ছাত্র রাজনীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত জীবন (শেষ পর্ব)।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গ্রাম থেকে উঠে আসা শান্ত শিষ্ট স্বভাবের ছেলেটি নোংরা ছাত্র রাজনীতির কবলে পড়ে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু এটা নিয়ে তাকে বলার কেউ ছিল না। কারণ সোহেল সহজে বাড়ি যেত না। বাড়ি গেলেও তার অশিক্ষিত বাবা-মা তেমন কিছু বুঝতে পারত না। বরং সোহেল বাড়ি গেলে তারা খুশি হত। কারণ সোহেল অবৈধ মাধ্যমে বেশ ভালো উপার্জন শুরু করেছিল। সেই অবৈধ উপার্জনের পয়সায় সোহেল বাড়িতে পাকা দালান উঠিয়েছে। বাবা মার জন্য ভালো থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। কিন্তু তার বাবা-মা ঘনাক্ষরে বুঝতে পারেনি দিন দিন তাদের ছেলেটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

Polish_20220916_000218325.jpg

এদিকে বেশ কয়েক মাস হয়ে গিয়েছে সোহেল নর্থ হোস্টেলে উঠেছে। এর ভেতরে সে কলেজে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এখন সে চিন্তা করছে কিভাবে বিপক্ষ গ্রুপকে কলেজ থেকে বের করা যায়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে শেষ পর্যন্ত সে একটি লিস্ট তৈরি করেছে। সেই লিস্টে সাউথ হোস্টেলের কয়েকজন ছাত্র নেতার নাম রয়েছে। সোহেল প্রথমে তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম তথ্য যোগাড় করে। তারা কোথায় যায় কার সাথে মেশে। তারপর একটি পরিকল্পনা সাজায়। সে হিসাব করে দেখেছে মাত্র পাঁচ জন ছেলে পুরো সাউথ হোস্টেল টা চালায়। এ পাঁচজন ছেলেকে আটকাতে পারলে সাউথ হোস্টেলের দখল নেয়া কোন ব্যাপার হবে না।

চিন্তা ভাবনা করে সে পরিকল্পনা সাজায়। তারপর সেই পরিকল্পনা মোতাবেক সাউথ হোস্টেলের সেই ৫ নেতাকে সে তার লোকজনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রাখে। আর সোহেল নিজে প্রায় ৪০-৫০ জন ছেলেপেলে নিয়ে সাউথ হোস্টেলে দখল নেয়। এদিকে হঠাৎ সোহেলের আক্রমণে সাউথ হোস্টেলের ছেলেরা প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়। তারা শেষ পর্যন্ত দৌড়ে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে নিজেদের জীবন বাঁচায়। এভাবে সোহেল মাত্র ছয় মাসের মাথায় সাউথ হোস্টেলের দখল নিয়ে নেয়। এক সময় যে হোস্টেল থেকে তাকে প্রচন্ড অপমানিত হয়েছিল। এখন সে সেই হোস্টেলটা চালায়।

সোহেল পুরো কলেজের উপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। সেই সাথে সোহেলের কুর্কমের পরিধিও বিস্তৃত হতে থাকে। আশেপাশের মার্কেটগুলো থেকে চাঁদাবাজিতো ছিলই। সাথে যোগ হয় মাদক ব্যবসা এবং ছিনতাইকারীদের সাথে যোগ সাজস। কলেজের আশেপাশের এলাকায় যত মাদক ব্যবসা হয় এবং ছিনতাই হয় তার একটা ভাগ সোহেল পেতে শুরু করে। এভাবে দেখতে দেখতে অল্প কিছুদিনের ভিতরেই সোহেলের ব্যাংক ব্যালেন্স বেশ ফুলে ফেঁপে ওঠে। সোহেলের এই হঠাৎ উত্থান অবশ্য অনেকেরই ভালো লাগেনা। কারণ সোহেল এখন প্রায় কাউকেই গুনতে চায় না। সে নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করে। এই জন্য সে স্থানীয় এক নেতার চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়।

সেই নেতা মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকে যেভাবেই হোক সোহেলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কারণ আগে এলাকার সমস্ত রকম কালো ব্যবসার উপর সেই নেতার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। এখন সোহেল সেখানে এসে ভাগ বসিয়েছে। এটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। তাই সেই নেতা সোহেলের বিরোধী গ্রুপের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। সোহেল বুঝতেও পারে না তার অগোচরে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। সোহেল যেখানেই যায় সাথে বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী ছেলেপেলে থাকে। শুধু একটি জায়গায় যাওয়ার সময় সে সাথে কাউকে নেয় না। সোহেলের একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক হয়েছে। সেই মেয়ের সঙ্গে যখন সোহেল দেখা করতে যায় তখন সোহেল সম্পূর্ণ একা থাকে।

সোহেলের বিরোধী দলের ছেলেরা খোঁজখবর নিয়ে এই তথ্য বের করতে পেরেছে। তাছাড়া সোহেল কোন সময় কি বারে মেয়েটির সাথে দেখা করতে যায়। এটাও তারা খুঁজে বের করেছে। শেষ পর্যন্ত সোহেলের বিরোধীদলের ছেলেরা পরিকল্পনা ফাইনাল করে। সোহেল যখন মেয়েটির সাথে দেখা করতে আসবে তখন পথের মধ্যে তাকে আক্রমণ করা হবে। সেই নেতার পরিস্কার নির্দেশ সোহেলকে মাথায় গুলি করে জায়গার উপর শেষ করে দিতে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সোহেলের বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন ছেলে অস্ত্র নিয়ে সোহেলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। যেখানে সোহেল মেয়েটির সাথে দেখা করতে আসে সেখানে।

সোহেল সাধারণত সেখানে আসে একটি মোটরসাইকেলে করে। সোহেলের বিরোধী দলের ছেলেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে সোহেলের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা বারবার ঘড়ি দেখছিল যে সোহেলের আসার সময় হয়েছে কিনা। হঠাৎ করে একজন ইশারা দিল ওই যে আসছে। সাথে সাথেই সবাই প্রস্তুত হয়ে গেলো। কিন্তু সবাই রাস্তার দুপাশে এমন ভাবে দাঁড়িয়েছিল মনে হচ্ছিল সবাই আলাদা আলাদা কাজে এসেছে। সোহেল দীর্ঘদিন এই লাইনে থাকার কারণে তার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। যার ফলে সে একটু দূরে থাকতেই বেশ কিছু ছেলেকে রাস্তায় দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হল। সোহেল ছেলেগুলো দেখে একটু দূরে থাকতেই তার মোটরসাইকেল থামালো।

সোহেলের মোটরসাইকেল থামানো দেখে ছেলেগুলো তখন বুঝতে পারছিল না কি করবে। তখন হঠাৎ করে কয়েকটি ছেলে সোহেলের উদ্দেশ্যে দৌড় দিল। ততক্ষণে পিস্তল তাদের হাতে চলে এসেছে। তারা সোহেলকে উদ্দেশ্য করে গুলি করছিল আর দৌড়াচ্ছিল। তাদের দৌড়ানো দেখে সোহেলও মাজা থেকে পিস্তল বের করে তাদের দিকে গুলি ছুড়ছিলো। সোহেলের গুলিতে বিপক্ষ দলের দুজন সাথে সাথে ধরাশায়ী হয়। এর ভেতরে সোহেলের গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় সোহেল ঘুরে দৌড় দেয়। সে বারবার পেছন ফিরে দেখছিল তারা আর আসছে কিনা।

এভাবে যখন সে দৌড়াচ্ছিল তখন বিপরীত দিক থেকে একটি গাড়ি এসে তার গায়ের উপর উঠিয়ে দিলো। সোহেল রক্তে রঞ্জিত হয়ে রাস্তার উপর পড়ে রইল। যে গাড়িটি সোহেলকে চাপা দিয়েছে সেই গাড়িটি কিছুদূর এগিয়ে থেমে যায়। তারপর গাড়িটি থেকে চারজন লোক নেমে আসে। তারা সোহেলের কাছে এসে দেখে সোহেল তখনো জীবিত রয়েছে। একটু একটু নাড়াচড়া করছে। তখন সেই চারজনের ভেতর দুজন মাজা থেকে পিস্তল বের করে সোহেলের বুক এবং মাথা বরাবর কয়েক রাউন্ড গুলি করে। সোহেলের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা সেখান থেকে চলে যায়। এভাবেই গ্রাম থেকে উঠে আসা নিরীহ মেধাবী সোহেলের পরিসমাপ্তি হয়। এমন হাজারো সোহেল প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে শুধুমাত্র এই নষ্ট ছাত্র রাজনীতির জন্য। (সমাপ্ত)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

 2 years ago 

শেষ পর্বের ঘটনাটা খুবই বেদনাদায়ক ছিল। কোথায় আছে, লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।
আপনার এই গল্পটির প্রত্যেকটা পর্বই বেশ চমৎকার ছিল। সুন্দর এবং সময়োপযোগী পোস্টটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমার বাংলা ব্লগে আপনার ব্লগিং জার্নি শুভ হোক এটাই কাম্য করি।

 2 years ago 

সোহেলের মত শত শত ছাএ আছে বাংলাদেশে। এরা কিন্তু মেধাবী। এদের কী এই পথে আসার কথা ছিল। কী কারণে কোনো সংগঠন বা রাজনৈতিক দল তাদের এই পর্যায়ে নিয়ে আসলো। এইরকম অসংখ্য ঘটনা আছে। সেজন্য আমি মনে করি ছাএরাজনীতির কোনো দরকার নাই। এরা শুধু ক্ষমতা বিস্তার করে ছাএদের র‍্যাগিং করা ছাড়া আর কোনো কাজ করে না কলেজে।। অনেক সুন্দর এবং শিক্ষনীয় গল্প ছিল।।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া,,, ঠিক এভাবেই গ্রাম থেকে উঠে আসা নিরীহ মেধাবী সোহেলের পরিসমাপ্তি হয়। এমন হাজারো সোহেল প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে আমাদের দেশে শুধুমাত্র এই নষ্ট ছাত্র রাজনীতির জন্য। আসলে ছাত্ররাজনীতি না থাকাই উত্তম ছিল।♥

 2 years ago 

আসলে আমাদের দেশে এখন প্রায় হাজার হাজার ছেলেরা সোহেলের মত। আমি মনে করি এরকম ছেলেদের রাজনৈতিক বিষয়ে জড়ানো একদমই উচিত নয়। কারণ তাদের তো তখন শুধুমাত্র পড়ালেখায় মনোযোগ দেওয়া উচিত। এটা না করে এই সব কিছু জড়ানোর কারণে সোহেলের জীবনে আজ এই দুর্ঘটনা। এমনকি মৃত্যু পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল।

 2 years ago 

কথায় আছে একটি ছেলের উত্থানের পেছনে যেমন একটি মেয়ের হাত থাকে। ঠিক তেমনি তার পতনের মধ্যেও একটি মেয় জড়িয়ে থাকে। এক্ষেত্র সোহেলের প্রেমিকা মেয়েটি সরাসরি জড়িত না হলেও তার সাথে দেখা করার সময়টাকে কেন্দ্র করে তারা পরিকল্পনা সাজিয়েছিল। তাই পরোক্ষভাবে এখানে ও মেয়েটি জড়িয়ে আছে। যাইহোক ভাইয়া আসল কোথায় আসি, ছাত্র রাজনীতি আসলেই আমাদের সমাজের জন্য একটা অভিশাপ। এর কারণে সোহেলের মত নিরীহ মেধাবী অনেক স্টুডেন্ট যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এভাবেই থমকে যায়। নষ্ট ছাত্র রাজনীতি যদি এখনও বন্ধ করা যায় তাহলে হয়তো আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ভালো হতে পারে।

 2 years ago 

ভাই আপনার লেখা ছাত্র রাজনীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত জীবন গল্পের শেষ পড়বে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ও পুরুষ ছাত্রদের জীবনা বাসনের এর পরিণতি খুবই নিপুন ভাবে বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। সত্যি তাই বর্তমানে এইভাবে অসংখ্য শরীরের সৃষ্টি হচ্ছে আবার তারা ছাত্র রাজনীতির রোষান ওরে পরে জীবনটাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.20
JST 0.034
BTC 99357.59
ETH 3318.45
USDT 1.00
SBD 3.07