গল্প || সুরভীর স্বপ্নকথা || 10% Beneficiary To @shy-fox 🦊
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা
সবাই কেমন আছেন? আশা করছি মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছেন সবাই। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
ছোটবেলা থেকেই সুরভীর স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে সে। অনেক বড় হবে। পড়াশুনায় খুবই ভালো ও। এযাবৎ পর্যন্ত কোনো পরীক্ষাতেই প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি সুরভী। এবারেও সে কলেজ টপার হবে এ বিশ্বাস রাখে সবাই। কলেজের শিক্ষকগণ ভালো ছাত্রী হিসেবে তাকে খুবই স্নেহ করেন।
দরিদ্র বাবা-মার বড় মেয়ে সুরভী। একজন ছোট ভাই আছে তার, সবে মাত্র স্কুলে পা দিয়েছে । আর সুরভী এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। সুরভীর বাবা দিনমজুর আর মা মানুষের বাসায় কাজ করেন। সুরভীর স্বপ্নপূরণে তার মা তাকে সব সময়ই সমর্থন করেন। এমনকি মায়ের ও স্বপ্ন সুরভী পড়াশোনা করে অনেক বড় হোক। কিন্তু দরিদ্র সংসারে স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে ফারাকটা যে অনেক বেশি।
টানাপোড়ান এর সংসারে সুরভীর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা খুবই একটা সহজ ছিলো না । তবুও নিজের জেদে এবং মেধার জোরে সুরভী এগিয়ে গিয়েছিলো অনেকদূর। নিজের পড়াশুনার খরচ কিছুটা মেধা বৃত্তি, কিছুটা টিউশন করে যোগাতো।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সুরভীর অভাবী বাবা তার উচ্চশিক্ষার জন্য টাকার জোগাড় করতে অপরাগতা প্রকাশ করলো। পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই মেয়েকে পাত্রস্থ করে দিলো। সুরভী ভেবেছিল তার স্বপ্নের এখানেই শেষ। সংসার নামক বন্ধনের মধ্যে সে আটকে পড়ল।
বিয়ের পর সব সময়ই মনমরা হয়ে থাকত সে। শ্বশুরবাড়িতে শশুর শাশুড়ি আর বর এই নিয়েই তার সংসার। এ বাড়িতে সবাই থাকে অনেক আদর করে। কিন্তু নিজের স্বপ্নের পরিসমাপ্তির কথা চিন্তা করে সে কোন কিছুতেই সুখ খুঁজে পায় না। তবুও এভাবেই পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে হবে ভেবে সবকিছুই মেনে নিয়েছে।
দেখতে দেখতে রেজাল্ট বেরিয়ে গেলো উচ্চমাধ্যমিক এর। বরাবরের মতোই সুরভী এবারও ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। কিন্তু রেজাল্ট নিয়ে আর বিন্দুমাত্র উচ্ছাস নেই তার। সে ঘরেই বসে রইলো মনমরা হয়ে।
বেশ কয়েক ঘন্টা পর তার বর তাকে বাইরে থেকে ডাকছে। কিন্তু এ সময় তো সে অফিসে থাকে, তার বাড়িতে থাকার কথা না। কিছুটা অবাক হয়ে সুরভী ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে বেরিয়ে এসে সে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সুরভী ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার খুশিতে বাসায় ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তারা। আর এজন্য সুরভীর বর ও অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।
এসব দেখে সুরভী কান্না আটকিয়ে রাখতে পারলো না। ওর দুচোখে আনন্দের অশ্রু। তখন ওর শাশুড়ি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো "আমরা চাই তুমি এগিয়ে যাও, উচ্চশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াও, নিজেকে তৈরি করো নিজের মত করেই"।
মনে মনে ভাবল এরকম শ্বশুর বাড়ি থাকলে মেয়েদের স্বপ্ন, স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে না, বরং আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর পথে। প্রকৃত স্বাধীনতায় সুরভী ডানা মেলে উড়তে শুরু করলো তার সোনালী ভবিষ্যতের দিকে। নতুন উৎসাহে পড়াশুনা শুরু করে দিলো।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
![default.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmNwBDPMPvL1yaKWTYF4wxyUmxWiEJgAy1WZWTJyCha5wE/jswit_comment_initial.w320.jpg)