বজলু মিয়ার অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা (ছোট গল্প)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


বজলু মিয়া খুব ভোরে তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

তার স্ত্রী তাকে বললঃ ভাত খাইবানা?
সে বললঃ পরে খামু নে। আইজ অনেকক্ষণ রিকশা চালাইতে হইবো। বলে দ্রুত রিকশায় প্যাডেল মারতে থাকলো।


Polish_20211214_181911171.jpg

বজলু মিয়ার স্ত্রী পেছন থেকে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকলো। বজলু মিয়া সাধারণত প্রতিদিন সকালে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু আজ তাড়া থাকার কারণে না খেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। আজ তার তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে শীত চলে এসেছে। তাই তার ছেলের জন্য একটি মোটা শীতের কাপড় কিনতে হবে। ছেলে কদিন ধরেই তার কাছে আবদার করছে একটি সুন্দর শীতের কাপড়ের। তাছাড়া এই শীতে টিনের ঘরে থাকতে তাদের খুবই কষ্ট হয়। তাই রাতে গায়ে দেয়ার জন্য একটি মোটা কম্বল বা লেপ কিনতে হবে। একটি মোটা লেপ বা কম্বল এর দাম অনেক। তীব্র শীতের রাতে তারা দুটি জরাজীর্ণ কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকে। এইজন্য রাতে ভালমতো ঘুম হয় না। তাই বজলু মিয়া কিছুদিন ধরে টাকা জমাচ্ছে শীতের কাপড় কেনার জন্য। বেশকিছু টাকা এর মধ্যে জমেছে তার কাছে। আর অল্প কিছু টাকা হলেই সে তার ছেলের জন্য শীতের কাপড় এবং একটি লেপ বা কম্বল কিনতে পারবে। সে তার জমানো টাকা নিয়ে আজকে বের হয়েছে। আজকে সারাদিন রিক্সা চালানোর পর যে টাকা হবে সে টাকার সাথে জমানো টাকা মিলিয়ে শীতের কাপড় চোপড় কিনবে সে।

রিক্সা নিয়ে বের হতেই প্রথম সে একটি ভালো ভাড়া পেয়ে গেলো। এভাবেই সকাল নটা পর্যন্ত রিকশা চালানোর পর তার প্রচন্ড ক্ষুধা লাগলো। রাস্তার পাশের একটি হোটেল থেকে সে শুধু রুটি আর ভাজি দিয়ে নাস্তা করলো। হোটেলের নানা পদের খাবার দেখে তার লোভ লাগছিল। পকেটের ভালো খাবার খাওয়ার টাকাও ছিল কিন্তু তারপরও সে শীতের কাপড়ের কথা মনে করে তার লোভ সংবরণ করল। তারপর সারাদিন ভর বিরতিহীন ভাবে একের পর এক ভাড়া মারতে লাগলো। এভাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালিয়ে সে বেশ ক্লান্ত বোধ করছিল।

একবার বজলু মিয়ার মনে হচ্ছিল আজকের মত বাড়ি চলে যায়। কাল আবার রিকশা চালিয়ে আর কিছু টাকা জোগাড় করে তারপর শীতের কাপড় চোপড় কেনা যাবে। কিন্তু আবার পরক্ষনেই মনে হলো যদি টাকাটা অন্যকোন কাজে খরচ হয়ে যায়। তার চাইতে ভালো আজকেই সে আরো কিছুক্ষণ রিকশা চালিয়ে আর কিছু টাকা জমিয়ে তারপর শীতবস্ত্র কিনে সে বাড়ি যাবে। আর কিছুক্ষণ রিকশা চালানোর পর তার শীতবস্ত্র কেনার টাকার ব্যবস্থা হয়ে গেলো। সে চিন্তা করছে তাদের বাড়ির কাছেই একটি ছোট মার্কেট আছে। এই মার্কেটের সামনে ফুটপাতে অনেক হকাররা শীতবস্ত্র বিক্রি করে। সে এখন সেখানে গিয়ে তার প্রয়োজন মতো শীতবস্ত্র কিনবে। কোন ভালো দোকান থেকে শীতবস্ত্র কিনতে গেলে তার বাজেটে কুলোবে না। এই কথা বজলু মিয়া চিন্তা করছিল।

এর ভেতর হঠাৎ একজন লোক রিক্সার পাশে এসে বলল এই রিক্সা যাবে? বজলু মিয়া বলল স্যার কই যাবেন? তেমন কিছু না বলেই লোকটা রিকশায় উঠে বসলো। বসে বললো চলো। বজলু মিয়া কোন কথা না বলেই রিকশা চালানো শুরু করল।

কিছুক্ষণ পর আবার প্যাসেঞ্জারকে জিজ্ঞেস করলঃ স্যার কই যামু?
তখন প্যাসেঞ্জার বললঃ জিগাতলা যাবো।
বজলু মিয়া বললঃ স্যার জিগাতলা তো অনেক দূর। আমার তো বাড়িতে যাইতে হইবো। এখন ওই দিকে যামু না। প্যাসেঞ্জার রাগত স্বরে বলে উঠলোঃ তাইলে কি মিয়া এখন আমি রাস্তার মধ্যেই রিকশা থেকে নাইমা যাবো? কোন কথা কইবা না চুপচাপ চালাইতে থাকো।


বজলু মিয়ার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রিকশা চালাতে থাকলো। কিছুদুর যাওয়ার পর লোকটি বজলু মিয়াকে বলল ডান দিকের গলিতে ঢুকতে। বজলু মিয়া বলল ওই দিকের রাস্তা তো আমি চিনিনা। তখন রিক্সার প্যাসেঞ্জার বললো আমি চিনি। এই দিক দিয়ে রাস্তা শর্টকাট হবে। তোমাকে চিনিয়ে নিয়ে যাব। বজলু মিয়া আবারো অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেই অন্ধকার গলিতে ঢুকে গেলো। অন্ধকার এই গলিতে প্রায় তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কিছুদুর যাওয়ার পর রিক্সাওয়ালা বলল এই রিক্সা থামাও আমি পেশাব করবো। রিক্সা থামাতেই লোকটি লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নামল। রিক্সা থেকে নেমে থেকে একটি চাকু বের করে বজলু মিয়ার গলার কাছে ধরলো।

তারপর বললঃ টাকা পয়সা যা আছে সব বের করে দে। বজলু মিয়া বললঃ স্যার আমি গরীব রিকশাওয়ালা। আমি টাকা পয়সা কই পামু? আমার কাছে অল্প কয়েকটা টাকা আছে। লোকটি তখন নিজেই বজলু মিয়াকে সার্চ করা শুরু করল। সার্চ করতেই বজলু মিয়ার লুঙ্গির ভাজে প্রায় হাজার দুয়েক টাকা পেয়ে গেল। এই টাকাটা নিতে গেলে বজলু মিয়া ছিনতাইকারীর হাতে পায়ে ধরতে লাগলো। আর বলতে লাগল স্যার আমার অনেক কষ্টের জমানো টাকা। এই টাকাটা নিয়েন না।

আমি পুরো পরিবার নিয়ে অনেক কষ্ট করি শীতের রাতে। এই টাকা দিয়ে আমি পরিবারের জন্য শীতের কাপড় কিনব। কিন্তু ছিনতাইকারী মন কিছুতেই গললোনা। শেষ পর্যন্ত বজলু মিয়া ছিনতাইকারীর পা চেপে ধরে কাকুতি-মিনতি করতে থাকে। ছিনতাইকারী তাকে বলে পা ছাড় না হলে কিন্তু তোকে জানে মেরে ফেলবো। কিন্তু বজলু মিয়া কিছুতেই ছিনতাইকারীরা পা ছাড়ে না। ছিনতাইকারী প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে চাকু দিয়ে বজলু মিয়াকে একাধিকবার আঘাত করে তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সেখানে পড়ে থাকে বজলু মিয়ার নিথর দেহ আর তার মনের অব্যক্ত বেদনা (সমাপ্ত)।

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 3 years ago 

পড়েই খারাপ লাগলো।
আমি শুধু ভাবছি পড়েই আমাদের এতো খারাপ লাগে আর যাদের সাথে সত্যি সত্যি এসব ঘটনা ঘটে তাদের কেমন লাগে!দারুণ লিখেছেন ভাইয়া।

 3 years ago 

😞😞😞😞😞😞।

কিছু বলার ভাষা নেই আমার। আমাদের দেশে এইধরনের ঘটনা নতুন না। তবে অসাধারণ ভাবে গল্পটা ফুটিয়ে তুলেছেন ভাই। আমি যেন ফিল করতে পারছিলাম।

এটা বজলু মিয়া না আমাদের সবার বাবাই এইরকম পরিশ্রম করে আমাদের বড় করেছেন। অসাধারণ ছিল গল্পটা ভাই।

 3 years ago 

কষ্টের ছিল গল্পটি। এরকম কষ্ট করে অর্জিত টাকা ছিনতাইকারী এভাবে নিয়ে যাওয়া মানে একটি পরিবারের অনেকগুলো স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যাওয়া। বরাবরের মতই খুব সুন্দর হয়েছে আপনার গল্পটি।

 3 years ago 

শেষটা অনেক মর্মান্তিক মৃত্যু।খুবই খারাপ লাগলো।গল্পটি বাস্তবের সঙ্গে মিল রয়েছে।খুবই সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56588.25
ETH 2399.94
USDT 1.00
SBD 2.32