অনেকদিন পর ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


ছোটবেলা থেকেই আমি ক্রিকেট খেলতে এবং খেলা দেখতে খুব পছন্দ করি। আমার এখনো মনে আছে যখন স্কুলে পড়তাম তখন স্কুল থেকে এসেই ব্যাট বল নিয়ে এলাকার ছেলেদের সাথে মাঠে চলে যেতাম খেলতে। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বিকালের দিকে আরেক প্রস্থ খেলা হতো। সেই খেলা সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত চলত। আর ছুটির দিনে তো কথাই নেই। একদম সকাল থেকে শুরু হয়ে যেত আমাদের ক্রিকেট খেলার আয়োজন। কালেকালে এখন আর সেই ক্রিকেট খেলার সাথীদের প্রায় কেউই আশেপাশে নেই।

IMG_20230120_080749.jpg

যখন কলেজে পড়ি তখনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে প্রায়ই ক্রিকেট খেলা হত। অবশ্য আমার বেশিরভাগ বন্ধু বান্ধব ছিল অন্য এলাকার। তাই আমাকে ক্রিকেট খেলতে হলে অন্য এলাকায় গিয়ে খেলতে হতো। সেই খেলাতেও অনেক মজা হত। দিন বদলের সাথে সাথে কলেজ লাইফের সেসব বন্ধু-বান্ধবও হারিয়ে গিয়েছে। এখন মাঝে মাঝে চিন্তা করি আগে ক্রিকেট খেলা ছাড়া একটি দিনও থাকতে পারতাম না। আর এখন কতো বছর হয়ে গেল ব্যাট বল হাত দিয়ে ধরেও দেখা হয় না। গত কয়েকদিন যাবত যখন আছর নামাজ পড়ে বাসায় ফিরি। তখন দেখি আমার এক বন্ধু স্থানীয় দুই তিনটি ছেলের সাথে ছোট্ট একটা জায়গায় ক্রিকেট খেলছে। অনেকদিন পর একটু ব্যাট বল হাতে নেয়ার সুযোগ পেয়ে আমিও দু'চারটে বলে বাড়ি দিই।

IMG_20230120_080750.jpg

এভাবে দু-তিন দিন যাওয়ার পর হঠাৎ করে আমার সেই বন্ধু বলল। আমরা তো ইচ্ছা করলে সকালে খেলতেই পারি। প্রস্তাবটি আমি সাথে সাথেই লুফে নিলাম। কারণ আমাকে এমনিতেই প্রতিদিন সকালবেলা হাঁটতে বের হতে হয়। একা একা হাঁটতে আর ভালো লাগেনা। এই হাটাহাটির থেকে যদি কোন একটা খেলার মাধ্যমে শারীরিক পরিশ্রম করতে পারি তাহলে সেটা আমার জন্য দুই দিক থেকেই ভালো হয়। শারীরিক পরিশ্রমটাও হল আবার সেই সাথে মনের খোরাক জুটলো।

IMG_20230120_080731.jpg

তাই আমার সেই বন্ধু প্রস্তাব দেয়ার সাথে আমরা চিন্তা করতে লাগলাম কোথায় খেলতে যাব। আগের দিনে যেমন বাড়ির আশেপাশেই দু-চারটে মাঠ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন শহরাঞ্চলে মাঠ পাওয়া খুবই দুষ্কর। তাই আমরা বেশ খানিকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে আমাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটি মাদ্রাসার মাঠে খেলার কথা ঠিক করলাম। পরিকল্পনা করা হলো শুক্রবার সকাল সাতটার ভেতরে সবাই এক জায়গা মিলিত হবো। তারপর সবাই মিলে সেই মাদ্রাসার মাঠে যাবো ক্রিকেট খেলতে। অবশ্য সবাই বলতে লোক ছিলাম মাত্র ৫-৬ জন। আমরা দুই বন্ধু বাদে স্থানীয় মেসের কয়েকটি ছেলে।

IMG_20230120_081832.jpg

যাইহোক শুক্রবার সকালে নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরে আমরা সবাই এক জায়গায় একত্রিত হলাম। তারপর সবাই মিলে রওনা দিলাম সেই মাদ্রাসা মাঠের উদ্দেশ্যে। অবশ্য আমাদের কাছে খেলার সরঞ্জাম বলতে শুধু ছিল একটি ব্যাট আর বল। তাই মাদ্রাসার মাঠে পৌঁছে আমরা ভাবতে লাগলাম এখন স্ট্যাম্প বানাবো কি দিয়ে? তখনই মাথায় ছেলেবেলার বুদ্ধি চাপলো। সাথে থাকা ছেলেগুলিকে বললাম কয়েকটি ইট যোগাড় করতে। তারপর সে ইট একটির উপর আরেকটি সাজিয়ে আমরা স্টাম্প তৈরি। করলাম।

IMG_20230120_081011.jpg

যেহেতু আমরা লোকজন ছিলাম খুবই কম। তাই দুই দলে ভাগ করে না খেলে এক দুই সিরিয়াল করে খেলতে লাগলাম। আমি যখন খেলতে নামলাম তখন চিন্তা করতে লাগলাম শেষ কবে ব্যাট হাতে নিয়েছি? চিন্তা ভাবনা করতে করতে পাঁচ ছয় বছর পেছনে চলে গেলাম। মনে হলো শেষ খেলেছি সম্ভবত ৫-৬ বছর আগে। তাই এতদিন পর ব্যাট বল কোনটাই ভালোমতো ধরতে পারছিলাম না। অনেকদিন পর খেলতে নেমেছি এই জন্য আর বোলিংয়ের ঝামেলায় গেলাম না। কারণ দীর্ঘদিন পর খেলতে নেমে বোলিং করতে গেলে হাতে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে। আমার সিরিয়াল হয়েছিল ৪। আমাদের সেখানে খেলার নিয়ম ছিল একজন ব্যাটসম্যান তিন ওভার করে ব্যাটিং করতে পারবে। সেই তিন ওভারে যে যত রান করতে পারে। তবে যেহেতু লোকজন কম ছিলাম তাই আমরা নিয়ম করেছিলাম উঁচু দিয়ে মারলে আউট। সেজন্য সবার চেষ্টা ছিল গ্রাউন্ড শট খেলার দিকে।

যাইহোক খেলা শুরুতেই হঠাৎ করে একটি বল আমার দিকে ক্যাচ চলে এলো। আমি কোন কিছু না বুঝে হাত বাড়াতে বলটা হাতের ভেতরে জমে গেলো। বলটা ছিল টেপ টেনিস বল। কিন্তুু বলে টেপের পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে আমি ক্যাচ ধরার পর হাতে রীতিমতো ব্যথা করতে লাগলো। বুঝতে পারলাম অনেকদিন প্র্যাকটিস না থাকার ফলে এমনটা হয়েছে। না হলে যে ক্যাচটা আমি ধরেছি সেটা খুবই সহজ ক্যাচ। এভাবে খেলতে খেলতে এক সময় আমার সিরিয়াল চলে এলো। ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ চিন্তিত ছিলাম। কারণ দীর্ঘদিন হলো ক্রিকেট খেলা হয় না। ব্যাটিং আদৌ করতে পারব কিনা বুঝতে পারছিলাম না। তবে দু একটি বল খেলার পরে দেখলাম শরীরটা মানিয়ে নিতে পেরেছি।

শেষ পর্যন্ত তিন ওভার ব্যাটিং করে আমি বারো রান করতে সমর্থ হয়েছিলাম। আমাদের টোটাল ছয় জনের ভেতরে সর্বোচ্চ স্কোরার যে হয়েছিল সে করেছিল ১৩ রান। সেই হিসাবে রান করার দিক দিয়ে আমি হয়েছিলাম দ্বিতীয়। প্রথমবার খেলা শেষ হওয়ার পর আমরা দেখলাম হাতে আরো অনেকটা সময় বাকি আছে। তখন আমরা দ্বিতীয়বার আবার একইভাবে খেলা শুরু করলাম। এই খেলা শেষ হতে হতে প্রায় বেলা সাড়ে নটা বেজে গেল। তারপর সকলে ক্লান্ত অবস্থায় মনে তৃপ্তি নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরতে লাগলাম। ফেরার সময় পরিকল্পনা করতে লাগলাম এরপর থেকে মাঝে মাঝে খেলতে হবে। পরিকল্পনাটা শুনে তো আমি খুবই খুশি।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানআলিপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 last year 

সময়ের সাথে সাথে সবাই হারিয়ে গেছে। তাই হয়তো পুরনো সময় গুলো ফিরে আসবে না। হয়তো স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে মনে পড়বে। তবে এভাবে ক্রিকেট খেলার উদ্যোগটি ভালো লেগেছে আমার। একদিকে শরীরের ব্যায়াম হবে অন্যদিকে আনন্দ পাওয়া যাবে। ইট দিয়ে স্ট্যাম্প তৈরির আইডিয়া আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। অনেকদিন পর বল ক্যাচ ধরেছেন তাই তো হাতে ব্যাথা লেগেছে। আশা করছি এরপর কখনো খেললে ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার অভিজ্ঞতা জেনে।

 last year 

ছোট বেলায় দেখতাম ভাইয়া কে এমন ইট দিয়ে স্ট্যাম্প বানাবো😄।আসলে অনেক দিন পর ক্রিকেট খেললে পুরো শরীর ব্যথা করে।হাত ব্যথা হোক আর যাই হোক ক্যাচ যে ধরতে পেরেছেন তাই অনেক😜।যাক অনেক দিন পর বেশ ভালোই ব্যায়াম হলো।ধন্যবাদ

 last year 

গ্রাউন্ট শর্ট খেলার মজাই আলাদা ৷ কারন যে এই এই শর্ট বিচ খেলতে পারবে সে বড় মাঠেও খেলতে পারবে ৷ আর বেশি জন না থাকলে শর্ট খেলায় অনেক ভালো মজা লাগে ৷ যা হোক আপনি দীর্ঘদিন পর ক্রিকেট খেলেছেন৷ তবে ভাই এখন তো সময়ের স্রোতে সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে ৷ আমিও ক্রিকেট খেলতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি ৷
ভালো লাগলো ছয়জন মিলে বেশ ভালোই খেলেছেন ৷ আর এতো দিন পরেও যে দ্বিতীয় পজিশনে ব্যাট পেয়েছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো ৷

 last year 

ব্যায়াম করার আইডিয়াটি মন্দ নয় কিন্তু। ছেলেবেলার বন্ধু আর খেলা খুজে পাওয়া বড়ই মুশকিল। তবে আপনাদের কে আপনাদের আইডিয়াকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কিছুটা ব্রেন খরচ করতে হয়েছে। আগে দেখতাম ইট দিয়ে এভাবে স্ট্যাম্প বানানো হত। যাক বুঝা যাচেছ আপনি ছেলেবেলায় অনেক পাকা খেলোয়ার ছিলেন। না হয় একটু ব্যাথা পেয়েছেন ।

 last year 

ছেলেবেলায় আমার ভাইয়ারা ইট দিয়ে স্ট্যাম্প বানিয়ে খেলতো তখন ক্রিকেট তেমন বুঝতো না তারপরেও। আমার দেখতে খুব ভাল লাগতো।পুরোনো সেই দিন আর ফিরে আসবে না।আপনি বল ক্যাচ ধরতে গিয়ে বেশ ব্যথা পেলেন।বলটা টেপ টেনিস বল ছিল। অনেক দিন পর খেলেছেন তাই একটু সমস্যা হবে, প্রতিদিন খেললে অভ্যাস হয়ে যাবে। অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। পড়ে ভাল লাগলো।

 last year 

ওহ এই তাহলে বিকেলে বের না হতে চাইবার কারন। আমিও ক্রিকেট খেলিনা অনেকদিন। একটু কাছাকাছি হলে চলে আসতাম। সবাই মিলে ক্রিকেট খেলা হয়না অনেকদিন।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.11
JST 0.033
BTC 63594.33
ETH 3039.42
USDT 1.00
SBD 4.10