ছোটবেলার ঈদ স্মৃতি

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম। রাত পোহালেই বাংলাদেশ এবং আশেপাশের দেশগুলোতে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। ধর্মীয় দিক থেকে ইসলাম ধর্মে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কুরবানির এই ঈদ। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দ্যেশ্যে করা কুরবানির মহিমাকে চিরন্তন রাখার জন্য সামর্থ্যবান মুসলমানদেরকে কুরবানির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে, আজকে আমার লেখার হেতু তা নয়। আমার লেখার মুখ্য বিষয় হচ্ছে ছেলেবেলার কুরবানির স্মৃতি রোমন্থন করা।

pexels-chattrapalsingh-2989625.jpg
image source[pxels.com]credit[Chattrapal]

কেমন ছিল তখনকার ঈদ?

কুরবানির ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দ্যেশ্যে একটি হালাল পশুকে জবাই করা হয়। উপমহাদেশে আগে দুম্বা ও ছাগল কুরবানির প্রচলন ছিল বেশি। যতটুকু জানি, আমাদের এই অঞ্চলে গরু কুরবানির প্রচলন অধিক গ্রহণযোগ্য হয় হাজী শরিয়তউল্লাহর প্রয়াশে। একসাথে সর্বোচ্চ সাতজন একটি গরু কুরবানি করতে পারে বলে তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই দেশে। ফলে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে গরু কুরবানী হয়। যদিও এখনও এই ধারা চলমান রয়েছে।

গরু নিয়ে আমাদের উত্তেজনা

আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে কুরবানির গরু নিয়ে একটি উত্তেজনা কাজ করত। গ্রামের হাটগুলো সাপ্তাহিক বার অনুযায়ী বসত৷ ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসত হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার পরিমাণও বাড়ত। আমাদের ঈদের গরু তুলনামূলক বড় হাট থেকে কেনা হত। ওই হাটগুলো ছিল অনেক দূরে। ছোট ছিলাম বলে হাটে যাওয়ার অনুমতি ছিলনা। কিন্তু অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম গরুর জন্য।

এক গ্রাম থেকে অনেকেই হাটে যেত। কেউ আবার বিক্রির উদ্দেশ্যেও যেত। যখনই কেউ গরু কিনে বা বিক্রি করে আসত, তিনি অন্য সবার খবরও নিয়ে আসত৷ তখন তো মোবাইল ছিলনা হাতে হাতে। তাদের নিয়ে আসা খবরই ছিল জানার একমাত্র মাধ্যম। তারা এসে বলত, অমুক এত টাকা দিয়ে গরু কিনেছে! তমুক এখনও কিনতে পারেনি, ইত্যাদি ইত্যাদি। যখন শুনতাম আমাদের গরু কেনা হয়ে গেছে, অপেক্ষার পালা শুরু হতো।

গ্রামে রাত দশটা তখন অনেক রাত ছিল। বিদ্যুৎ ছিলনা। আমরা বাচ্চারা তো কুরবানির ঈদের আগের রাত ছাড়া অন্য কোন রাতে জাগতামও না। তাই ঘুম পেয়ে বসত। কিন্তু হাটগুলো যেহেতু অনেক দূরে ছিল আর এখনকার মত পিকাপ ছিলনা তাই গরু হাটিয়েই নিয়ে আসা হত। আমার ছোট চাচা এবং উনার সমবয়সী অন্য ভাগিদারের ছেলেরা যুবক হওয়ায় তারা গরু নিয়ে আসত যাতে ছুটে গেলে আটকে রাখতে পারে।

একসময় হাওয়ার বেগে খবর চলে আসত গরু বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে। একসাথে অনেক গরু আসত। যেহেতু রাতে ডাকাতের ভয় ছিল তাই সবাই একসাথেই আসত। পুরো বাড়ি শুদ্ধা মানুষ রাস্তায় গিয়ে উঠতাম। আমাদের বাড়ি অনেক বড় ছিল। ২৮/৩০টা পরিবার থাকত। অনেক মানুষ, অনেক বাচ্চাকাচ্চা! রাত বারোটার পরই যেন নতুন একটি দিন! কি হৈ-হুল্লোড়! কি আনন্দ!

আমরা হ্যারিকেনের আলোয় গরু দেখতাম। ইয়া বড় গরু! বেশ খুশি খুশি লাগতো। পরদিন থেকে ঈদের দিন জবাই করার আগ পর্যন্ত খুব যত্ন করতাম। খাবার কিনে আনা,ঘাস কাটা, খড় দেয়া, ঘুমের ব্যবস্থা করা; খুব খেয়াল রাখতাম আমরা বাচ্চারা। সকালে ঘুম থেকে গরুর সামনে দাড়াতাম, রাতে ঘুমের আগ পর্যন্ত থাকতাম।

ঈদের দিন

সাধারণত রমজানের ঈদে আমরা ঈদগাহ এবং বাজার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কুরবানির ঈদে আমাদের সব ধ্যান-জ্ঞান থাকতো গরুকেন্দ্রিক। কখন জবাই হবে, কাদেরটা আগে হবে; এসব নিয়ে আরেক উত্তেজন! কোন গরু আরামসে জবাই হয়েছে, কোন গরু শোয়াইতে কষ্ট হয়েছে, কোন গরু দৌড় মেরেছে এসব খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে যেত।

একসময় দেখতাম মাংস ভাগাভাগিও শেষ। কুরবানির তাৎপর্য অনুযায়ী মাংস বিলি করা হত সবার মধ্যে। যেসব গরীবরা কুরবানী দিতে পারেনি, তাদেরকে মাংস দেয়া হতো। আত্মীয়দেরকে দেয়া হত, প্রতিবেশীদের দেয়া হত। এভাবেই আমাদের ঈদের দিন শেষ হত।

Sort:  
 3 months ago 

খুব সুন্দর ভাবে কোরবানির শিক্ষার চেতনা আপনি তুলে ধরেছেন আপনার লিখনীর মাধ্যমে। হালাল পশু জবের মধ্য দিয়ে নিজের আত্মাকে উৎসর্গিত করতে হয়। তবে ঈদুল আযহাকে ঘিরে রয়েছে নানান আমেজ। আপনাকে ধন্যবাদ ঈদুল আযহার পূর্ণাঙ্গ তাৎপর্য আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

 3 months ago 

ঠিক বলেছেন ভাই। আপনাকে স্বাগতম।

 3 months ago 

ধন্যবাদ আপনার ছোটবেলার স্মৃতি শেয়ার করার জন্য, তবে বানানের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ রইল।

 3 months ago 

ধন্যবাদ ভাই। আমি বানানের ব্যাপারে যত্নশীল। সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ভুল না করার। তবুও, আরও সচেতন হওয়ার চেষ্টা করব।

এনিওয়ে, ভাই, আপনার সাথে আমার একটু কথা ছিল। ডিসকর্ড গ্রুপে কি মেনশন দিবো?

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56890.04
ETH 2356.22
USDT 1.00
SBD 2.39