জীবনের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ (শেষ পর্ব)।
তুই যদি প্যাকেট দুটো পৌঁছে দিতে পারিস। তাহলে দুটো প্যাকেটের জন্য দুই লাখ টাকা পাবি। এতো টাকার কথা শুনে শাহিন তখনই বলে এখনই দে। আমি যেভাবে হোক প্যাকেট দুটো পৌঁছে দেবো। তখন রমিজ বলে এত ব্যস্ত হওয়া যাবেনা বন্ধু। এই দুটো প্যাকেট অনেক মূল্যবান। যদি পুলিশ তোকে ধরে ফেলে তাহলে তোর অনেক দিনের জেল হবে। আর এই প্যাকেটের মালিকের অনেক টাকার ক্ষতি হবে। এই জন্য বুদ্ধি করে প্যাকেট দুটো জায়গামত পৌঁছে দিতে হবে। শাহীন বলে তুই চিন্তা করিস না। প্যাকেট দুটো আমাকে দে আমি একটা বুদ্ধি বের করে পৌঁছে দিয়ে আসবো।
তখন রমিজ শাহীনকে একটি ব্যাগে দুটি প্যাকেট দেয়। সাথে ছোট্ট একটা কাগজে ঠিকানা লিখে দেয়। দিয়ে শাহীনকে বলে এই ঠিকানায় প্যাকেট দুটো পৌঁছে দিবি। তখন শাহীন প্যাকেট দুটো নিয়ে তার বাসায় চলে আসে। বাসায় ঢুকতেই তার বউ বলে কি ব্যাপার বাজার আনোনি? তখন শাহীন বলে একটু পরে সব বাজার করে নিয়ে আসছি। এই কথা বলে শাহীন তার অফিসে যাওয়ার পোশাক পরে অফিসের ব্যাগটা নিয়ে গলায় অফিসের আইডি কার্ড টা ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। চাকরি ছেড়ে আসলেও অফিসের আইডি কার্ডটা সে জমা দেয়নি। তো ধোপদুরস্ত কাপড়চোপড় পড়ে নিয়ে শাহীন ব্যাগ নিয়ে তার মোটরসাইকেলে রওনা দেয়।
রাস্তার ভেতর একটি জায়গায় সে দেখতে পায় পুলিশ যাকেই সন্দেহ হচ্ছে তাকে থামিয়ে চেক করছে। কিন্তু শাহীন যখন চেকপোষ্টের কাছে যায় তখন তার আইডি কার্ড দেখে তাকে চেক না করেই ছেড়ে দেয়। শাহীন বেশ সহজেই সে ঠিকানায় প্যাকেট দুটো পৌঁছে দেয়। প্যাকেট দুটো নিয়ে একটি লোক শাহীনকে দুই লক্ষ টাকা দেয়। সেই টাকা হাতে পেয়ে শাহীন অবাক হয়ে যায়। এত সহজে যে এত টাকা ইনকাম করা যায় সে কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। তারপর পুরো মাসের বাজার করে একবারে বাড়িতে উপস্থিত হয়।
একসাথে এত বাজার দেখে শাহিনের বউ অবাক হয়ে যায়। কারণ শাহীন কোনদিন এত বাজার একসাথে করেনি। বেতনের গোনা টাকায় তাদের সংসার চালাতে হতো। যার ফলে সব সময় টানাটানি লেগেই থাকত। সে কারণে শাহিন সবসময় অল্প অল্প করে বাজার করতো। এভাবে শাহিন মাঝে মাঝেই মাদক পাচার করতে লাগল। শাহীন যথেষ্ট ধূর্ততার সাথে কাজ করছিলো। এর ভিতর সে একদিন রমিজের ফোন পায়। রমিজ তাকে বলে সময় করে একবার রেল লাইনে আসিস। তোর সাথে জরুরী কথা আছে।
সন্ধ্যার পরে শাহিন রেললাইনে গিয়ে উপস্থিত হয়। তখন রমিজ তাকে বলে এবার বড় একটা কনসাইন্টমেন্ট তোকে নিয়ে যেতে হবে। সাকসেসফুলি ডেলিভারি দিতে পারলে একবারে ১০ লক্ষ টাকা পাবি। শাহিন চিন্তা করে একবারে এতগুলো টাকা পেলে সে আর এই কাজ করবে না। এই টাকা দিয়ে সে অন্য কোন ব্যবসা শুরু করবে। কিন্তু শাহিন এটাও বুঝতে পারে এই কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ এত বড় কনসাইন্টমেন্ট পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার করা খুবই কঠিন একটি কাজ। তারপরেও সে তাদের একটি ভালো ভবিষ্যতের আশায় এই ঝুঁকিটি নেবে বলে মনস্থির করল।
নির্ধারিত দিনে শাহিন একটি বোরখা পড়ে ব্যাগে করে ১০ কেজি মাদক নিয়ে রওনা দিল। তার ব্যাগের ভেতর ছিল অত্যন্ত দামি কোকেন। তবে শাহিন এটা জানতো না এবারের খবর আগে থেকেই পুলিশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। পুলিশ একরকম ভাবে তার জন্যই ওয়েট করছিল। শাহিন বরাবরের মতো সেই চেকপোস্ট পার হতে গেলে পুলিশ তাকে থামিয়ে তল্লাশি করতে চাই। যদিও শাহীন বোরখা পড়ে রাস্তায় বেরিয়ে ছিলো। কিন্তু কিভাবে যেন পুলিশের লোকগুলি শাহীনকে দেখে খুবই সন্দেহ করে। তারপর শাহীন কে চেক করে তার কাছ থেকে ১০ কেজি কোকেন পায়।
তখন পুলিশ সদস্যরা শাহীনকে পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে থানায় দেখে রওনা দেয়। শাহীনকে যেখান থেকে এরেস্ট করা হয়েছিল সেখান থেকে থানার দূরত্ব বেশ খানিকটা। শাহীনকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি কিছুদূর চলার পরে হঠাৎ করে রাস্তার পাশে গাড়িটি থেমে যায়। শাহিন দেখতে পায় কর্তব্যরত এক পুলিশের কাছে ফোন এসেছে। ফোনে কি কথা বলল শাহিন সেটা কিছুই শুনতে পায় না। পুলিশ সদস্যের কথা বলা শেষ হলে শাহিন দেখতে পায় তারা থানার দিকে না গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য দিকে যাচ্ছে। এদিকে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। শাহীনকে বহনকারী পুলিশের গাড়িটি চলতে চলতে নদীর পাড়ে একটি ফাঁকা মাঠে এসে দাঁড়ায়। তারপর তারা শাহীনকে গাড়ি থেকে নামায়। শাহীন পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার স্যার? আমাকে এখানে আনলেন কেন? পুলিশ তার কথার উত্তর না দিয়ে হাসতে থাকে।
একটু পর তারা গাড়ির একটি জায়গা থেকে ছোট ছোট কয়েক প্যাকেট মাদক এনে শাহিনের পকেটে গুঁজে দেয়। তারপর একটি অবৈধ পিস্তল হাতে দিয়ে বলে এখন দৌড় দে। শাহীন তখন ঘটনাটা বুঝতে পারে যে তারা তাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। তখন শাহিন পুলিশ সদস্যদের অনেক অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তু তারা শাহিনের কথায় ভ্রুক্ষেপ করে না। হঠাৎ করে এক পুলিশ সদস্য তার পিস্তল বের করে শাহীনকে পরপর ৪ রাউন্ড গুলি করে। তারপর থানায় ফোন করে জানায় এক মাদক ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসীকে এনকাউন্টার করা হয়েছে। আর শাহিনের কাছ থেকে পাওয়া মাদক তারা অন্য মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়।এভাবেই শাহিনের জীবনের সমাপ্তি হয়। (সমাপ্ত)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ছবি | canva দিয়ে তৈরি করা হয়েছে |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আশাকরি ভাল আছেন।আজ গল্পের শেষ পর্বটা পড়ে খুবই খারাপ লাগলো। আসলে এমন কিছুই হয়।তবে পুলিশের শেষমেষ কাজটা খুব খারাপ লাগলো। শাহীনের এমন পরিনতি হবে তা জানতাম তবে পুলিশের এমন কর্মকান্ডে মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। অনেক ভাল লাগলো ভাইয়া গল্পটি। বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে গল্পটি শেয়ার করেছেন খুব ভাল হয়েছে।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
গল্পটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো ভাইয়া। শেষের পরিণতি এমন হবে এত কষ্টদায়ক হবে তা ভাবতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো শাহিন অ্যারেস্ট হবে। কিন্তু একেবারে ডেট। সেটা তো ভাইয়া মেনে নেওয়া যাচ্ছে না