পুলিশ ও ছিনতাইকারী কার অপরাধ বেশি?
রাজিব বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে মোবাইলে সময় দেখল। রাত প্রায় একটা বেজে গিয়েছে। বন্ধু বান্ধব মিলে মজা করতে করতে কখন এত রাত হয়ে গিয়েছে সেটা ও বুঝতেই পারেনি। এখন এত রাতে কিভাবে বাড়ি ফিরবে সেটাই চিন্তা করছে। আশেপাশে কোন রিক্সাও দেখতে পাচ্ছে না। সাথে রাস্তার লাইটগুলো কিছু কিছু জ্বলছে তো কিছু কিছু জ্বলছে না। জায়গায় জায়গায় অন্ধকার হয়ে আছে। রিক্সা না পেয়ে রাজিব হেঁটে আগাতে লাগলো। কারণ এত রাতে কতক্ষণ পর রিকশা পাওয়া যাবে সেটা সে বুঝতে পারছিল না। এভাবে রাজিব আস্তে আস্তে করে হেঁটে আগাতে থাকলো।
কিন্তু এই গভীর রাতে নির্জন রাস্তায় রাজীবের বেশ ভয় লাগছিল। রাস্তায় একটি মানুষ ও নেই। এই ধরনের রাস্তায় রাজীবের চলার খুব একটা অভিজ্ঞতা নেই। যার ফলে তার ভয়টা একটু বেশিই লাগছিল। তাছাড়া শহরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে ছিনতাই, ডাকাতি হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। রাজীবের বারবার মনে হচ্ছিল আজ রাতটা বাসায় না ফিরে বন্ধুর বাড়িতে থেকে গেলেই ভালো হতো। সকাল বেলা উঠে বাসায় চলে গেলেই হতো। কিন্তু এখন অনেকটা দূর চলে এসে আর রাজীবের ফিরতে ইচ্ছা করছিল না। এভাবে আগাতে আগাতে রাজিব দেখতে পেল সামনে অন্ধকার মত একটি জায়গা। দূর থেকে সেখানে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তার কেমন একটু অস্বস্তি লাগতে লাগলো।
তার অবচেতন মন তাকে বলছিল সামনে আর যাওয়ার দরকার নেই। সামনে তার জন্য কোন বিপদ অপেক্ষা করছে। কিন্তু তারপরও সে মনের ভয় কে দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে গেলো। সেই অন্ধকার জায়গায় পৌঁছানোর সাথেই কয়েকজন লোক তাকে ঘিরে ধরল। অন্ধকারের ভেতর রাজিব খুব একটা পরিষ্কার বুঝতে পারল না। তবে সে বুঝতে পারলো এই লোকগুলোর কাছে ধারালো অস্ত্র রয়েছে। তাদের ভিতর একজন রাজীবের গলার কাছে ধারালো অস্ত্র ধরে বলল যা কিছু আছে চুপচাপ বের করে দে। না হলে কিন্তু তোর ঘাড় থেকে মাথাটা নামিয়ে দেবো। রাজীব বুঝতে পারল এখানে চিৎকার চেঁচামেচি করে কোন লাভ হবে না। তাই সে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দিয়ে দিলো। এর ভেতরে ছিনতাইকারীদের একজন রাজিবের অন্য পকেটে হাত দিয়ে মোবাইলটা বের করে নিল। তারপর পেছন থেকে একজন রাজীবকে একটি চড় মেরে বলল চুপচাপ সোজা চলে যাবি। কোন শব্দ হলে কিন্তু কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলব।
রাজিব বুঝতে পারল এখানে কথা বলে কোন লাভ হবে না। তাই সে ধীরে সুস্থ্যে সামনে আগাতে লাগলো। এভাবে একসময় মেইন রোডে পৌঁছে গেল সে। মেইন রোডে পৌঁছানোর পর রাজিব সেখানে একটি অটো রিক্সা দেখতে পেল। তারপর অটো রিক্সায় চড়ে বাড়ি পৌঁছালো সে। বাড়ি পৌঁছে রাজীব তার বাবা মাকে সবকিছু খুলে বলল। রাজিবের মানিব্যাগে বেশি টাকা ছিল না। কিন্তু তার কাছে যে মোবাইল ফোনটা ছিল সেটা সে অল্প কিছুদিন হল কিনেছে। মোবাইলটা তার খুবই পছন্দের ছিল। বেশ দাম দিয়েই মোবাইলটা সে কিনেছিল। মোবাইলটার জন্য তার খুব খারাপ লাগছিল।
তার বাবা তাকে পরামর্শ দিল কালকে সকালে থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দিয়ে এসো। দেখো তারা কোনভাবে মোবাইলটা উদ্ধার করতে পারি কিনা। পরামর্শটা রাজিবের পছন্দ হলো। রাজীব তার বাবার সাথে কথাবার্তা বলে ঘুমাতে গেল। ঘুম থেকে উঠে রাজিব নাস্তা করে থানায় রওনা দিল। থানায় যাওয়ার সময় রাজিব তার মোবাইল কেনার কাগজপত্র সাথে নিয়ে গিয়েছে। রাজিবের থানা সম্বন্ধে আগে থেকে তেমন কোন অভিজ্ঞতা নেই। তাই সে প্রথমে বুঝতে পারছিল না কার কাছে যাবে কি করবে।
পরে একজন পুলিশ কনস্টেবলের কাছে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল আপনি ডিউটি অফিসারের সাথে দেখা করেন। তিনি আপনাকে বলে দেবেন কি করতে হবে? পরে রাজিব ডিউটি অফিসারের সাথে দেখা করতে গেলো। ডিউটি অফিসার তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা? তখন রাজিব পুরো ব্যাপারটা খুলে বলল। তখন ডিউটি অফিসার রাজিব কে অন্য একজন পুলিশ অফিসারের কাছে পাঠিয়ে দিল। তাকে বলল একটি মোবাইল হারানো গিয়েছে এই মর্মে অভিযোগ নিতে। হারানো গিয়েছে শুনে রাজিব কিছুটা আপত্তি করলো। সে বলল আমার মোবাইল তো ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাই এর কথা বলার সাথেই পুলিশ অফিসারটি রাজীবের সাথে দুর্ব্যবহার করা শুরু করলো। বলল ছিন্তাই হয়েছে তার প্রমাণ কি? নাকি নিজেই মোবাইল বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে নেশা করেছো। এখন থানায় এসেছো নাটক করতে?
এর ভেতর অন্য একজন পুলিশ রাজীবকে বলল ছিনতাই এর কথা বলা যাবেনা। ওসি স্যারের নিষেধ আছে। আপনি যদি মোবাইল ফেরত চান তাহলে আপনি হারানোর অভিযোগ দায়ের করুন। তাহলে আমরা চেষ্টা করে দেখব আপনার মোবাইল উদ্ধার করার। রাজিব ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারল না। ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিতে থানার লোকজনের এই অনীহার কারণটাকে একেবারেই বুঝতে পারছিল না সে। সেই সাথে পুলিশ অফিসারের দুর্ব্যবহারে রাজিবের চোখে পানি চলে এলো। রাজিব চিন্তা করছিল সে সারাজীবন শুনেছে যে পুলিশ জনগণের বন্ধু। কিন্তু এখন পুলিশ তার সাথে যে ব্যবহারটা করল তাতে তার কাছে পুলিশকে আর কিছুতেই বন্ধু বলে মনে হচ্ছে না। রাজিব কোন অভিযোগ না দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।
তখন রাজীবকে এক পুলিশ কনস্টেবল বলতে লাগলো শুনেন। ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিতে বড় সাহেবের নিষেধ আছে। কারণ প্রতি মাসে আমাদেরকে হেডকোয়ার্টারে কোন অপরাধ কতগুলি সংঘটিত হয়েছে তার একটা রিপোর্ট পাঠাতে হয়। হেডকোয়ার্টার থেকে যখন দেখবে ছিনতাই অনেক হয়েছে তখন বড় সাহেবকে নানা রকম জবাবদিহি করতে হবে। তাই আমরা সহজে ছিনতাইয়ের অভিযোগ নেই না। রাজিব পুলিশ কনস্টেবলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর সে বলল আপনারা সমস্যার সমাধান না করে সেটা গোপন করার চেষ্টা করছেন। এটা কি ঠিক হচ্ছে? এই কথা বলে সে থানা থেকে বেরিয়ে এলো। (সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমার কাছে মনে হচ্ছে পুলিশরা কখনো জনগণের বন্ধু নয়।কারণ নিজের দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে তারা তাদের কাজকে আরো পদদলিত করার চেষ্টা করছে।সরকারি কর্মকান্ডে যুক্ত থেকে ও তারা তাদের কাজকে অবমাননা করছে এটা ও কম অন্যায় নয়।বেচারা রাজীবের জন্য খারাপ লাগলো।ভালো ছিল লেখাটি ভাইয়া।
আপনার পুরো লেখা পড়ে খারাপ লাগলো ভাইয়া। আসলে এটা এখন মানুষ কিছু মনে করে না। এখন ছিনতাই চুরি হলে পুলিশের কাছেও অনেকে যায় না, শুধুমাত্র তাদের অসাধু আচরনের জন্য। ছিনতাই রিপোর্টে লিখলে তাদের রেপুটেশন খারাপ হবে তাই রিপোর্টে এগুলো লিখতে চায় না। আর এই সব উপরের আমলাদের ইশারায় ই হয়। রাজীবের ভাগ্য খারাপ যে সে এমন একটি সমাজে বেড়ে উঠেছে, যেখানে আইন অন্ধ। আমিও ভুক্তভোগী ছিলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে ভাই বলা হয় পুলিশ জনগণের বন্ধু এবং পুলিশ সর্বদায় জনগণের সেবায় নিয়োজিত, কিন্তু আমাদের সমাজের বর্তমান চিত্র ভিন্ন রকম পুলিশ সব সময় সঠিক ব্যবহার করেনা।কিছু পুলিশের আবার ভালো, তবে বেশিরভাগ পুলিশি যেন দায়িত্বের প্রতি অবহেলা।যে কোন বিষয় যেন তারা অবহেলা করে। যদিও অতিরিক্ত অর্থ যদি দেওয়া হয়। তাহলে কাজটি করে।এটা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। রাজিব ভাইয়ের জন্য খুবই খারাপ লাগছে। যে আমাদের মত এমন একটি সমাজে বসবাস করছে যে সমাজে জনগণের কোনো দাম নেই এবং আইন-শৃঙ্খলা সঠিক ব্যবহার আমরা পাচ্ছি না। ভালো লাগলো আজকের লেখাটি।
পুলিশল জনগণের বন্ধু আসলেই কি জনগণের বন্ধু নাকি অন্য কিছু৷ রাজিবের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সম্পূর্ণ পড়লাম ৷ আসলে এখানে কিছু করার নেই বর্তমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে আসলে বলে বোঝানো সম্ভব না ৷ কারণ বর্তমান সবার আগে মানুষ শুধু প্রমান খুজে ৷ শুধু পুলিশ নয় আপনি যেকোন মামলা দায়ের করার জন্য প্রমাণ প্রমাণ ছাড়া যেন কোন কাজ নেই৷
কিন্তু আমি বা আপনি যে নির্যাতিত হয়েছি৷ সেটা তারা বোঝে না তারা শুধু প্রমাণটাই খুঁজে
আসলে এমন ঘটনায় ঘটছে অহরহ। আসলে আমার তো মনে হয়,ছিনকারির সাথে তাদের হাত থাকে।তা না হলে রাস্তা কেন অন্ধকার থাকবে,তাছাড়া ওনার জবাবদিহির জন্য, সে অভিযোগ লিখবে না।আসলে কি পুলিশ রাই বেশি অপরাধী।
কথায় আছে সুযোগের সদ্ব্যবহার। তবে সব শ্রেণীর পুলিশরা খারাপ হয় না এটা আমি বিশ্বাস করি। কিছু সংখ্যক পুলিশ রয়েছে যাদের ব্যবহার গুলো এবং কার্যকলাপ ছিনতাই কারী বা খারাপ শ্রেণীর মানুষের মতো এবং তারা খারাপ কেই প্রশ্রয় দিয়ে থাকে গোপনে। আর এগুলো মূলত অভাব নয় স্বভাবের কারণ। পুলিশ কনস্টেবল যে কথাগুলো বলল তা মূলত উনাদের সাজানো কথা। যাদের কাছে জনগণ সহায়তা প্রত্যাশী সেখানেই বেআইনি কার্যকলাপ।