দ্বিতীয় জীবন (শেষ পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।
তারপর রাকিব বোতলটি নিয়ে সাঁতরে আবার সেই কাঠের টুকরোটার কাছে চলে এলো। কাঠের টুকরোর উপরে উঠে রাকিব বোতল থেকে কিছুটা পানি খেয়ে নিলো। যদিও সেখানে বেশি পানি ছিল না। সর্বসাকুল্যে হয়তো আধা লিটার পানি হবে। রাকিব দ্বিতীয়বার পানি মুখে দিতে গিয়ে মনে করল এত দ্রুত সবটুকু পানি খেয়ে নেয়া যাবেনা। কারণ তাকে কতক্ষণ সমুদ্রে থাকতে হবে সেটা সে এখনো জানেনা। খাবার পানি বলতে এই টুকুই তার সম্বল। যার ফলে এটা খুব হিসেব করে খরচ করতে হবে।
তবে পানির বোতল পাওয়ার কারণে রাকিব একটু আশার আলো দেখতে পেলো। সে বুঝতে পারলো এই পথ দিয়ে জাহাজ বা মাছ ধরা নৌকা চলাচল করে। না হলে এখানে পানির বোতল আসার কথা না। রাকিব আবার নতুন করে আশায় বুক বাঁধে। এইভাবে সারাটা দিন প্রচণ্ড সূর্যের তাপের ভেতরে রাকিব কাঠের টুকরোর উপরে কাটিয়ে দিলো। অবশ্য মাঝে মাঝে সমুদ্রের পানিতে নেমে সে গা ভিজিয়ে নিয়েছে। তবে কখনই বেশিক্ষণ পানির ভেতর বেশিক্ষণ থাকেনি। কারণ রাকিবের সবসময়ই ভয় করছিল কখন না জানি কোন হিংস্র হাঙ্গর চলে আসে।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলো রাকিব কিছু খায়নি। প্রচন্ড ক্ষুধায় সে দুর্বল হয়ে পড়েছে।শুধু সামান্য একটু পানি আছে তার কাছে। প্রায় একটা দিন পার হয়ে গেলো। এর ভেতরে সে কোন মাছ ধরার নৌকা ও দেখতে পায়নি। এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আবার আরো একটি নিকষ কালো রাত তার জন্য অপেক্ষা করছে। রাকিব এত দুর্বল হয়ে পড়েছে যে কাঠের টুকরো টার উপরে মরা মানুষের মতো পড়ে আছে অনেকটা অচেতন অবস্থায়। এভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে কখনো সে ঘুমিয়ে পড়ছিলো আবার কখনো জেগে উঠছিলো।
এরকম অবস্থায় থাকতে থাকতে হঠাৎ করে রাকিব যে কাঠের উপরে শুয়ে ছিল সেটি কোন কিছুর সাথে বেশ জোরে ধাক্কা খেলো। রাকিব ছিটকে সমুদ্রের পানিতে পড়ে যায়। সমুদ্রের পানিতে পড়ে রাকিবের কিছুটা জ্ঞান ফিরে এলো। সে প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে। হঠাৎ করে সে তাকিয়ে একটি আলো দেখতে পেলো। আলোটি তার কাছেই ছিলো। কিন্তু রাকিবের মাথায় প্রথমে কাজ করছিল যেভাবে হোক সে কাঠের টুকরোটার ওপর আবার উঠতে হবে। রাকিব আশেপাশে তাকিয়ে যখন কাঠের টুকরোটা খুজছিলো তখন সে দেখতে পেল তার খুব কাছেই একটি মাছ ধরার নৌকা।
নৌকা থেকে লাইট দিয়ে অন্ধকার তারা দেখার চেষ্টা করছিল নৌকাটা কিসের সাথে ধাক্কা লাগলো। রাকিব সেই আলো দেখে চিৎকার করার অনেক চেষ্টা করলো। কিন্তু তার গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল না। সে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে শেষবারের মতো একবার চেষ্টা করল চিৎকার করার। এবার তার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলো। তার আওয়াজ শোনার সাথেই নৌকার লোকজন তার ওপরে আলো ফেললো। তারা রাকিবকে দেখতে পেয়ে দ্রুত তার কাছে এসে তাকে উপরে তুলে নিলো।
উপরে উঠার পরে রাকিব জ্ঞান হারালো। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে দেখতে পেলো কয়েকজন লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে। রাকিব তাদেরকে দেখেই প্রথমে পানি চাইলো। কিন্তু তারা রাকিবের কথা বুঝতে পারলো না। লোকগুলি নিজেদের ভেতর কথা বলছিলো। কিন্তু রাকিব তাদের কথা কিছুই বুঝতে পারছিলো না। রাকিব যখন হাত ইশারায় বোঝাল পানির কথা তখন একজন গিয়ে পানি এনে দিলো। রাকিব পানির বোতল পেয়ে একবারে অনেকটা পানি খেয়ে ফেললো। যদিও সে জানে এটা মোটেই ঠিক হয়নি। দীর্ঘক্ষন তৃষ্ণার্ত থাকলে আস্তে আস্তে করে পানি খেতে হয়। এর ভিতর লোকজন তাকে কিছু প্রশ্ন করছিলো। কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছিল না। হঠাৎ করে তাদের পেছন থেকে এক লোক রাকিবকে ইংলিশে জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি? তুমি কি ইংলিশে কথা বলতে পারো? রাকিব তখন মাথা নাড়ালো।
পরে রাকিব আস্তে আস্তে তাদের কাছে সব কিছু খুলে বললো। তারা সবাই রাকিবের কথা শুনে অবাক বিস্ময় রাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলো। রাকিবের অবস্থা দেখে তারা দ্রুত সমুদ্রের পারে ফিরে গেলো। পরবর্তীতে তারা রাকিবকে নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলো। সাথে সেখানকার বাংলাদেশ এম্বাসিতে তারা জানিয়ে দিলো। প্রায় পনেরো দিন রাকিব সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়ে বাংলাদেশ এম্বেসী মাধ্যমে ইন্ডিয়া থেকে দেশে ফিরে এলো। এভাবেই রাকিব তার দ্বিতীয় জীবন পেলো। (সমাপ্ত)
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
ভাইয়া অনেক সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন, এ পর্বটি পড়ে কিন্তু অনেক মজা পেয়েছি সে বাকি সব পর্ব একসাথে করে পড়লে অনেক বেশি মজা পেতাম। তবে সময় করে ওই দুই পর্ব পড়ে নেব।
আর এই ধরনের কাহিনী আমি কিন্তু ডিসকভারি চ্যানেলে অনেক দেখেছি। অনেক কষ্টদায়ক এই মুহূর্তগুলো।
গল্পটি পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার এই ধরনের কাহিনী আমিও কিছু দেখেছি ডিসকভারি চ্যানেলে।
আপনার এই গল্পটা আমি প্রথম থেকেই পড়েছি। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আর আমি এই পর্বের খুবই অপেক্ষায় ছিলাম পেয়েও গেলাম। পড়ে আসলে খুব ভালো লাগলো। আর এটা বেশী ভাল লাগল যে অবশেষে রাকিব বেঁচে গেল আর মা-বাবার কাছে ফিরে আসতে পারল। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই আর এরকম গল্প আরো পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। গল্পটি শুরু থেকে পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো।
যাক অবশেষে রাকিব তার দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেয়েছে জানতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। বাংলায় একটি কথা আছে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে- তিন বিধাতা নিয়ে। বিধাতা যদি কাউকে রাখে, তাকে মারার সাধ্য কার। অনেক সুন্দর গল্প লিখেছেন। আপনার গল্পের নামের সার্থকতা হল। আবারও রাকিবের জন্য শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি গল্প। রাকিবের অন্তরালে গল্পের লেখক এই গল্পের প্রকৃত নায়ক এর থেকে কম নয়। তবে এতো কিছুর মধ্যে রাকিবের পানি খাওয়া বা না খাওয়ার, যে স্মৃতিশক্তি অস্বাভাবিক ভাবে কাজ করছিল সেটা আসলেই বিস্ময়কর। গল্পের শেষটা হতাশার না হয়ে সুন্দর হওয়ার জন্য অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।