স্মৃতি বিজড়িত কলেজের মাঠ আজ বিপন্ন।
কি নিয়ে আজকে পোস্ট করব সন্ধ্যার পর হতে এটাই চিন্তা করছিলাম। তবে কোন কিছুই মাথায় আসছিল না। আমি সাধারণত ট্রাভেল ব্লগ, ফুড এবং রেস্টুরেন্ট রিভিউ, গল্প এগুলি লিখতে পছন্দ করি। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন যাবত প্রচন্ড ব্যস্ততার কারণে তেমন কোথাও একটা ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে না। শরীরটাও কিছুটা খারাপ থাকার কারণে খাওয়া-দাওয়া অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেছি। মানসিক অস্থিরতার কারণে কোন গল্প লিখতে পারছি না। সেজন্য আজ আমি কনটেন্ট সংকটে পড়েছি বলা যায়। সন্ধ্যার পর থেকেই চিন্তা করছিলাম কি নিয়ে লেখা যায়। কিছুই তেমন মাথায় না আসায় আমি অনলাইন পত্রিকা দেখতে লাগলাম।
প্রতীকি ছবি
দেখতে গিয়ে হঠাৎ করে একটি খবরে আমার চোখ আটকে গেলো। কারণ সেই খবরটি আমার কলেজ নিয়ে। আসলে কলেজ নিয়ে না বলে বলতে হয় কলেজের একটি সম্পত্তি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে বিরোধ রয়েছে সেটা নিয়ে নিউজটি হয়েছে। আমি পড়ালেখা করেছি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে থেকে। এই কলেজের সাথে আমার জীবনের বেশ কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীরই তার কলেজের সাথে বিভিন্ন রকম স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। আমাদের এই কলেজটি মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে শহর ক্যাম্পাস। যেখানে কলেজের মূল প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়। সাথে আছে ডিগ্রী শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ব্যবস্থা।
কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটি অবস্থিত শহর থেকে কিছুটা দূরে বায়তুল আমান নামে একটি জায়গায়। কিন্তু সমস্যাটা তৈরি হয়েছে শহর ক্যাম্পাস কে নিয়ে। আমাদের এই কলেজের শহর ক্যাম্পাসের সামনে একটি বেশ বড় মাঠ রয়েছে। এই মাঠটিকে আমরা ছোটবেলা থেকেই কলেজের সম্পত্তি হিসেবে জেনে এসেছি। কিন্তু কয়েক বছর আগে একটি রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের কারন দেখিয়ে সেই মাঠের চারপাশ দিয়ে যে সীমানা প্রাচীর ছিল সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সেই সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। তখন থেকে হঠাৎ করে জেলা প্রশাসন দাবি করতে শুরু করল কলেজের সামনের এই মাঠটি তাদের সম্পত্তি। এদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে এই মাঠ তাদের সম্পত্তি।
তখন থেকেই এই বিরোধের শুরু। কিন্তু যেই রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানের কারণে আজকে কলেজের এই ক্ষতিটা হয়েছে তারা এখন পুরোপুরি নিশ্চুপ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এই সম্পত্তিটা কলেজের হাত ছাড়া হলেই তারা খুশি হয়। কারণ তখন তারা ইচ্ছামত এখানে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করতে পারবে। যেই নিউজ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলাম সেই নিউজটি ছিল এমন কলেজের সীমানা প্রাচীর নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে দ্বন্দ্ব। গতকাল শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে সেই মাঠের যে সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা হয়েছিল সেই সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ কাজ শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এই কাজের জন্য। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন যখন কাজ শুরু করে তখন জেলা প্রশাসনের লোকজন এসে কাজ বন্ধ করে দেয়।
তাদের দাবি এই মাঠ জেলা প্রশাসনের সম্পত্তি। যার ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষের এখানে দেয়াল তৈরি করার কোন এখতিয়ার নেই। জেলা প্রশাসন এই মাঠটি কে নিজেদের সম্পত্তি দাবি করছে। কিন্তু এই মাঠের কোন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তারা পালন করে না। সেই রাজনৈতিক দলের প্রোগ্রামের পর থেকে মাঠটির চেহারা হয়েছে খুবই খারাপ। পুরো মাঠে নানা রকম ময়লা আবর্জনা স্তূপ জমেছে। অথচ যখন কলেজ কর্তৃপক্ষ এই মাঠের দেখাশোনা করত তখন মাঠটি ছিল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এই মাঠে বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হতো। একসময় আমাদের জেলার দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটের খেলাগুলি এই রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। এই মাঠেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের মহতারকা সাকিব আল হাসানের খেলারও স্মৃতি রয়েছে। আজ সেই মাঠটির অবস্থা দেখলে খুবই খারাপ লাগে। সেই রাজনৈতিক সম্মেলনের পর থেকে মাঠটির অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে সেখানে আর এখন কোন খেলাধুলা হয় না। সেই মাঠটি এখন হকারদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
মাঠের পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে শহরের একটি রাস্তা। একটি সীমানা প্রাচীর রাস্তা আর মাঠের মাঝের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করত। যার ফলে রাস্তার যানবাহন বা হকাররা মাঠে সহজে আসতে পারতো না। তাদেরকে মাঠে প্রবেশ করতে হলে কলেজ গেট দিয়ে ঢুকে তারপর মাঠে প্রবেশ করতে হতো। কিন্তু এখন সেই সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার কারণে যে কেউ সহজেই কলেজের সেই মাঠে ঢুকতে পারে। এই কলেজের মাঠে যে শুধু খেলাধুলা হতো তা নয়। শহরের অনেকেই তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বিকালে এখানে আড্ডা দিতে আসতো। বিকালে এবং সন্ধ্যার দিকে এখানে চমৎকার একটি পরিবেশ তৈরি হতো। কিন্তু সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার পর থেকে সেই জিনিসটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাঠটি নোংরা হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষজন আর সেখানে এখন আসে না।
এই খবরটি নিয়ে ফরিদপুরের স্থানীয় মানুষজনের ভেতরে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ শহরের মানুষজন এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা সবাই চায় এই মাঠটি কলেজের অধীনেই থাকুক। তাহলেই মাঠের পরিবেশ ভালো থাকবে। কিন্তু জেলা প্রশাসন এক রকম জোর করেই মাঠের দখল রাখতে চাইছে। তারা দাবি করছে মাঠের কাগজপত্র সব জেলা প্রশাসনের নামে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ এই মাঠটি রাজেন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই বরাদ্দ করার কাগজপত্র কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। তারপরেও জেলা প্রশাসন কিছুতেই মানতে চাইছে না।
এই সমস্যা নিয়ে কোর্টে একটি মামলা চলমান রয়েছে। এই অজুহাতেই জেলা প্রশাসন গতকাল সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শহরের লোকজন এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সকলেই চায় এই মাঠটি কলেজ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে থাক। যাতে সেখানকার পরিবেশটা ভালো থাকে। এমনিতেই শহরে এখন খেলাধুলা করার মতো মাঠের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। তার ভিতরে যদি এমন চমৎকার একটি জায়গা জেলা প্রশাসনের কারণে হারিয়ে যায়। এটা শহরের কেউই চাইবে না। খবরটা পড়ার পর থেকেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সরকারি আমলারা দেশের সমস্ত জায়গায় নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ঘটনাটাও তারই প্রতিফলন। এখন মনে মনে দোয়া করছি যেন এই সমস্যার সমাধান হয়ে মাঠটা কলেজ কর্তৃপক্ষ ফিরে পায়। তাহলে স্থানীয় লোকজন এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের সময় কাটানোর একটা জায়গা বেঁচে যাবে। যদি জেলা প্রশাসনের আন্ডারে মাঠটি চলে যায় তাহলে আর মানুষজন এখানে আসতে পারবে না। এখন দেখা যাক কি হয়?
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
রাজেন্দ্র কলেজ আশেপাশে কয়েকটি জেলার ভেতর ভালো নামকরা। আমার দিদি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে লেখাপড়া করে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা করছে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি খেলার মাঠটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও সবাই চাই খেলার মাঠটা যেন, খেলার মাঠই থাকে সেখানে যেন রাজনীতির মঞ্চ না তৈরি হয়। সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
কলেজের প্রাঙ্গণে মাঠ থাকাটা স্বাভাবিক তাছাড়া সেটা কলেজের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করে, অনেক ছাত্র-ছাত্রীর পুরোনো স্মৃতি জড়িয়ে থাকে মাঠকে ঘিরে ।কিন্তু আপনার কলেজের মাঠ যদি কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে চলে যাওয়াটা খুবই একটি দৃষ্টিকটু বিষয়,জেনে আমার ও খারাপ লাগলো।কলেজগুলিতে মূলত ক্যাম্পাস নিয়ে বেশি সমস্যা দেখা যায়, দেখি পরে কী হয় জানার অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে সরকারি কর্মকর্তারা মনে করে এটা ওদের বাবার জায়গা, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ওরা পরিচালনা করে। নিজেদের মন মত ইচ্ছে মত হুকুম খাটায়। আর বলবেন না ভাইয়া আপনি কেন আমারও যখন এসব জিনিস দেখা হয় শোনা হয় মেজাজ অনেক বেশি গরম হয়ে যায়। যাইহোক আপনাদের কলেজ দুটিকে বিভক্ত শুনে ব্যাপারটা ভালই লাগলো। আমিও দোয়া করি ভাইয়া আপনাদের কলেজ মাঠ যেন কর্তৃপক্ষ ফেরত পায়।
আমাদের স্কুলের মাঠেরও একই পরিস্থিতি। সব জায়গায় এক জিনিস।
ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ এর নাম অনেক শুনেছি। বেশ নামকরা একটি কলেজ। সেই কলেজের মাঠ নিয়ে এইরকম রাজনীতি। মামলা চলমান রয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আমার মতে স্কুলের ছাএ শিক্ষক একসঙ্গে হয়ে মানববন্ধন করে উপর মহলের নজরে দেওয়া বিষয়টি। আর ছাএরা একবার রাস্তায় নামলে দাবী আদায় হবেই। নিউজটা শুনে সত্যি খুব খারাপ লাগল ভাই😢😢।।
আসলে ভাইয়া স্মৃতি বিজড়িত কোন স্থানে যদি আঘাত আসে তখন ওই আঘাতটা হৃদয়ে লাগে। প্রায় বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা এবং কি রাজনৈতিক দলগুলো হায়নাদের মত হয়ে গেছে। যে যেভাবে পাচ্ছে লুটেপুটে খাচ্ছে। আপনার স্মৃতি বিজড়িত স্কুলের মাঠে আসলেই অনেক সুন্দর এবং অনেক বড়। আপনার মনের ভাবগুলো জানতে পেরে খুবই কষ্ট লাগছে। দোয়া করি যেন স্কুলে রায় পায়। আপনার জন্য রইল ভালোবাসা অবিরাম।
আসলে ভাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন নিজেদের সম্পত্তির মতো ব্যবহার করে। তারা নিজেরা নিজেদের মনে যা চায় তাই করে। কলেজের এই মাঠ কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে চলে গেছে। আশা করছি খুব শিগ্রই আবার ফেরত আসবে। এরকম পরিস্থিতিতে আসলেই খুব খারাপ লাগে।
আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই খারাপ লাগলো ভাই। আসলে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা এটাই বাস্তবতা। জোর যার মুল্লুক তার। যে যখন ক্ষমতায় থাকে এদেশ তার বাবার সম্পত্তি। আপনার কলেজের মাঠে নানা স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা রয়েছে। এতে আপনার দুঃখ পাওয়ারই কথা। যাইহোক ভাই আমাদের করার কিছুই নেই। তবে প্রত্যেক জিনিসের শেষ বলে একটা কথা রয়েছে। শুধু অপেক্ষার পালা। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।