দুই বন্ধুর সাথে পদ্মার চরে ঘোরার অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


যাই হোক ট্রলার থেকে ওপারের যাত্রীদের নামাজ শেষ হলে আমরা তিন বন্ধু ট্রলারে চড়ে বসলাম। আমাদের সাথে আরো বেশ কিছু যাত্রী সেখানে উঠলো। সাথে ছিল কয়েকটি মোটরসাইকেল। মানুষ মালপত্র সব একই ট্রলারে পারাপার করা হয়। আমরা উঠে বসার কিছুক্ষণ পর ট্রলার ছেড়ে দিল। যদিও পদ্মা নদী শুকিয়ে এখন এত সরু হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল একটা সরু খাল পার হচ্ছি। আমরা বর্ষাকালের কথা চিন্তা করে অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। এই শোরু খালের মতো নদীটি বর্ষাকালে কি প্রমত্তা রূপ ধারণ করে। যাই হোক নদীর প্রস্থতা কমে আসায় আমরা অল্প সময়ে ওপারে পৌঁছে গেলাম।

IMG_20230108_135700.jpg

IMG_20230108_121946.jpg

আমাদের ট্রলার যখন ওপারে পৌঁছল। তখন উপরের দিকে উঠলাম। সেখানে উঠে দেখি অনেকগুলো মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে আছে। দুই একটি ঘোড়ার গাড়িও দেখতে পেলাম। এই ঘোড়ার গাড়ি এবং মোটরসাইকেল হচ্ছে চরের একমাত্র যানবাহন। চরের মানুষজন যাতায়াত করে মোটরসাইকেল গুলিতে। আর মালপত্র আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় ঘোড়ার গাড়ি গুলি। যাই হোক সেখানে আমরা একটি চায়ের দোকানও দেখতে পেলাম। এই একটা জিনিস বাংলাদেশের সব জায়গাতেই কমন। সেটা হচ্ছে যেখানে কিছু মানুষের ভিড় হয় সেখানেই একটি চায়ের দোকান গড়ে ওঠে। আমরা আর চায়ের দোকানের দিকে না গিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।

IMG_20230108_135700.jpg

IMG_20230108_121746.jpg

একটু আগাতে দেখতে পেলাম অনেকটা জায়গা জুড়ে সরিষা ক্ষেত। হলুদ সরিষা ফুলে পুরো ফসলের মাঠটা হলুদ রং ধারণ করেছে। সরিষা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে একটি পায়ে হাটা পথ চলে গিয়েছে। আমরা সেদিকেই হাঁটতে লাগলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আজকে এমন একটি রাস্তায় যাওয়ার যেদিকে আমরা এর আগে যায়নি। আগে আমি বলেছি চরাঞ্চলে গরমের দিনে চলাফেরা করা খুবই কষ্টকর। তবে শীতের সময় চরে আসলে ঘোরাফেরা করে বেশ ভালো লাগে। কারণ আমাদের ইচ্ছা ছিল হেঁটে ঘোরাফেরা করার। আর হাঁটার জন্য শীতকালের পরিবেশটা দারুন। আমরা ক্ষেতের ভিতরে সেই রাস্তা দিয়ে সামনে আগাতে লাগলাম।

IMG_20230108_121949.jpg

IMG_20230108_122053.jpg

চমৎকার নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশ দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগছিল। তিন বন্ধু যা দেখছিলাম সেটাই ভালো লাগছিল। দীর্ঘদিন হলো এমন পরিবেশে আমাদের আসা হয় না। সব সময় শহুরে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে থেকে এমন জায়গার জন্য আমাদের মনের ভেতর এক ধরনের হাহাকার কাজ করে। চরে জনবসতি এখনো খুবই কম। অনেক দূর পর পর কিছু জনবসতি দেখা যাচ্ছিল। তাছাড়া বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। আমরা তিন বন্ধু চারপাশে সৌন্দর্য দেখছিলাম আর সামনে আগাচ্ছিলাম ছিলাম। এভাবে দীর্ঘক্ষণ হাঁটার পর এক সময় আমার ভিতরে কিছুটা ক্লান্তিবোধ চলে আসলো।

IMG_20230108_122323.jpg

IMG_20230108_122305.jpg

তখন স্থানীয় মানুষজনের কাছে দোকানপাটের খোঁজ করছিলাম। কিন্তু তারা সবাই জানালো আশেপাশে তেমন একটা দোকানপাট নেই। যেগুলো আছে সেগুলো বন্ধ হয়ে রয়েছে। দোকানপাট পেতে হলে আমাদেরকে আরো অনেক দূরে যেতে হবে। তারপরও আমরাএকটি লোকালয়ের ভেতর ঢুকে দোকানপাট খুজছিলাম। দীর্ঘক্ষণ হাঁটার ফলে বেশ ক্লান্ত লাগছিল শরীরটা। তাই চিন্তা করেছিলাম কোন একটি চায়ের দোকান পাওয়া গেলে। সেখানে বসে চা খাওয়া যাবে সাথে একটু বিশ্রামও নেয়া যাবে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমরা একটি দোকান পেলাম যেটি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু দোকানটির সামনে দোকানের মালিক কে দেখতে পেলাম। তাকে কিছুটা অনুরোধ করার পর তিনি দোকান খুলতে রাজি হলেন।

IMG_20230108_124739.jpg

IMG_20230108_122649.jpg

তবে আমরা চা খেতে আগ্রহ প্রকাশ করায় তিনি বললেন এখন চা করা সম্ভব না। কারণ চুলা বন্ধ রয়েছে। যাই হোক আমরা দোকান থেকে কিছু হালকা খাবার আর পানি নিয়ে খেতে লাগলাম আর আস্তে আস্তে করে ফেরার পথের দিকে আগাতে থাকলাম। এভাবে কিছুক্ষণ হাঁটার পর আমার আর হাঁটতে ইচ্ছা করছিল না। তখন চিন্তা করছিলাম একটি মোটরসাইকেল পেলে মন্ধ হতো না। তিনজনে অল্প সময়ে পৌঁছে যেতে পারতাম। এই কথা চিন্তা করতে না মোটরসাইকেল সেখানে হাজির হলো। সাধারণত মোটরসাইকেলে চালকের সাথে আরো দুজন বসা যায়। তবে আমরা ছিলাম তিনজনই মোটামুটি স্বাস্থ্যবান। তাই চালককে জিজ্ঞেস করলাম আপনি আমাদের নিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে পারবেন কিনা। সে বললো কোন সমস্যা হবে না। আমরা মোটরসাইকেলে ওঠার পর মোটরসাইকেল চলতে শুরু করল। গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চলছিল। মাঝে মাঝে ইটের রাস্তা ও ছিল। বেশ ভয়ে ভয়ে মোটরসাইকেলে বসে ছিলাম আমি। যাইহোক অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই আমরা আবার খেয়া ঘাটে পৌঁছে গেলাম। তারপর সেখান থেকে ট্রলারে করে এপারে ফিরে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানপদ্মার চর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

কাঁচা রাস্তায় চালক সহ আপনারা তিনজন কি করে মোটরসাইকেলে বসেছেন সেটাই ভাবছি। আসলে অনেক সময় হাঁটতে হাঁটতে হয়তো দূর অজানায় আমরা চলে যাই। কিন্তু ফেরার সময় ভীষণ ক্লান্তি লাগে। যাইহোক নতুন পরিবেশে সময় কাটাতে সত্যিই ভালো লাগে। আর শীতের সময় চরাঞ্চল গুলোতে হাঁটতে ভালোই লাগে। এই সময় নদীর পানি খুব কমে যায়। তাইতো নৌকা কিংবা ফেরি পারাপার হতেও সময় কম লাগে। ভাইয়া আপনার ভ্রমণের গল্প পড়ে ভালই লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62647.29
ETH 2439.61
USDT 1.00
SBD 2.66