ঘুড়ি উৎসবের অপর নাম ভোগান্তি।
আগে এই ঘুড়ি উৎসবটি হোতো মূলত শহরের মানুষজনের জন্য। মানে শহরের মানুষজনই সেখানে গিয়ে অনুষ্ঠানটা উপভোগ করতো। কিন্তু এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের কল্যাণে এটার খবর অনেক দূর অব্দি ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও এখন সেখানে লোকজন আসা শুরু হয়েছে। সেই সাথে আশেপাশের জেলা থেকেও গতকাল অনুষ্ঠানে লোকজন এসেছিলো। মূল সমস্যাটা হচ্ছে যেই রাস্তা দিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে যেতে হয় সেটা এত মানুষের চাপ নেয়ার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলো না। তাছাড়া সারা বছরই রাস্তাটা এমনিতেও খুবই খারাপ অবস্থায় থাকে। কারণ এই রাস্তাটার দুই ধারে রয়েছে বেশ কিছু ইটভাটা এবং বড় বড় পোল্ট্রি ফার্ম। ইটভাটা গুলোতে প্রচুর ট্রাক চলাচল করার কারণে রাস্তাটা অনেকদিন ধরেই খুব বাজে অবস্থায় রয়েছে। সেই সাথে বছরের এই সময়টাতে রাস্তাঘাটে থাকে ধুলোবালির রাজত্ব। গতকালকেও এই জিনিসটা আমাদেরকে খুব বিরক্ত করেছে। পুরো সময়টা আমাদেরকে রীতিমতো ধুলাবালির ভেতরে কাটাতে হয়েছে।
অথচ প্রশাসন থেকে একটু সহায়তা পেলে এই সমস্যাগুলো থেকে সহজেই মুক্তি মিলতে পারতো। আয়োজন সংশ্লিষ্ট একজন ইভেন্টের দু একদিন আগে ফেসবুকে সেটা শেয়ারও করেছিলো। সে প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু সহায়তা চেয়েছিলো যেমন গতকালকের জন্য ওই রাস্তাটাতে ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলেছিলো। কিন্তু আমরা যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তখন দেখতে পেলাম অনেক ট্রাক চলাচল করছে। ভোগান্তি শুরু হয়েছিল অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছানোর অনেক আগে থেকেই। প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে থেকেই আমাদেরকে রিকশা থেকে নেমে হেঁটে যেতে হয়েছিলো অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত। পুরো রাস্তাটা ধুলোয় মাখামাখি হয়ে গিয়েছিলো। খেয়াল করে দেখলাম কাপড়-চোপড়ের উপরে ধুলোর একটা আস্তরণ পড়ে গিয়েছিলো অনুষ্ঠানের স্থলে পৌঁছানোর আগেই। অনুষ্ঠান স্থলে গিয়েও দেখি একই অবস্থা পুরো চরটা ছিলো লোকে লোকারণ্য। আর এই সময়ে পদ্মার চরে বালির রাজত্ব থাকে। তাই দেখলাম পুরা অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশটা ধুলোয় ধূসরিত হয়ে রয়েছে। মানে নদীর পাড়ে গিয়ে খোলা হাওয়ায় একটু মন ভরে নিঃশ্বাস নেবেন সে উপায়টাও ছিলো না। অথচ অনুষ্ঠানস্থলে আগে থেকে পানি স্প্রে করা হলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারতো মানুষ।
ফরিদপুর পৌরসভার বেশ কিছু গাড়ি রয়েছে তাদেরকে দেখেছি এর আগে প্রচন্ড গরমের সময় রাস্তায় পানি স্প্রে করতে। সেই গাড়িগুলো এখানে বেশ ভালো একটা ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু পৌরসভার কর্মকর্তারা ছিল এ বিষয়ে একেবারে নিরব। আবার প্রশাসন রাস্তায় ট্রাফিক কন্ট্রোল করার কাজে সহায়তা করতে এসে মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিশেষ করে সাথে যারা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এসেছিলো তাদের কষ্ট ছিলো অবর্ণনীয়। ধুলোবালির ভেতরে বাচ্চাদের নানা রকম সমস্যা হচ্ছিলো। অনুষ্ঠান স্থলে যে খাবারের দোকানগুলি বসে ছিলো সেই খাবারগুলো এমনিতেও তেমন স্বাস্থ্যকর নয়। কিন্তু গতকাল খাবারের সাথে যোগ হয়েছিল ধুলোবালি। অনুষ্ঠান যখন শেষ হলো তখন লোকজন একসাথে বের হতে গিয়ে রাস্তায় একটা ভয়াবহ অবস্থার তৈরি হয়েছিলো। আমি সেই অবস্থাটা দেখে পরিবার নিয়ে অনেকটা পরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়েছিলাম। আর আমি গিয়েছিলাম একটা বিকল্প রাস্তা ধরে। সেই রাস্তাটা অবশ্য একেবারেই ফাঁকা ছিলো। তবে সেই রাস্তা দিয়ে আসার পরও আমাদেরকে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।
কারণ দীর্ঘ পথ হাঁটার পরেও কোন যানবাহনের দেখা পায়নি। এ বিষয়ে যদি প্রশাসন আগে থেকেই কিছু ব্যবস্থা নিয়ে রাখতো। তাহলে মানুষের এত ভোগান্তি পোহাতে হোতো না। এত বিপুল সংখ্যক জনগণের জন্য যদি কিছু যানবাহনের ব্যবস্থা আগে থেকেই থাকতো তাহলে মানুষ খুব সহজেই অনুষ্ঠানস্থল থেকে বাড়িতে যেতে পারতো। আমরা দীর্ঘ সময় হেটে আসার পরও আরো অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে একটা যানবাহনের আশায়। শেষ পর্যন্ত একটা অটো রিক্সা ফাঁকা পেয়ে সেটাতে করে ফরিদপুর নিউমার্কেট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তারপর সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছি। ফেরার পরে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এরপরে আর কখনো পরিবার নিয়ে ঘুড়ি উৎসবে যাবো না। অবশ্য এরকম সিদ্ধান্ত যে আমি একা নিয়েছি তা নয়। আসার পথে অনেককেই বলতে শুনলাম এই উৎসবে আর কখনোই আসবো না। কারণ এত রকমের ভোগান্তি থাকলে সেখানে কোন কিছুই ভালো লাগেনা। আর এই অনুষ্ঠানের যারা আয়োজক তাদের পক্ষেও আসলে এত বড় লোকসমাগম সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এখানে দরকার ছিলো প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের সমর্থন। যেটা তারা একেবারেই পাইনি। উল্টো প্রশাসনের লোকজন আরো সমস্যা তৈরি করেছিলো।
যে রাস্তা দিয়ে অনুষ্ঠান স্থলে যেতে হয় তার মাঝখানে একটা পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। যেটার জন্য মানুষজনকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যাই হোক শেষ পর্যন্ত যখন বাসায় পৌঁছলাম তখন শরীর ভয়াবহ রকমের ক্লান্ত লাগছিলো। কারণ আমরা বাসা থেকে বের হয়েছিলাম বিকাল ৪ টার সময় আর বাসায় ফিরেছি রাত আটটার পরে। এই পুরোটা সময় হাঁটা এবং দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাত্র অল্প কয়েক মিনিট একটা চটপটির দোকানে বসতে পেরেছিলাম। কারণ অনুষ্ঠান স্থলে বসার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। শুধু যে আমি টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম তা নয় আমার স্ত্রী এবং মেয়ে দুজন প্রচন্ড টায়ার্ড হয়ে পড়েছিলো। তাই ঠিক করেছি এরপর থেকে আর এই ঘুড়ি উৎসবে যাবো না। আর যদি যাই তাহলে একাই যাবো পরিবার নিয়ে যাবো না।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
আসলে সাথে বাচ্চা নিয়ে ১.৫/২ কিলোমিটার পথ হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। এতো ভোগান্তির মধ্যে পরবর্তীতে পরিবার নিয়ে না যাওয়া ই ভালো। আমাদের দেশের প্রশাসন জনগণের চিন্তা কখনোই করে না। যা-ই ২/৪ টা কাজ করে, সেগুলো অবশ্যই দেখানোর জন্য করে থাকে। যারা স্টল দিয়েছে সেখানে, তাদের তো তাহলে বেশি বিক্রি হয়নি। কারণ এতো ধুলাবালি থাকলে বাহিরের খাবার কেউ খেতে চায় না সহজে। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আসলেই ভাইয়া কোন উৎসব কি আমরা তখনই মন থেকে উপভোগ করতে পারব যখন তার মধ্যে কোন ভোগান্তি পোহাতে না হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ফলে যে কোন খবর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে যার দরুন এরকম অনুষ্ঠানগুলোতে লোকজনের সমাগম হয় বেশি। আর এরকম জায়গা গুলোতে অবশ্যই পুলিশের সহায়তা অনেক দরকার ইটভাটা গুলোতে পুলিশ পক্ষ থেকে যদি আগেই বলা হতো যে তাদের গাড়িগুলো যেন বন্ধ থাকে উৎসব এর দিন। রাস্তায় যদি আসলে পানি দেওয়া হতো তাহলে এতটা ভোগান্তি হয়তোবা হতো না। বিকাল ৪ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত ঘুড়ি উৎসবে দেখতে পাচ্ছি আপনি আনন্দ থেকে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বেশি। এরকম ওর উৎসবে না যাওয়াই বেটার ভাইয়া।
ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে জেনে ভালো লেগেছে। তবে এরকম যদি ভোগান্তির মধ্যে পড়া হয় তখন আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। আর রাস্তাঘাট কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি ভালো না হয় তাহলে কোথাও গিয়ে আরো বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিকল্প পথ অনুসরণ করে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন জেনে ভালো লাগলো। তবে এরকম জায়গা গুলোতে যানবাহন পাওয়া সত্যিই অনেক মুশকিল। হয়তো এরপর থেকে অনেকেই আর পরিবার নিয়ে সেখানে যেতে চাইবেন না।