শ্রমিকের জীবনের দাম মাত্র ২৫ হাজার টাকা।
কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ৫২ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে। তারপর আমাদের দেশে যথারীতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। প্রথম দুই দিন ২৪ ঘন্টা সংবাদ সংস্থা গুলো লাইভ কভারেজ দিয়েছে। অতঃপর দুদিন পরে সব ভুলে যাওয়া। কিন্তু আমরা ভুলে গেলেও ওই বাহান্নটা পরিবার কি কখনো এই মর্মান্তিক ঘটনা ভুলে যেতে পারবে? ওই পরিবারগুলো যে ধ্বংস হয়ে গেল এর দায়িত্ব কে নেবে?
ছবির সোর্স-লিংক
লাশগুলো আগুনে পুড়ে যাওয়ায় চেনা যাচ্ছিল না। সেজন্য ডিএনএ টেস্ট করার পরে লাশগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এক মা তার সন্তানের লাশ আনতে গিয়ে কফিন খুলে যখন দেখে শুধু একটি কঙ্কাল সেখানে। সে চিৎকার করে বলে আমার ছেলের লাশ কই? এটাতো একটি কঙ্কাল। নিহত ৫২ জনের ভিতর ১৩ জন ছিল শিশু শ্রমিক। এই ১৩ জন বাবা-মার অতি আদরের সন্তান ছিলো।যারা আর কোনো দিন মায়ের কোলে ফিরবে না।
এমন না যে আমাদের দেশে এই ধরনের ঘটনা প্রথম ঘটল। এ ধরনের ঘটনা কিছুদিন পরপরই ঘটে। কিছুদিন সংবাদপত্র টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এই সংবাদ নিয়ে সরগরম থাকে। অতঃপর সবাই ভুলে যায়। আবার একটি দুর্ঘটনা ঘটে। আবার সবকিছুর পুনরাবৃত্তি হয়। কিন্তু হতভাগ্য ওই শ্রমিকদের জীবনের কোনো পরিবর্তন হয় না। ওরা আগুনে পুড়ে মারা যায়, ভবন ধসে মারা যায়, লঞ্চ ডুবিতে মারা যায় আরো নানা উপায়ে মারা যায়। কিন্তু ওদের জীবনের কথা চিন্তা করার মতো সময় কারো নেই। রাষ্ট্র যারা চালায় তাদের তো অনেক গুরুদায়িত্ব। নগণ্য কিছু মানুষকে নিয়ে চিন্তা করার মত সময় তাদের কোথায়?
অনেক পরিবার তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। অনেক সন্তান তার বাবা-মাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। অনেক মা-বাবা তার সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে যায়। কিন্তু তাতে কারো কিছু এসে যায় না। কারণ ওরা তো দরিদ্র। ওরা তো কিছু সংখ্যা মাত্র। ওরা তো এই দেশটাকে চালায় না। তাহলে ওদের মারা যাওয়ায় কেনো কোনো প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে?
যদি ও ওদের শ্রমে আমরা উন্নত শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশে পরিণত হচ্ছি। ওদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা না হলে আমাদের কল কারখানা, গাড়ি ঘোড়া, শপিং মল, পার্ক সমস্ত রকম বিনোদন কেন্দ্র কিছুই চলে না কিন্তু তার পরেও ওরা অস্তিত্বহীন কিছু মানুষ হিসাবেই সমাজে বসবাস করে। যাদের জীবনের দাম মাত্র ২৫ হাজার টাকা। হ্যাঁ সরকার থেকে প্রতিদিন মৃত ব্যক্তির দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে।
শ্রমিকের মূল্য আমাদের দেশে শুধু একটা দিনেই থাকে। মে মাসের ১ তারিখ। সেদিন দেশের সমস্ত সেলিব্রিটি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শ্রমিক নেতা গন শ্রমিকের অধিকারের কথা বলে মঞ্চ গরম করে তোলেন। শ্রমিক কে সামনে রেখে তারা তাদের আখের গুছিয়ে নেন। কিন্তু এই শ্রমিকের জীবনের কোনো পরিবর্তন হয় না।
আরও একটা যুদ্ধ দরকার, আরও একটা বিপ্লব দরকার এই শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য। যখন দেশের সমস্ত শ্রমিক নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কোনো স্বার্থান্বেষী নেতা ছাড়া রাজপথ দখল করবে আর স্লোগান দেবে দুনিয়ার মজদুর, এক হও, এক হও। হয়তো সেদিন শ্রমিক তার বাঁচার অধিকার ফিরে পাবে। সে দিনটির অপেক্ষায় রইলাম।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোনো লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
ঘটনাটির জন্য আমরা সবাই অনেক ব্যথিত হয়েছিলাম। এটা আসলেই অনেক দুঃখজনক একটি ঘটনা ছিল ।আমাদের এই দেশে কেন জানিনা শ্রমিকদের একেবারেই মূল্যায়ন করা হয় না ।তাদের সেফটির ব্যাপারে কোন ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল প্রশাসন এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন । কবে যে এই অবমূল্যায়ন ,দুর্নীতি ,অব্যবস্থাপনা দূর হবে সেই অপেক্ষায় আছি।
ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য। শ্রমজীবী মানুষের মূল্যায়ন নিশ্চিত না করতে পারলে আমরা কখনোই বেশি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারবো না।
দুঃখজনক। খুবই বাস্তবিক ঘটনা তুলে ধরেছেন। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই।
как же страшно читать такие новости (