হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া(গল্প-১ম পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


মাকসুদ বিরক্ত হয়ে তার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। দু'দিন আগেই সে ঘড়িটার ব্যাটারি লাগিয়ে এনেছে। আজ আবার বন্ধ হয়ে আছে। ব্যাপারটা সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এমন তো হওয়ার কথা না। ঘড়িটা মোটেও সস্তার কোন ঘড়ি না। সে মধ্যবিত্ত মানুষ হলেও ঘড়িটা বেশ দাম দিয়ে কিনেছে। সে খেয়াল করে দেখেছে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে তার কোন না কোন সমস্যা হবে। গতকালকে যেমন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে যখন জুতোজোড়া পায়ে দিতে যাচ্ছিলো। তখন হঠাৎ করে খেয়াল করে দেখল জুতোর তলা অনেকটা খুলে গিয়েছে। এমনিতেই বাসা থেকে অফিসে অনেক দূরে হওয়ায় তার অফিসে যেতে দেরি হয়ে যায়। তারপর এই সমস্ত কারণে অফিসে দেরি করে পৌঁছানোতে বস্ তার উপর প্রচন্ড রেগে থাকে।

spaceship-4828098_1280.jpg

ছবির সোর্স-লিংক

মাকসুদ হাত থেকে ঘড়িটা খুলে ফেলে তড়িঘড়ি করে অফিসের জন্য বেরিয়ে গেল। তার স্ত্রী রুবিনা তাকে পেছন থেকে ডাকলো নাস্তা করে যাওয়ার জন্য। সে জানালো তার এখন সময় নেই বলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রুবীনার খুব মন খারাপ হলো। সে ওদিকে তার বাচ্চাকে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করছিল। সেজন্য স্বামীর দিকে খুব একটা নজর দিতে পারেনি। রুবিনা মনে করল তার স্বামী তার উপরে রেগে চলে গিয়েছে। কিন্তু সে আগে থেকেই নাস্তা তৈরি করে রেখেছিল।

রুবিনা কিছুক্ষণ মন খারাপ করে বসে থাকল। তারপর সে তার সাংসারিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে গেল। সারাদিন তার অনেক কাজ থাকে। সকালে প্রথমেই সবার জন্য নাস্তা বানাতে হয়। তারপর বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসতে হয়। বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসার পথে তাকে টুকিটাকি বাজার করতে হয়। বাসায় ফিরে বাসার নানা রকম কাজ, তারপর দুপুরের রান্না করে আবার বাচ্চাকে আনতে যেতে হয়। সারাটা দিন বিভিন্ন ব্যস্ততায় কেটে যায়। কিন্তু সে কখনও তার স্বামীকে না খেয়ে বাসা থেকে বের হতে দেয় না। হঠাৎ করেই তার মাকসুদ না খেয়ে বাসা থেকে বের হওয়ায় খুব খারাপ লাগছিল।

সারাদিনই ঘুরে ফিরে তার মনে এই জিনিসটাই আসছিল। সে মনে মনে ঠিক করে রাখল কাল থেকে আগে মাকসুদকে অফিসের জন্য তৈরি করে তারপর সে অন্য কাজে হাত দেবে । রুবিনার হঠাৎ মাকসুদের সাথে কথা কথা বলার ইচ্ছে হলো। সে মাকসুদকে ফোন দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেছে কিনা সে কথা জিজ্ঞেস করল। মাকসুদ বলল এখন ব্যস্ত আছি পরে ফোন দিও বলে ফোন রেখে দিল। মাকসুদ খেতে মোটামুটি ভালোবাসে। এজন্য রুবিনা রাতে মাকসুদের খাওয়ার জন্য তার প্রিয় ইলিশ খিচুড়ি রান্না করবে বলে চিন্তা করলো। মাকসুদের অফিস থেকে ফিরতে কিছুটা রাত হয়ে যায়। যার ফলে সে অফিস থেকে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে একবারে ভাত খেতে বসে।

সারাদিন রুবিনার মনের ভিতর শুধু অস্থির লাগছিল। এরকমটা সাধারণত তার কখনো হয় না। রুবিনা স্বামী অন্তপ্রাণ। তাদের দুজনের ভেতর বোঝাপড়াটা চমৎকার। মাকসুদকে বাইরের থেকে দেখে যতটা গম্ভীর মনে হয় আসলে সে ততটা গম্ভীর না। তার চেহারাটাই অমন। তাঁর আচার-ব্যবহার খুবই নরম। কখনো খুব একটা রাগারাগি করে না। কোন কিছু পছন্দ না হলে সামান্য বিরক্তি প্রকাশ করে। স্ত্রী সন্তানকে সে খুবই ভালোবাসে। রুবিনা মনে মনে চিন্তা করে সংসারের হয়তো অর্থনৈতিক প্রাচুর্য নেই তারপরেও সে অনেক ভালো আছে। তবুও তার মনের ভেতর অস্থিরতা দূর হয়না।

এভাবে বিভিন্ন চিন্তায় এবং সাংসারিক কাজ কর্মে রুবিনার দিনটি পার হয়ে গেলো। সন্ধ্যা নেমে এলে রুবিনা ইলিশ খিচুড়ি রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মাকসুদ গরম গরম খেতে পছন্দ করে। তাই সে একটু দেরি করে রান্না শুরু করেছে। যাতে মাকসুদ আসতে আসতে রান্নাটা হয়।

সারাটা দিন কাজকর্মের পরে মাকসুদ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অফিস থেকে বের হলো। তার অফিস থেকে বাসায় যেতে দেড় থেকে দু ঘন্টা লেগে যায়। লোকাল বাসে তাকে যাতায়াত করতে হয় যার ফলে এই দীর্ঘ সময় লাগে। মাসুদ অফিস থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকলো। কিছুদুর যাওয়ার পর তার হঠাৎ করে একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছা করল। সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি সিগারেট ধরালো। সে যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছে সেখানে লোকজনের যাতায়াত খুব একটা নেই। হঠাৎ করে তার পাশে একটি গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে কয়েকজন লোক নেমে এসে তাকে বলল আপনার সাথে আমাদের কথা আছে চলুন। তিনি বলল আপনারা কারা, কোথায় যাবো আমি? তারা বলল আমরা প্রশাসনের লোক। বলেই একজন মাকসুদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিলো। তারপর তাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলল। মাকসুদ বারবার বলছিল আপনারা বোধহয় কোনো ভুল করছেন। আমার কথা শুনুন। কিন্তু তারা কোন কথা শুনলোনা। গাড়িতে ওঠানোর পর তারা মাকসুদের চোখে কালো একটা কাপড় বেঁধে দিলো এবং তার মোবাইল বন্ধ করে দিলো।

এদিকে রুবিনার রান্না শেষ হয়ে গিয়েছে। সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন মাকসুদ বাড়িতে ফিরবে। লোকটা ইলিশ খিচুড়ি এত পছন্দ পরে কেন কে জানে? ইলিশ খিচুড়ি হলে তার আর কিছু লাগেনা। আর পছন্দের খাবার পেলে তার মন খুবই ভালো থাকে। রুবিনা আগে থেকে চিন্তা করে রেখেছে আজ মাকছুদ ফিরলে সবাই একসাথে খাবে। যার জন্য বাচ্চাটা কিছুক্ষণ আগে তার ক্ষুদা লেগেছে বললেও সে বলেছে আরেকটু দেরি করো। বাবা আসলে আমরা সবাই একসাথে খাব। রুবিনা মাকসুদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যখন রাত এগারোটা বেজে গেল তখন রুবিনা আবার কিছুটা অস্থিরতা বোধ করতে থাকে। রুবিনা মাকসুদের নাম্বারে ফোন করার চেষ্টা করে। কিন্তু মোবাইল বন্ধ দেখায়। রুবিনা চিন্তা করছে মাকসুদের অফিস থেকে ফিরতে এত সময় তো লাগেনা কখনো। কোন বিপদ হলো না তো? এক অজানা আশঙ্কায় সে বিচলিত হয়ে পড়ে।(চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  

রুপক ভাই আমিও তো বুজলাম না প্রশাসনের লোক কেনো নিয়ে গেলো

আমার তো মনে হচ্ছে মাকসুদকে কিডনাফ করে মুক্তিপন দাবি করে নাকি....... এখানেই গল্পের শেষ নয়... আল্লাহ মা মেয়েটি অপেক্ষায় করে গেলো মাকসুদ কখন আসবে। মাকসুদের আর ইলিশ মাছ খাওয়া হলো না

রুপকা ভাই পুরা গল্পটাই পড়লাম পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করলাম। 💓💓💓

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

মাকসুদের সাথে কী হয়েছে,,,,তা জানার জন্য মন অস্থির হয়ে আছে,আপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া,পরবর্তী পর্বের জন্য।

 3 years ago 

খুব তাড়াতাড়ি পরের পর্ব পাবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনার গল্পের শুরুটা দারুণ ছিল। কাহিনীটা ও বেশ জমে উঠছে। পারিবারিক ভালোবাসার মধ্যেও যখন নিজেকে ভীষণতায় পড়ে তখন দুজনের মধ্যেই কিছু না কিছু বাড়তি চিন্তা চলে আসে। আপনার পুরো গল্পটা পড়ার আগ্রহ অনেক বেশি বেড়ে গেল। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। আমাদের সাথে এত সুন্দর গল্প ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 3 years ago 

আমার মনে হচ্ছে লোকগুলো কোনো খারাপ লোক ছিলো।জানিনা এর পরের পর্বে কি আছে তবে মনে হচ্ছে গল্পটা জাস্ট দারুণ হবে শেষ পর্যন্ত।
আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে আপু।

 3 years ago 

ভাই শুরুটা চমৎকার ছিলো গল্পের ।মাকসুদ ও রুবিনার জীবন কাহীনিতে টুইস্ট আছে।শেষে মাকসুদ কে যে কারা নিয়ে গেলো এটাই জানার জন্য পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।ধন্যবাদ ভাই ।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

 3 years ago 

ভাই আপনার পোস্টে গল্পটি পড়া সম্পন্ন করলাম। পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ভাইয়া পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। সুন্দর একটি পোষ্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57408.28
ETH 3079.77
USDT 1.00
SBD 2.31