ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণ (শেষ পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
গত কয়েকটি পর্বে আমি আপনাদের সাথে আমার চাঁদপুর ভ্রমণ এর কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। আমি কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানে ঘোরাফেরার সাথে আরো একটি ব্যাপার সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি। সেটা হচ্ছে সেখানকার বিভিন্ন রকম খাবারের স্বাদ আস্বাদন করা। আমার বিভিন্ন পোস্ট থেকে ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছেন আমি একজন ভোজন রসিক মানুষ। তাই কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তা করলে সেখানকার বিশেষ খাবারগুলি চেখে দেখার একটা প্ল্যান সব সময় মাথায় থাকে।
আমি এবার যখন বন্ধুদের সাথে চাঁদপুর ভ্রমণ পরিকল্পনা করলাম তখন দুটি জিনিস আমার মাথায় কাজ করছিল। একটি হচ্ছে চাঁদপুরের বিখ্যাত ওয়ান মিনিট নামে একটি দোকান থেকে আইসক্রিম এবং মিষ্টি খাওয়া। আর দ্বিতীয়ত চাঁদপুর যে জিনিসটার জন্য বিখ্যাত সেটি হচ্ছে এখানকার ইলিশ। চাঁদপুরে যাব আর এখানকার ইলিশ খাব না সেটা তো হতেই পারে না। যদিও এবার আমাদের চাঁদপুরের ভ্রমণটা আমাদের পরিকল্পনা মতো হয়নি। হঠাৎ করে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আমাদের পরিকল্পনায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছিল বা অন্যভাবে বলা যেতে পারে আমাদের ভ্রমণ সম্পূর্ণ না করে আমাদের ফিরে আসতে হয়েছিল।
আজকের পর্বে চাঁদপুরে আমাদের খাওয়া দাওয়ার পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আমি কিছুদিন আগে একজন ফুড ব্লগার এর ভিডিও দেখছিলাম। তিনি চাঁদপুর গিয়েছিলেন ব্লগিং করতে। সেখানে তিনি একটি আইসক্রিম এবং মিষ্টির দোকানে গিয়েছিলেন। সেই দোকানটি ছিল অনেক পুরাতন এবং চাঁদপুরের ভেতরে ঐতিহ্যবাহী একটি দোকান। তাদের মূল আকর্ষণ ছিল আইসক্রিম তৈরি। তো আমি যখন চাঁদপুর যাওয়ার প্ল্যান করলাম তখনি ঠিক করে রেখেছিলাম যদি চাঁদপুর যাই তাহলে অবশ্যই এই দোকান থেকে আইসক্রিম এবং মিষ্টি খাব।
যার ফলে আমরা চাঁদপুর নামার পরে সেই দোকানের লোকেশন খুঁজে বের করলাম গুগল ম্যাপ এর সাহায্য নিয়ে। তারপর একটি অটোতে উঠে আমরা সেই দোকানের কাছে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু গুগল ম্যাপে যে লোকেশন দেখাচ্ছিলো সেই লোকেশনে দোকানটি পাইনি। আসলে আমি গুগল ম্যাপে লোকেশন সেট করেছিলাম চাঁদপুর প্রেসক্লাব। কিন্তু সেই দোকানটি ছিল প্রেসক্লাব থেকে কিছুটা দূরে। তারপর প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছে লোকজনের কাছ থেকে শুনে কিছুক্ষণ হেঁটে সেই দোকানে পৌঁছালাম।
সেই দোকানের সামনে গিয়ে দেখি দোকানের শাটার একটি নামানো। কারণ আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন ছিল শুক্রবার। শুক্রবারে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছোট শহরের দোকানপাট বন্ধ থাকে। কারণ এই দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন। যাই হোক সেখানে পৌঁছে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করলাম। দোকানের ভেতরে প্রবেশ করেই বুঝতে পারলাম সেই ফুড ব্লগার তার ভিডিওতে যে কথা বলেছিল মোটেও বাড়িয়ে বলে নাই।
কারণ ছোট্ট একটি দোকানের ভেতরে বেশ কিছু কাস্টমার ছিল এবং আরো অনেক কাস্টোমার আসছিল যাদেরকে দোকানী ফিরিয়ে দিয়েছিল। কারন অনেকেই আসছিল মিষ্টি নেয়ার জন্য। কিন্তু এই অর্ধেক বেলার আগেই তাদের সমস্ত মিষ্টি বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছিল। শুধু অল্পকিছু রসমালাই ছিলো যেগুলি আগে থেকে অর্ডার দেয়া। যার ফলে আমরা সেখানে মিষ্টি খেতে পারলাম না। কিন্তু মিষ্টি না পেলেও সেখানে আমাদের কাঙ্খিত আইসক্রিম ঠিকই ছিল।
আমরা তিনজন সেখান থেকে তিনটি আইসক্রিম নিলাম। আইসক্রিম যখন খাওয়া শুরু করলাম তখন আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমরা ছোটবেলায় এক ধরনের ভ্যানিলা ফ্লেভার এর আইসক্রিম খেতাম। সেই আইসক্রিমের সাথে এই আইসক্রিম এর সাদের কিছুটা মিল ছিলো। আইসক্রিম খেতে বেশ ভালোই ছিল। যদিও শীতের দিন হওয়ার কারণে আইসক্রিমের মজা কিছুটা কম লাগলো। এই আইসক্রীমটি যদি গরমের সময় খেতে পারতাম তাহলে আরো মজা লাগতো। আইসক্রিম খাওয়া শেষ হলে আমরা সেই দোকান থেকে বের হলাম শহর ঘুরে দেখার জন্য।
ঘুরতে ঘুরতে এর ভেতরে নামাজের সময় হয়ে গেল। আমরা মসজিদে গেলাম নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় দেখি বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে সাথে দমকা হওয়া। তখন আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়ে গেলাম। তারপর আমরা ঠিক করলাম শুধু শুধু বসে না থেকে আমরা কাছের কোন হোটেল থেকে খাওয়া দাওয়ার পর্বটা সেরে নেই। এই পরিকল্পনার পর আমরা তিনজন দৌড়ে কাছের একটি হোটেলে প্রবেশ করলাম।
যেহেতু চাঁদপুরে এসেছি অতএব ইলিশ খেতেই হবে। তাই আমরা সেই হোটেলে বসে ইলিশ মাছ ভাজি, বেগুন ভাজি, আলু ভর্তা এবং মাছ ভর্তা আর সাথে ডালের অর্ডার করলাম। কিছুক্ষণ পরে টেবিলে খাবার পৌঁছে গেলো। আমরা মোটামুটি ক্ষুধার্ত ছিলাম। খাবার সামনে আসার সাথেই আমরা খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু খাবার মুখে দিয়েই আমাদের খাওয়ার আগ্রহ অনেকটা কমে গেল। কারণ রান্না একদমই ভালো হয়নি। এই ধরনের খাবার আমরা আগেও অনেক জায়গা থেকে খেয়েছি। সেখানকার সাথে এখানকার রান্নার বিস্তর ফারাক।
তারপরেও যেহেতু ক্ষুধার্ত ছিলাম তাই কোনোরকমে খাওয়া শেষ করলাম। রান্নার স্বাদ খারাপ থাকলে কি হবে দাম ছিল তুলনামূলক অন্যান্য জায়গা থেকে বেশি। আমরা ভেবেছিলাম এখানে ইলিশ মাছের দাম অন্য জায়গা থেকে কিছুটা কম হবে। কিন্তু হল উল্টোটা। যাইহোক কি আর করা। আসার সময় হোটেলের কাউন্টারে খাবার এর সাদের কথাটা জানিয়ে এলাম। হঠাৎ করে প্রকৃতির বিরূপ পরিস্থিতির জন্য আমাদের চাঁদপুর ভ্রমণ এখানেই সমাপ্ত হল। এই জন্য আর অন্য কোন খাবারের স্বাদ চেখে দেখতে পারিনি।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | লিংক, লিংক |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
চাঁদপুরের ইলিশের কথা অনেক শুনেছি। তবে সেখানে কখনো যাওয়া হয়নি। আর ওয়ান মিনিট নামে হোটেল আজকে প্রথম শুনলাম। নামটা শুনতে যেন একটা অদ্ভুদ ধরনের। অনেক ভালো লাগলো আপনার চাঁদপুর ভ্রমণের শেষ পর্ব টা। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া আপনার ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমণের শেষ পর্বটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। বুঝাই যাচ্ছে আপনি অনেক মজা করেছেন। ভ্যানিলা ফ্লেভারের আইস্ক্রিম আমারও খুব পছন্দ কখনো চাঁদপুর গেলে আমিও ওয়ান মিনিট ট্রাই করবো ইনশাআল্লাহ। ভাইয়া অনেক অনেক শুভকামনা।
ইলিশের আইটেম দেখেই তো লোভ লেগে যাচ্ছে।
সমস্যার কারণে অনেকদিন আইসক্রিম খাওয়া হয়না।আপনার আইসক্রিমের বর্ণনা শুনেই খেতে মন চাইছে।
আমিও কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম ভাইয়া। জায়গা টা অনেক ভালো লেগেছে আমার। আমিও অনেক গুলো খাবারের স্বাদ নিয়েছিলাম। ইলিশ টা বেশ মজার। আপনার টা দেখে বোঝায় যাচ্ছে। আমার ভ্রমণ করতে অনেক ভালো লাগে ভাইয়া। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।