একটি সুন্দর পরিকল্পনার মর্মান্তিক সমাপ্তি। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


কিছুদিন আগে আমি আপনাদের সাথে বন্ধুদের সাথে নদীর পাড়ে ইফতারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। তখন আরও জানিয়েছিলাম যে বন্ধুবান্ধব যখন সবাই বাইরে থেকে এলাকায় ফিরবে। তখন আমরা সবাই মিলে আরও একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করবো। সেই পরিকল্পনাটা অনেকদিন থেকেই মনের ভিতর ছিলো।

IMG_20220430_174750.jpg

দুদিন আগে আমাদের বেশিরভাগ বন্ধুবান্ধব এলাকায় এসে উপস্থিত হয়েছে। তো তাদের সাথে কথাবার্তা বলে শেষ পর্যন্ত আমরা ঠিক করলাম যে সবাই মিলে নদীর পাড়ে ইফতার করতে যাবো। সকলে রাজি হল। যদিও দু-একজনকে নিয়ে কিছুটা সংশয়ে ছিলাম। তার পরেও ইফতারের দিন সবাই শেষ পর্যন্ত সবাই রাজি হল। এই ইফতার পার্টির ভেন্যু ফিক্স হলো নদীর পাড়ে।

IMG_20220430_174744.jpg

যথারীতি নির্ধারিত দিনে আমরা সবাই প্রথমে বন্ধু রাফসানের শোরুমে উপস্থিত হলাম। সেখানে পৌছে দেখি রাফসানের এলাকার আরো কয়েকজন আমাদের সাথে যাবে। তাদের দেখে আমরা খুশি হলাম। কিন্তু এর ভেতর খেয়াল করে দেখলাম আকাশে মেঘের ঘনঘটা। তখন সবাই চিন্তা করতে লাগলাম যদি এই অবস্থাতে নদীর পাড়ে যাই। তাহলে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে বিপদে পড়ে যাবো। আকাশের অবস্থা দেখে ভেন্যু পরিবর্তন করা হল।

IMG_20220430_171228.jpg

তখন ঠিক করা হল কাছেই একটি মাছের বড় প্রজেক্ট আছে। সেখানে আমরা সবাই মিলে আমাদের ইফতার সারবো। চিন্তা করতে করতেই দেখি এর ভিতর দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে আমাদের গ্রুপের কয়েকজন ইফতার সামগ্রী নিয়ে সেই মাছের প্রজেক্টে পৌঁছে গেলো। দ্বিতীয় ধাপে আরও কয়েকজন সে দিকে রওনা দিলো।

IMG_20220430_181229.jpg

এদিকে আমি আর বন্ধু রাফসান দুজন রয়ে গেলাম আরো একজন বন্ধুর অপেক্ষায়। কারণ সে তখনও এসে পৌঁছায়নি। কিছুক্ষণ পর আমাদের সেই বন্ধু এসে উপস্থিত হলো। তারপর শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির ভাব দেখে আমরা বুঝতে পারলাম আজকে আর আমাদের তিনজনের পক্ষে গ্রুপের বাকিদের সাথে ইফতারে যোগ দেয়া সম্ভব হবে না। এখান থেকেই আমাদের কিছু খেয়ে নিতে হবে।

IMG_20220430_182127.jpg

আচ্ছা আপনাদের তো বলা হয়নি ইফতার আয়োজনে কি কি ছিলো। ইফতার আয়োজনে ছিল মুরগির মাংস দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি, ছোলা, পিয়াজু, তরমুজ, বাঙ্গি, জিলাপি আর শরবত। এর ভেতরে আমরা তিনজন বাদে গ্রুপের সবাই নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। এদিকে আমরা মনে মনে কামনা করছি বৃষ্টিটা যেন থেমে যায়। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোন লক্ষ্য নেই দেখিনা। হঠাৎ করে ইফতারের মাত্র ৩/৪ মিনিট আগে বৃষ্টি থেমে গেলো।

IMG_20220430_181303.jpg

আমরা তারাতারি করে দুই মোটর সাইকেলে রওনা দিলাম। কারণ ইফতারের যে জায়গাটি ঠিক করা হয়েছিলো। সেটি বন্ধু রাফসানের শোরুমের খুব কাছেই। আমরা সেখানে পৌছানোর আগেই অবশ্য আজান দিয়ে দিলো। আযানের দুই মিনিট পরে আমরা সেখানে পৌছালাম। সেখানে পৌছতে আবার আমাদের বেশ খানিকটা পথ হেঁটে যেতে হয়েছে। কারণ মাটির রাস্তায় মোটরসাইকেলে যেতে ভরসা হয়নি।

IMG_20220430_182127.jpg

আমরা যখন সেখানে পৌছালাম তখন প্যান্টে কাদা মাখামাখি হয়ে গিয়েছে। আমরা তড়িঘড়ি করে সেখানে পৌঁছে পানি মুখে দিলাম। পানি মুখে দিয়ে জানতে পারলাম আমাদের আগে যে দুটো গ্রুপ রওনা দিয়েছিল তারা দুটো আলাদা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। প্রথম গ্রুপ আমাদের নির্ধারিত জায়গায় গিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় গ্রুপ রওনা দেয়ার পর বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে তারা সেখানে না গিয়ে তার আগে আরও একটা মাছের প্রজেক্ট আছে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। যার ফলে আমাদের ইফতারের যা আয়োজন ছিলো সেটাও ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে। কিছু খাবার চলে গিয়েছে এক গ্রুপের কাছে। বাদবাকি খাবার অন্য গ্রুপের কাছে রয়ে গিয়েছে।

আমরা যেখানে গিয়েছি সেখানে খিচুড়ির প্যাকেট পেলাম। পানি মুখে দিয়ে আমরা তরমুজ খেলাম। তারপর গরম খিচুড়ি প্যাকেট হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলাম। খিচুড়িটা হয়েছিলো চমৎকার। এত ঝামেলার ভেতরে আর খাবারের ছবি তোলার কথা মনে ছিল না। তারপর আবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা কিছুটা অন্ধকারেই খাওয়া-দাওয়া করেছি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা তড়িঘড়ি করে আবার বন্ধু রাফসানের শোরুম এর কাছে চলে আসলাম।

সেখানে এসে একটি মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে নিলাম। ইফতারের সময় আমার ঠাণ্ডা শরবত না হলে চলে না। কিন্তু আজ আর ঠাণ্ডা শরবত পাইনি। সেজন্য নামাজ পড়ে বের হয়ে আমি আর বন্ধু ফেরদৌস দুজনে চলে গেলাম ঠান্ডা লেবুর শরবত খেতে। দুজন দু গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে তারপর বন্ধু রাফসানের শো রুমে ফিরে এলাম। সেখানে এসে দেখি বাদবাকি বন্ধুরা সবাই চলে গিয়েছে। অগত্যা আমি আর ফেরদৌস দুজন বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। এভাবেই চমৎকার একটি পরিকল্পনার মর্মান্তিক পরিসমাপ্তি ঘটলো।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানলিংক

Sort:  
 2 years ago 

ভাই আপনারা বন্ধুরা মিলে ইফতার করার সময় ভালই ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিলেন দেখছি।প্রথমে নদীর পাড়ে ইফতারের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।পরবর্তীতে ইফতার এর জন্য নির্ধারিত স্থানেও অনেক পৌঁছাতে পারেননি বৃষ্টির জন্য।টাইটেল হিসাবে লেখাটা অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

শেষ পর্যন্ত কিছুই পরিকল্পনা মতো হয়নি। জীবন আসলে এমনই। আপনার পরিকল্পনা মতো সব কিছু হবে না।

 2 years ago 

আপনাদের ইফতারের আয়োজন টা শুরু থেকে আমার কাছে পড়ে বেশ ভালো লাগছিলো। পরবর্তীতে দেখেই বৃষ্টির কারণে একটু গন্ডগোল হয়ে গেল। কতগুলো বন্ধু একজন এক এক জায়গা থেকে এসে একজনের সাথে মিলিত হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও বৃষ্টির মধ্যে কাদা মেখে জায়গায় পৌঁছেছেন দেখে ভালো লাগলো। তাছাড়া খাবারের মেনু গুলো পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। এরকম একটা মুহুর্ত শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago (edited)

একদিকে মন চাইছিল বৃষ্টি হোক। আবার আরেকদিকে ইফতারের সময় হয়ে গিয়েছিল। খুবই একটা অদ্ভুত একটা পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম।

 2 years ago 

পরিকল্পনা অনেক সুন্দর ছিল বন্ধুরা সবাই মিলে বাইরে ইফতার করার মজাটাই আলাদা। সবকিছু ঠিকমতো এগোচ্ছিল কিন্তু মাঝখান থেকে বৃষ্টিতে সব পরিকল্পনা পন্ড। যাইহোক ভাইয়া উদ্দেশ্য ছিল ইফতার করা সেটা তো করতে পেরেছেন অল্প করে হলেও। মাঝে মাঝে এরকম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি গুলো স্মরনীয় হয়ে থাকে। আমার বিশ্বাস আপনার কাছেও ওই দিনটি অনেক দিন মনে থাকবে। আবার অন্ধকারে বসে খিচুড়ি খাওয়ার ভালো একটা অভিজ্ঞতাও হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মজার অভিজ্ঞতা টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

তবে অন্ধকার হলেও খিচুড়িটা ছিল খুবই মজার। খুব তৃপ্তি সহকারে খেয়েছি।

 2 years ago 

আলাদা না হয়ে সবাই একসাথে হলে আশা করি আরো বেশি মজা হতো। তবে শেষমেশ গরম গরম খিচুড়ি খেতে পেরেছে এটাই কিন্তু অনেক।

 2 years ago 

ভাইয়া, বন্ধুরা মিলে ইফতারের আয়োজন করেছেন শুনে খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আপনাদের এই আনন্দটা নষ্ট হয়ে গেছে তারপরও ইফতারের কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি কমেছে শুনে ভালো লেগেছে তারপরও যে জায়গায় আপনারা ইফতার করার কথা ছিল সেখানে যেতে আপনার অনেকটা সময় লেগেছে লেগেছে।ভাইয়া,আপনারা যে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন আর ইফতারের যেই মুখরোচক খাবার গুলোর নাম বলেছেন শুনে তো খুব খেতে ইচ্ছে করছিল ভুনা খিচুড়ি আমার খুবই পছন্দের।ধন্যবাদ ভাইয়া,এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74