ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখা সাথে পিকনিক।
গতকাল ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। এই খেলা উপলক্ষে আমাদের দেশে চারদিকে একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। কারণ বাংলাদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দল আর্জেন্টিনা। সেই আর্জেন্টিনা এবার ফাইনালে উঠেছিল। যদিও আরেকটি জনপ্রিয় দল ব্রাজিল ফাইনালে আসার আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ঝরে পড়েছিল। আমার আশা ছিল এবার আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের ফাইনাল ম্যাচ দেখবো। কিন্তু ব্রাজিল ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় আর সে আশা পূরণ হয়নি।
সে যাই হোক ফাইনাল খেলার জন্য চারদিকে একটি উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। আমি আগে থেকেই চিন্তা ভাবনা করে রেখেছিলাম ফাইনাল খেলার দিন আমরা বাড়ির বাইরে খেলাটি দেখবো। সাথে একটি ছোট পিকনিকের আয়োজন করব। দীর্ঘদিন হলো আমি কোন পিকনিকে অংশগ্রহণ করিনি। তবে এবার আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। এজন্য ফাইনাল খেলার দুদিন আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। প্রথমে আমাদের ইচ্ছা ছিল ৩০-৪০ জনের আয়োজন করা। কিন্তু লিস্ট করতে করতে একসময় সেটা বাড়তে বাড়তে ১০০ পার হয়ে গেল মানুষের সংখ্যা। এলাকার পিকনিকে সাধারণত যেটা হয়ে থাকে আর কি। কারণ এখানে সবাই পরিচিত। কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখবো সেটাই চিন্তা করতে হচ্ছিল।
পরিশেষে পিকনিকের আয়োজনটা আমরা এমনভাবে করেছিলাম যাতে কাউকে খালি মুখে ফেরাতে না হয়। প্রথমে আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মানুষজন কম থাকায় আমরা চিন্তা করেছিলাম কাচ্চি বিরিয়ানি করবো। কিন্তু যখন মানুষজনের সংখ্যা ১০০ পার হয়ে গেলো। তখন চিন্তা করলাম কাচ্চি বিরিয়ানি করে এখন পোষানো যাবে না। তাই আমরা মাংস খিচুড়ির ব্যবস্থা করলাম। দুদিন আগে থেকেই নির্ধারিত লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছিল। এর ভেতর আমাদের এলাকার দুজন বড় ভাই বেশ ভালো পরিমানে টাকা দিয়েছিলেন। কারণ আমাদের এই পিকনিকে শেষ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছিল।
যেহেতু আমরা বাইরে খেলা দেখার চিন্তা করেছিলাম। তাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল খেলাটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখার। সেজন্য একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল প্রজেক্টর ঠিক করার ব্যাপারে। কিন্তু খেলার দিন বিকালে জানা গেল সে এখনো প্রজেক্টর ম্যানেজ করতে পারেনি। কারণ অন্যান্য জায়গা থেকে লোকেরা ইতিমধ্যে প্রজেক্টর বুকিং দিয়ে নিয়ে গিয়েছে। যাকে প্রজেক্টর সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে বেশ রাগারাগি করা হলো। তারপর এলাকার এক বড় ভাইয়ের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত একটি প্রজেক্টর ম্যানেজ করা হয়েছিল।
আমাদের পরিকল্পনা ছিল খেলা শুরুর আগেই খাওয়া-দাওয়া কমপ্লিট করা। কারণ খেলা শেষের পরে খাওয়া-দাওয়া করতে গেলে তখন একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আমাদের রান্না শুরু হয়েছিল দুপুরের পর থেকেই। মোটামুটি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার ভেতরে আমাদের রান্না কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল। যখন খাবার জন্য সবাইকে ডাকা হল তখন অনেকেই জানালো তারা পরে খাবে। যার ফলে আমরা যারা প্রথমে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম তারা খাওয়া-দাওয়া করে নিলাম। শুধু নিজেরা খেয়েছিলাম তা নয়। এলাকার অনেক বাসায় বক্সে করে খাবার পাঠানো হয়েছিল।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে খেলা দেখতে শুরু করলাম। খেলাটি চরম উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। যদিও ফ্রান্স দল হিসেবে খুবই খারাপ খেলেছে (এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত)। কিন্তু আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই ভালো খেলছিল। ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত সম্ভবত আর্জেন্টিনা দুই শূন্য গোলে এগিয়ে ছিল। তারপর হঠাৎ করে এমবাপ্পে ঝড়ে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ফ্রান্স দুটি গোল পরিশোধ করে দেয়। খেলা গড়ায় এক্সট্রা সময়ে। সেখানে প্রায় একই রকম নাটক মঞ্চস্থ হয়। আর্জেন্টিনা প্রথমে একটি গোল দেয়ার পর খেলা যখন প্রায় শেষের দিকে। তখন ফ্রান্স সেই গোলটি পরিশোধ করে দেয়।
তারপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। তবে আমার আগে থেকেই মনে হচ্ছিল খেলা যদি টাইব্রেকারে যায়। তাহলে আর্জেন্টিনা জিতে যাবে। কারণ এবারের আর্জেন্টিনার গোলকিপার ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। যা ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। ফ্রান্সের তুলনামূলক তরুণ খেলোয়াড়েরা সুযোগ নষ্ট করার কারণে আর্জেন্টিনা জিতে যায়। আর তাতে সময়ের অন্যতম সেরা একজন প্লেয়ার লিওনেল মেসি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতার সাদ পায়। প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ এই ম্যাচটি আসলেই উপভোগ্য ছিল। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের আয়োজনটাও বেশ ভালো হয়েছিল। ম্যাচ শেষ করে একরাশ তৃপ্তি নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
যাক ভাইয়া ভেবেছিলাম যে মরকো ফাইনালে না গেলে আপনি খেলাই দেখবেন না। কিন্তু আজ মনে হয় বুঝতে পারলাম যে ব্রাজিলই হয়তো আপনার প্রিয় টিম। যাক তবুও তো বিরাট আয়োজন । ১০০ জন ক্রস করেছে আপনাদের পিকনিক এর জনবল সংখ্যা। তবে কাচ্চির আইডিয়া টা বাদ দিয়ে ভালই করেছেন। কারন শীতের রাতে খিচুড়ির চেয়ে উত্তম কিছু হতে পারে না।
ব্রাজিল আমার প্রিয় টিম না ত।বে ব্রাজিলের খেলা দেখতে আমার কাছে বেশ ভালই লাগে।
কই ভাইয়া আমার বাসায় তো খিচুড়ির প্যাকেট আসেনি😜।আপনি না মনে হয় বলেছিলাম মরক্কো কাপ নিবে।যাই হোক অনেক মানুষের পিকনিকের আয়োজন করেছেন।আমার বাসার সামনের ছেলেরা এই রকম তেহেরীর আয়োজন করেছিলো।কাল যে কি একটা দুর্দান্ত ম্যাচ হয়েছিলো যাই হোক মেসির হাতে একটা কাপ দরকার ছিল।আসলে ধরতে গেলে এমবাপ্পে একাই খেলাটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্টিনেজ সত্যি দারুন খেলেছে।
প্যাকেট তো পাঠিয়েছিলাম। ডেলিভারি ম্যান মনে হয় আপনার বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই খেয়ে ফেলেছে। আসলেই দুর্দান্ত একটি ম্যাচ হয়েছিলো। বিশেষ করে শেষের দিকে।
ফাইনাল খেলা নিয়ে সবার মধ্যে অনেক উত্তেজনা কাজ করেছে।সেই খেলা হয়েছে। আপনারা খেলাকে কেন্দ্র করে পিকনিকের আয়োজন করেছেন, প্রথমে মানুষ কম থাকাতে বিরিয়ানি করবেন ভেবেছিলেন। পরে দেখলেন ১০০ জনের বেশি হয়ে গেছে তাই খিচুড়ির আয়োজন করলেন।বেশ ভালো ই করেছেন।শীতের রাতে এমন পিকনিক খুব ভাল লাগে আর সাথে আছে খেলা। তবে যাই বলেন খেলার প্রথম দিকে বোরিং লেগেছিল। পরে খুব টান টান উত্তেজনা নিয়ে খেলা দেখেছি।যদিও আমি ফ্রান্স এর দলেই ছিলাম। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
একদম ঠিক বলেছেন। প্রথম ৭০ মিনিট খেলা দেখে একেবারেই মজা পাইনি। কিন্তু তারপরের সময়টা ছিল রোমাঞ্চকর।
ভীষণ ভালো একটি পিকনিকের আয়োজন করেছেন। প্রথমে লোকজনের সংখ্যা কম থাকলেও পরে ১০০ জনে চলে গেছে। প্রজেক্টর হঠাৎ না পাওয়া বেশ হতাশার ছিল, তবুও শেষ পর্যন্ত জোগাড় করে খেলা দেখতে পেরেছেন সবাই একসাথে।
আমি যদিও ব্রাজিলের সাপোর্টার তবুও চেয়েছিলাম মেসি কাপ নিয়ে যাক, কারন সে সত্যিই ভালো খেলোয়াড়। তবে ফ্রান্সের খেলা সত্যিই আমাকে অনেকটাই হতাশ করেছে।
ধন্যবাদ ভাই চমৎকার পিকনিকের অনুভূতি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
প্রথম সত্তর মিনিট ফ্রান্সের খেলা দেখে আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়েছিলো। দেখে মনে হচ্ছিল টুর্নামেন্টের সবচাইতে দুর্বল দল ফাইনালে চলে এসেছে।