাঁশের তৈরি জিনিস সহ আরো অনেক কিছু পাওয়া যায়। আর খাওয়ার কথা তো না বললেই নয়। গজা , জিলেপি, বাতাসা, নারকেলি আরো অনেক কিছুই লোভনীয় লোভনীয় খাবার পাওয়া যায়। গ্রামের বাসায় ঈদ উপলক্ষে মেলায় অনেক মজা করবে রায়হান এ কথা ভেবেই তার অনেক আনন্দ লাগছে।

ঠিক ঈদ এর আগের দিন তারা গ্রামের বাড়িতে চলে এলো। গ্রামের বাড়িতে এসে দাদু-দিদার অনেকদিন পর দেখা হল রায়হানের। তারা সকলেই অনেক খুশি। এখানে এসে রায়হান নতুন একটি বন্ধুও পেয়েছে। গ্রামের বাসায় দাদু দিদার দেখাশোনা করে আলামিন চাচার ছেলে শাকিল। শাকিল আর রায়হানের মধ্যে দারুন বন্ধুত্ব হয়েছে।

ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে এসে একটু মিষ্টি মুখ করেই রায়হান তার দাদুর সাথে বেরিয়ে পরবে মেলা দেখতে যেতে। সাথে নেবে তার বন্ধু শাকিলকে। ঈদের নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পড়েছে আর বন্ধু শাকিলকেও নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পড়িয়েছে। দুজনে দাদুর হাত ধরে বেরিয়ে পড়লো মেলা দেখতে।

মেলায় গিয়ে তো রায়হান অবাক। এরকম মেলা সে আগে কখনোই দেখেনি। বিরাট একটি মাঠে মেলাটি বসেছে। মাঠেই চাদর কিংবা পাটি বিছিয়ে দোকানিরা বসে পড়েছে মাটির তৈরি খেলনা সহ আরো অনেক খেলা নিয়ে। মেলায় ফুলের গাছও আছে। বাঁশের তৈরি বাঁশি ও দেখতে পেল রায়হান। সকালে সবাইকে সালাম করে ঈদের যে সালামি পেয়েছিল সে টাকা থেকেই রায়হান নিজের জন্য ও শাকিবের জন্য একটি করে বাঁশি কিনলো। দুজনের কেউই বাঁশি বাজাতে পারে না। তবুও ব্যর্থ চেষ্টা করছে আর প্যা প্যু শব্দ বের করছে। তাদের বাঁশির শব্দে সকলের কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

বাঁশির দোকান থেকে তারা সোজা চলে গেল খাবারের দোকানে। তেলেভাজা পাপড়, খাজা, গজা, বাতাসা, আর ও কত রকমের খাবার উঠেছে মেলায়। এই খাবারগুলো রায়হান আগে কখনোই খাইনি। নিজের টাকা থেকেই তার জন্য ও বন্ধু সাকিল এর জন্য খাজা, গজা ও তেলে ভাজা পাপড় কিনলো রায়হান। খেতে খেতে তারা মেলা থেকে বের হয়ে আসছিলো।

মেলা থেকে বের হওয়ার সময় রায়হান দেখল মেলার এক কোনায় ছোট একজন বালক দাঁড়িয়ে আছে এবং খাবারের দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে। রায়হান বালকটির কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করল সে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন। বালকটি লজ্জায় মাথা নিচু করলো।

রায়হান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবল। তারপর ছুটে আবার মেলার ভিতরে গেল। মেলা থেকে সে একটি বাঁশি ও কিছু খাজা,গজা ও জিলেপি কিনে নিয়ে আসলো। তারপর বালক টিকে জড়িয়ে ধরে বললো চল বন্ধু আমরা তিনজনে মিলে বাঁশি বাজাই আর খাজা,গজা ও জিলেপি খেতে খেতে বাড়ির দিকে যাই। ছোট এই বালিকটির আনন্দে‌র বাঁধ ছিল না সে সময়। ফোকলা দাঁতে মনকাড়া হাসি দিল।

তিন জনে মনের সুখে বাঁশি বাজাচ্ছিল আর খাজা, গজা ও জিলেপি খাচ্ছিলো। যদিও তাদের বাসি শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল তবুও তাদের ফোকলা দাঁতের হাসিতে চারপাশ উৎসবময় হয়ে উঠেছিল।

রায়হানের দাদু তার নাতির এসব কান্ড চুপ করে দেখছিলেন আর মুচকি মুচকি হাসছিলেন। কি নিষ্কলুষ মন এই শিশুর। তা না হলে কেই বা নিজের টাকায় অন্যের জন্য এরকম আনন্দ কিনে নিয়ে আসে। দাদুর সৃষ্টিকর্তার কাছে মনে মনে প্রার্থনা করছিলেন এ শিশুদের মন যেন এরকমই নিষ্কলুষ থাকে। এভাবেই যেন সব সময় তারা সকলের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারে।

image.png

গল্পটি আপনাদের পড়ে কেমন লাগলো তা মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ কষ্ট করে আমার লেখা গল্পটি পড়ার জন্য। আজ বিদায় নিচ্ছি, আবার দেখা হবে নতুন কিছু নিয়ে। ভালো থাকবেন সবাই।

Sort:  
 2 years ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
default.jpg

 2 years ago 

গল্পটি ভালোই লেগেছে।আসলে গ্রামে সবার সাথে ঈদ করতে মজাই আলাদা। দাদা দাদী থাকলেও কোন কথাই নেই।গ্রামের গল্প শুনতে আমার ভালো লাগে।ভালো ছিলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

আমার লেখা গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে শুনে আনন্দিত হলাম।
গ্রামে ঈদ করতে আসলেই অনেক মজা হয়। অনেক বছর হলো গ্রামে ঈদ করি না। সে দিনগুলোকে অনেক মিস করি।

গ্রামের পরিবেশে পরিবারের সাথে অনেক সুন্দর একটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন। পরিবারের সবার সাথে ঈদ করার মাঝে এক অন্যরকম ভালোলাগা রয়েছে। অনেকরই সেই সৌভাগ্য হয় না। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার আমাদের কেউ আনন্দের ভাগীদার বানানোর জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

 2 years ago 

গ্রামে গিয়ে আমি ঈদ উদযাপন করিনি ভাইয়া।
একটি কাল্পনিক গল্প শেয়ার করেছিলাম। আপনি গল্পটা সম্পূর্ণ পড়লেই বুঝতে পারতেন।
যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61111.24
ETH 2687.89
USDT 1.00
SBD 2.61