জীবনের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ (দ্বিতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


এসব চিন্তা করতে করতে শাহিনের খুব অসহায় লাগে। বাড়ি ফিরতেই বউ তাকে বলে আগামীকাল মেয়ের প্রাইভেট টিউটরের বেতন দিতে হবে। টাকা দিয়ে যেও। শাহীন বলে এখনো বেতন পাইনি। আরো কয়েকটা দিন দেরি হবে। তুমি প্রাইভেট টিউটর কে একটু বুঝিয়ে বলো। তখন তার স্ত্রী সাবিহা বলে আমি পারবো না। তুমি বলে দিও। এসব কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে। শাহিন বলে ঠিক আছে আমি কালকে ফোন করে ওকে বলে দেবো।

Polish_20230105_003636444.jpg

পরদিন সকালে শাহিন যথারীতি সময় মত অফিসে যায়। সারাদিন কাজ শেষে ফেরার পথে একাউন্টসে গিয়ে বেতনের খবর জানতে চাই। এর ভেতরে ওর বস সেখানে এসে ওর সাথে খুব দুর্ব্যবহার করে। তখন শাহীন তাকে বলে আজকে মাসের ৮ তারিখ। এখনো বেতন না হলে আমরা চলবো কিভাবে? তখন তার বস তাকে বলে কোন কাজ তো ঠিক মত করতে পারেন না। আবার বেতন নেয়ার সময় ঠিকই সময় মত চলে আসেন। এই কথা শুনে শাহিনের মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে যায়। তখন শাহীন তার বসকে গালাগাল করে অফিস থেকে বের হয়ে আসে।

এই ঘটনায় পুরো অফিসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। পরদিন সকালে শাহীন যখন অফিসে যায়। তখন ওদের ম্যানেজার ওকে ডেকে বলে। আগামীকাল থেকে আর আপনাকে আসতে হবে না। আপনি অন্য চাকরি দেখুন। শাহীন কোন কথা না বলে অফিস থেকে বাড়িতে চলে আসে। অসময়ে শাহীনকে বাড়ি ফিরতে দেখে তার স্ত্রী সাবিহা তাকে জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার? হঠাৎ এই সময় বাড়িতে এলে যে? তখন শাহীন রাগে অগ্নিমুর্তি ধারণ করে। বলে বাড়িতে এসেছি তোমার খুব সমস্যা করেছি নাকি? ঠিক আছে এত সমস্যা যেহেতু হচ্ছে তাহলে আমি বাড়ি থেকে বাইরে চলে যাচ্ছি।

সাবিহা তখন বলে আমি কি তোমাকে সেই কথা বলেছি? এই সময় তো তুমি কখনো বাড়িতে আসো না। সেজন্য হঠাৎ করে তোমাকে দেখে এমনিতেই কথাটা মনে চলে এলো। তখন সে শাহীন কে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার? কোন সমস্যা হয়েছে নাকি? তখন শাহীন তাকে জানালো তার চাকরি চলে গিয়েছে। এই কথা শুনে সাবিহার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এমনিতেই তাদের টানাটানি সংসার। এর ভেতরে যদি চাকরিটাও না থাকে তাহলে তারা কিভাবে চলবে সেটাই সে চিন্তা করছিল। এমনিতেই ঘরের টাকা পয়সা তেমন নেই। তার উপরে মাসের শুরু। এখন যদি শাহিনের চাকরি চলে যায় তাহলে তাদের খাওয়া পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

সারাদিন মন খারাপ করে শাহিন ঘরে বসে থাকে। তারপর সন্ধ্যার পরে যথারীতি তাদের সেই আড্ডা স্থলে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু আজকে সেখানে গিয়ে সে কাউকে দেখতে পায় না। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর একটা সিগারেট আর এক কাপ চা নিয়ে শাহীন ভাবতে থাকে সে এখন কি করবে? এভাবে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ তাদের সামনে এক পুরনো বন্ধু এসে ওকে বলে। কিরে কি করছিস? শাহীন তাকে দেখে মোটেই খুশি হয় না। কারণ সে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। শাহীনদের মতো যারা একটু ভদ্র পরিবার থেকে এসেছে। শিক্ষিত ছেলে পেলে তারা এই ধরনের লোকজনকে সবসময় এড়িয়ে চলে। শাহীন শুধু তার উত্তর বলে কিছু না বসে আছি। ওর বন্ধু ওকে দেখে বলে তোকে দেখে মনে হচ্ছে তোর মনটা খুব খারাপ। শাহিন বলে না তেমন কিছু না। এই কথা বলে শাহিন সেখান থেকে উঠে বাড়ি চলে যায়।

পরদিন শাহিন তার অফিসে গিয়ে তার বেতন নিয়ে বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে ফিরে শাহিনের মাথায় শুধু একটি চিন্তায় ঘোরাফেরা করতে থাকে। এই বেতনের টাকা হাতে থাকতে থাকতে তাকে কোন একটা কাজ জোগাড় করতে হবে। পরদিন সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন অফিসে তার সিভি দিতে লাগে। এভাবে সাত দিন পার হয়ে গেলেও কোন জায়গা থেকে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া পায় না। দু এক জায়গা থেকে তাকে জয়েন করতে বলা হলেও। তাদের বেতন এবং সুযোগ সুবিধা থাকে খুবই কম। যেটা দিয়ে শাহিন মাসের ১০ দিনও চলতে পারবে না। এদিকে দেখতে দেখতে সময় ফুরিয়ে আসছে। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আসলে ভাইয়া জীবনের কাছে আমাদের অনেকেরই আত্মসমর্পণ করে চলতে হয়। বর্তমান যে যুগ পড়েছে শাহিনের মত ছেলেদের আসলে অনেক কষ্ট হয়ে যায়। ভাবছি শাহিনের তো চাকরি নেই তাহলে আগামীতে কি হবে ওর? কিভাবে চলব টানা পরনের সংসার? আর কিভাবেই বা হাউস টিউটরের বেতন দিবে? কে জানে আগামী পর্বে আপনি আবার কি লেখেন? বাস্তবতার নিরীক্ষে অনেক সুন্দর একটি গল্প আপনি লিখেছেন ভাইয়া। আগামী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

আগের পর্ব টা পড়িনি আজকের পর্বটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।আসলে শাহীনের মত এমন অসংখ্য পরিবার আছে টানাপোড়ায় দিন যায়,তার উপর বেতন নিয়ে সমস্যা হয় আর বসের জারি তো আছেই। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে শাহীনের কোন চাকরি হলো কিনা কিংবা কিভাবে চলছে তার সংসার। ধন্যবাদ

 2 years ago 

আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আশাকরি ভাল আছেন।গল্পটা পড়লাম, বাস্তবতা নিয়ে লেখা গল্প। বাস্তবতা কিন্তু এমনিই হয়। যাই হোক শাহিনের চাকরি চলে গেল তার স্ত্রী সাবিহা মেয়ের প্রাইভেট টিউটরের টাকা চাইলে পরে দিবে বলতে বলল। শাহীন এখন কি করবে? অনেক জায়গায় চাকরির জন্য সিভি জমা দিলেও, দু একজায়গা থেকে তাকে জয়েন হতে বলে, তবে সেই বেতনে শাহিনের ১০ দিনও চলবে না।গল্পের নাম শুনে আমার মনে হচ্ছে শাহীন কোন খারাপ কাজে বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করবে।পরিস্হিতি তাকে তা করতে বাধ্য করবে।দেখা যাক সামনের পর্বে কি হয়?? অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া বাস্তবতা নির্ভর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য। অনেক অভিনন্দন আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62720.27
ETH 2447.07
USDT 1.00
SBD 2.64