প্রবাসীর সুখ দুঃখ কান্না হাসি (প্রথম পর্ব)।
সবুজ কাজ শেষ করে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে রুমে ফিরলো। সেখানে তার বন্ধুরা তাকে এত খোশ মেজাজে দেখে জিজ্ঞেস করল কি ভাই বাড়ি যাওয়ার কথা মনে করে এত খুশি নাকি? সবুজ বলল সেটা আর বলতে? দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সবুজ দেশে ফিরছে। এই পাঁচ বছরে পরিবারের সাথে শুধু ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু দেশে আর ফেরা হয়নি। বিভিন্ন রকম ঝামেলায় তাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকতে হয়েছে।
এতদিন তার কোন বৈধ কাগজপত্র ছিল না। গতবছর তার বৈধ কাগজ হয়েছে। বৈধ কাগজ হওয়ার পর তার বেতনও কিছুটা বেড়েছে। আগে তার বেতন ছিল খুবই কম। যে টাকা পেত সে টাকাতে তার নিজের চলতেই কষ্ট হতো। তারপরেও সেখান থেকে কষ্ট করে কিছু টাকা বাঁচিয়ে দেশে পাঠাতো। কিন্তু গতবছর তার বৈধ কাগজ হওয়ার পর থেকেই সে বাড়ি যাওয়ার জন্য টাকা গোছাতে শুরু করেছিল। কারণ প্রবাসী দের বাড়ি যেতে হলে অনেক ধরনের ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে হয়।
বিদেশ থেকে যখন কেউ দেশে ফিরে তখন তার আত্মীয়-স্বজন সবাই তার কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করে। যদিও তারা কখনোই জানতে চায় না সে বিদেশে কেমন আছে বা আদৌ তার সবাইকে দেয়ার মত সক্ষমতা আছে কিনা? বাবা মা বাদে ভাই বোন স্ত্রী সন্তান থেকে শুরু করে সকলেই বিভিন্ন রকম আবদার করে। শুধু মায়ের চাহিদা থাকে অন্যরকম। যখনই ফোনে তার মায়ের সাথে কথা হয়। তার মা তাকে বলে তুই কবে আসবি। আমার কিছু দরকার নেই। তুই আসলেই আমি খুশি।
এছাড়া সবারই কোনো না কোনো আবদার আছে। সেই আবদার মেটাতে সবুজকে রাতদিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে সে সবার জন্য কেনাকাটা করছে। প্রতিদিনই যখন সে কাজ থেকে ফিরছে তখনই হাতে করে কিছু না কিছু নিয়ে আসছে। সবুজের খুশি মুখ দেখে তার রুমমেটরা বাড়ি ফিরতে না পারার জন্য আফসোস করতে লাগলো। এর ভেতরে সবুজ প্রায় সবকিছু গুছিয়ে এনেছে। দেখতে দেখতে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলে এলো। সবুজের রুমমেটরা সবাই তাকে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিতে গেলো। প্লেনে ওঠার পর থেকেই সবুজের মনে হচ্ছিল কখন দেশে পৌঁছাবে। আর কখন দেশের মাটিতে প্রথম পা রাখবে।
এয়ারপোর্টে তাকে নিতে কে কে আসবে সেটাও সে চিন্তা করছিল। সে যখন তার স্ত্রীকে রেখে বিদেশে চলে যায় তখন তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। তার সন্তানকে সে কখনো সামনাসামনি দেখতে পাইনি। এখন সন্তানের বয়স হয়েছে চার বছর। নিজের সন্তানকে এখন পর্যন্ত সে কোলে নিয়ে আদর করতে পারেনি। এইজন্য দীর্ঘ কয়েক বছর তার মনের ভেতর হাহাকার কাজ করছিল। সবুজ ঠিক করে রেখেছে এয়ারপোর্টে থেকে বাইরে বের হয়ে প্রথমেই সে তার সন্তানকে কোলে নিয়ে চুমু খাবে। এই কথাটি তার যতবারই মনে হয় ততবারই তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ৬ ঘন্টার এই যাত্রাপথ যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছিল না।
সবুজ কিছুক্ষণ পরপর ঘড়ি দেখছিল আর তার মনে হচ্ছিল কখন এয়ারপোর্টে পৌঁছাবে? আর কখন প্রিয় মুখগুলো দেখতে পাবে? প্লেন ল্যান্ড করার পরও তার প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হলো না। সেখানে ইমিগ্রেশন এর জন্য এবং লাগেজের জন্য সবুজকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। শেষ পর্যন্ত যখন সবকিছু মিটিয়ে সে বাইরে এসেছে। তখন খেয়াল করে দেখে তার বাবা আর ছোট ভাই বোন এসেছে তাকে নিতে।
কিন্তু সে এদিক ওদিক তাকিয়ে তার স্ত্রীকে আর সন্তানকে খুজছিলো। কিন্তু সে তার স্ত্রী সন্তানকে দেখতে না পেয়ে তার বাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল। বাবা ওরা আসেনি? ওর বাবা তখন বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল। অনেক কষ্ট করে এসেছো। আগে চলো বাড়িতে যাই। পথের মধ্যে সবুজ কয়েকবার তার স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করল। কিন্তু সে খেয়াল করে দেখলো যখনই সে তার স্ত্রীর কথা উঠায় তখনই তার পরিবারের লোকজন অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে। চলবে
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
একজন প্রবাসীর কষ্ট আসলে আমরা বুঝতে পারি না। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে পরিবারের জন্য টাকা পাঠায়। আর যখন কোন প্রবাসী দেশে আসে তখন তাদের আত্মীয়-স্বজন সবাই কিছু না কিছু প্রত্যাশা করে। আসলে এই লোকগুলো কিন্তু একবারও তাদের খবর নেয় না। কখনো জানতেও চায় না তারা কেমন আছে। যাই হোক তার স্ত্রীর ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে থেকে গেল। জানিনা তার স্ত্রীর কি হয়েছে। কিংবা তার সন্তানই বা কেমন আছে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
টান, টান উত্তেজনায় এই পর্ব শেষ হল। অপেক্ষায় রইলাম।সেদিন একটা বন্ধুদের গ্রুপে কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো ঠিক এই বিষয়টা নিয়েই। আমার এক বান্ধবী কে এক বন্ধু বলছিলো, "তোর আর কী? বরের সাথে ইউএসএ তে সেটেল।" আমার ওই বান্ধবী বলল, বাইরে থেকে এমন মনে হয়। এসে থাক এখানে, এক্সপেন্সটা বুঝতে পারবি।সব কিছু সেকেন্ড হ্যান্ড ব্যাবহার করি। বুঝে শুনে বাজার করতে হয়।পরিবার ছেড়ে, নিজের দেশ ছেড়ে থাকতে কেমন লাগে বুঝবি না।"শুনে বেশ খারাপ লাগছিলো। আজ আপনার এই লেখা পড়ে রিলেট করতে পারলাম।
প্রতিটা প্রবাসীর গল্প অনেকটা এইরকমই। কেউ পেছনের কষ্ট টা দেখে না। সবাই দেখে শুধু টাকা। যাইহোক সবুজের স্ত্রী কে নিয়ে যে রহস্য টা তৈরি করলেন ভাই এটাতে গল্পটা পড়ার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেল। অপেক্ষায় থাকলাম।।
প্রবাস জীবনটা এমনই হয় যে প্রবাসে থাকে সে শুধু কষ্ট করে যায়, শুধু মাত্র প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। কিন্তু সেই প্রিয়জন কখনো তার ভালো-মন্দ জানতে চায় না। চমৎকারভাবে বুঝিয়ে প্রবাসী জীবনের কাহিনীটি ফুটিয়ে তুলেছেন পড়ে খুব ভালোই লাগলো। সকলের সাথে দেখা করা বা তার সন্তানকে আদর করা এটাতো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল যদিও সে দীর্ঘদিন পরে এসেছে তাই হয়তো তার কাছে সেটা অনেক আনন্দের ছিল। কিন্তু সবুজ মিয়া আদৌ তার স্ত্রী সন্তানকে দেখতে পাবে কি? নিশ্চয়ই এমন কোন ঘটনা ঘটেছে যেটা তার কাছে লুকানো হচ্ছে যাইহোক পরবর্তী পর্বে আমরা সেটা জানতে পারবো আশা করি।
আসলে প্রবাস জীবন মোটেও সুখে না ৷ দিন রাত শুধু পরিশ্রম ৷ এদিকে পরিবার আর আত্মীয়-স্বজনের চাহিদা যেনো শেষ হয় না ৷ মা বাবা ছাড়া কেউ ভালোমন্দ খোজ নেয় না ৷ পাচ বছর পর প্রবাস জীবন শেষ করে বাড়ি ফিরছে সবুজ , সবুজের জীবন কাহিনীর বাকি পর্ব গুলো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া ৷ আশা করি খুব শীঘ্রই পরের পর্ব গুলো শেয়ার করবেন ৷
প্রবাসী কে নিয়ে দারুণ একটা কনটেন্ট লেখা শুরু করেছেন ভাই। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে বউ-বাচ্চা কিনা দেখে মন খারাপ হওয়ারই কথা। জানিনা পরবর্তী পর্বে কি দেখব কি শুনবো। আগামী পর্ব দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ভাইয়া প্রবাসীর সুখ, দুঃখ, কষ্ট নিয়ে গল্প লিখেছেন খুব ভাল লাগলো। সত্যি কথা বলতে প্রবাসীর জীবন অনেক কষ্টের।সবুজ নামের মানুষ টিকে নিয়ে আপনার আজকের গল্প। জানি না গল্পটা কোনদিকে যাবে?? অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।