সেলিম মিয়ার জীবন (প্রথম পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য
সেলিম মিয়া প্রতিদিন ফজরের আজান শুনে ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে উঠেই তার প্রথম কাজ থাকে গেট খুলে দেয়া। কারণ সে যে অ্যাপার্টমেন্টের গার্ড হিসেবে কাজ করে সেই অ্যাপার্টমেন্টের অনেকেই ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যায়। গেট খুলে দিয়ে একপাশে সেলিম মিয়া ফজরের নামাজ আদায় করে। এভাবেই তার প্রতিটা দিন শুরু হয়।
সেলিম মিয়া আজ দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ঢাকায় একটি বিল্ডিং এ কেয়ারটেকার কাম গার্ড হিসেবে কাজ করছে। দীর্ঘ এই সময়টাতে এই শহরকে সে অনেকটা বদলে যেতে দেখেছে। অনেক মানুষের সাথে তার সখ্যতা হয়েছে। তার এ কাজটা সে বেশ উপভোগ করে। কিন্তু যখন কেউ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তখন তার খুবই খারাপ লাগে।
সকালে ফজরের ওয়াক্তে ওঠার পর সেলিম মিয়া ঘুমাতে যায় রাত বারোটার দিকে। এর ভিতর তাকে অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তার সাথে আরো অন্যান্য টুকিটাকি কাজ করতে হয়। সে অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের নানারকম ছোটখাটো কাজ করে দেয়। তার বিনিময়ে তারা খুশি হয়ে তাকে কিছু বকশিশ দেয়। সেলিম মিয়ার পরিবার তার গ্রামের বাড়িতে থাকে।
স্ত্রী আর তিন সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। এখান থেকে যে বেতন পায় তার বেশিরভাগ টাকা সে পরিবারের জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। অল্প কিছু টাকা তার হাত খরচ হিসাব রাখে। যখন সে প্রথম এখানে গার্ড হিসেবে কাজ করতে আসে তখন তার বেতন ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা। এখন সে বেতন বেড়ে হয়েছে দশ হাজার টাকা। যদিও বর্তমান সময়ে এই টাকায় সংসার নিয়ে চলা মুশকিল। তারপরেও অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া বাড়তি টাকা তার খুব কাজে লাগে।
ঢাকা শহরে তার মত এমন অসংখ্য লোক চাকরি করে। যাদের প্রায় সবারই পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকে। এভাবে সেলিমের দিনকাল ভালই কেটে যাচ্ছিল। যদিও এই চাকরিতে একটি সমস্যা আছে তার। সেটা হচ্ছে ছুটি খুবই কম। ঈদের পরে মাত্র দু'দিন করে তার ছুটি থাকে। তাছাড়া সারা বছর তাকে ডিউটি করতে হয়। এই অ্যাপার্টমেন্টটিতে কোন একক মালিক নেই। একেক জন একেকটা ফ্ল্যাট এর মালিক। বিল্ডিংটা খুব একটা বড় না হওয়ায় সে একাই সমস্ত কিছু দেখাশোনা করে। এই বিল্ডিংয়ের কেয়ারটেকার ও সে আবার সিকিউরিটি গার্ড ও সে।
দীর্ঘদিন বেতন জমিয়ে সে গ্রামে কিছু জমি কিনেছে। কারন সে খুব ভালো মতই জানে। বয়স হয়ে গেলে তখন আর তার এই চাকরিটা থাকবে না। এখন যদি কিছু করতে না পারে তাহলে শেষ বয়সে তাকে হয়তো ভীক্ষা করে খেতে হবে। তাছাড়া সন্তানদের জন্য ও কিছু করা দরকার। সামনের মাসে সে অ্যাপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটি চেয়েছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। তারা তাকে এখনো কিছু জানায়নি। কিন্তু সে আশা করে বসে আছে বাড়িতে যেতে পারবে। অনেক দিন পরিবারের সাথে তার দেখা হয় না।
সন্তানদের মুখটা দেখার জন্য তার বুকের ভেতর হাহাকার করছে। যদিও প্রতিদিন তার পরিবারের লোকদের সাথে মোবাইলে কথা হয়। কিন্তু মোবাইলে কথা বলে পিতার মনে তৃপ্তি আসে না। ইতিমধ্যে সে তার সন্তানদের জন্য টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনেছে যাওয়ার সময় নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে জানে এই খেলনা গুলি পেলে তার বাচ্চারা অনেক খুশি হবে। কিছুদিন ধরে সে বাচ্চাদেরকে দেখার স্বপ্নে বিভোর। (চলবে)
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
রূপক ভাই আপনার গল্পগুলো খুবই ভাললাগে পড়তে । আজকে যে সেলিম মিয়ার গল্পটি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মাত্র দশ হাজার টাকা দিয়ে সংসার এ ভাবে চলে না ,তবুও সে সমস্ত কিছুকে এই টাকা দিয়ে চালানোর চেষ্টা করেন ।সংসার জীবনকে সুন্দর করে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ছেলে মেয়ে কে নিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করার প্রায়াস করে। এই গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো আরো সামনে পর্বগুলো আরো ভালো লাগবে অপেক্ষায় থাকলাম ।ধন্যবাদ ভাই সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য ।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আসলে মানুষের জীবন কত রকম হতে পারে তা কারো জীবনের গল্প না শুনলে বুঝা যায়না। কত কষ্টই না করে এই সেলিম মিয়া। ১০ হাজার টাকায় তার সংসার চলে ,তবে এই অল্প টাকাতেই তার ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো একটু একটু করে পূরণ করছে। অনেক সুন্দর ভাবে লিখেছেন ভাইয়া। পড়ে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।