খলিল মিয়ার অন্তহীন পথ চলা। (ছোট গল্প) ১০% বেনিফিসিয়ারি @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আমি লিখতে ভালোবাসি। সেজন্য মাঝে মাঝে লেখার চেষ্টা করি। আশা করি ভুলভ্রান্তি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আজ আমি আপনাদের সঙ্গে একটি ছোট গল্প শেয়ার করব।

খলিল মিয়া একমনে রাস্তার পাশে বসে কাজ করছিলো। সে সাধারণত খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করে। আজ তাকে কিছুটা আনমনা দেখা যাচ্ছে। কাজ সে ঠিকই করছে কিন্তু সে অন্য কোন চিন্তায় ডুবে আছে। খলিল মিয়াকে আমি দীর্ঘদিন থেকে চিনি। এলাকায় যার বাড়িতেই টুকিটাকি কোন কাজ থাকে সবার ভরসা একটি নাম। সেটি খলিল মিয়া। যেখানে বেশিরভাগ দিনমজুর কাজে ফাঁকি দেয়ার ধান্দায় থাকে। সেখানে খলিল মিয়া সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাকে একবার কাজ বুঝিয়ে দিলে বাড়িওয়ালার আর কিছু করতে হবে না। সে নিজের মতো করে গুছিয়ে সমস্ত কাজ সুন্দর করে শেষ করবে।

labour-pain-humanity-poor.jpg

ছবির সোর্স- লিংক


খলিল মিয়ার বয়েস ৬০ পার হয়েছে আরো বেশ কিছুদিন আগে। এই বয়সেও সে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। পরিশ্রম না করে যে তার কোনো উপায় নেই। তার ঘাড়ের উপর অনেক বড় একটা পরিবারের বোঝা। তিন কন্যা দুই ছেলে কন্যাদের ঘরের নাতিপুতি মিলিয়ে ১০ জন এর পরিবার। আয় করার লোক সে একা। একার আয়ে এত বড় সংসার টানতে টানতে খলিল মিয়ার জীবন দুর্বিসহ হয়ে গিয়েছে। সাথে আছে ঘারের উপরের ঋণের বোঝা। তিন মেয়ের ভিতরে বড় দুজনকে খলিল মিয়া বিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু তারা বেশিদিন স্বামী সংসার করতে পারেনি। দুই মেয়েেই বিয়ের কিছু দিনের ভিতরে স্বামীর কাছ থেকে তালাক প্রাপ্ত হয়ে আবার বাবার ঘাড়ে এসে বসেছে। সাথে করে নিয়ে এসেছে তাদের সন্তানদের।

খলিল মিয়া প্রতিদিন কাজ করে তারপরও এত বড় সংসার চালাতে গিয়ে সে হিমশিম খেয়ে যায়। অভাব থাকলেও খলিল মিয়া কখনো কারো কাছে হাত পাতে না। যদি কেউ খুশি হয়ে নিজ থেকে কিছু দেয় তাহলে সে নেয়।
খলিল মিয়া চিন্তা করছে তার নাতি তার কাছে ইলিশ মাছ খেতে চেয়েছে। সারাদিন কাজ করে মাত্র ৫০০ টাকা মজুরি পায় সে। সেই টাকা থেকেই সংসারের যাবতীয় খরচ মেটাতে হয়। যার ফলে মাছ মাংস খাওয়ার মতো বিলাসিতা তাদের হয়ে ওঠে না। নাতি নানার কাছে আবদার করেছে ইলিশ মাছ খাওয়ার। যেভাবে হোক তাকে সে আবদার মেটাতেই হবে। সে চিন্তা করতে থাকে কিভাবে নাতির জন্য একটি ইলিশ মাছ এর ব্যবস্থা করা যায়। এভাবে কাজ করতে করতে দিন শেষ হয়ে যায়। দিনশেষে খলিল মিয়া যখন বাড়ি ফিরে। তখন তাকে দেখে তার নাতি দৌড়ে আসে নানার কাছে। নানার কাছে এসে জিজ্ঞেস করেঃ নানা ইলিশ মাছ আনছো? নানা নাতির প্রশ্নে কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। বলে নারে নানা ভাই আইজ আনতে পারি নাই। দুই একদিনের ভিতর তোমার জন্য ইলিশ মাছ আনমু। রাতে নাতি খেতে বসে বলে রোজ রোজ ডাইল দিয়া ভাত খাইতে ভাল লাগেনা। কাইলকা ইলিশ মাছ না আনলে আমি ভাত খামু না। খলিল মিয়া নাতি কে আশ্বস্ত করে। কাইলকা অবশ্যই তোমার জন্য ইলিশ মাছ আনমু। রাতে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে থাকে নিজের অসহায়ত্বের কথা। যে বাড়িগুলিতে সে কাজ করে। তারা কত রকমের খাবার খায় প্রতিদিন। অথচ সে তার নাতির জন্য একটি ইলিশ মাছের ব্যবস্থা করতে পারছে না। চিন্তা করতে করতে খলিল মিয়া ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে খলিল মিয়া যথারীতি কাজে বের হয়। সারাদিন খলিল মিয়া কাজের ফাঁকে ফাঁকে চিন্তা করতে থাকে আজকে টাকা পেলে সেই টাকা থেকে সে অবশ্যই একটা ছোট ইলিশ মাছ কিনবে। কিন্তু তার হঠাৎ মনে পড়ে যায়। আজ তো ঘরে চাউল ডাল কিচ্ছু নাই। যদি ইলিশ মাছ কিনতে যায় তাহলে তো চাল-ডাল কেনা হবে না। দুঃখে খলিল মিয়ার চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। এভাবে চিন্তা করতে করতে খলিল মিয়া কাজ করতে থাকে। দিনশেষে যখন সে মজুরির জন্য দাড়িয়ে থাকে। তখন বাড়ির মালিক মজুরির সাথে একটি পলিথিন এর ভেতরে একটি ইলিশ মাছ খলিল মিয়াকে দেয়। খলিল মিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বাড়ির মালিক বলে বিকালে বাজারে গিয়েছিলাম। ইলিশ মাছের দাম দেখলাম অনেক কম। তাই একসাথে অনেকগুলো ইলিশ কিনেছি। সেখান থেকে তোমাকে একটি ইলিশ মাছ দিলাম। তুমি তোমার পরিবার নিয়ে খেও। খলিল মিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। আর মন থেকে বাড়ির মালিকের জন্য অনেক দোয়া করে সে।

খলিল মিয়া আজ ফুরফুরে মনে বাড়ি যাচ্ছে। যাওয়ার সময় সে তার নাতির হাস্যজ্জল মুখ কল্পনা করছিলো। খলিল মিয়া যখন বাড়ির কাছে পৌঁছে গিয়েছে। হঠাৎ করে কোত্থেকে এক কুকুর এসে মাছের ব্যাগটা এক কামড় দিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। বৃদ্ধ খলিল মিয়া কিছুক্ষণ কুকুরের পিছনে দৌড়ালো। কিন্তু সে কুকুরের সাথে পেরে উঠলো না। কুকুরটা মাছের ব্যাগ দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে আর সে ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে তাকিয়ে আছে।(সমাপ্ত)

Cc- @rme

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 3 years ago 

সবই নিয়তি ভাইয়া।খুব ভালো লিখেছেন

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

খলিল মিয়ার জীবনী থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী তুলে ধরেছেন। খুব ভালো লিখেছেন ভাই।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

 3 years ago 

আপনার পোস্টটি দেখে আমি মর্মাহত হলাম। আমার ছোট থেকেই যায় এমন মানুষের পাশে দাঁড়াবো এবং আমি আমার সাধ্যমত করে যাই। আপনি খুবই সুন্দর হবে ঠিক উপস্থাপন করেছেন। আমারর ব্যক্তিগতভাবে আপনার এই পোস্টটি অনেক অনেক ভালো লেগেছে।

 3 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

 3 years ago (edited)

খলিল মিয়া যখন মাছটি নিয়ে বাড়ি ফিরছিল তখন খুব ভালো লাগছিল কিন্তু কুকুরটির জন্য মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 56740.37
ETH 3000.36
USDT 1.00
SBD 2.19