ভৌতিক গল্প। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

শহীদ মিয়াকে তার মাছ ধরার সরঞ্জাম গোছাতে দেখে তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলঃ এখন আবার কোথায় চললে?

শহিদ মিয়া বললোঃ নদীতে মাছ মারতে যাবো। দেখি কিছু মাছ পাই কিনা।


Polish_20220421_153440333.jpg

শহিদ মিয়া একজন ছোট্ট মুদি দোকানদার। কিন্তু সে মাছ ধরতে খুবই পছন্দ করে। মাছ ধরা তার এক ধরনের নেশা। তার এই দুঃখ-দুর্দশার ভেতরে একমাত্র আনন্দের জায়গা হচ্ছে এই মাছ ধরা। সপ্তাহের ছয়দিন তার দোকান খোলা থাকে। শুধু শুক্রবার দুপুরের পর থেকে তার দোকান বন্ধ থাকে। এইজন্য সে প্রতি শুক্রবার বিকালে বাড়ির কাছেই পদ্মা নদীতে চলে যায় মাছ ধরতে। সে উদ্দেশ্যেই সে তার সব সরঞ্জাম গুছাচ্ছিলো।

তার স্ত্রী বললঃ বেশি রাত করো না। তাড়াতাড়ি চলে এসো।

সে উত্তর দিলোঃ অল্প কিছু মাছ পেলেই চলে আসবো। চিন্তা কোরো না।

নদীটা তার বাড়ি থেকে হাঁটা দূরত্বে। সেখানে সে অল্প সময়েই পৌছে গেলো। সেখানেই পৌঁছে দেখতে পেলো তার পরিচিত আরও দুতিনজন ছিপ ফেলে বসে আছে। নদীর পাড়ের এই লোক গুলো সবই তার পরিচিত। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই একই জায়গাতে মাছ ধরছে।সবার সাথে কুশল বিনিময় করে শহিদ মিয়া একটু দূরে গিয়ে তার ছিপ পাতলো।

কারণ একই জায়গায় সবাই থাকলে সেখান থেকে মাছ পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বিকালে সাধারণত নদীর পাড়ে ফুরফুরে বাতাস থাকে। কিন্তু আজ যেন কেমন সব গুমোট হয়ে আছে। আকাশে মেঘ কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। চারপাশে ভ্যাপসা গরম বোধ হচ্ছে। মাছ ধরা আসলে খুবই ধৈর্যের ব্যাপার। এমন না যে ছিপ পাতলেই মাছ উঠে আসে। আর নদীতে মাছের পরিমাণ এখন এত কমে এসেছে যে মাছ পাওয়া যায় কালেভদ্রে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর দু একটি মাছ পাওয়া যায়। সেগুলোও আবার ছোট মাছ।

শহিদ মিয়া ছিপ পেতে বসে আছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন মাছের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে না। এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। তার আশেপাশের যে সমস্ত সৌখিন মাছ শিকারি ছিলো তারা সবাই চলে গিয়েছে। সন্ধা নামার সাথেই চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেলো। মেঘের কারণে আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। যার ফলে চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

যদিও শহীদ মিয়া সাথে করে একটি টর্চলাইট এনেছে। তাই সে মাঝে মাঝে অন্ধকারে টর্চ জ্বালিয়ে ছিপের অবস্থা দেখছে। এভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে শহিদ মিয়া কিছুটা অধৈর্য হয়ে পড়লো। কারন সে এখন পর্যন্ত একটাও মাছ পায়নি। মনে করেছিল দু-একটা মাছ পেলে। বাড়ি নিয়ে স্ত্রীকে বলবে রান্না করতে। নদীর টাটকা মাছ খাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে।

তার মতো দরিদ্র দোকানির পক্ষে বাজার থেকে নদীর মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব না। কারণ বাজারে নদীর মাছের দাম আকাশছোঁয়া। সেগুলোর দাম করতেই সাহস হয় না। এইজন্য নদীর মাছ খাওয়ার জন্য তার একমাত্র ভরসা নিজের মাছ ধরা। বসে বসে যখন সে চিন্তা করছিল যে আজকের মতো চলে যাবে কিনা। তখন হঠাৎ করে তার সামনে পানিতে প্রবল আলোড়ন তৈরি হলো। মনে হল বড় কোন মাছ হঠাৎ করে লাফ দিয়েছে।

সে কিছুটা উৎসাহী হয়ে উঠলো। সে তাড়াতাড়ি করে তার বড় মাছ ধরার যে ছিপটা আছে সেটাতে আধার গেঁথে পানিতে ছুড়ে মারলো। চিন্তা করছিল যদি বড় কোন মাছ ধরতে পারে তাহলে এটা সে খেতে পারবে আবার কিছু অংশ বিক্রি ও করতে পারবে। সে মাছ ধরার আধার হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু ছোট পচা মাছ। হঠাৎ করে কি মনে করে সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। সে এই নদীর পারে এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর একাই বসে আছে। কেন জানি তার গা ছমছম করে উঠলো।

যদিও সে ভুত-প্রেত বিশ্বাস করে না। সে দীর্ঘদিন থেকে মাছ ধরছে। কিন্তু কখনো তার এমন মনে হয়নি। সে তার পাশে থাকা টর্চটা জ্বালিয়ে চার-পাশটা একবার দেখে নিলো। দেখার পর টর্চটা তার পাশে একটি বোল্ডার এর উপর রাখলো। হঠাৎ করে টর্চটা সজোরে সেখান থেকে পড়ে পানির ভেতরে তলিয়ে গেলো। শহিদ মিয়া কিছুটা অবাক হল। কারণ কোন বাতাস নেই বা টর্চে কোন নাড়াচাড়া ও লাগেনি। তাহলে টর্চটা হঠাৎ করে পড়ে গেল কিভাবে?

এটা সে চিন্তা করছিলো। কিন্তু তার পরেই সে খেয়াল করল কে যেন তার পিছন থেকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে এবং তার ঘাড়ের কাছে গরম বাতাসের হলকার মতো মনে হচ্ছে। যদিও সে পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। এই প্রথম তার কিছুটা ভয় লাগছিলো। একবার সে চিন্তা করল সবকিছু গুছিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াই ভালো। আবার মনে করলো আরো কিছুক্ষণ দেখি।

কিছুক্ষণ পর তার হঠাৎ করে মনে হল তার ঘাড়ের উপর মনে হয় কেউ চেপে বসে আছে। কিন্তু সে চেষ্টা করেও তাকে সরাতে পারছে না। সে ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখার চেষ্টা করল যে সেখানে কিছু আছে কিনা? কিন্তু হাত দিয়ে সাথেই সে চমকে উঠলো। কারণ তার হাত পড়েছে লোমশ একটা শরীরের ওপরে। হঠাৎ করে সে প্রচণ্ড চিৎকার দিয়ে উঠলো ভয়ে। কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। চিৎকার দেয়ার পরে তার মনে হলো তাকে কেউ টেনে পানির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সে প্রচন্ড ধস্তাধস্তি শুরু করল পানির দিকে না যেতে। কিন্তু সে শক্তিতে পেরে উঠলো না।

সেই অদৃশ্য শক্তি তাকে টেনে নিয়ে পানির ভিতর ফেলে দিলো। শুধু তাকে পানির ভেতর ফেলেই সেই অদৃশ্য শক্তি ক্ষান্ত হলো না। তার পা ধরে টেনে তাকে নদীর তলদেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো। সে উপরে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু তার পা ধরে কেউ টেনে তাকে আরো নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। এভাবে ধস্তাধস্তি করতে করতে একসময় সে হাল ছেড়ে দিলো। এতক্ষণ সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ধ্বস্তাধ্বস্তি করছিলো। কিন্তু ফুসফুসে আর বাতাস না থাকার কারণে সে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। এভাবেই তার মৃত্যু হলো।

এদিকে তার স্ত্রী তার জন্য অপেক্ষা করছে। রাত বাড়ছে আর তার ভেতরে একটি ভয় কাজ করছে। এভাবে সারারাত সে অপেক্ষায় কাটিয়ে দিলো। সকালে উঠে সে প্রতিবেশী দেলোয়ারের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করল যে তার স্বামীকে সে দেখেছে কিনা। দেলোয়ার তাকে জানালো গতকালকে তার স্বামীকে সে নদীর দিকে যেতে দেখেছে। তারপর আর তার সাথে দেখা হয়নি। যখন শহীদ মিয়ার স্ত্রী দেলোয়ারকে সবকিছু খুলে বলল। তখন দেলোয়ার তাকে বললো ভাবী আপনি চিন্তা করবেন না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। হয়তো সে মাছ এখনো মাছ ধরায় ব্যস্ত আছে। এখনই আমি নদীর পাড়ে গিয়ে দেখে আসছি।

দেলোয়ার দ্রুত কাপড় পাল্টে নদীর পাড়ের দিকে রওনা দিলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে শহিদ মিয়া কে খুঁজে পেলো না। সে নদীর পাড় ধরে কিছুটা খোঁজাখুঁজি করে যখন ফিরে আসছিলো। তখন শুনতে পেলো দুটি কিশোর নিজেদের ভেতর আলাপ করছে যে গতকালকে নাকি এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি লাশ পাওয়া গিয়েছে। তখন সে ছেলে দুটিকে জিজ্ঞেস করল লাশটি কার? তোমরা কি তাকে চেনো? ছেলে দুটি বললো আমরা তাকে চিনিনা।

তখন দেলোয়ার তাদের কাছ থেকে কোথায় লাশ পাওয়া গিয়েছে সেই জায়গার ঠিকানা শুনে সেখানে গেলো। গিয়ে দেখলো এটা তার প্রতিবেশী শহীদ মিয়ার লাশ। তখন সে আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করল এই লাশটি এখানে এলো কিভাবে? লোকজন বলল আজ ভোরের দিকে লাশটিকে বাজারের পাশে নদীর ঘাটের কাছে পেয়েছে। দেলোয়ার ফিরে গিয়ে শহীদ মিয়ার স্ত্রীকে এই মর্মান্তিক খবরটি দিলো। এভাবেই ভূতের কবলে পড়ে শহীদ মিয়ার মৃত্যু হলো।(সমাপ্ত)

Sort:  
 2 years ago 

বাপরে বাপ কি ভয়ঙ্কর কাহিনী। সত্যি বলতে এই ধরনের কাহিনী বাস্তবিক জীবনে অনেক জেলেদের সাথে ঘটেছে। মাছ ধরার নেশায় তারা দূর দূরান্তে চলে যেত আর এই ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতো।
গল্পটি পড়ে অবশেষে সত্যিই খারাপ লাগলো, কিছু মাছের জন্য বেচারার জীবনটাই চলে গেল ।

 2 years ago 

এমন অনেক গল্প ছোটবেলায় শুনেছি। এই ধরনের গল্প যেদিন শুনতাম সেদিন রাতে ঘুমাতে পারতাম না।

 2 years ago 

গল্পটার শুরু খুবই ভালো হয়েছিল। পরিবেশটাও একদম ভূতের গল্পের জন্য জমিয়ে ফেলেছিলে কিন্তু কেন যেন ঝটপট শেষ হয়ে গেল। মৃত্যুর মাধ্যমে যে ভূতের গল্প গুলো শেষ হয় সেগুলো কেন যেন আমার কাছে জমে না। ভুতের কবল থেকে বেঁচে ফিরে আসা গল্পগুলোই আমাকে বেশি আকর্ষণ করে। তবে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যারা যায় তাদের কাছে এমন শত শত গল্প প্রচলিত আছে। কিছুটা বাস্তব আর কিছুটা অলৌকিক এ ধরনের গল্পগুলো আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে।

 2 years ago 

জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে প্রত্যেকটা জেলের জীবনে এমন ঘটনা কখনও না কখনও ঘটেছে।

 2 years ago 

ভাইয়া সত্যি বলতে আমার কাছে ভূতের গল্প গুলো পড়তে খুব ভালো লাগে। কিন্তু যখন পড়ি তখন কিছুটা ভয়ও কাজ করে ।মনে হয় যেন আমিও সেখানে উপস্থিত আছি ।আর এগুলো আমার সাথে ঘটতেছে । তবে পুরো গল্পটা আমার অনেক ভালো লেগেছে।আর এক পর্বে আপনি শেষ করেছেন দেখে আরো ভালো লাগলো ।আশা করি আপনি আরো ভয়ঙ্কর গল্প নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থিত হবেন।

 2 years ago 

চেষ্টা করব আপু এখন থেকে মাঝে মাঝে ভূতের গল্প লেখার।

 2 years ago 

ভাইয়া,ভূতের গল্প অথবা ভুতের মুভি দেখতে আমার খুবই ভাল লাগে। পড়তে এবং দেখতে একটু ভয় লাগলো কেমন যেন অজানা একটা ভালো লাগা কাজ করে। ভাইয়া, আপনার লেখা ভুতের গল্পটি আমি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি। শহিদ মিয়া মাছের লোভে রাতের বেলাও নদীতে মাছ ধরতে বসেছিল তাকে প্রথমেই সতর্ক করা হয়েছিল তার টর্চটা ফেলে দিয়ে কিন্তু সেটা শহিদ মিয়া তোয়াক্কা করেনি।শহিদ মিয়া যদি এই জিনিসটাই বুঝতে পারতো তাহলে হয়তো তার মৃত্যু হতো না । ভাইয়া, পুরোটা ভূতের গল্প খুবই ভালো লেগেছে সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর লেগেছে আমার শহীদ মিয়ার কাদের উপরে চেপে ধরে রাখা অদৃশ্য শক্তি ।ভাইয়া,এত ভয়ংকর একটি ভূতের গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমার কাছেও এই ধরনের গল্প পড়তে বা মুভি দেখতে ভালো লাগে। গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

 2 years ago 

অনেক আগে ছোটবেলায় ভূতএফএম শোনা হতো। কিন্তু এখন আর শোনা হয় না, কেননা আমি যদি ভুতের এই গল্পগুলো শুনি তাহলে রাত্রে বেলা অনেক ভয় লাগে এবং স্বপ্নেও অনেক আজেবাজে জিনিস দেখতে পাযই। তাই এখন ভূতের গল্প শুনা হয়না

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74