আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে মাঝে মাঝে চমৎকার সব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে সেই প্রতিযোগিতা গুলোকে অংশগ্রহণ করা হয় না। সে কারণে মাঝে মাঝেই আফসোস হয়। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যে ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় সেগুলো খুবই ইউনিক হয়। সেগুলো স্টিমিটের আর দশটা কমিউনিটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই এবার চিন্তা করলাম এবারের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। কিন্তু খেয়াল করে দেখি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সময় শেষ। তারপরও চিন্তা করলাম যেহেতু জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লেখার মনস্থির করেছি। তাই সেটাই লিখব। প্রতিযোগিতার জন্য না হোক আমার পোষ্টের যারা পাঠক আছে অন্তত তাদের জন্য হলেও লিখি।
কি নিয়ে লিখব সেটা বুঝতে পারছিলাম না। কারণ স্কুল জীবনে ছোটখাটো বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে তেমন বড় কোন ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি। তারপরও চিন্তা করতে করতে হঠাৎ করে একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল। এই ঘটনাতে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যে ঘটনার কারণে আমাকে হয়তো অনেক বড় শাস্তি ভোগ করতে হতে পারতো। যাইহোক আপনাদের সাথে সেই ঘটনাটাই স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা হিসেবে তুলে ধরছি।
আপনারা যারা আমার পোস্ট পড়েন তারা খেয়াল করেছেন গত কয়েকদিন আমি আমার বৈচিত্র্যময় শৈশব ও শিক্ষাজীবনের কথা লিখছি। সেই লেখাতে আমি খুলনার একটি স্কুলের উল্লেখ করেছি। স্কুলটির নাম ছিল খুলনা পাবলিক কলেজ। এটি একটি কলেজিয়েট স্কুল ছিলো। সেই স্কুলের নিয়ম কানুন ছিল খুবই কড়া। একদম ক্যাডেট কলেজ গুলোর মত। এই স্কুলে প্রতিটি ক্লাসের সর্বোচ্চ ছাত্র সংখ্যা থাকত ৪০ জন। সেখানে কোন মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল না। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষায় সেই স্কুল থেকে যারা পরীক্ষা দিতো তাদের ভেতর বেশিরভাগই স্টার মার্কস পেয়ে পাশ করতো। দু একজন স্ট্যান্ড ও করতো। কিন্তু কখনো ফেল করার কথা শুনিনি।
সেই স্কুলের ড্রেসকোড ছিল সাদা শার্ট সাদা প্যান্ট কালো জুতা এবং কালো বেল্ট। শার্টের ওপরে পরিচিতির জন্য নাম এবং একটা কলেজ নাম্বার লেখা থাকতো। এই কলেজ নাম্বারটা ছিল সবার পরিচয়ের জন্য এক ধরনের কোড। যাই হোক সেখানে শুরুর দিকে বেশ ভয়ে ভয়ে যাওয়া আসা করতাম। পরে আস্তে আস্তে যখন দু একজন বন্ধু বান্ধব হল তখন সে ভয়টা অনেকটাই কেটে গেলো। সেই ইস্কুলের বেশিরভাগ ছাত্ররাই ছিল পড়ুয়া ধরনের। কিন্তু আমি ছিলাম ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে। পড়ালেখায় আমার কখনোই মন বসত না। তাই আমি ক্লাসে আমার মত আরও দুজনকে খুঁজে নিলাম বন্ধু হিসেবে। তাদের একজনের নাম ছিল মানিক আরেকজনের নাম ছিল মামুন।
এর ভেতরে মানিকের বাসা আমার ফুফু বাড়ির বেশ কাছাকাছি ছিল যেখানে আমি থাকতাম। আমাদের সেই ইস্কুলটাতে উচ্চবিত্ত লোকজনের ছেলেরাই বেশি পড়তো। আমরা কয়েকজন ছিলাম মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। যার ফলে আমাদের ভেতর সখ্যতা একটু বেশি ছিলো। অন্য আর দশটা বাচ্চাদের মত আমরাও টিফিন পিরিয়ডে সারা স্কুল ভরে ছুটো ছুটি করে বেড়াতাম। আমরা শুনেছিলাম আমাদের এই স্কুলটি এক সময় ব্রিটিশ কারাগার ছিলো। সেখানে একটি জায়গা ছিল যেখানে নাকি লোকজনদেরকে ফাঁসি দেয়া হতো। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে মাঝে মাঝে সেই জায়গাটা দেখতে যেতাম। তাছাড়া আমাদের আরো একটি প্রিয় জায়গা ছিলো সেটা কলেজের অডিটোরিয়াম। এত সুন্দর অডিটোরিয়াম আমি আর কোনো স্কুলে দেখিনি। কলেজের বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো সেই অডিটোরিয়ামের স্টেজে। সেই অডিটোরিয়ামে বসার ব্যবস্থা ছিল গ্যালারির মতো।
যাই হোক এভাবে আমাদের দিন কেটে যাচ্ছিল। প্রতিদিন আমরা তিন বন্ধু টিফিন পিরিয়ডের জন্য অপেক্ষা করতাম। কখন টিফিন পিরিয়ডের ঘন্টা দেবে। অবশ্য অপেক্ষা করার আরো একটি কারণ ছিল। কারণ সেই স্কুলে যে টিফিন গুলি দিত সেগুলি খেতে বেশ মজার ছিলো। প্রতিদিন দুটো আইটেম আমাদেরকে টিফিনে দেয়া হতো। কোনদিন সিঙ্গারার সাথে লাড্ডু। আবার কোনদিন তিনকোণা ব্রেডের সাথে এক ধরনের মিষ্টি। ছুটি হলে তিন বন্ধু টিফিন নিয়ে বসে যেতাম কোন এক জায়গায় খাওয়ার জন্য। খাওয়া-দাওয়ার শেষ হলে শুরু হতো আমাদের দুরন্তপনা। তবে আমাদের তিনজনের ভেতর মানিক ছিল সবচাইতে দুরন্ত। আর মামুন ছিল কিছুটা গোবেচারা টাইপের। আর আমি ছিলাম মাঝামাঝি।
তো একদিন টিফিন পিরিয়ডে আমরা তিনজন বন্ধু খেলাধুলা করছিলাম। হঠাৎ করে এর ভেতর মানিকের সাথে মামুনের একটি বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা হতে লাগলো। কিছুক্ষণের ভেতর সেই বাক-বিতণ্ডা হাতাহাতিতে রূপ নিল। হাতাহাতির একপর্যায়ে মানিক মামুনকে সজোরে একটি লাথি মারলো। কিন্তু লাথিটা লাগল মামুনের খুবই স্পর্শকাতর একটি জায়গায় এবং সাথে সাথে আমি দেখতে পেলাম মামুনের প্যান্টটা রক্তে লাল হয়ে গিয়েছে। মামুন চিৎকার করে কান্না করতে করতে শুয়ে পরলো। এই দেখে মানিক সেখান থেকে এক দৌড়ে পালালো। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিত। আমি চুপচাপ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
এর ভিতর আরো কয়েকজন ছেলে আসলে আমি তাদের সাথে করে মামুনকে ধরে নিয়ে কলেজের একটি রুমে নিলাম। যেখানে একজন ডাক্তার থাকতো। ও হ্যাঁ আপনাদেরকে বলা হয়নি আমাদের সেই কলেজে একজন খন্ডকালীন ডাক্তার থাকতো। যাইহোক আমি মামুনকে সেখানে রেখে চুপচাপ পালিয়ে গেলাম। কারণ প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিলাম যে মামুন বাঁচবে কিনা। আর যদি মামুন মারা যায় তাহলে আমার কি হবে? যদিও আমি তাদের এই মারামারিতে অংশগ্রহণ করিনি। কিন্তু ঘটনাটা যখন ঘটে তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে কয়েকজন সিনিয়র ছাত্র মিলে মানিককে ধরে নিয়ে এলো। ধরে নিয়ে সরাসরি প্রিন্সিপালের রুমে চলে গেলো। এরভেতর মামুনের অভিভাবক স্কুলে এসে উপস্থিত হয়েছে। এর ভেতর আমারও ডাক পড়লো সেখানে।
যেহেতু আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম তাই আমার কাছে জিজ্ঞেস করল কি ঘটেছিলো। তখন আমি যা যা দেখেছি তার সবই বললাম। সাথে এটাও বললাম যে মানিক ইচ্ছা করে ওই জায়গাতে লাথি মারেনি। লাথি মেরেছিল এমনিতেই কিন্তু সেটা বেকায়দায় লেগে গিয়েছে। এদিকে মামুনের বাবা ছিল সরকারি প্রাইমারি স্কুলের হেডমাস্টার। তিনি মানিককে বেশ রাগারাগি করলেন। তখন আমাদের প্রিন্সিপাল তাকে জিজ্ঞেস করল আমরা আপনি যদি চান তাহলে আমরা এই ছেলেকে স্কুল থেকে বের করে দিতে পারি। কিন্তু মামুনের বাবা একজন শিক্ষক হওয়ায় তিনি আর এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। তিনি বললেন এবারের মত ওকে মাফ করে দিন। এদিকে ততক্ষণে মামুনও কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। তার রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও আমি মামুনকে মারি নি কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কারণে আমার ভিতর প্রচন্ড ভয় কাজ করছিলো যে আমারও না কোন গুরুতর শাস্তি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বড় কিছু না হওয়ায় সে যাত্রায় কোন রকমে বেঁচে গেলাম। এটাই ছিল আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
আপনার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা পড়ে অনেক ভালো লাগল। আপনাদের স্কুলের ওখানে লোকজনদেরকে ফাঁসি দেয়া হতো।আপনি বলে অনেক ভয় পেতেন কিন্ত সেখানে যেতেন, তাহলে তো অনেক সাহস। টিফিনের খাবার গুলো কিন্তু দারুণ ছিল। খাবার খেলে দুরন্তপানা একটু বারবে স্বাভাবিক। মানিকের সাথে মামুনের একটি বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা হতে লাগলো। সেই বাক-বিতণ্ডা হাতাহাতিতে রূপ নিয়েছে।মামুনের এমন জায়গায় লাথি লেগেছে, যে রক্তে লাল হয়ে গেছে,এটা দেখেই মানিক হয়তো পালিয়ে গেছে।আর আপনি ভয়তে অস্হির হয়ে পড়লেন।যদি আপনাকে ফাঁসিয়ে দেয় এই ভেবে।যাইহোক শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হয় নাই এটা জেনে অনেক ভালো লাগল। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার স্কুল জীবনের অভিজ্ঞতাটা পড়ে বেশ ভালই লাগলো। সেদিনের ঘটনাতে বড় কোন কিছু হয়নি ভাগ্য ভালো। বন্ধুদের ভেতর ঝগড়া হবে ঠিক আছে তবে মারামারি টা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। মামুনের বাবা প্রধান শিক্ষক ছিলেন বলেই হয়তো মানিককে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়নি কারণ একজন প্রধান শিক্ষক একটি প্রতিষ্ঠানের সকল দায়িত্ব বহন করে এবং তিনি ছাত্রদের প্রতি ক্ষমাশীলই হয়।
সেদিন অন্যরকম কিছু হয়ে গেলে আপনাদের সঙ্গেও অন্যরকম কিছু হতে পারতো। তবে ভাই আপনি ঐ অবস্থা দেখেও আপনার বন্ধুকে সাহায্য না করে বা কাউকে না ডেকে ওখান থেকে চলে গেলেন এটা বেশ অপ্রিতিকর ছিল।আপনার অভিজ্ঞতা টা বেশ তিক্ত ছিল।