বৈচিত্র্যময় শৈশব এবং শিক্ষা জীবন (তৃতীয় পর্ব)।
খুলনা গিয়েছিলাম আমি আর আমার বড় ভাই দুজন একসাথে। আমি খুলনা যেতে মোটেও রাজি না থাকলেও। আমার বড় ভাই আবার নিজ গরজে খুলনা গিয়েছিল পড়ালেখা করার জন্য। বড় ভাই সাথে থাকায় কিছুটা ভালো লাগছিল। খুলনা গিয়ে বেশ কাঠ খড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সেই স্কুলে ভর্তি হতে সক্ষম হলাম। আমি থাকতাম আমার ফুফুর বাসায়। আর বড় ভাই থাকতো স্কুল হোস্টেলে। এই স্কুলের ডিসিপ্লিন ছিল একদম হুবহু ক্যাডেট কলেজের মত।
প্রথম প্রথম এত কঠোর নিয়ম কানুন দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে আস্তে আস্তে সেই নিয়মগুলির সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। খুলনায় পৌঁছে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম আমার ফুফাতো ভাইকে। সে বয়সে আমার থেকে তিন মাসের বড়ো ছিলো। সে আবার খুবই পড়ুয়া ছাত্র ছিলো। বর্তমানে সে পেশায় একজন ডাক্তার। যাই হোক স্কুলে ভর্তি হয়ে দিনকাল মোটামুটি ভালোই কাটতে লাগলো কিন্তু আমি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত আমার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদেরকে মিস করতাম।
খুলনা শহরটি বেশ ভালই ছিলো। বিভাগীয় শহর হলেও খুবই নিরিবিলি ছিল শহরটি। আমার কাছে কেন জানি সব সময় খুলনা শহরের মানুষজনকে খুব সিরিয়াস ধরনের মানুষ মনে হতো। সবাই কে মনে হতো তার নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। আমি এতদিন যে শহরে বড় হয়েছি সেখানকার সাথে খুলনা শহরের বেশপার্থক্য দেখতে পেলাম। আমি আর আমার ফুফাতো ভাই সব সময় একসাথে সময় কাটালেও স্কুলে আমরা দুজন দুই ক্লাসে ছিলাম। কারণ সে আমার থেকে এক ক্লাস উপরে পড়তো। সংগী হিসাবে সে আমার খুব একটা মনোপূত ছিল না। কারণ সে সব সময় পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। আর আমি ছিলাম সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী একজন মানুষ।
খুলনায় থাকা কালিন সময় আমি শুধু দিন গুনতাম যে কখন স্কুল ছুটি হবে। আর কখন আমি আবার আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবো। আমরা দুই ভাই যেহেতু একই সাথে স্কুলে যাওয়া আসা করতাম। তাই আমার আলাদা করে অন্য কোথাও যাওয়ার তেমন একটা সুযোগ ছিল না। কিন্তু একবার কোন একটি কারণে আমি খুলনা পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম আমার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে। লাইব্রেরীটি দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছিলো। আমি মোটামুটি ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই পড়তে ভালোবাসতাম। আর খুলনা পাবলিক লাইব্রেরির বাচ্চাদের জন্য বই পড়ার যে আয়োজন ছিল সেটা দেখে আমার কাছে সবচাইতে বেশি ভালো লেগেছিলো।
সেই ভাললাগা থেকেই একদিন এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলাম। কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে আমি চলে গেলাম খুলনা পাবলিক লাইব্রেরীতে। এর আগে যখন সেখানে গিয়েছি তখন সেখানে আমি টিনটিনের কমিকস দেখে এসেছিলাম। তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সময় পেলে একদিন এখানে এসে কমিকস পড়তে হবে। তাই সুযোগ পাওয়া মাত্রই একদিন পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সকাল থেকে প্রায় বিকাল পর্যন্ত টানা আমি টিনটিনের কমিকস পড়েছিলাম। কিন্তু তখন বয়স কম থাকার কারণে এই ব্যাপারটা আমার মোটেও মাথায় আসেনি যে আমার ফুফা ফুফু কি পরিমান দুশ্চিন্তায় পড়বে। পরে বিকালে যখন বাসায় এসেছিলাম তখন বেশ বকুনি খেতে হয়েছিল।
আমার ফুফু চিন্তায় অস্থির হয়ে গিয়েছিল। সে চিন্তা করছিল যদি ভাতিজা এভাবে হারিয়ে যায় তাহলে আমার বাবার কাছে সে কি জবাব দেবে। যাই হোক আমি সেখান থেকে ফিরে আসার পর আমাকে বেশ অনেকটা সময় ধরে বুঝিয়ে ছিল যেন আর কখনো এই ধরনের কাজ না করি। বিকাল হলে আমি অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে যেতাম। কিন্তু আমার ফুফাতো ভাইয়ের খেলাধুলার প্রতি খুব একটা আগ্রহ ছিল না। তবুও মাঝে মাঝে আমার সাথে যেতো।
একদিন খেলতে গিয়ে এক ভয়ঙ্কর ঘটনার শিকার হলাম। আমরা যেই মাঠে খেলতাম ঠিক পাশেই ছিল এটি নবনির্মিত প্রাইমারি স্কুল। সেখান থেকে হঠাৎ করে একটি কুকুর আমাকে তাড়া করতে শুরু করল। কি কারণে তাড়া করেছিল এটা আমার ঠিক মনে নেই। তবে আমার এটুকু মনে আছে আমি সেদিন প্রাণপণে দৌড়ে সোজা ফুফুর বাড়িতে এসে উঠেছিলাম। বাড়িতে ঢুকেই গেটটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং এই দীর্ঘ পথ কুকুরটি আমার পিছু পিছু তাড়া করেছিলো। আমার এখনো সেই দিনের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে পড়ে। এতটা পথ আমি কিভাবে কুকুরের কামড় না খেয়ে দৌড়েছিলাম এখনো চিন্তা করলে অবাক হয়ে যায়। (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আসলে সত্যি বলতে মানুষের জীবনে এমন কিছু সময় থাকে যেই সময় টা অনেক কষ্টের হয় তবে বড় হওয়ার পর যখন মনে হয় তখন ভাবি যা হয়েছিল ভালোই হয়েছিল। আমি ছোটবেলা কখনো পড়ার জন্যে দূরে কোথাও থাকিনি ,তবে সত্যি বলতে সেই সময়টা আসলেই কষ্টকর ,হাহাহা শেষের কথা শুনে হাসি চলে আসলো।
সেই ছোট্ট বয়সে পরিবার পরিজন ছেড়ে দূরে থাকা যে কি পরিমান কষ্টকর। এটা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউই বুঝতে পারবে না।
কিছু কিছু সময় জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যে, বাধ্য হয়েই সেই পরিবেশের সাথে জীবনকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। লাইব্রেরী তো জ্ঞানের রাজ্য, লাইব্রেরীতে গিয়ে যদি শুধু বইয়ের নামও দেখা যায় তাও মনের ভেতরে অনেক ভালো লাগে। আপনি টিনটিনের কমিকস অনেক ছোটবেলায় পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। কুকুরের তাড়া আমিও খেয়েছি তবে জীবন আর নিজের ভেতরে থাকে না। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।
টিনটিনের কমিক্স পড়ার সেই দিন টা আমার এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে। ভালোই লাগে।
আসলে বই পড়ার প্রতি আপনার নেশাটা বেশ ভালো। আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।