সাগরের অদম্য মানসিকতার গল্প(প্রথম পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


সাগর গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তার মা তাকে বলল তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে নে। সে তার মাকে বলল তোমরা তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও। আজ তাদের জন্য অত্যন্ত খুশির দিন। সাগরের কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে। সে জেলার ভেতর সবচাইতে ভালো রেজাল্ট করেছে। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তার জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। তার মা-বাবা কেও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলেছে।

images (1).jpeg

ছবির সোর্স- লিংক

সাগরের বাবা একজন দিনমজুর। তার মা গৃহিণী। দরিদ্র বাবা-মার মেধাবী সন্তান সাগরকে সবাই পছন্দ করে। তার স্কুলের ছাত্র শিক্ষক সকলেরই অত্যন্ত প্রিয় পাত্র সাগর। সাগর ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় অত্যন্ত মেধাবী। এজন্য এলাকার লোকজন তাকে খুবই পছন্দ করে। সে সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করে। দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তান হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সাগরের পড়ালেখা সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিয়েছিল। উপরন্তু শিক্ষকরা তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে।

আজ সাগরের কারণে তার বাবা মার মাথা সমাজের উঁচু হয়েছে। সাগরকে নিয়ে তার বাবা-মার অনেক স্বপ্ন। ছেলে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় অফিসার হবে। তাদের কষ্টের দিন শেষ হবে। এই আশায় দিনমজুর বাবা কষ্ট হওয়া সত্বেও কখনো সাগরের লেখাপড়া বন্ধ করেনি। এলাকার লোকজনের ও ধারণা সাগর বড় হয়ে অনেক ভালো কিছু হবে। সাগরের নিজের মনেও অনেক বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন। রেজাল্ট বের হওয়ার আগে থেকেই সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে শহরের কোন একটি ভাল কলেজে ভর্তি হবে। তারপর সেখান থেকে পাস করে বুয়েট মেডিকেল অথবা ঢাকা ভার্সিটি তে সে পড়বে।

সাগর আর তার বাবা-মা তৈরি হয়ে তাড়াতাড়ি স্কুল এর উদ্দেশ্যে রওনা দিল। স্কুলটা তাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক ঘণ্টার পথ। এজন্য তারা একটু আগে আগেই বাসা থেকে রওনা দিয়েছে। স্কুলে পৌছে তারা দেখল পুরো স্কুল সাজানো সাগরের সংবর্ধনা উপলক্ষে। তারা স্কুলে প্রবেশ করার পর শিক্ষকেরা তাদেরকে ডেকে স্টেজে নিয়ে বসালো। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্কুল কর্তৃপক্ষ সাগর এবং তার মা-বাবার অনেক প্রশংসা করল। অনুষ্ঠান শেষ হলে তারা অত্যন্ত খুশি মনে বাড়ী ফিরে আসলো।

পরদিন সাগর শহরে গেল কলেজের ভর্তি ফরম কিনতে। ভর্তি ফরম জমা দিয়ে সাগর পড়ালেখায় মনোনিবেশ করল। ভালো কলেজে চান্স পাওয়ার জন্য সে রাত দিন ধরে পড়তে লাগলো। অবশেষে পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে দেখা গেল সাগর মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সাগর এবং তার মা বাবা অত্যন্ত খুশি ছিল। সাগর কলেজে গেল ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য জানতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে ভর্তি ফির কথা শুনে তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে চিন্তা করতে লাগল ভর্তির এতগুলি টাকা তার দরিদ্র বাবা কিভাবে জোগাড় করবে? এতদিন স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় সে পুরোপুরি ফ্রি পড়ালেখা করে এসেছে। কিন্তু এখানে তাকে সাহায্য করার কেউ নেই। সাগর মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে এলো।

বাড়ি এসে তার বাবা-মাকে জানালো ভর্তি ফির কথা। তার বাবা-মা এতগুলো টাকার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। তাদের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা কিছুতেই সম্ভব না। তারা কোন রকমে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করে। তার পরেও তার বাবা তাকে বলল দেখি চেষ্টা করে জোগাড় করতে পারি কিনা টাকাটা। কিন্তু সাগর জানে তার দরিদ্র বাবার পক্ষে এতগুলো টাকা জোগাড় করা কোনভাবেই সম্ভব না।

এভাবে দিন অতিবাহিত হতে লাগলো। একসময় ভর্তির তারিখ পার হয়ে গেল। এর ভেতরে সাগরের মা খেয়াল করে দেখল সাগর কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। বেশি কথা বলে না। সব সময় মনমরা হয়ে থাকে। খাওয়া-দাওয়ার ঠিক নেই। বন্ধুদের সাথে দেখা করে না। বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির কাছে নদীর পাড়ে একা একা বসে থাকে।(চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 4 years ago 

এই জিনিসগুলো কিন্তু সত্যিকারের ঘটনা। এই ঘটনাগুলো আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে। তবে আমরা খুব একটা নজর দিই না বললেই চলে, খেয়াল করতে পারিনা। এই ঘটনাগুলো সত্যিই খুব কষ্টের। কারণ আমরা এতো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি, আর তারা এতোটুকু সুযোগ-সুবিধা পায় না!!

ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

 4 years ago 

আমাদের দেশের অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা টাকার অভাবে পড়তে পারে না।সাগর দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তানদের প্রতিনিধিত্ব করে।পরের পর্বে হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাব।বাস্তবভিত্তিক সুন্দর একটি গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 4 years ago 

সুন্দর একটা গল্প আমাদের উপহার দিয়েছেন প্রিয় ভাই।বাস্তবে আমাদের এখনো এমন হয় মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীরা ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারে না।

 4 years ago 

কখন যে শেষ হয়ে গেলো বুঝতেই পেলাম না । পরবর্তী পার্ট এর জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

 4 years ago 

ভাই আপনার গল্পটি বাস্তবতার সাথে শতভাগ মিল রয়েছে। এরূপ ঘটনা আমাদের দেশের শহর এবং গ্রাম অঞ্চলে হাজার হাজার ঘটছে। এসব বিষয়ে আমাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া উচিত কারণ এই সমস্ত ঘটনাগুলো অনেক কষ্টের এবং বেদনাদায়ক।

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.34
JST 0.035
BTC 110722.72
ETH 4306.16
USDT 1.00
SBD 0.84