লকডাউনের দিন গুলো। পর্ব-১ (ছোট গল্প)
শাওন ঘরের দরজায় বসে আছে বাবার পথ চেয়ে। বাবা বলেছে আজ তাকে নতুন জামা এনে দেবে। শাওনের একটিমাত্র জামা সেটি একাধিক জায়গায় ছিঁড়ে গিয়েছে। মা এটা কোন রকমের সেলাই করে দিয়েছে। শতছিন্ন এই জামাটা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে আছে। শাওনের বাবা রিক্সা চালক। সকালে বাবা যখন রিকশা চালাতে বের হয় তখন শাওন বাবাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে আজ সে শাওনকে জামা কিনে দিতে চেয়েছে। শাওনের বাবা বশীর উদ্দীন। শরীর অসুস্থ হওয়া সত্বেও পরিবারের কথা চিন্তা করে তাকে এই লকডাউন এর ভেতরেও রিকশা চালাতে যেতে হচ্ছে। ঘরে খাবার নেই, অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধ নেই ছেলেটার একমাত্র জামা ছিড়ে একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বশির উদ্দিনের নিজের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। পুরনো পিঠে ব্যথাটা কিছুদিন ধরে আবার অনেক যন্ত্রণা দিচ্ছে। যাওয়ার সময় বশিরউদ্দিন ছেলের হাতে একটি দুই টাকার নোট দিয়ে যায়। সমস্ত কিছু উপেক্ষা করেও বশির উদ্দিন রিক্সা নিয়ে বাইরে যায়। শাওন ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাবার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ছবির-সোর্স
রিক্সা তার নিজের নয় রিক্সাটা সে দিন চুক্তিতে ভাড়া নেয়। বশির উদ্দিন রিকশায় আস্তে করে প্যাডেল মারতে থাকে আর চিন্তা করতে থাকে কিভাবে সে আজকে রিক্সা চালাবে। শরীরের যে যন্ত্রণা সেটা না হয় সে উপেক্ষা করতে পারবে। কিন্তু লকডাউন এর সময় প্রশাসনের লোকজনের অত্যাচার থেকে সে বাঁচবে কিভাবে। তারা বোঝে না পেটের খিদের কাছে সমস্ত নিয়ম তুচ্ছ। এই চিন্তা করতে করতে বশিরউদ্দিন এগোতে থাকে।
হঠাৎ করে একজন ডাক দেয়, এই রিক্সা যাবে?
বশির উদ্দিন তার রিক্সা থামায়,
লোকটা কিছু না বলেই রিক্সায় উঠে পড়ে।
কিছুদূর যাওয়ার পরে তার গন্তব্যের ঠিকানাটা বলে।
তখন বশিরউদ্দিন বলে স্যার ওইদিকে তো যাওয়া যাইবো না।ওই দিকে গেলে পুলিশ ধরবো।
আরোহী বলে আরে সমস্যা হবে না চলো।
বশির উদ্দিন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে থাকে।
লোকটাকে তার গন্তব্যে নামিয়ে দিয়ে যখন ফিরতে যাবে তখনই হঠাৎ করে সে পুলিশের সামনে পড়ে যায়।
পুলিশ তার রিক্সা থামাতে বলে।
বলে এই শালা, এই লকডাউন এর ভেতরে বের হয়েছিস কেন? বশিরউদ্দিন বলে স্যার নিরুপায় হয়ে বের হয়ছি। ঘরে খাবার নাই, বউ অসুস্থ তার ওষুধ কিনতে হবে তাই বের হইছি। পুলিশ বলে রিক্সা সাইডে লাগা। তারপর রাস্তার পাশে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক। এর ভিতর একটা ট্রাক এসে দাঁড়ায় সেখানে। পুলিশের লোকজন রিক্সাটা সে ট্রাকের উপরে উঠিয়ে নেয়। রিক্সাটা নিয়ে যাওয়ার সময় বশির উদ্দিন পুলিশের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করে রিক্সাটা দিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু পুলিশ সে কথায় মোটেই কর্ণপাত করে না। যাওয়ার সময় পুলিশ বলে যায় থানায় এসে জরিমানা দিয়ে রিকশা ছাড়িয়ে নিয়ে যাবি। বশির উদ্দিনের দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। সে অসহায়ের মতো ট্রাকটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ছবির-সোর্স
আর চিন্তা করতে থাকে এখন সে কি করবে? কিভাবে পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে যাবে?কিভাবে স্ত্রীর ওষুধ কিনবে?কিভাবে ছেলেটার জন্য একটা নতুন জামা নিয়ে যাবে? কিভাবে রিক্সার মালিকের কাছে রিকশা ফিরিয়ে দেবে? এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত সামনে নিয়ে বশিরউদ্দিন শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ওদিকে তার ছেলে শাওন বাবার আসার প্রতীক্ষায় বস্তির রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। (সমাপ্ত)
আমি রূপক। আমার বাড়ি ফরিদপুর। আমি একজন বিবাহিত পুরুষ। আমার একটি ছোট্ট মেয়ে আছে। বর্তমানে আমি কর্মহীন অবস্থায় আছি। স্টিমিট এ আমার সময়টা আমি সুন্দর উপভোগ করছি। লেখার খুব একটা অভ্যাস আমার নেই। স্টিমিট এ কাজ শুরু করার পর দু একবার ছোট গল্প লিখেছি।এই কমিউনিটি তে যোগদান করার পরে দেখলাম সবাই সবার ক্রিয়েটিভিটির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করছে। তাই আমিও চিন্তা করলাম একটু লেখার চেষ্টা করে দেখি। আপনারা যারা এই লেখাটি পড়বেন তাদের সুচিন্তিত মতামত আশা করছি। আর ভুল ত্রুটি হলে সেটা অনুগ্রহপূর্বক ধরিয়ে দিবেন।
আমার এই প্রকাশনা শুধুমাত্র স্টিমেট ব্লকচেইন এর জন্য তৈরি। এটা ১০০% অরিজিনাল প্রকাশনা।
প্রকাশনাটি পড়ার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
বশির উদ্দিনের এমন হাজারো অসহায় মানুষ আমাদের আসে পাশেই রয়েছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে তারা তাদের কর্ম তো হারিয়েছেই এবং এভাবে অনেক খেটে খাওয়া মানুষ নির্যাতনের শিকার ও হয়েছে।
পেটে ক্ষুদা থাকলে তারা কিই বা করবে। অভাবের তাড়নায় তো তাদের কাজের জন্য বেরোতেই হবে। সর্বপ্রথম সরকারের উচিত তাদের খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ।
১০০% ইউনিক পোস্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য আজকে আমি যতটুকু কাজ শিখেছি তার পিছনে আপনার অবদান অনেক।
দারুন গল্প লিখতে পারেন , চালিয়ে যান ।
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। আপনার এই কথাগুলো আমার জন্য অনেক বড় প্রেরণা। চেষ্টা করব আরও ভালো কিছু করার জন্য।