স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষেরা (দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% সাইফক্স।
তারেক বুঝতে পারল অবস্থা খুব একটা সুবিধার না। সেজন্য সে তার পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। কারন সে একটা জিনিস বুঝতে পারছিল। যাদের তদন্তে নাম এসেছে তারা সবাই অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার পরিবারের বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এজন্য সে তার পরিবারকে এই বিপদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। যদিও নিজে প্রতিদিন নানা রকম ভয়ে দিন কাটাতে লাগলো।
একদিন তারেক অফিস থেকে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বসে বসে টিভি দেখছে। হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পেলো। সে দরজা খুলে দেখে ৫/৬ জন গুন্ডা টাইপের মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এদের প্রত্যেকের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সকলেই দাগি অপরাধী। তারা কোন ভনিতায় না গিয়ে তারেককে সরাসরি হুমকি দিলো।
তারা বললো এই তদন্ত বন্ধ করে দিতে হবে। আর যাদের নাম ইতিমধ্যেই তদন্তে এসেছে তাদের সকলের নাম কেটে দিতে হবে। নইলে তাকে খুন করা হবে। হুমকি দেয়ার সময় হুমকিদাতাদের কয়েকজন মাজা থেকে পিস্তল বের করে দেখালো। তারেক পরিষ্কার বুঝতে পারলো এরা যা বলছে সেটা করতে এদের একটু ও বাধবে না।
লোক গুলো চলে যাওয়ার পর তারেক তার এক কলিগকে ফোন দিল পরামর্শ করার জন্য যে কি করা যায়। তার কলিগ তারেককে পরামর্শ দিল ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার জন্য। তার অর্থ তদন্তে যাদের নাম এসেছে তাদের সাথে একটি আপোষরফা করার জন্য। তারেক এই কথার অর্থ বুঝতে পারল। কিন্তু এই ঘটনা তার জিদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
সে সোজা থানায় চলে গেল কমপ্লেইন করার জন্য। থানার ওসি সাহেব তারেকের কাছ থেকে সবকিছু শুনছিল। সব শোনার পর ওসি সাহেব তারেককে পরামর্শ দিল আপনি এই তদন্ত ছেড়ে দিন না। হলে যে কোন সময় আপনার কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। থানায় কমপ্লেন করেও খুব একটা লাভ হবে না। কারণ এই কাজের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই অত্যন্ত প্রভাবশালী। এই কথা বলে ওসি সাহেব তার অভিযোগ নিতে অপারগতা প্রকাশ করল। ওসি সাহেব বললো আপনি যাদের নাম বলেছেন তাদের নামে অভিযোগ নেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। ওদের নামে অভিযোগ নিলে আমার চাকরি চলে যাবে।
তারেক অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়লো। শেষ ভরসা হিসেবে সে মনে করেছিল পুলিশ হয়তো তাকে সহায়তা করবে বা নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু তারেক এখন পরিষ্কার বুঝতে পারছে। কেউই তাকে সাহায্য করবে না এই ব্যাপারে। তারেক খুব মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে এলো। পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে সারাদিন মনমরা হয়ে রইল। কিন্তু কেউ তাকে একবার জিজ্ঞেস করল না কি হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে অফিসের অনেকেই এই ঘটনা গুলি জানে।
তারেক সারাদিন অফিস শেষে বাসার কাছে এসে একটি চায়ের দোকানে বসেছে চা খেতে। এই চায়ের দোকান টি এলাকার লোকজনের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তারেক মাঝেমাঝে এখান থেকে চা খায়। এই চার দোকানে চা খেতে এসে তারেকের সাথে এলাকার অনেকের ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। তারেক মনোমরা হয়ে আছে দেখে এলাকার উঠতি যুবকদের একটি দল এসে জিজ্ঞেস করল তারেক ভাই কি হয়েছে? কোন সমস্যা নাকি?
এই ছেলেগুলো খুবই ভালো। তারা তারেককে খুবই পছন্দ করে। আসলে এই এলাকার সকলেই তারেককে অনেক পছন্দ করে তার সততার জন্য এবং ভালো ব্যবহারের জন্য। তারেক আনমনা হয়ে বলল না তেমন কোনো সমস্যা না। কিন্তু তারা তারেককে দেখে বুঝতে পারল হয়তো বড় কোন সমস্যা হয়েছে। তাই তারা তারেককে বলল ভাই আপনাকে অনেকদিন ধরে চিনি। কিন্তু আপনাকে কখনো এতটা মন খারাপ করে থাকতে দেখি নি। আমরা সবাই আপনাকে অত্যন্ত পছন্দ করি। আমাদেরকে আপনার আপনজন মনে করতে পারেন। কোন সমস্যা হলে আমাদের বলতে পারেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আপনার সমস্যার সমাধান করার।
তারেক তাদের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভরসা পেলো। কিন্তু সে বুঝতে পারলো এই চায়ের দোকানে বসে সব কথা বলা ঠিক হবে না। তাই সে ছেলেদের কে বলল তোমরা আমার সাথে বাসায় এসো। কিছু জরুরী কথা আছে। ছেলেদের দলটা তারেকের সাথে তার বাসায় গেল। তারপর তারেক তাদেরকে সবকিছু খুলে বলল। সমস্ত কিছু শুনে তারা খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠলো। একজন সৎ আদর্শবান মানুষের এমন কোনঠাসা অবস্থা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।
কিন্তু সেই দলের ভেতর একজন ছিল খুবই ঠাণ্ডা মাথার ছেলে। তার নাম ছিল সবুজ। সে সবাইকে বলল উত্তেজিত হয়ে কিছু করা যাবে না। কারণ এই ঘটনার সাথে সব রাঘোব বোয়ালরা জড়িত। যা করতে হবে খুব ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে। এই ছেলেটির কথা শুনে তারেক অনেকটা ভরসা পেল। তারেক যেমন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিল। তেমনি তার তদন্ত নিয়েও অনেক চিন্তিত ছিল। দেশের এত বড় একটা ক্ষতি সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। সে চাচ্ছিল যে কোনোভাবেই হোক এই দুর্নীতিবাজদের মুখোশ সবার সামনে খুলে দিতে হবে। (চলবে)
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
ভাইয়া,আপনার লিখাটা গল্পটা পরে ভালো লাগলো।পরের ধাপের অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ আপনাকে।
স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষেরা নিয়ে সুন্দর কিছু কথা শেয়ার করেছেন। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে গল্পটি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম💯
গল্পতো প্রায় জমিয়ে ফেলেছ। চারিদিকে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরদের অবাধ বিচরণ আর বীরদর্পে ঘোরাফেরা দেখে সাধারণ মানুষের সততা আর আইন-কানুনের উপর বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেছে। আশা করি গল্পের মধ্যে হলেও ভালো কিছু দেখতে পাবো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা এখন এমনই। ভালো অফিসারা দেশের ভালো করার জন্য কাজ করতে চাই কিন্তু এই ধরনের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের কারণে তারা সঠিকভাবে তাদের কাজ করতে পারেনা। ফলে দেশ থেকে কোন ভাবে দুর্নীতি দমন করা যায় না।
আপনার পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া
ভাইয়া এই বিষয় গুলো আমার কাছে সব থেকে বেশি খারাপ লাগে। কেউ ভালো কাজ করে ভালো থাকতে পারে না এটাই তার প্রমান। হয়তো আমরা এই ধরণের ভিডিও টিভিতে দেখেছি কিন্তু বাস্তবে তার থেকে আরো বেশি কিছু হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।