ছুটির দিনের ঘোরাফেরা (চতুর্থ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


খোলামেলা সেই রেস্টুরেন্টে বেশ কিছুক্ষণ কাটানোর পর আমি আর আমার দুলাভাই পার্কের বাকি অংশটুকু ঘুরতে বের হলাম। কিন্তু আপু এবং আম্মা দুজন সেই রেস্টুরেন্টেই বসে রইল। কারণ তারা হাঁটতে হাঁটতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই তাদের আর ঘুরে দেখার ইচ্ছা নেই। কিন্তু আমার দুলাভাই আমাকে জানালো সামনেই রয়েছে পার্কের সবচাইতে বড় আকর্ষণ। আমি জিজ্ঞেস করলাম সেটা কি? তিনি জানালেন সামলে চমৎকার একটি লাইব্রেরী রয়েছে। এই লাইব্রেরী ভবনটি অত্যন্ত সুন্দর একটি স্থাপনা। বাংলাদেশে এমন স্থাপনা আর খুব বেশি আছে কিনা তাতে সন্দেহ আছে।

IMG_20220902_111159.jpg

IMG_20220902_113308.jpg

আমি খুবই আগ্রহ বোধ করলাম সেই লাইব্রেরীটি দেখার জন্য। আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে কিছুদূর হাঁটার পর সেই লাইব্রেরীর দেখা পেলাম। পুরো বিল্ডিংটি একদম গোলাকৃতি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী নির্মাণ শৈলীতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এত চমৎকার একটি স্থাপনা দেখে এর ভিতরে না গিয়ে পারলাম না। লাইব্রেরীটিতে প্রবেশ করে বেশ অবাক হলাম। কারণ ভেতরে সাজসজ্জা সম্পূর্ণই ভিন্নধর্মী। এই ধরনের ব্যবস্থা আমি অন্য কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। লাইব্রেরীর ভেতরের অংশতে প্রচুর কাঠের ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্লোর থেকে শুরু করে সিঁড়ি সবখানে কাঠের ব্যবহার দেখতে পেলাম।

IMG_20220902_113616.jpg

IMG_20220902_113358.jpg

লাইব্রেরীর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যেন এখানে সব সময় প্রচুর আলো বাতাস ঢুকতে পারে। লাইব্রেরী ভবনটি ছিল চারতলা। আমরা পুরো লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। সেখানে দেখলাম ছোট ছোট কয়েকটি ছেলে বসে বই পড়ছে। ব্যাপারটি দেখে ভালই লাগলো। অবশ্য আমার মনে হতে লাগলো এমন চমৎকার একটি লাইব্রেরী পেলে সেখানে এসে আমি প্রতিদিন বই পড়তাম। কিন্তু বাদবাকি দর্শনার্থীদের দেখে কিছুটা হতাশ হলাম। তাদের ওই লাইব্রেরির সৌন্দর্য দেখার প্রতি আগ্রহ নেই বা সেখানে কি ধরনের বই আছে তাতেও তাদের কোন আগ্রহ নেই। সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত। আমরা ঘুরে ফিরে লাইব্রেরির বইয়ের কালেকশন গুলো দেখছিলাম।

IMG_20220902_113339.jpg

IMG_20220902_113535.jpg

এভাবে বেশ কিছুক্ষণ সময় সেখানে কাটিয়ে তারপর নিচে নেমে এলাম। সেখান থেকে বের হয়ে পার্কের অন্যান্য জায়গাগুলো ঘুরেফিরে দেখতে লাগলাম। পার্কের ভেতরে বেশ কয়েকটি জলাশয় রয়েছে। সেই জলাশয়ের উপরে বিভিন্ন রকমের ব্রিজ দেখতে পেলাম। সেখানে ঘোরাফেরা করতে করতে পার্কটি সমন্ধে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। তথ্যগুলি জেনে কিছুটা অবাক হলাম। শুনতে পেলাম এই গ্রামের মানুষজন সবাই জমি দিয়ে এই পার্কটি তৈরি করেছে। এখানের সব জমি গ্রামের মানুষদের জমি। বাইরের কাউকে তারা নেয়নি এই কাজে।

IMG_20220902_115141.jpg

IMG_20220902_111630.jpg

পার্কের থেকে যে আয় হয় সেটা দিয়ে পার্কের মেইন্টেনেনস এর কাজ করা হয়। আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা ব্যয়বহুল মনে হলেও পরিবেশ বান্ধব এই পার্কে এসে আপনার টাকা খরচ করতে খুব একটা খারাপ লাগবে না। পার্কের ভেতরে যে রেস্টুরেন্টটি রয়েছে সেই রেস্টুরেন্টের দোতালায় রয়েছে থাকার ব্যবস্থা। প্রতি রাতের জন্য আপনাকে পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হবে সেখানে থাকতে হলে। পার্কের ভেতরের অবস্থা দেখে আমার খুব ইচ্ছা হয়েছে কোন এক সময়। সময় করে এখানে এসে দুটো দিন বেরিয়ে যাবো। কারণ এমন কোলাহল মুক্ত নির্জন পরিবেশ আমাদের দেশে এখন খুব একটা দেখা যায় না।

IMG_20220902_114044.jpg

IMG_20220902_113719.jpg

পুরো পার্কটি স্থাপত্যবিদেরা এত চমৎকার করে সাজিয়েছে যে আপনি যত সময় সেখানে কাটান না কেন আপনার কাছে কখনো খারাপ লাগবে না। ইতিমধ্যে অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। পেটে ছুঁচোর নাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। একবার চিন্তা করছিলাম পার্কের রেস্টুরেন্ট থেকে আমরা দুপুরে খাওয়াটা সেরে নেই। কিন্তু ভাগ্নে গো ধরে বসে আছে সে তার স্টার কাবাব থেকে মাটন লেগ রোস্ট খাবে। যার ফলে আমাদেরকে সেখানে খাওয়া-দাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে বের হয়ে আসতে হলো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানজিন্দা পার্ক, ঢাকা

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

লাইব্রেরির সৌন্দর্য সবাই বোঝে না দাদা। এই সৌন্দর্য বোঝার জন্য সুন্দর একটা মনের দরকার হয় যেটা আপনার ছিল কিন্তু অন্যদের ছিল না।আর পার্কটা আসলেই অনেক সুন্দর।

 2 years ago 

সত্যি ভাই এইরকম নির্মাণ শৈলীতে নির্মাণ করা লাইব্রেরী আমি নিজেও কখনো দেখিনি। বেশ দারুণ নির্মাণ। এবং সত্যি ক্রমেই আমরা বই পড়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছি ভুলে যাচ্ছি আমাদের অতীত। পার্কটার শেষ অংশের ছবিগুলো বেশ লাগল। প্রকৃতির মধ্যে কী সুন্দর একটা পার্ক।

 2 years ago 

বাহ্ কি সুন্দর আর্কিটেকচার। বেশ ভালো লাগলো। মাঝে মাঝেই এমন লোকাল ঘোরাফেরা মন পরিবর্তনের জন্য ভালো।আপনার পুরো ঘোরাফেরার ডিটেইলস সাক্ষী হয়ে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

অসম্ভব সুন্দর একটি পার্কের স্থাপত্য দেখলাম আপনার মাধ্যমে। সত্যি খুবই দৃষ্টিনন্দন লাগলে পার্ক টি। লাইব্রেরির পাশাপাশি জলাশয় কাঠের রাস্তাটিও বেশ ভালো লাগছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59404.52
ETH 2610.92
USDT 1.00
SBD 2.41