রেললাইন ও 'দি কমোডর' ভ্যান-ডার-বিল্ট।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আজকে একটি ভিন্ন ধরণের লেখা শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।

যখনই আমি রেললাইন দেখি তখনই দি কমোডর নামে পরিচিত এক ভদ্রলোকের কথা মনে পড়ে যায়। কে এই ভদ্রলোক? রেললাইনের সাথে তার সম্পর্ক কী? চলুন জানা যাক।

দি কমোডরের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

ভদ্রলোকের নাম কর্নেলিয়াস ভ্যান-ডার-বিল্ট। ১৬৫০ সালের দিকে তার এক পূর্বসূরি নেদারল্যান্ড থেকে তৎকালীন নিউ আমাস্টারডাম শহরে আসে যার বর্তমান নাম নিউ ইয়র্ক। কর্নেলিয়াসের বাবার বাসস্থান ছিল স্ট্যাটেন দ্বীপে। একটি ফেরীর মাধ্যমে তিনি নিউ ইয়র্কের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে দু-চার পয়সা কামাতেন। তারই ছেলে কর্নেলিয়াস ১১ বছর বয়সেই স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। পরের বছর বাবার ফেরীতে কাজ শুরু করেন।

কর্মজীবন শুরু

১৬ বছর বয়সে তিনি ভাবলেন এবার নিজেই একটা ফেরী পরিচালনা করতে পারবেন। আর তাই মায়ের কাছ থেকে ১০০$ ধার করে একটি ফেরীও নিয়ে নিলেন। অবশ্য ১৮০০ সালের প্রথম দশকের সেই ১০০ ডলারের বর্তমান বাজার মূল্য ১৭০০ ডলার।

ফেরী ব্যবসায় তিনি এতটা দক্ষতা দেখিয়েছেন যে অন্য ফেরী চালক, মালিক, পরিচালকরা তাকে ** দি কমোডর** নামে ডাকা শুরু করলো। কমোডর ছিল তখনকার আমেরিকান নেভীর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদবী। এভাবেই তিনি পরিচিত পেলেন এই নামে।

পদোন্নতি এবং আরও সাফল্য

তিন বছরের মধ্যে থমাস গিবসন নামের এক ব্যবসায়ী তাকে নিজের বাষ্পচালিত জাহাজ কোম্পানি পরিচালনার প্রস্তাব দেয়। হাডসন নদীর অলি-গলি তার মুখস্থ ছিল। রাজি হয়ে যায় সে। নিজের ফেরী পরিচালনাও সে চালু রেখেছিল। গিবসনের কোম্পানির দায়িত্বও সামলাচ্ছিল।

অল্প ক'বছরের মধ্যে সে এরকম জটিল একটা কাজের গোমর আত্মস্থ করে ফেললো। বছর তিনেক পর থমাস গিবসন মারা গেলে তার ছেলে উইলিয়ামের অধীনে কাজ করতে থাকেন কর্নেলিয়াস। কিন্তু উইলিয়াম স্টিমবোটের ব্যবসায় মন বসাতে পারেনি। সব বিক্রি করে দেয় কর্নেলিয়াসের কাছে। কমোডরও কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে সব কিনে নেয়। এভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি স্টিমবোট কোম্পানির মালিক হয়ে যান তিনি।

চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জ জয়

এইসময় নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তিনি। হাডসন নদীতে একচ্ছত্র আধিপত্য করত তখন ড্যানিয়েল ড্রিউ নামের একজন। কর্নেলিয়াস তার প্রতিপক্ষ হওয়ায় দুইজনের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেন তারা। চুক্তির ফলস্বরূপ, দুইজন দুইদিকে নিজেদের নৌযান পরিচালনা করতে থাকেন।

ধীরে ধীরে অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ শুরু করেন কমোডর। ব্যাংকিং খাত, স্টক মার্কেট, স্বর্ণ কারবারসহ ফুলে ফেঁপে উঠে তার ব্যবসা।

ক্রুজ শিপ এবং রেলওয়েতে বিনিয়োগ

একসময় নিউইয়র্কের বেশিরভাগ ডক ইয়ার্ডের মালিকানা চলে আসে তার হাতে। এসময় তিনি ক্রুজ শিপে বিনিয়োগ করতে থাকেন। কিন্তু তাতে তেমন সাফল্য আসেনি। নতুন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার খোঁজে থাকেন তিনি।

আমেরিকায় তখন নতুন রেলওয়ে শুরু হয়েছিল। ভ্যান-ডার-বিল্ট তখন সকল ক্রুজ শিপ তার পার্টনারদের কাছে ছড়া মূল্যে বিক্রি করে রেলওয়েতে বিনিয়োগ করেন। তার দূরদর্শিতা এতই প্রখর ছিল যে তিনি নিজ খরচায় বোস্টন থেকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অলিগলিতে রেললাইন নির্মাণ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তার রেললাইন জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ফলে, Harlem এর প্রধান হয়ে ওঠেন তিনি।

নিউইয়র্ক গ্রান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল নির্মাণ

Harlem এর প্রধান হওয়ার দরুন তিনি সহজেই সরকারকে বাধ্য করেন নিউইয়র্কে একটি বড় রেললাইন টার্মিনাল নির্মাণের জন্য। তখন ম্যানহাটনে গ্রান্ড সেন্ট্রাল ডিপোট তৈরি হয় যা পরবর্তীতে বর্তমান নাম গ্রান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালএ রূপান্তরিত হয়।




Image Source from Pexel by Jorge Alcala

ভ্যান-ডার-বিল্ট তার মৃত্যুর সময় (১৮৭৭) আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসাবে মারা যান। পরবর্তীতে তার ছেলে উইলিয়াম ভ্যান-ডার-বিল্ট দায়িত্ব নেন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। তার মৃত্যুর পর (১৮৮৫) ভ্যান-ডার-বিল্ট হাউজের উত্তরসূরিদের অদূরদর্শীতার কারনে পতন ঘটে ভ্যান-ডার-বিল্ট হাউজের। হারিয়ে যায় তাদের নাম।

কিন্তু নিউইয়র্কের সাবওয়ে সবসময় মনে রাখবে একচেটিয়া রাজত্বকরা এই মহাপুরুষকে যিনি আমেরিকান সিভিল ওয়্যারের সময় নিজের আধিপত্য বৃদ্ধির জন্য আব্রাহাম লিঙ্কনের ইউনিয়ন নেভিকে নিজের জাহাজগুলো দিয়েছেন বন্ধু হিসাবে।

Photo Details

লোকেশন তালটিলা রেলগেট, পূবাইল, গাজীপুর। ডিভাইস TECNO SPARK 6

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.08
TRX 0.29
JST 0.035
BTC 106696.86
ETH 3619.19
USDT 1.00
SBD 0.51