প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত দুই পর্বে আমি আপনাদের সাথে আমার পদ্মার দুর্গম চরের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। কিন্তু সেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ভিতরে একটি অংশ আপনাদের কাছে তুলে ধরা হয়নি। আজ সেই অংশটি তুলে ধরবো। আমরা যেই চরে গিয়েছিলাম সেখানে বেশিরভাগ অধিবাসী দরিদ্র ধরনের। অবশ্য অল্প কিছু অবস্থা সম্পন্ন লোকও সেখানে বসবাস করে। তবে সেই চরে আমাদের এলাকার একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর একটি বাগান বাড়ি রয়েছে। সেই বাগানবাড়ি দেখতে চরে একসময় অনেক মানুষের আগমন ঘটতো।

IMG_20220816_115719.jpg

IMG_20220816_115725.jpg

আসলে এমন জনবিচ্ছিন্ন দুর্গম একটি জায়গায় এত সুন্দর একটি স্থাপনা মানুষজন আগ্রহ নিয়ে দেখতে আসতো। আমরা সেদিন চরে পৌছানোর পর কোথায় গিয়ে একটু বিশ্রাম দিব সেই জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে চিন্তা করে দেখলাম সেই মন্ত্রীর বাড়িতে যাওয়া যায়। সেখানে প্রচুর গাছপালা আছে এবং বিশ্রাম নেয়ারও জায়গা আছে। তাছাড়া সেই বাড়িতে আছে একটি সুন্দর ঘাট বাঁধানো পুকুর। সেখানে ইচ্ছা করলে গোসল করা যাবে।

IMG_20220816_111914.jpg

IMG_20220816_112000.jpg

নদীতে এখন বেশ পানি বেড়েছে। তাছাড়া এখন পানিতে অনেক স্রোত থাকে। যার ফলে এখন নদীতে গোসল করা কিছুটা বিপদজনক। আমরা আগে থেকেই গোসল করার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। তাই সব কিছু চিন্তা করে আমরা মন্ত্রীর বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। যদিও বাড়িটি খুব একটা দূরে ছিল না। তারপরেও প্রচন্ড রোদের ভেতর সেখানে হেঁটে যেতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। দ্রুত হেঁটে অল্প কিছুক্ষণের ভেতরে আমরা সেই বাড়িতে পৌঁছে গেলাম।

IMG_20220816_112058.jpg

IMG_20220816_112713.jpg

এর আগেও আমি বেশ কয়েকবার এই বাড়িটিতে এসেছি। কিন্তু এবার এসে দেখতে পেলাম বাড়ির আশেপাশে যে ছোট গাছগুলি ছিল সেগুলি বেশ কিছুটা বড় হয়েছে। যদিও চারপাশে অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। ক্ষমতার পালাবদলের কারণে সেই প্রাক্তন মন্ত্রী আর এখন এদিকে আসেন না। একসময় দৌড়র্দন্ড প্রতাপশালী মন্ত্রী আজ সাধারণ মানুষের থেকেও খারাপ অবস্থায় আছেন। সে যাই হোক প্রচন্ড গরমের ভেতর আমরা সেখানে পৌঁছে সরাসরি প্রথমে চলে গেলাম পুকুর ঘাটের কাছে। গিয়ে দেখে পেলাম সেখানে আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই।

IMG_20220816_115653.jpg

IMG_20220816_111954.jpg

প্রচন্ড রৌদ্রের তাপের কারণে এত কাহিল লাগছিলো যে কিছুক্ষণের ভেতরেই আমরা কাপড় পরিবর্তন করে পুকুরে নেমে গেলাম গোসল করতে। তারপরে দুই বন্ধু মিলে বেশ খানিকটা সময় ঠান্ডা জলে গা ডুবিয়ে বসে রইলাম। প্রচন্ড গরম থেকে আসার কারণে ঠান্ডা জলে গা ডুবে বসে থাকতে অসম্ভব ভালো লাগছিল। হঠাৎ কিছুক্ষণ পর দেখলাম গা চুলকাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে সেই চুলকানি আরো বাড়ল। তখন আমি আমার বন্ধুকে বললাম পানিতে মনে হয় কোন সমস্যা আছে। কারণ আমার গা চুলকাচ্ছে। আমার বন্ধু তখন বলল আমারও গা চুলকাচ্ছে। এই কথা শুনে দুজনে তাড়াতাড়ি পানি থেকে উঠে গেলাম।

IMG_20220816_115658.jpg

IMG_20220816_115349.jpg

আসলে এই পুকুরটি দীর্ঘদিন যাবত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখানে মানুষের আনাগোনা তেমন একটা নেই। সেজন্যই হয়তো পানিতে কোন জীবাণুর আবির্ভাব হয়েছে। সে কারণেই হয়তো গা চুলকাচ্ছিল। পরে আমরা পুকুর থেকে উঠে তাড়াতাড়ি গা মুছে ফেললাম। তারপর জামাকাপড় পাল্টে দুজনে কিছুক্ষণ সেই বাড়িটির বারান্দায় বসে বিশ্রাম নিলাম। সেখানে দেখলাম স্থানীয় আরও দুটি ছেলে খুব আরামে শুয়ে আছে। বুঝতে পারলাম স্থানীয় অনেকের কাছে এটি বিশ্রামের জায়গা হয়েছে।

IMG_20220816_112011.jpg

তারপর বাড়িটির চারপাশে আমরা ভালোভাবে ঘুরে ফিরে দেখলাম। বাড়ির মালিক না থাকলে যেমন চেহারা হয়। এই বাড়িটির অবস্থাও তেমনি হয়েছে। কিন্তু এই বাড়িতে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সবকিছু রয়েছে। বাড়িতে এসি লাগানো আছে, কেবল টিভি দেখার ব্যবস্থা আছে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য সোলার প্যানেল লাগানো রয়েছে। দুর্গম এই চরে তারা কোন কিছুর আয়োজনে কমতি রাখেনি। বাড়ির এক পাশের দিকে একটি হেলিপ্যাড রয়েছে হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য। শুনেছি তারা এখানে মাঝে মাঝে হেলিকপ্টারে করেও আসতো। যাইহোক আমরা আরো কিছুক্ষণ সেখানে বিশ্রাম নিয়ে তারপর বাড়ির দিকে ফিরতে লাগলাম।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানপদ্মার চর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

পদ্মার চরে প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে ভালো সময় উপভোগ করেছেন আপনার পোস্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে। তবে মন্ত্রীর বাড়ি, পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট দেখে বোঝা যাচ্ছে মন্ত্রী সেইরকম প্রভাবশালী ছিল। বাড়ি ভেঙ্গে পড়লে নাকি ছাগলও পাড়ায়। এখন এই মন্ত্রীর অবস্থা ও সেরকম হয়েছে। যাক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর ফটোগ্রাফি পোস্টের জন্য।

 2 years ago 

প্রাক্তন মন্ত্রী এখন খুবই দুর্দশায় আছে।

 2 years ago 

এটা দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে যা কোন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ি নয় এটা কোন রাজা বাদশার বাড়ে বিশাল রাজ্য ও রাজপ্রাসাদ। ক্ষমতার পালা বদলে মন্ত্রীরা আজ আমাদের মতই অবস্থা। জনগণের টাকায় আত্মসাৎ করা এসব বাড়িঘর সবকিছু পড়ে থাকবে কিন্তু মানুষ থাকবে না। কি হবে এই রাজ প্রাসাদ রাজমহল করে। ভাই বাংলার প্রতিটি মন্ত্রী জনগণের টাকা দিয়ে এভাবে নিজেদের আখের গুছিয়েছে।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা মন্ত্রী প্রায় একই রকম দুর্নীতিবাজ।

 2 years ago 

সময় কখনো সবার জন্য একরকম থাকেনা। সময়ের সাথে মানুষের অবস্থা পরিবর্তনশীল। ঠিক তেমনি একসময়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী যে কিনা হেলিকপ্টার নিয়ে ঘুরতে আসতো। সে এখন সাধারণ মানুষের কাতারে জীর্ণশীর্ণ তার শখের বাড়ি। যাইহোক ভাইয়া চরের মধ্যে প্রচন্ড গরমে আপনাদের বিশ্রামের জন্য সেই মন্ত্রীবাড়ি পেয়েছিলেন বলে কিছুটা শান্তি পেয়েছেন। তা না হলে প্রচণ্ড গরমে অনেক কষ্ট হতো। নতুন একটি অভিজ্ঞতা হল।
ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

সেদিন আসলেও এই বাড়িটি পেয়ে অনেক উপকার হয়েছিল।

 2 years ago 

বদ্ধ ময়লা পানিতে নামলে গায়ে যে চুলকানি সৃষ্টি হয় আমাদের দিকে সেগুলোকে পানি কামড়া বলে।

 2 years ago 

ভাইয়া দীর্ঘদিন যাবত যে সমস্ত পুকুরগুলো অব্যবহারিত অবস্থায় পড়ে থাকে সে সমস্ত পুকুরের তলায় ও পানিতে এক ধরনের গ্যাস সৃষ্টি হয়। যার কারণে পুকুরে পানিতে নামলেই গা চুলকাতে শুরু করে । আর যদি শরীরে এলার্জি থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই। শরীর চুলকে পুরো শরীর লাল হয়ে ফুলে যাবে। তাই আপনার এ পোস্টটি পড়ে সকলেরই শিক্ষা নেয়া উচিত যেখানে ভ্রমণ করেন না কেন পুকুরে নামার ক্ষেত্রে একটু সচেতন থাকবেন।

 2 years ago 

আপনার কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম। এরপরে কখনো এই ধরনের পুকুর দেখলে সতর্ক থাকব।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59575.00
ETH 2607.14
USDT 1.00
SBD 2.43