চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিবারের সান্নিধ্যে কিছুটা সময়।
অনেকদিন হলো পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। এই বর্ষার সময়ে শহরের আশেপাশে নতুন বেশ কিছু জায়গার সৃষ্টি হয় যেখানে মানুষ ঘুরতে যায়। তেমন কয়েকটি জায়গার খবর পাচ্ছিলাম ফেসবুক মারফত। আজ বিকেলে আমি তেমনি একটি জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। জায়গাটি ফরিদপুর শহর থেকে কিছুটা দূরে কানাইপুর নামক একটি ইউনিয়নে। সেখানে একটি বিলে অসংখ্য পদ্মফুল ফুটে রয়েছে। দিনের সেই চমৎকার সৌন্দর্য দেখতে শহর থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী সেখানে ছুটে যাচ্ছে।
আমার যাওয়ার পরিকল্পনা শুনে আমার স্ত্রী বলল আমাদেরকেও সাথে নিয়ে যাও। আমি প্রথমে খুব একটা রাজি ছিলাম না। কারণ সেই জায়গাটি আমার খুব একটা পরিচিত নয়। আবার শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে যার ফলে ওদেরকে নিয়ে গেলে যদি কোন সমস্যায় পড়ি এই চিন্তায় আমি রাজি হচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত তাদের জোরাজুরিতে আমাকে রাজি হতে হলো। কিন্তু আমাদের তৈরি হতে হতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলো। তখন আমি চিন্তা করে দেখলাম এখন যদি আমরা পদ্ম বিলের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। তাহলে সন্ধ্যার আগে ফিরতে পারবো না। সেজন্য পদ্মবিলে যাওয়ার প্ল্যান আপাতত স্থগিত করে আমি আমার স্ত্রীকে প্রস্তাব দিলাম চলো আমরা হঠাৎ বাজার নামক একটি জায়গা থেকে ঘুরে আসি।
সেই জায়গাটিও চমৎকার সেখানে। একটি ভাসমান রেস্তোরাঁ আছে। সেই রেস্তোরাতে করে বিলের ভেতর ঘুরে বেড়ানো যায়। সেই ভাসমান রেস্তোরাঁতে ঘোরার অভিজ্ঞতাটা বেশ দারুন হবে। আমার প্রস্তাবে সে রাজি হল। তারপর আমরা হঠাৎ বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। জায়গাটি আমাদের বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সাত আট কিলোমিটার মত রাস্তা হবে। যার ফলে আমরা সেখানে রিকশা করে আধা ঘন্টার ভিতরে পৌঁছে গেলাম। জায়গাটি দেখে আমার পরিবারের লোকজন বেশ খুশি হল।
কিন্তু সেখানে পৌঁছে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ এর আগে আমি যখনই এখানে এসেছি সেখানে প্রচুর লোক সমাগম দেখেছি। কিন্তু আজ দেখি একদম জনশূন্য স্থান সেটি। আমরা আর নৌকার কয়েকজন স্টাফ ছাড়া আর কোন লোকজন সেখানে নেই। জায়গাটি এমনিতেই বেশ নির্জন। শুধু রাস্তা দিয়ে অল্প কিছু লোকজন যাতায়াত করছিল। এমন নির্জন জায়গায় পরিবার পরিজন নিয়ে আসা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। সেজন্য আমি আর নৌকাটাতে উঠতে চাচ্ছিলাম না। এদিকে বেশ কিছুক্ষণ আমরা রাস্তার পাশ দিয়ে হাটাহাটি করছিলাম আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করছিলাম। এভাবে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেলো। নৌকার স্টাফরা আমাদেরকে বলেছিল কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে আরও লোকজন আসবে। তখন তারা নৌকা ছাড়বে। আমরা অপেক্ষা করতে করতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আর কয়েক মিনিট দেখবো। তারপর অন্য কোন জায়গার উদ্দেশ্যে চলে যাব।
এর ভেতরে আমার পরিবারের সদস্যরা আবদার করলো তারা সেই ভাসমান রেস্তোরাঁয় উঠে কয়েকটি ছবি তুলতে চায়। তো আমি চিন্তা করলাম যেহেতু চলে যাব তাহলে কয়েকটি ছবি তোলার সুযোগ তাদেরকে দেয়া যেতে পারে। তারপর ওদেরকে সাথে নিয়ে সেই ভাসমান রেস্তোরায় গিয়ে উঠলাম। আমরা যখন ভাসমান রেস্তোরায় উঠছি তখন হঠাৎ করে সেখানে একটি অটো রিক্সা এসে থামলো। অটো রিক্সা থেকে চার পাঁচ জন মেয়ে নামলো। যারা এসেছে এই ভাসমান রেস্তোরায় ঘোরার উদ্দেশ্যে। মেয়েগুলিকে দেখে বুঝতে পারলাম এখন হয়তো নৌকার লোকজন নৌকাটা ছাড়তে পারে।
মেয়ে ক'জন যখন উঠে আসলো তার কিছুক্ষণ পরেই ভাসমান রেস্তোরা চলতে শুরু করল। আজকে বিকালের আবহাওয়াটা বেশ মনোরম ছিল। আকাশ ছিল হালকা মেঘাচ্ছন্ন। মৃদু বাতাস বইছিল। সবকিছু মিলিয়ে একটি চমৎকার আবহ তৈরি হয়েছিল। আমরা সেই ভাসমান রেস্তোরাতে করে যখন বিলের ভিতর ঘুরছিলাম তখন সকলের চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম সবাই সময়টা বেশ উপভোগ করছে। এদিকে সেই মেয়েগুলি দেখি ছবি তুলতে তুলতে তারা অস্থির হয়ে গিয়েছে। আশেপাশের এত চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না।
এদিকে আমরা হালকা কিছু খাবারের অর্ডার করলাম। যদিও সেখানে তেমন একটা কিছু পাওয়া যায় না। শুধু চটপটি ফুচকা আর কফি পাওয়া যায়। সেখানে আমরা ফুচকা আর কফি অর্ডার করলাম। ঘোরাফেরার সাথে খাওয়া-দাওয়া একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বাইরে ঘুরতে এসে খাওয়া-দাওয়া না করলে আমার কাছে মনে হয় ভ্রমণের পুরো মজাটা পেলাম না। যাইহোক অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমাদের সামনে ফুচকা সার্ভ করল। এর আগের বার যখন আমি এই ভাসমান রেস্তোরায় এসেছিলাম তখন এদের ফুচকাটা খেয়ে মজা পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ একদমই ভালো লাগলো না। তারপর কফিটার অবস্থান তথৈবচ। খাবার ভালো না হলেও আশেপাশের চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মনটাকে ফুরফুরে করে দিয়েছিলো। ঘোরাফেরার একফাকে আমরাও কিছু ছবি তুলে নিলাম। এদিকে আমাদের ফেরার সময় হয়ে গেলো। সেই ভাসমান রেস্তোরাঁ ঘাটের দিকে ভিড়তে লাগলো। তারপর সেখান থেকে নেমে আমরা বাড়ির পথে রওনা হলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | আদমপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
জায়গাটি দেখে আসলেই প্রকৃতির সৌন্দর্য অনেক সুন্দর ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। এমন সুন্দর পরিবেশে যাওয়ার সৌভাগ্য যদি কোনদিন হয় ইনশাল্লাহ অনেক সুন্দরভাবে উপভোগ করব। বিলটি আসলেই অসাধারণ ছিল এবং ফটোগ্রাফি গুলো প্রত্যেকটা খুবই ক্লিয়ার, পরিবার নিয়ে অচেনা জায়গায় যেতে ভয় করলেও জায়গাটা কিন্তু চমৎকার অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া অনেক সুন্দর মনোরম পরিবেশে ঘোরাঘুরির আনন্দ টাই অন্যরকমের। আপনার ফটোগ্রাফি দেখে বোঝাই যাচ্ছে জায়গাটা খুব সুন্দর। ভাসমান রেস্তোরাঁ টা খুবই চমৎকার লেগেছে এরকম জায়গার খাবার ভালো না হলেও সমস্যা নেই ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই যথেষ্ট। সবচেয়ে বেশি মজার ব্যাপার হলো জায়গার নাম টা হঠাৎ বাজার 😀আগে কখনো এই ধরনের নাম শুনিনি। ভাইয়া আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মুহুর্ত শেয়ার করার জন্য।
আপনি একজন দারুন ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ।জায়গা টি অনেক সুন্দর এই ছিল।আর ভাসমান রেস্তোরা বেশ নতুন মনে হয়েছে আমার কাছে।তবে আপনারা ঠিকঠাক মত বাসায় পৌঁছাতে পেরেছেন এটাই শাস্তি।আসলে নির্জন জায়গায় পরিবার নিয়ে ঘুরাঘুরি আসলেই অনেক রিস্ক।
বাহ ভাইয়া দেখা যাচ্ছে আপনি পরিবার নিয়ে বেশ ভালো একটি সময় পার করেছেন এবং এত সুন্দর প্রকৃতির মাঝে সময়টি অতিবাহিত করেছেন। আসলেই পরিবারের সাথে সময় কাটাতে আমাদের সকলেরই ভালো লাগে। এমন একটি মুহূর্তে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছন ভাই অচেনা অজানা জায়গাই পরিবার নিয়ে যেতে একটু ভয়ই করে। যাইহোক জায়গাটা তো দেখছি দারুণ। কী সুন্দর নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। আবার ভাসমান রেস্টুরেন্ট। সুন্দর জলরাশিও আছে। বিকেলের সময় কাটানোর জন্য পারফেক্ট একটা জায়গা।।
খুব সুন্দর একটি পরিবেশে পরিবার নিয়ে সময় কাটিয়েছেন ভাইয়া। জায়গাটার নাম বেশ মজার হঠাৎ বাজার।আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ হয়েছে ভাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। আশা করি আগামীতে পরিবার নিয়ে আরও সু্ন্দর জায়গায় সময় কাটাবেন আর আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।
পদ্ম বিল ঘুরতে যেতে না পারলেও ভাসমান রেস্তোরায় নদী ভ্রমন বিষয়টি খারাপ হয়নি। আমার কাছে মনে হচ্ছে অনেক উপভোগ্য ছিল আপনাদের সময় গুলো। রেস্তোরায় বসে আমরা সবসময় খাই এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রেস্তরা যখন পানির উপর দিয়ে চলা শুরু করে তখন সেই দৃশ্যগুলো আসলেই ভালো লাগার মত হয়। ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ হয়েছে ভাই। আপনার আনন্দঘন মুহূর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাইয়া আপনার এ পোষ্টটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে।ভাইয়া অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটানো মুহূর্তগুলো অতি চমৎকারভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার পোষ্টের ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। আর অতি মনোরম পরিবেশে ফুচকা খাওয়ার মজাই আলাদা। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আহা দাদা ,পাঁচ নম্বর ছবিটা কি অসাধারণ হয়েছে। একদম যথাসময়ে ছবিটা ক্লিক করেছেন। আর এরকম ভাসমান রেস্তোরাঁ আমাদের এদিকে আছে কিনা দেখতে হবে অর্থাৎ আমার আশেপাশে । বেশ ইন্টারেস্ট লাগলো ব্যাপারটায়।
এরকম প্রাকৃতিক পরিবেশে সবাই সময় কাটাতে চাই। সত্যি খুব ভালো কিছু মুহূর্ত আপনি কাটিয়েছেন। সাথে কিছু ভালো ছবিও দেখালেন। মুগ্ধ হওয়া গেল।