হাসপাতালে কাটানো সময়ে আমার অভিজ্ঞতা। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
যারা আমার ব্লগ পড়েন তারা জানেন কিছুদিন আগে আমার পরিবার একটি সংকটময় সময় অতিবাহিত করেছে। আমার অতি আপনজন তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেই সময়টায় আমি অনেকটা সময় হাসপাতালের কাটিয়েছি। সেখানে আমার বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। নানা রকমের মানুষকে সেখানে দেখেছি। বিভিন্ন রকমের গল্প শুনেছি। সেই অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব।
হাসপাতালে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা আমার অনেক আগে থেকেই আছে। আত্মীয়-স্বজনের ভেতরে অনেকেই যখন হাসপাতলে ভর্তি থাকতো। তখন তাদের এটেনডেন্ট হিসাবে আমি বেশ কয়েকবার থেকেছি। কিন্তু ব্যপারগুলো আগে এভাবে বুঝতে পারিনি। সময়ের সাথে সাথে মানুষের ভেতরে পরিপক্কতা আসে। যে ব্যাপারগুলি আগে খেয়াল করতাম না। এখন দেখি খুব সহজেই সে ব্যাপারগুলি দেখতে পাই।
হাসপাতাল এমন একটা জায়গা যেখানে আপনি সবচাইতে বিপদগ্রস্থ মানুষগুলিকে পাবেন। একেক জন মানুষ একেক রকম বিপদে থাকে। কারো টাকার সমস্যা। কারো লোকবলের সমস্যা। কারো আস্থার সংকট বিভিন্ন রকম সমস্যায় মানুষ জর্জরিত থাকে। দু'রাত আমি হাসপাতালে ছিলাম। সেখানে নানারকম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে কিছু অভিজ্ঞতা এখন আপনাদের সাথে ভাগ করে নেবো।
হাসপাতালের রোগীদের যারা এটেনডেন্ট থাকে তাদের থাকার জন্য একটি জায়গা হাসপাতালের লোকজন বরাদ্দ করে দিয়েছে। যদিও সেটি আলাদা কোনো আয়োজন নয়। দিনের বেলায় মানুষ যেখানটাতে বসে অপেক্ষা করে সেখানেই রাতে ঘুমানোর আয়োজন। এই হাসপাতলে আমি নতুন। আগে কখনো রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়নি এখানে।তাই ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। রাত বারোটার দিকে আমার মনে হলো কোথাও একটু শুতে পারলে ভালো হতো। সেজন্য আমি দেখতে গেলাম কোথায় শোয়ার মতো ব্যবস্থা আছে। গিয়ে তো আমি হতবাক। যেখানটাতে দিনের বেলায় বসে ছিলাম সেখানে গিয়ে দেখি যে স্টিলের বেঞ্চ গুলিতে দিনের বেলায় সবাই বসে ছিল। সেই বেঞ্চ গুলো লোকজন দখল করে শুয়ে আছে। অনেকে আবার ফ্লোরে অল্প জায়গা পেয়ে সেখানেই বিছানা পেতেছে।
কারণ এই হাসপাতলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসে। তাদের অনেকেরই ঢাকা শহরে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। আবার রোগীর এটেনডেন্ট এর কাউকে-না-কাউকে রাতে থাকতে হয়। কারণ এই হাসপাতালে যারা আসে তারা সবাই সিরিয়াস কন্ডিশন এর রোগী। যার ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর নিকটাত্মীয়দের কাউকে রাতে থাকতে বলে। না থাকলেও চলে। তো যাই হোক রাতে শুতে গিয়ে আমি প্রচন্ড অবাক হয়েছিলাম। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শেষ পর্যন্ত আমি শোয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে বেঞ্চে বসেই মোটামুটি রাতটা কাটিয়ে দিই।
রাত তিনটার দিকে আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে। চিন্তা করতে থাকি এখন এত রাতে খাবার কোথায় পাই? পরে মনে পড়ে এই হাসপাতালের একটি ভেন্ডিং মেশিন আছে। যেখানে কিছু খাবারের ব্যবস্থা আছে। টাকা দিয়ে সেই ভেন্ডিং মেশিন থেকে খাবার নেয়া যায়। আমি সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে আরেক সমস্যা। সিস্টেম হচ্ছে যে খাবারটা আপনি কিনতে চান প্রথমে ভেন্ডিং মেশিনের টাচ ডিসপ্লেতে সেটা সিলেক্ট করতে হবে। তারপর ভেন্ডিং মেশিনে আপনাকে টাকা প্রবেশ করাতে হবে। গিয়ে দেখি অনেকেই টাকা প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সেখানে আরো একটা অপশন আছে। বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করে আপনি পণ্য কিনতে পারবেন। আমার বিকাশে অল্প কিছু টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে আমি কিছু খাবার কিনলাম। সেই খাবার খেয়ে ক্ষুধা মেটালাম।
কিন্তু অনেককে দেখলাম তাদের বিকাশে টাকা না থাকার কারণে খাবার কিনতে ব্যর্থ হলো। ব্যাপারটা দেখে খুব খারাপ লাগলো। কারণ এত রাতে যখন এসেছে তখন অবশ্যই তাদের অনেক ক্ষুদা লেগেছে। আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি রাত জাগলে আপনার অবশ্যই ক্ষুধা লাগবে। আমার ব্যালেন্স বেশি টাকা ছিল না যে তাদের সাহায্য করবো। তার পরেও একজনকে সাহায্য করেছিলাম। এমনি আরো নানারকম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে হাসপাতলে আমার দিনগুলো কেটেছে। পরবর্তীতে কখনো সেই অভিজ্ঞতাগুলো আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
আশা করছি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে।
পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র | হুয়াই নোভা ২আই |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | লিংক |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
আপনার প্রতিটা কথার মধ্যে অনেক কিছুই বুঝতে পারলাম, কথায় আছে না রোগী সাথে গেলে বা রোগী নিয়ে গেলে নিজে রোগী হয়ে যাওয়া লাগে, হসপিটালে রোগী নিয়ে যাওয়া বা রোগীর সাথে থাকাটা এতটা সহজ না, সেটা আমি খুব ভাল করে জানি, তবে আপনি কিছুক্ষণ সময় সেখানে থাকাতে অনেকটা অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে, যে মানুষ কত রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, অনেক সুন্দর লিখেছেন দাদা, এবং আপনার সেই প্রিয় মানুষটির সুস্থতা কামনা করছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
হাসপাতালে রাত কাটানো যে কি পরিমাণ কষ্টকর কাজ তা যার সমস্যা সে ই বুঝে আসলে। আর অনেকেই ভাবে বসেই তো থাকবে কষ্ট কিসের!এই বসে থাকাই অনেক বেশি কষ্টকর।
আর যাদের বাড়ি হাসপাতাল থেকে অনেক দূরে। ওদের কষ্ট তো আরো দ্বিগুণ।
সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
সত্যিই হসপিটালে অনেক কষ্টকর মুহূর্ত সাথে লড়াই করতে হয়। আমরা দেখতে পারি কতজন কত রকম সমস্যা নিয়ে আসে। আপনি ঠিক বলেছেন কেউ টাকার সমস্যা । কারো লোকের সমস্যা আর যারা আসে তারা সিরিয়াস রোগী এবং থাকার জন্য জায়গা থাকে না এবং তাতে অনেক সময় অনেক সমস্যায় পড়তে হয় এবং যাইহোক আপনার বিকাশে কিছু টাকা থাকার কারণে খেতে পেরেছেন কিন্তু বাকি লোক খেতে পারে নাই। শুনে খারাপ লাগল
ধন্যবাদ আপনাকে।
হাসপাতালে আসলে বুঝা যায় আমরা কতটা সুখে আছি। হাসপাতালে গেলে অন্যের কষ্ট অনুভব করা যায়, যে মানুষ কতটা কষ্টে আছে। আল্লাহ আমাদের সুস্থ রেখেছেন এটা কত বড় নিয়ামত তা আমরা হাসপাতালে গেলে বুঝতে পারি। হাসপাতালে কত অসহায় ব্যক্তি কত কঠিন কঠিন রোগীদের দেখে নিজের প্রতি আস্থা আসবে। যেনআল্লাহ আমাদের অনেক ভালো রেখেছে, তাই আমি বলব যাদের মন খারাপ থাকে নিজেকে নিয়ে হতাশ তারা একবার হসপিটাল থেকে ঘুরে আসলে এই হতাশা কাটিয়ে উঠবে।
একদম ঠিক বলেছেন। আমাদের আসলে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিৎ।
ভাইয়া হাসপাতালে পাঠানোর সময় অত্যন্ত কষ্টকর কারণ এর অভিজ্ঞতা আমার আছে। আর আপনার পোষ্টটি পড়ে আমি বুঝতে পারলাম যে আপনি কিভাবে হাসপাতলে আপনার অসুস্থ রোগীকে নিয়ে কাটিয়েছিলেন। আমি দোয়া করি আপনার অসুস্থ রোগীকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক। ভাইয়া আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
হাসপাতালে কাটানো এক মাসের একটি বিস্তর অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। যেখানে বুঝেছি খিদে, ঘুম আর পরিশ্রম কাকে বলে। এখনও যদি সেটা চিন্তা করি তখনও চোখ ছলছল করে ওঠে। যাক আপনার অভিজ্ঞতার সাথে অনেক মিল রয়েছে। ভাই দোয়া সবসময়ই রয়েছে 🥀
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
হাসপাতাল আমার কাছে এমন একটা জায়গা মনে হয় যেখানে একজন সুস্থ মানুষ গেলেও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।সেখানে আমার অনেক খারাল খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে এই হাসপাতালে আমি আমার দুইটা মামাকে হারিয়েছিলাম।হাসপাতালে গেলেই মনটা ভার হয়ে যায় চেয়ে থাকি সেই আইসি ইউ তে।
আপনার অভিজ্ঞতা আসলেই গভির আপনার মতো আমাদের এখানেও হাসপাতাল দূরে বিভিন্ন সমস্যায় পরা লাগে এটার জন্য।গুছিয়ে দারুন লিখেচেন।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
ভাইয়া, হাসপাতালে যে এটেনডেন্ট থাকে সে বলতে পারে হাসপাতালে দিন রাত কাটানো কতটা কষ্টদায়ক সেইটা মুটামুটি সবার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।
ভাইয়া, আপনার লেখাটি পড়ে আমার খুবই খারাপ লেগেছে।আপনি চেয়ে ছিলেন ঘুমানোর জন্য সেখানে আপনি বসার জায়গায় মানুষকে ঘুমাতে দেখেছেন।সারারাত জেগে কাটিয়েছেন।আসলে আমার মতে যে হসপিটাল গুলোতে এটেনডেন্ট থাকা খুব জরুরী তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা ওই হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের একান্তই দায়িত্ব।
ভাইয়া,আপনার লেখার এই অংশটি আমার খুবই ভালো লেগেছে।মানুষ মানুষের জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
হাসপাতালে রাত কাটানোটা যে কতটা কঠিন সেটা যারা হাসপাতালে থাকে তারাই বুঝে। হাসপাতালে গেলে মানুষের বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।ভাইয়া আপনি হাসপাতলে কাটানো সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
হাসপাতালে কাটানো খুবই কষ্টকর ব্যাপার।বলতে গেলে রুগীর সঙ্গে থাকতে গিয়ে অর্ধেক রুগী হয়ে বাড়ি ফিরে আসা।তবুও আপনজনের জন্য তো যেতেই হবে, পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে।যাইহোক সেখানে মানুষের মনেরভাব দারুনভাবে প্রকাশ পায়,অনেকের সমস্যা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।