মেলা থেকে ফেরার পথে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত দুই পর্বে আপনাদের সাথে বাণিজ্য মেলা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। পোস্টটি দেখে কেউ কি চিন্তা করতে পেরেছেন বাণিজ্য মেলা থেকে ফেরার সময় আমরা কি ধরনের বিপদে পড়েছিলাম? আসলে এটা বোঝার কথা নয়। আমরা নিজেরাই তো চিন্তা করতে পারিনি যে এই ধরনের বিপদে পরতে যাচ্ছি। বাণিজ্য মেলায় ঘুরে আমরা খুবই মজা পেয়েছি। চিন্তা করছিলাম পরবর্তীতে আরও একবার মেলায় ঘুরতে আসবো। কারণ এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানের স্টল নির্মাণ করা শেষ হয়নি। তারপরেও যে পরিমাণ স্টল সেখানে ছিল সেটা নেহাতই কম নয়।

IMG_20220109_010657.jpg

যাইহোক মেলায় ঘোরাফেরা শেষ হলে আমরা পরিকল্পনা করলাম যেহেতু মেলায় খাবারের দাম বেশি। তাই আমরা ৩০০ ফিটে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে তারপর বাড়ীর দিকে ফিরবো। যাইহোক এই চিন্তা ভাবনা করে আমরা মেলা থেকে ৩০০ ফিট এর দিকে রওনা দিলাম। একটি জিনিস আমরা মোটামুটি ভুলেই গিয়েছিলাম। যে রাস্তাটি আমাদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয় বরং সম্পূর্ণ অপরিচিত বলা যায়। আমি মেলা থেকে বের হওয়ার সময় গুগল ম্যাপে ৩০০ ফিট ডেস্টিনেশন সেট করেছিলাম। যার ফলে একটু পরপর গুগল ম্যাপ থেকে ডাইরেকশন এর ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছিল।

আমি কিছুক্ষণ পর খেয়াল করে দেখলাম আমরা যখন মেলা থেকে ৩০০ ফিট এর দিকে রওনা দিয়েছিলাম তখন সেখানে যে পরিমাণ দূরত্ব দেখাচ্ছিলো আমরা যতই চলছিলাম ততই সেই দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল।আমি মনে করেছিলাম ড্রাইভার মনে হয় অন্য কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে দুই মাইল যাওয়ার পর আমি ড্রাইভারকে বললাম আমরা সম্ভবত ভুল রাস্তায় যাচ্ছি। কারণ গন্তব্যের থেকে আমাদের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। ড্রাইভার বলল তাই নাকি। বলে সে গাড়ি থামাল তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো পথের দিকে রওনা দিল। যখন সে এই কাজটা করল তখন আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ এই কাজের অর্থ হচ্ছে সে রাস্তাটা ভালোমতো চেনো না।

কিন্তু সে মেলায় আসার আগে আমাদেরকে জানিয়েছে সে এই এলাকার রাস্তাঘাট মোটামুটি চেনে। এভাবে কিছুক্ষন চলার পর আমরা একটি চৌরাস্তায় মোড়ে এসে উপস্থিত হলাম। সেখান থেকে চারদিকে চারটি রাস্তা গিয়েছে। আমি তখন ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম এখন কোন দিকে যাব। সে বলল সেটা তো বুঝতে পারছি না। তারপর থেকে শুরু হল আমাদের এক ভয়ঙ্কর যাত্রা। কারণ আমরা যতই পথ অতিক্রম ততোই নির্জন এলাকায় প্রবেশ করেছিলাম এবং মাঝে মাঝেই আমরা একই এলাকায় বারবার ঘুরে ফিরে আসছিলাম।

কারণ এই এলাকার রাস্তাঘাট গুলি খুবই জটিল আর যেহেতু আমরা এই এলাকা একদমই চিনিনা তাই আমরা প্রায় কিছুই চিনতে পারছিলাম না। এভাবে অনেকক্ষন উল্টোপাল্টা রাস্তায় ঘোরাফেরা করার পর আমরা একটি বাড়ির কাছে গাড়ি থামালাম। থামিয়ে সেই বাড়ির লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করলাম আমরা ৩০০ ফিট এর দিকে যাব কোন রাস্তা দিয়ে? তারা আমাদের রাস্তার নির্দেশনা দিল। আমি মনে করেছি যাক এবারের মত বাঁচা গেল। হয়তো এখন রাস্তাটা চিনতে পারবে।

কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেই ভুল ভেঙে গেল। বুঝতে পারলাম ড্রাইভার ওই লোকদের কথা ভালোভাবে বুঝতে পারেনি। যার ফলে সে বারবার ঘুরেফিরে একই জায়গায় আসছিলো। আর আমরা যে সমস্ত রাস্তা দিয়ে চলছিলাম সে রাস্তাগুলি সম্পূর্ণ নির্জন জনমানবহীন ছিল। যার ফলে গাড়ির ভিতরে আমরা সবাই প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। একদিকে ড্রাইভার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলোনা। অন্যদিকে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে আসছে।

আমি চিন্তা করছিলাম যদি এরকম নির্জন রাস্তায় গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে যায়। তাহলে আমরা যেকোন সময় বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারি। কারণ এই ধরনের নির্জন এলাকায় যেকোনো ধরনের বিপদ হতে পারে। এমনিতেই এই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। আর এই ধরনের পরিবেশ তো সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। এই ভাবে যতই সময় অতিবাহিত হচ্ছিল ততই আমাদের ভয় বারছিলো।

এইভাবে দীর্ঘক্ষন ঘোরার পর একজন লোককে পেলাম যিনি মেইন রোড থেকে এদিকে এসেছেন। আমরা তার সাহায্য চাইলাম। তিনি প্রথমে কিছুতেই গাড়িতে উঠতে রাজি হননি। অনেক বোঝানোর পর তিনি গাড়িতে আসতে রাজি হলো। তারপর তিনি আমাদের কিছুদূর পথ দেখিয়ে দিলেন। তারপর তিনি আমাদেরকে গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। তিনি পথ সম্বন্ধে বলে দেয়ার পরও আমরা পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাঁর নির্দেশিত পথে কিছুদূর চলার পরে আমরা দেখতে পেলাম একটি এবড়োখেবড়ো মাটির রাস্তায় চলছিলো।

সেই রাস্তাটি এমনই খারাপ সেখানে গাড়ি চলাচলের কোন উপায় নেই। আমরা দ্রুত সেখান থেকে ফিরে আসলাম। এদিকে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। যখন যে কোন বিপদের জন্য মোটামুটি চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত তখন দেখলাম দূর থেকে একটি অটোরিকশা আসছে। এই অটোরিকশাটি ৩০০ ফিটের দিকে যাবে। শেষ পর্যন্ত আমরা এই অটোরিক্সার পিছু পিছু ৩০০ ফিটে পৌঁছে গেলাম। সেখানে একবার পৌঁছনোর পর আমাদের ড্রাইভার বাকি রাস্তা চিনতে পারল।

আমরা ড্রাইভারকে খুব রাগারাগি করছিলাম। তাকে বলছিলাম যদি আপনি রাস্তা না চেনেন তাহলে আমাদেরকে আগে থেকে কেন জানাননি? তিনি বললেন আমি বুঝতে পারিনি যে মেলাটি মূল সড়ক থেকে এত দূরে অনুষ্ঠিত হবে। বিপদ থেকে আমরা উদ্ধার পাওয়ার পর সবাই সৃষ্টিকর্তাকে শুকরিয়া জানাচ্ছিলাম। যতক্ষণ এই বিপদে ছিলাম ততক্ষণই আমরা সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছিলাম। কারণ আমরা জানতাম এই বিপদ হতে তিনি ছাড়া আর কেউ আমাদেরকে উদ্ধার করতে পারবেন না বিপদ হতে পরিত্রান পাওয়ার পর। আমরা সবাই মনে হয় নতুন জীবন ফিরে পেলাম। আর ওয়াদা করলাম এই ধরনের রাস্তায় সন্ধার পর আর কখনোই যাবো না।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।

পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রহুয়াই নোভা ২আই
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থান লিংক

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি

Sort:  
 3 years ago 

ভাই সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার পর চিন্তা দূর হলো। আপনার পোস্টটা যে একবার পড়া শুরু করবে শেষ না করে তার অন্যকোনো উপায় থাকবে না। আমি খুবই কৌতূহল নিয়ে পড়লাম তার পর কি হয়। ড্রাইভার বেচারা মনে মনে অবশ্যই ভয় পাইছে। রাস্তা না চিনলে যা হয় আর কি। যাক অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন এটাই অনেক অনেক শুকরিয়া।
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভাই।

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 3 years ago 

খুবই ভালো পোস্ট করছেন মানে পোস্টের মধ্য মধু আছে, আমাদের এমন হয় যে অর্ধেক পড়ে আর ভালো লাগে না। কিন্তু আপনার এই পোস্টে অধীর আগ্রহ নিয়ে পড়ছি যে শেষ কি হলো। যাই হোক আল্লাহ আপনাদের বিপদ থেকে বাচাইছে এটাই শুকরিয়া।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

আপনার পুরো পোস্টটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম ভাইয়া। আমি বুঝতে পারলাম সত্যি অনেক বিপদের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন আপনারা। রাস্তা যদি অপরিচিত হয় তাহলে খুব বিপদের সম্মুখীন হতে হয় বিশেষ করে গাড়িচালক যদি রাস্তা না চিনে তাহলেতো বিপদ আসার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। তবে যাই হোক শেষ পর্যন্ত বিপদ থেকে উদ্ধার হয়েছেন। এই জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া ।আপনি খুব সুন্দর একটি অভিজ্ঞতা মূলক পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে আমাদের না পড়তে হয় তার আগেই সব ধরনের সর্তকতা নিতে পারব।

 3 years ago 

ওদিকে গেলে খুব সাবধান থাকবেন। আপনি যেহেতু ঢাকায় থাকেন তাই বানিয্য মেলায় যেতে পারেন। চেষ্টা করবেন দিনের বেলায় যেতে।

 3 years ago 
সত্যিই, ভাইয়া আপনারা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন ।তবুও সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা যে আপনাদের কিছু হয় নি।যাইহোক এইরকম সমস্যায় আপনারা আগে ও একবার পড়েছিলেন।2 মাস আগে আপনি শেয়ার করেছিলেন খোঁড়াখুঁড়ির অভিজ্ঞতায়।সেটি ও 300 ফিটের দূরত্ব ছিল।এরপর থেকে সতর্কতা অবলম্বন করবেন ভাইয়া আশা করি।
 3 years ago 

জি দিদি এরপর থেকে আর ঐদিকে যাবো না সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

ভাইয়া এভাবে রাস্তা ভুলে যাওয়ার বিষয়টি সত্যিই অনেক দুশ্চিন্তার এবং ভয়ংকর মনে হয়। তবে আমাদের সকলের উচিত হবে যেখানে বেড়াতে যাব সে এলাকা যে ড্রাইভার ভালোভাবে চিনেন তেমন ড্রাইভার বাছাই করে নেওয়া। কারণ এসব ক্ষেত্রে এমন ভুল হলে যেকোনো ধরনের ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে। সত্যি ভাইয়া অনেক দুশ্চিন্তার এবং ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন আমাদের সাথে। অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে

 3 years ago 

বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছি এবারের মতো। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

সত্যি দাদা,খুবই তিক্ত এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন আপনি।আমার সাথেও ২ বার হয়েছে এরকম,তাই আমিও জানি সে সময় মানুষের ভেতরে কি চলে।যাইহোক ভালোভাবে ফিরে এসেছেন এটাই অনেক।পোস্টটি এখানে সবার সামনে তুলে ধরায় অনেকেই হয়তো এই ব্যাপারটি এবার থেকে মাথায় রাখবে।
ভালো থাকবেন দাদা।

 3 years ago 

আমাদের এলাকার পাশেই ৩০০ ফিট, রাতে যেতে সত্যি ভয় লাগে, কারন একদম ফাকা রাস্তা। আর একটু ভিতরে গেলে নতুনরা পথ হারাবেই কারন সব রাস্তা একরকম।
আপনি সুস্থ ভাবে আসতে পেরেছেন, এটাই শুকরিয়া।

 3 years ago 

এর আগেও ৩০০ ফিট পর্যন্ত গিয়েছি। কিন্তু এবার ভেতরের দিকে যাওয়ার ফলে রাস্তাঘাট কিছুই চিনতে পারিনি। আসলেই অনেক ভয় পেয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65248.25
ETH 3471.40
USDT 1.00
SBD 2.51