বৈচিত্র্যময় শৈশব এবং শিক্ষাজীবন (প্রথম পর্ব)।
মানুষের জীবন একটি বৈচিত্র্যময় জীবন। কিন্তু এই বৈচিত্র সবার জীবনে সমান থাকে না। কারো জীবনটা অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। আবার কারো জীবনটা কিছুটা সাদামাটা। আপনাদের কি ধারনা হচ্ছে আমি আজকে জটিল কোন গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি? মোটেও না। গুরু গম্ভীর বিষয়গুলো আমি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। আমি নিজে যেমন এগুলি খুব একটা পছন্দ করি না। তেমনি অন্য কাউকে এগুলো পছন্দ করতে বলিও না।
যাই হোক আজ আমি আমার বৈচিত্রপূর্ণ শৈশব এবং শিক্ষাজীবন নিয়ে আপনাদের কাছে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। সঠিক মনে নেই সম্ভবত চার বছর বা পাঁচ বছর বয়সে আমরা গ্রাম থেকে শহরে চলে আসি। তার মূল কারণ হচ্ছে আমার মা আমাদের শিক্ষা নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিল। তার প্রধান লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল তার সন্তানদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। তখন গ্রামে লেখাপড়ার পরিবেশ মোটেও ভালো ছিল না। সে জন্যই আম্মা আমাদের সবাইকে নিয়ে শহরে চলে আসে।
শহরের আসলেও শহরের জীবনটা আমাদের কাছে একেবারে অপরিচিত ছিল না। কারণ আমরা একটা সময় পর্যন্ত গ্রামে থাকলেও শহরের সাথে আমাদের বেশ ভাল যোগাযোগ ছিলো। আর শহরে এসে আমরা এমন একটি এলাকায় থাকতে লাগলাম। যে এলাকাতে আমার মায়ের শৈশব কৈশোর কেটেছে। যার ফলে সেখানকার সবাই আমাদেরকে আপন করে নিয়েছিলো। শহরে আসার পর কিছুদিন মোটামুটি ভালোই কাটলো।
তারপরে শুরু হলো শিক্ষা জীবন। আমার মা সবসময় চেষ্টা করেছে আমাদেরকে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াতে। সেই উদ্দেশ্যে আমার স্কুল জীবন শুরু হয় বায়তুল মোকাররম কিন্ডার গার্টেন নামে একটি স্কুলে। সেই স্কুলের স্মৃতি আমার খুব একটা মনে নেই। দু একদিন কান্নাকাটি করতে করতে সেখানে গিয়েছিলাম। শুধু এতোটুকুই মনে পড়ে। তখন বেশ ছোট ছিলাম। যার ফলে কিছুদিনের গ্যাপ দিয়ে আমাকে অন্য একটি স্কুলে ভর্তি করলো। সেটি ছিল একটি মিশনারি স্কুল। খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা পরিচালিত স্কুলটি তখন আমাদের জেলার বাচ্চাদের স্কুলের ভিতর অন্যতম ভালো একটি স্কুল ছিলো।
কিন্তু আমার সেখানেও পড়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কারণ আগে থেকেই শুনতে পেয়েছিলাম সেই স্কুলের ডিসিপ্লিন খুবই শক্ত। সেখানে কথায় কথায় টিচাররা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেদম প্রহার করে বেত দিয়ে। এই জন্য আমার সেখানে খুব একটা যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু ছোট মানুষের ইচ্ছার আর কি বা দাম আছে বলেন? তাই আমার আম্মা এক প্রকার আমাকে জোর করে সেই স্কুলে নিয়ে গেল ভর্তি করতে। মোটামুটি সহজেই সেই স্কুলটাতে ভর্তি হয়ে গেলাম। পুরো প্রসেসটা কিভাবে হয়েছিল সেটা আমার এখন মনে নেই।
তবে একটা জিনিস মনে আছে। স্কুল জীবনের একদম শুরুর দিকেই আমার কয়েকজন বন্ধু জুটে গিয়েছিলো। যাই হোক স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে ক্লাস করা শুরু করলাম। আমার এখনো সেই স্কুলের ড্রেস কোডের কথা মনে আছে। কমলা কালারের শার্ট সাথে নেভি ব্লু কালারের হাফপ্যান্ট পড়তে হতো আমাদেরকে। আর সাথে অবশ্যই জুতা পড়তে হতো। স্যান্ডেল পড়ে সেই স্কুলে যাওয়ার নিয়ম ছিল না। প্রথম প্রথম স্কুলে যেতে আমার খুবই খারাপ লাগতো। আর সেই খারাপ লাগাটা বেড়ে যেতো ক্লাসের অন্য একটি ছেলের জন্য।
সেই ছেলেটিকে আমরা সবাই পচা বলে ডাকতাম। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে সেই ছেলেটি তার মার সাথে স্কুলে আসতো। এসে তার মা যখন তাকে ক্লাসে দিয়ে ক্লাস থেকে বাইরে চলে যেতো। তখনই সেই ছেলেটা উচ্চস্বরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকতো এবং যতক্ষণ তার মা তাকে ক্লাস থেকে বের না করত ততক্ষণ পর্যন্ত ছেলেটা কাঁদতেই থাকতো। শৈশবের কিছু কিছু স্মৃতি থাকে যা মানুষ কখনোই ভুলতে পারে না। আমাদের সেই পচার কান্নার স্মৃতি তেমনি একটি স্মৃতি হয়ে রয়েছে জীবনে। (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আপনার জীবনের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি বৈচিত্র্যময় শৈশব এবং শিক্ষা জীবনের গল্পের শুরুটা বেশ সুন্দর হয়েছে। পচার কান্নার পরে কি আছে জানতে ইচ্ছা করছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই। আপনার জন্য শুভকামনা।
এখানে কিন্তু কোন গল্প নেই। এখানে সবই বাস্তব ঘটনা।
হ্যাঁ ভাই আমি লেখা পড়েই বুঝেছি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি গল্প। আমি খুব ভালোভাবে সম্পূর্ণ গল্পটাই পড়েছি ভাই। আপনার জন্য শুভকামনা।
ভাইয়া আমাদের স্কুল জীবনে পচাঁর মত একটি সবজেক্ট রয়েছে। যার কথা হয়ত আমরা কেউই ভুলতে পারিনা। আর আপনার ড্রেস কোড টা ও অনেক সুন্দর ছিল।
সেই স্কুলের ড্রেস কোডটা আমারও অনেক পছন্দের ছিলো।
বেশিরভাগ বাচ্চাই প্রথমবার স্কুলে গেলে কান্নাকাটি করে। অনেকে তো স্কুল থেকে চলেও আসে। ছোটবেলার এই স্মৃতিগুলো কখনো ভোলার মতো না। আপনার ছোটবেলার স্মৃতিগুলো শুনে আমারও কিছুটা মনে পড়ে গেল। বেশ চমৎকার লিখেছেন ভাই।
প্রথমবার স্কুলে যাওয়ার অনুভূতি সব বাচ্চাদের প্রায় একই রকম হয়। পোস্টটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
ছোটবেলায় আসলে আমরা বুঝতে পারিনা কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটা খারাপ। এজন্যই বাবা-মার ওপর অভিমান করেছিলাম।
ভাইয়া ভালো লাগলো আপনার শৈশব জীবনে ঘটনাটি পড়ে৷ আপনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন৷ আসলে বাবা মা এমনি সবাই চায় ৷ যেন তাদের সন্তান যে একদিন অনেক বড় হতে পারে ৷
তবে ভাইয়া আপনার একটা কথা ভাল ছিল ৷ যে শিশুদের কথার তখন কোনো দাম ছিল না ৷
ধন্যবাদ ভাই ভাল থাকবেন!!!!
ঠিকই বলেছেন প্রত্যেক বাবা-মা চায় তাদের সন্তান যেন অনেক বড় হয়।
সব মা-বাবাই তার নিজের বাচ্চাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান এবং ভালো মানের স্কুলে পড়াতে চান।আগে স্কুলে খুবই বেত ব্যবহার করা হতো এখন যেন দেখাই যায় না।আপনার পড়াশুনার গল্প পড়ে ভালো লাগলো।তো পচা নামের ছেলেটার আসল নাম কি ছিল?
পঁচার আসল নাম ছিল সুখেন্দু।
আশা করি ভাইয়া, ভালো আছেন? আপনার লেখা বৈচিত্র্যময় শৈশবের গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। শৈশবের ঘটনাটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ।ভাইয়া চমৎকার ছিলো আপনা লেখনি। এত দুর্দান্ত শিক্ষনীয় পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ।
আশা করি পোস্টটা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন।
শৈশবের স্কুল জীবনের স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা প্রত্যেকের জীবনেই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। এগুলো স্মরণ হলে কঠিন ভালো লাগে। তবে আপনার শৈশবের স্কুলের প্রচার বিষয়টি একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে। প্রত্যেক পিতা মাতায় তার শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য কতই না পরিশ্রম করে। আমরা যদি শৈশবে এগুলো বুঝতে পারতাম। তাহলে তো কাজেই ছিল। যাক আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আসলেই ঠিক বলেছেন। শৈশবে আমরা বিষয়গুলো বুঝতে পারিনা।