বন্ধুর সাথে দুর্গম পদ্মার চরে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


যাইহোক শেষ পর্যন্ত চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে ট্রলারে উঠে বসলাম। তবে ট্রলারে উঠার পরে বুঝতে পারলাম এই জার্নিটা মোটেও উপভোগ্য হবে না। কারণ ট্রলারে বসার সাথেই মনে হচ্ছিল রোদের তাপে গা পুড়ে যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখলাম ট্রলারে অন্য যে সমস্ত যাত্রি উঠেছে তারা সবাই প্রায় সাথে করে ছাতা নিয়ে এসেছে। বুঝতে পারলাম এরা হচ্ছে সত্যিকারের চরের অধিবাসী। তারা প্রতিনিয়ত এইভাবে যাতায়াত করে অভ্যস্ত। সেজন্যই সাথে করে ছাতা এনেছে।

IMG_20220816_095635.jpg

চরে যাওয়ার এই ট্রলার গুলি দেখলে কিছুটা অবাক হতে হয়। কারণ এখানে গবাদি পশু থেকে শুরু করে এলইডি টেলিভিশন সবকিছুই দেখতে পেলাম। মানুষজন শহর থেকে কিনে নিয়ে গ্রামের দিকে যাচ্ছে। এই ট্রলারগুলো হচ্ছে তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এবং পণ্য পরিবহনের জন্যও তারা এই ট্রলারের উপরে নির্ভরশীল। সপ্তাহে একবার চরের লোকজন শহরে আসে সমস্ত মালামাল কিনে নেয়ার জন্য। সমস্ত মালামাল কেনা হলে তারা ট্রলারে করে আবার চরে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। এভাবেই তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে।

IMG_20220816_100406.jpg

সে যাই হোক আমরা উঠে বসার কিছুক্ষণ পরেই ট্রলার চলতে শুরু করলো। কিন্তু রোদের তাপে টিকতে না পেরে আমি সাথে করে ছোট্ট একটি ব্যাগ নিয়েছিলাম। সেই ব্যাগ থেকে গামছা বের করে মাথায় দিয়ে রাখলাম রোদ থেকে মাথা বাঁচানোর জন্য। মাথা ঢাকার কারণে কিছুটা হলেও রোদ থেকে বাঁচতে পারছিলাম। আমি বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম যে আকাশের কি অবস্থা। আর মনে মনে দোয়া করছিলাম এখনই যেন সূর্যটা মেঘে ঢেকে যায়। তাহলে এ রোদের হাত থেকে মুক্তি পাবো। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় আমার মনের আকুতি শুনতে পেলেন। কিছুক্ষণ চলার পরেই দেখলাম রোদের তেজ অনেকটা কমে এসেছে। উপরে তাকিয়ে দেখি সূর্য মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে। কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

IMG_20220816_101045.jpg

তবে চিন্তা করছিলাম যে কতক্ষণ মেঘ সূর্যকে ঢেকে রাখতে পারবে। তবে যতক্ষণ মেঘ সূর্যটাকে ঢেকে রেখেছিল ততক্ষণ যাত্রাটা উপভোগ করেছি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই তার পাশের লোকজনের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবাই গল্প করছে। এদিকে পদ্মার বুক চিরে আমাদের ট্রলার ছুটে চলেছে। কিছুক্ষণ শাখা নদীতে চলার পর ট্রলারটি মূল পদ্মায় এসে ঢুকলো। কিন্তু আমি নদীর পানির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। একদম শান্ত নিষ্করঙ্গ দেখা যাচ্ছে নদীকে। আমি মূল পদ্মা নদীকে কখনো এতটা শান্ত দেখিনি। আমি শুধু মনে মনে দোয়া করছিলাম যেন এই অবস্থাতেই আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারি।

IMG_20220816_103901.jpg

IMG_20220816_103723.jpg

যদিও আমাদের গন্তব্য পুরোপুরি ঠিক করতে পারছিলাম না। আমরা একবার ঠিক করেছিলাম এই ট্রলার যতদূর যায় আমরা সেই পর্যন্ত যাবো। পরে মত পাল্টে সিদ্ধান্ত নিলাম যদি আকাশের সূর্যের তাপ বেশি থাকে। তাহলে আমরা সামনে মন্ত্রী বাড়ির ঘাট নামে একটি জায়গা আছে। সেখানে নেমে যাবো। আর যদি আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে আমরা শেষ সীমানা পর্যন্ত যাবো। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পর সূর্য আবার মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো তার প্রখর তাপ সহ। সে তাপে মনে হয় চারপাশে আগুন ধরে যাচ্ছিল। প্রত্যেকে কোন না কোন কিছু আড়ালে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছিলো।

IMG_20220816_102913.jpg

আকাশের এই অবস্থা দেখে আমরা ঠিক করলাম সামনে যে ঘাটে ট্রলার দাঁড়াবে আমরা সেখানেই নেমে যাবো। কিন্তু পথ আর কিছুতেই ফুরায় না। যে রাস্তাটুকু আমি মনে করেছিলাম ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগবে যেতে সেখানে পৌঁছতে আমাদের প্রায় এক ঘন্টা সময় লেগে গেলো। এই এক ঘন্টা সময়ের বেশিরভাগ সময়টাই আমরা সূর্যের তাপে পুড়ছিলাম। যাইহোক শেষ পর্যন্ত একটি ঘাটে ট্রলার থামলো। কিন্তু আমরা তার আগেই শেষ সীমানায় যাওয়ার ভাড়া চুকিয়ে দিয়েছি। যখন আমরা ট্রলার থেকে নামতে গেলাম তখন ট্রলারের মাঝিকে বললাম তাহলে আমাদের টাকা ফেরত দিন। কিন্তু তিনি আমাদেরকে জানালেন আপনি যেখানেই যান একই ভাড়া। এখানে নামলেও আপনাকে যে ভাড়া দিতে হবে একদম এই ট্রলারের শেষ সীমানা পর্যন্ত গেলেও আপনাকে সেই একই ভাড়া দিতে হবে। শুনে কিছুটা অবাক হলাম। মনে মনে চিন্তা করলাম ভাড়া হবে দূরত্ব অনুযায়ী। কিন্তু এ কেমন সিস্টেম? যাই হোক কিছুই করার নেই। কারণ যেহেতু তারা এই নিয়মটা চালু করেছে এবং সবাই এটা মানছে। তাই আমাকেও এই নিয়ম মানতে হবে।

IMG_20220816_102920.jpg

ট্রলার থেকে তো আমরা নামলাম। কিন্তু নেমে যাবো কোথায়? যেদিকেই তাকাই চারপাশে সূর্যের প্রখর তাপ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। বড় তেমন কোন গাছের দেখাও পাচ্ছিনা এই চরে এসে। তাই আমরা দ্রুত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে হাঁটতে থাকলাম। সেই চরে একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ি আছে। আমরা সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখানে বেশ কিছু দারুন সময় কাটিয়েছি। সে গল্প অন্য আর একদিন হবে। সেই চরে আমরা বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম। সময়টা বেশ ভালই কেটেছে আমাদের।

IMG_20220816_122713.jpg

IMG_20220816_122658.jpg

তারপর আমরা দুপুরের দিকে ফিরতি ট্রলারে উঠে বসলাম শহরে ফেরার উদ্দেশ্যে। আসার সময় পুরোটা পথ রোদে পুড়তে পুড়তে আসতে হয়েছে। রোদের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে পুরোটা পথ আমি গামছা ভিজিয়ে সেই ভেজা গামছা দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছিলাম। রোদের তীব্রতায় আমার রীতিমতো মাথাব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছিলো। আমি এর আগেও অনেকবার এদিকে ট্রলার ভ্রমণ এসেছি। কিন্তু কখনো এমন বৈরী আবহাওয়ার সম্মুখীন হইনি। যাইহোক জীবনে সব ধরনের অভিজ্ঞতারই প্রয়োজন আছে। ফেরার সময় যখন ট্রলার থেকে শহরের কাছাকাছি গিয়ে নামতে পারলাম। তখন মনে হল কোন রকমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি। আর এই ধরনের বৈরী আবহাওয়া কখনো ট্রলারে না ওঠার সিদ্ধান্ত নিলাম মনে মনে। তারপর সোজা বাড়ি চলে এলাম।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানসিএনবি ঘাট

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

পদ্মার বুকে টলারে করে চড় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বেশ ভালই লাগলো। তবে বুঝতে পারলাম প্রচন্ড রোদে আপনাদের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো কিছুটা হলেও বিঘ্ন ঘটেছে। যাইহোক যাদের ছাতা ছিল তাদের সাথে রিকোয়েস্ট করে তাদের ছাতার নিচে বসে পড়তেন তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতেন। যাই হোক রোদে কিছুটা কষ্ট হলেও ভ্রমণের আনন্দটা কিন্তু অন্যরকম মজা। ভালো লাগলো অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

সবার সাথেই লোক ছিল। যার ফলে অন্যের ছাতার নিচে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

 2 years ago 

যারা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে তারা বুঝে খোলা নৌকায় ছাতার গুরুত্ব কত বেশি। এই তিব্র রোদের মধ্যে যদি শেষ সম্বল হিসেবে গামছা না থাকতো তাহলে বেশ অসুবিধায় পড়ে যেতেন। হ্যাঁ এটা আমিও দেখেছি চরের লোকজন সপ্তাহে একদিন শহরে এসে সব বাজার করে নিয়ে যায়। যাইহোক ভাইয়া রোদে পুড়ে কষ্ট করে অনেক মজার অভিজ্ঞতা গুলো ফটোগ্রাফি সহ আমাদের মধ্যে শেয়ার করেছেন। আমার কাছে কিন্তু ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুব ভালোই লেগেছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন। সাথে গামছা না থাকলে আসলেই অনেক বড় বিপদে পড়তাম।

 2 years ago 

কিছুদিন আগে আমিও এইরকম ছাদবিহীন নৌকায় ভ্রমণ করেছিলাম। তাই কিছুটা ধারণা আছে কিরকম কষ্ট হতে পারে।

 2 years ago 

দাদা আপনার সমস্ত পোষ্ট টি পড়লাম ৷পড়ে বুঝলাম অনেক সুন্দর একটি সময় পার করেছেন ৷বিশেষ করে ট্রলারে চড়তে অনেক ভালো লাগে ৷আমি সেই অনেক দিন আগে ট্রলারে চড়ে ছিলাম ৷কিন্তু দাদা আপনি একটা ভুল করছেন ৷আপনি ছাতা নেন নি কারন যে রোদ গরম তাতে তো আপনি মনে হয় ঘেমে গেছেন৷আর দেখলাম বাকি মানুষ গুলো তো সবাই ছাতা নিয়েছে ৷যদি ছাতা নিতেন তাহলে হয়তো একটু বেশি আনন্দ করতে পারতেন ৷যাই হোক ভালো ছিল৷আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু পেতে হলে কষ্টও করতে হয় ৷

 2 years ago 

এরপরে কখনো চরে গেলে সাথে অবশ্যই ছাতা নেবো।

 2 years ago 

পূর্বের দিনে পদ্মা নদীর পোস্ট করেছিলাম, বেশ ভালো লেগেছিল। আবার আজকেও আপনার সেই পোস্টের শেষ অংশ পেয়ে বেশ ভালো লাগলো। কারণ এ সমস্ত পোস্ট এর মধ্যে অনেক তথ্য থেকে থাকে। যার জন্য আমার পড়তেও বেশ ভালো লাগে। নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারি।

 2 years ago 

এই ধরনের পোস্ট করতে আমারও অনেক ভালো লাগে।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পদ্মার চড় ভ্রমণের ছবি গুলো খুব ভালো হয়েছে। আপনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে আমাদের কাছে বর্ণনাও শেয়ার করেছেন। তাই আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া

 2 years ago 

পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59452.12
ETH 2603.11
USDT 1.00
SBD 2.39