বৈচিত্র্যময় শৈশব এবং শিক্ষাজীবন (দ্বিতীয় পর্ব)।
গতকালকে যেখানে শেষ করেছিলাম আজ সেখান থেকেই শুরু করি। বলছিলাম আমার বৈচিত্রময় শৈশব ও শিক্ষা জীবনের কথা। জীবন তো সবারই বৈচিত্র্যময়। তবে আমার ক্ষেত্রে হয়তো এই বৈচিত্র কিছুটা বেশি ছিলো। কেন সেটা আশা করি পোস্টটা পড়লে বুঝতে পারবেন। যাইহোক নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে প্রথম কিছুদিন বেশ মন খারাপ ছিলো। আমি একদম ছোটবেলা থেকেই মা পাগল। মাকে ছাড়া একেবারেই থাকতে পারতাম না। যখনই স্কুলে যাওয়ার কথা মনে হতো তখন আর ভালো লাগতো না। মনে হতো কখন বাড়িতে ফিরব আর মাকে দেখতে পাবো।
আর সেই মন খারাপটা আরো বাড়িয়ে দিত পচা নামের আমাদের সেই বন্ধুর কান্নাকাটি। ওর কান্নাকাটির ব্যাপারটা এক সময় এমন বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে গেলো যে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওর মাকে পরামর্শ দিল ওকে স্কুল থেকে নিয়ে যেতে। ওর মা ওকে ক্লাসের ভিতর দিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো। তারপরেও পচা কান্নাকাটি করে যেতো। এই ব্যাপারটা বাদে বাদবাকি বিষয়গুলো মোটামুটি ভালই চলছিল। ক্লাসের সময়টা কোনরকমে পার হয়ে টিফিন পিরিয়ড শুরু হলে মন অনেকটা ভালো হয়ে যেতো। অবশ্য ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার অল্প কিছুদিনের ভেতরে আমার দুজন বন্ধুর জুটে গিয়েছিলো। একজনের নাম ছিল জামিল আর একজন আপেল।
আমাদের এই তিনজনের ভেতরে বেশ সখ্যতা ছিলো। তিনজন একই সাথে ঘুরে ফিরে বেড়াতাম স্কুলে। তবে এই তিনজনের ভেতরেও আমার জামিলের সাথে হৃদ্যতা ছিল একটু বেশি। যাইহোক টিফিন পিরিয়ড শুরু হলেই আমাদের অত্যন্ত প্রিয় একটি জায়গা ছিল একটি বট গাছের তলা। স্কুলের ভেতরেই এই বটগাছটির অবস্থান ছিলো। গাছটি ছিল বিশাল আকৃতির এবং সেই গাছের শিকড় এত বড় ছিল যে তার আড়ালে অনায়াসে একজন মানুষ লুকিয়ে থাকতে পারতো। আমরা বেশিরভাগ সময় এই গাছ ঘিরেই খেলাধুলা করতাম। যখন একটু বুঝতে শিখলাম তখন দেখলাম পরিচিত জনের ভেতরে যারা শোনে আমি মিশন স্কুলে পড়ি। তারা একটু অন্যভাবে দেখে। কিছুটা ভাব বলতে পারেন আরকি। কারণ তখন মিশন স্কুলটি ছিল আমাদের জেলা শহরের ভেতর বাচ্চাদের জন্য সবচাইতে ভালো স্কুল। অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদেরকে সেখানে ভর্তি করার জন্য মুখিয়ে থাকতো।
এভাবে দিনকাল মোটামুটি ভালই কাটছিল। যদিও আমি পড়ালেখায় কোন সময় খুব একটা ভালো ছিলাম না। মধ্যম মানের বা নিম্ন মধ্যম মানের বলতে পারেন। দেখতে দেখতে এই স্কুলে ক্লাস থ্রিতে উঠে গেলাম। কিন্তু তখনও আমি জানিনা সামনে আমার জীবনে কি পরিবর্তন আসতে চলেছে। ক্লাস থ্রি থেকে যখন পাস করে ক্লাস ফোরে উঠবো। তখন হঠাৎ করে আমার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিল আমাকে আর ফরিদপুরে রাখবে না। তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছে খুলনায় বেশ ভালো একটি স্কুল আছে। সেখানে আমার ফুফাতো ভাই পড়ে। আমার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিল তারা আমাকে সেই ইস্কুলে পড়তে পাঠাবে।
এই কথা শুনে তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। যে আমি মাকে ছাড়া একটি দিনও থাকতে পারিনা। সে কিভাবে বাবা-মা পরিবার ছেড়ে এত দূরে থাকবে? আমি অনেক চেষ্টা করলাম খুলনায় না যেতে। প্রচুর কান্নাকাটি করলাম নানাভাবে জিদ প্রকাশ করতে থাকলাম। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হলো না। শেষ পর্যন্ত আমাকে জোর করে খুলনা পাঠিয়ে দেয়া হলো। তখন আমার বয়স বড়জোর নয় বা দশ বছর। সেই সময় মায়ের উপর প্রচন্ড অভিমান হয়েছিল। তখন ছোট ছিলাম বুঝতে পারতাম না। মনে মনে শুধু চিন্তা করতাম আমার মা মনে হয় আমাকে মোটেও ভালোবাসে না। যদি ভালোবাসতো তাহলে সে আমাকে কখনোই এত দূরে পাঠাতে পারতো না।
খুলনায় যাওয়ার পর থেকে আমি বেশিরভাগ সময়ই মন খারাপ করে থাকতাম। প্রতিটা মুহূর্তে পরিবারকে মিস করতাম। আমার ছোট্ট মনে এই ব্যাপারটা গভীর একটা ক্ষত তৈরি করেছিল। যদিও আমি জানি আবার বাবা-মা আমার ভালোর জন্যই আমাকে খুলনা পড়তে পাঠিয়েছিল।
আমার এখনো মনে পড়ে যখন ছুটিতে খুলনা থেকে ফরিদপুর আসতাম। তখন আসার সময় রাস্তাটা আর মোটেই ফুরাত না। শুধু মনে হতো কখন গিয়ে বাড়ি পৌঁছাব। কি দারুন উত্তেজনা মনের ভেতর কাজ করত সেটা আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না। আবার যখন ছুটি শেষে বাড়ি থেকে খুলনা ফিরতাম। তখন মনে মনে চাইতাম এমন কিছু ঘটক যাতে আমাকে আর খুলনা যেতে না হয়। কিন্তু যতই কামনা করি শেষ পর্যন্ত আমাকে যেতেই হত। তখন সমস্ত রাস্তা আমি কাঁদতে কাঁদতে যেতাম। সেই স্মৃতিগুলো এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে। (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
মিশনারি স্কুলগুলি বেশ ভালো হয়।টিফিনের মুহূর্তগুলো খুবই আনন্দের থাকে।এটা ঠিক মা-বাবা হয়তো ভালোর জন্যই অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেন পড়ার জন্য কিন্তু এতে বাচ্চাদের মনে খুবই প্রভাব পড়ে চেনা মানুষ চেনা জায়গা ছেড়ে থাকতে।তবুও থাকতে হয় বাধ্য হয়ে যেমনটা আপনার ক্ষেত্রে হয়েছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে ওই বয়সটাতে নিজের ভালো-মন্দ বোঝার মত অবস্থা থাকে না। এজন্যই বিভিন্ন রকম কথা মাথায় আসতো।
কিছু মনে করবেন না ভাই তবে আপেল নামটা সত্যি বেশ হাস্যকর হি হি। যাইহোক আসলে ঐ বয়সে পরিবারকে ছেড়ে অতো দূরে পাঠালে যেকোনো বাচ্চার রাগ অভিমান হবে। তবে সেই কাকতলীয় ঘটনা আর ঘটেনি যাতে আপনার আর খুলনা যাওয়া না লাগে।।
প্রথম প্রথম ওর নামটা আমাদের কাছেও হাস্যকর মনে হতো। পরে এক সময় একসাথে চলাফেরা করতে করতে আর তেমনটা মনে হয়নি।
৯-১০ বছর বয়সে মাকে ছেড়ে এতটা দূরে থাকা অনেক কষ্টকর হয়েছিল নিশ্চয়। মায়ের ভালোবাসা পৃথিবীর সব থেকে বিশুদ্ধ ভালোবাসা। আপনার শৈশবের গল্প শুনে বেশ ভালোই লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
এই ছোট বয়সে দারুন কষ্ট পেয়েছিলাম মাকে ছেড়ে থাকার জন্য।
হ্যাঁ ভাই ছোটবেলায় মাকে ছেড়ে থাকাটা সত্যিই অনেক কষ্টের। আমি তো বড় হয়ে গেছি তাও এখনো কষ্ট পায় মাকে ছেড়ে থাকতে।