গল্প || ইচ্ছে পূরণ || 10% Beneficiary To @shy-fox 🦊
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা
সবাই কেমন আছেন? আশা করছি মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছেন সবাই। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আমাদের সকলেরই মনের পেছনে কিছু সুপ্ত বাসনা থাকে। যা আমরা বাস্তবতার চাপে কিংবা বয়সের মাঝে বেঁধে রেখে পূরণ করতে পারি না। কিন্তু ইচ্ছে গুলোকে বেঁধে রাখতে নেই, খুলে দিতে হয়। এরকম ই ইচ্ছে পূরণেরই একটি গল্প আজ লিখতে চলেছি।
গানের গলা ভালো হওয়ায় খুব ছোটবেলা থেকেই গান করতো অন্তর। মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট এর মধ্যে গিটার এর প্রতি তার খুবই আকর্ষণ ছিলো। বাবা-মা ও আগ্রহের সাথে একটি গিটার কিনে দিয়েছিলো ছেলেকে। রোজ সন্ধ্যায় গানের শিক্ষক এসে গান ও গিটার বাজানোর শিখিয়ে যেতো তাকে। স্কুলসহ শহরের বড় বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে অন্তরের গান না থাকলে অনুষ্ঠান ই যেন পূর্ণতা পেতো না। বেশ অল্প বয়সেই খুব সুনাম অর্জন করে নিয়েছিল সে।
কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথেই গানটা আর ধরে রাখতে পারলো না সে। অন্তর পড়াশোনায় ছিলো খুবই ভালো, তাই ওর প্রতি সবার প্রত্যাশাটাও অনেক বেশি ছিলো। তাই ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গান এর ইতি টানতে হয় তাকে।
ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ায় বসে বন্ধুদের আড্ডায় আবার ও শুরু হয় গান করা। যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হলো অন্তর, তখন গিটারটিও সাথে করে এনেছিলো ভার্সিটির হল এ। বন্ধু মহলে এবং সম্পূর্ণ ভার্সিটিতে সে ভালোই জনপ্রিয়তা অর্জন করলো গান দিয়ে। বন্ধুদের আড্ডা আর ভার্সিটির প্রোগ্রাম গুলো এখন অন্তরের গানই জমিয়ে রাখে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও গানের ভিডিও আপলোড করে ভালোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার গানের জগত এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে এটুকুও ল্যাব, অ্যাসাইনমেন্ট আর সিজিপিএ তে আটকে গেলো, আর বেরোতে পারল না। গান এর কিছু হোক না হোক, জীবনে তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে অন্যভাবে। কিন্তু সবকিছুর মাঝেও তার মনের কোণে গান করতে না পারাটা আক্ষেপ থেকেই যায়।
অন্তর এখন খুব ভালো একটা জব করছে। বিয়েও হয়ে গিয়েছে তার। আর একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান ও রয়েছে । রোজ সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে অফিসে যায়, আর বিকেল বেলা ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এই ছিলো তার রোজগার রুটিন। ছুটির দিন বেশিরভাগ সময়ই বিশ্রাম নিয়েই কেটে যায়। আর সন্ধ্যেবেলা যায় পরিবার সহ ঘুরতে। একদিন ঘুরতে ঘুরতে বাবার কন্ঠে গান শুনে অন্তর এর মেয়ে। বাবার গান শুনে মেয়ে রীতিমত মুগ্ধ হয়ে যায়। তার বাবা এতো ভালো গান গায় সেটা তার জানাই ছিল না। বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে জানতে পারে অন্তর এর ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি অন্যরকম একটা আকর্ষণ ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা থাকে তার ইচ্ছে পূরণ থেকে অনেকটা দূরে রেখেছে।
অন্তরে এর মেয়ে ভাবলো সে তার বাবার ইচ্ছে সে পূরণ করবে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় গিটার এর কোর্সের একটি ফর্ম নিয়ে এসেছে সে তার বাবার জন্য। বাবা অফিস থেকে ফিরতেই মেয়ে ছুটে গেল বাবার কাছে ফর্মটি নিয়ে। অন্তর ফর্ম টি হাতে ধরে কিছুটা আবেগী হয়ে গেলো। তার চোখের এক কোণে খুশিতে কিছুটা জল চলে এলো। কিন্তু এ বয়সে গিটার শিখবে কিভাবে। তখন মেয়ে বলল বাবা ইচ্ছে পূরণ এর কোন বয়স হয় না।
বাস্তবতা বেশিরভাগ সময় ই আমাদেরকে আমাদের ইচ্ছে পূরণ থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে যায়। তবুও মনের এক কোনে একটা আক্ষেপ থেকেই যায়। আর বয়স একটু বেড়ে গেলেই সমাজের কথা চিন্তা করে সে ইচ্ছা পূরণের কথা কল্পনাও করি না আমরা। কিন্তু ইচ্ছে পূরণের যে আসলেই কোনো বয়স হয় না। তাই ইচ্ছেটাকে বয়সের মাঝে বেঁধে না রেখে মুক্ত করে দিতে হয়। যাতে মৃত্যুর আগে কোনো আফসোস না থেকে যায় জীবন নিয়ে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.