দুঃস্বপ্ন থেকে জাগরণ (ছোট গল্প)। ১০% সাই-ফক্স।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


তারেক ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নটা দশ বাজে। সাড়ে নটায় তার পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলো সকাল আটটায়। কিন্তু কেনো যে এলার্ম বাজে নি সেটা সে বুঝতে পারলো না। খাট থেকে লাফ দিয়ে নেমে সে দৌড়ে বাথরুমে চলে গেলো। কোনরকমে ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে তারেক জামাকাপড় পরতে লাগলো।

Polish_20220522_182726948.jpg

এর ভিতর ওর মা ওকে নাস্তা করতে ডাকলো। তারেক বললো লাগলো নাস্তা করার সময় নেই মা। একটু পরে পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। এই কথা বলে দ্রুত পরীক্ষার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছাতে লাগলো। কিন্তু গোছাতে গিয়ে খেয়াল করে দেখে এডমিট কার্ডটা খুঁজে পাচ্ছেনা। এটা ছাড়াতো তাকে পরীক্ষা হলে ঢুকতে দেবেনা। তাড়াহুড়া করে তারেক এডমিট কার্ড খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ করে দেখে একটা বইয়ের নিচে সাদা একটা কাগজ ভাঁজ করা দেখে সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এডমিট কার্ড মনে করে তারেক কাগজটা ভাঁজ করে পকেটে ভরে নিলো।

তারপর দ্রুত মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। ইতিমধ্যে নটা বিশ বেজে গিয়েছে। আর দশ মিনিটের ভেতর তাকে স্কুলে পৌঁছাতে হবে। এখন ইঞ্জিন চালিত রিক্সাই ভরসা। স্কুল থেকে তার বাসা খুব একটা দূরে নয়। একটা ইঞ্জিন চালিত রিক্সা পেলে ঠিক সময় মতে পৌঁছে যেতে পারবে। কিন্তু তারেক রাস্তায় পৌঁছে দেখে একটা রিক্সাও নেই। মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হলো তার। তারেক খেয়াল করে দেখেছে যখনি কোথাও জরুরি ভাবে যাওয়ার দরকার হয় তখন কোনো যানবাহন খুঁজে পাওয়া যায় না।

দু এক মিনিটে রিক্সার জন্য দেরি করে দ্রুত হেঁটে আগাতে লাগলো। আর বারবার পিছন ফিরে দেখতে লাগল কোন রিকশা আসে কিনা। এভাবে মিনিট পাঁচেক পর একটি খালি রিকশা দেখতে পেলো সে। তারেক কোন কথা না বলেই লাফ দিয়ে রিক্সায় উঠে বসলো। রিক্সা চালককে বললো জেলা স্কুলে চলো। রিক্সাওয়ালা যতদ্রুত সম্ভব তার রিক্সাটি চালাতে লাগলো। তার পরেও তারেকের স্কুলে পৌঁছতে ৯ঃ৩৫ বেজে গেলো।

ইতিমধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। তারেক দৌড়ে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করতে গেলে একজন শিক্ষক তাকে প্রথমে এডমিট কার্ড দেখাতে বললো। তারেক পকেট থেকে সেই কাগজটি বের করে শিক্ষকের কাছে দিলো। শিক্ষক কাগজটি হাতে পাওয়ার পর বিরক্তিভরে তারিখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারেক বলল কী হয়েছে স্যার? তার শিক্ষক তাকে বলল এটা তুমি কি দিয়েছো? তারেক তাকিয়ে দেখে এটা তার আগের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র।

তারেকের মেরুদন্ড দিয়ে একটি হিমশীতল স্রোত বয়ে গেলো। তারেক তার শিক্ষককে বেশ অনুনয়-বিনয় করলো তাকে পরীক্ষা দিতে দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল হয়ে রইলেন। তিনি বার বার তারেককে একই কথা বলছেন। এডমিট কার্ড না আনলে তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে না। এভাবে আরো বেশ কিছুক্ষন কেটে গেলো। তারপর তারেক দৌড়ে স্কুল থেকে বের হয়ে আসলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোন রিক্সা নেই। সে দ্রুত দৌড়াতে শুরু করলো বাড়ির দিকে। এত জোরে দৌড়াচ্ছে কিন্তু পথ ফুরাচ্ছে না তার। তারেক বারবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে। যখন বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছলো তখন হঠাৎ করে সে একটা কিছুতে বেধে পড়ে গেলো। সে জোরে একটা ঝাকি খেলো।

চোখ খুলে সে দেখে তার মা তাকে ধাক্কা দিচ্ছে ঘুম থেকে ওঠার জন্য। তারেকের মা বললো কিরে ঘুম থেকে উঠবি না? তোর না আর কিছুক্ষণ পর পরীক্ষা? তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাস্তা করে নে। তারেক দেখলো তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে। সে বুঝতে পারলো এতক্ষণ তাহলে সে স্বপ্ন দেখছিলো। স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে এসে সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। (সমাপ্ত)

Sort:  
 3 years ago 

ভাইয়া, আপনার লেখা ছোট গল্পটি আমি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি খুবই ভালো লেগেছে গল্পটি পড়ে। তবে ভাইয়া, গল্পটির ভিতরে কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে যেমন আমরা কোথাও যাওয়ার আগে অথবা কোন কিছু করার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখার দরকার না হলে এই তারেকের মতো আমাদের অবস্থা হতে পারে। এ শিক্ষনীয় বিষয় গুলো আমাদের খুবই জরুরী জেনে রাখা। হোক ভাইয়া,তারেক এটা স্বপ্ন দেখেছে বাস্তব হলে তার পরিণতি টা খুবই খারাপ হতো। ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দর একটি ছোট গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।।

 3 years ago 

আসলে এরকম দুঃস্বপ্ন আমাদের সবাইকে তাড়া করে বেড়ায়। ছোটবেলায় পরীক্ষার আগে আমারও মনে হতো আজ কিছু ছেড়ে যাবো। কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কিছু বলার আগে মনে হয়, হয়তোবা যা বলা লাগবে সবকিছুই ভুলে যাবো।
এজন্য আমাদের উচিত সময় থাকতেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নেয়া। আপনার লেখা ছোট গল্পটি খুব ভালো লাগলো পড়ে। শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

 3 years ago (edited)

আপনি যে মনোযোগ দিয়ে পুরো গল্পটি পড়েছেন সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আসলে ভাই পরীক্ষার সময় অনেক স্ট্রেচ থাকে তো তাই এমন হয়।আমার সাথেও এমন হয়েছে বহুতবার।আর মায়ের মত একজন সুপারম্যান থাকতে পরীক্ষায় লেট হওয়ার কোনো দুশ্চিন্তায় নেই।

তবে আমার আর আর বন্ধু সাগর আমাদের দুইজনের সাথে এমন ঘটেছিল।ফাইনাল পরীক্ষায় পাক্কা 1 ঘন্টা পরে গিয়েছিলাম😆।

সর্বনাশ বলেন কি? এক ঘণ্টা পরে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন কিভাবে?

 3 years ago 

ঢুকতে তো দেয় না, পরে অনেক এক্সকিউজ বানায় ঢুকতে হয়েছিল।ওরা সন্দেহ করেছিল আমি প্রশ্নপত্র পেয়েছিলাম। পরে ডিপার্টমেন্ট হেড কে ডাকায় নিয়ে আসছি, উনি পারমিশন দিছে তারপর ঢুকতে পারছি।😁

 3 years ago 

অসাধারণ গল্প ভাইয়া।আমি তো গল্পটি পড়ে ভেবেছিলাম সত্যিই বেচারা পরীক্ষা দিতে পারবে না।কিন্তু সেটি শুধুই স্বপ্ন ছিল শেষটা কিছুটা খারাপ লাগতে লাগতে ভালো লাগলো।এইরকম দুঃস্বপ্ন মাঝে মাঝেই আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে দেয় আর চিন্তায় ফেলে দেয়।যাইহোক ধন্যবাদ ভাইয়া।

গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিদি। তবে একটা কথা ঠিক বলেছেন। এই ধরনের দুঃস্বপ্ন আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে দেয়।

 3 years ago 

এই কাহিনীটি যদি সত্যি হয়। তাহলে দুঃস্বপ্নের চেয়ে কোন অংশেই একেবারে কম হবে না।

এটা গল্প আপু। দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।

 3 years ago 

আপনার লেখাটা খুব ভালোভাবে পড়লাম ভাই আপনার গল্প টা আমার কাছে খুব ভালো লাগলো। আসলে ভাই একটি কথা হল আমরা যা নিয়ে চিন্তা করি, সেটাই কিন্তু আমরা স্বপ্নে দেখি। আমাদের উচিত যে সবকিছুরই ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া তাহলে হয়তো আমাদের এই দুঃস্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে বাস্তবে অবশ্যই ভালো হবে।

ঠিক বলেছেন। মানুষ যেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করে সপ্নে সেটাই দেখতে পায়।

 3 years ago 

প্রথম থেকে যখন পড়েছিলাম ভাই সত্যিই আমি ঘটনাটি বাস্তব মনে করেছিলাম কিন্তু শেষের দিকে যখন জানতে পারলাম পুরোটাই একটি স্বপ্ন ছিল, তখন প্রতি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। সত্যি বলতে আমার সাথে এরকম ঘটনা লাইফে একবার নয় দুই দুবার হয়েছে এবং এডমিট কার্ড ছাড়াই অবশ্য আমি পরীক্ষা দিতে পেরেছি। কারণ সেই পরীক্ষাগুলো আমাদের স্কুলেই হয়েছিল কোন বোর্ডের পরীক্ষা ছিল না। যাইহোক ভাই আমার কাছে এসব ছোটগল্প সত্যিই অসাধারণ লাগে।।

ছাত্রদের জন্য এটা আসলে ও এক ভীতিকর পরিস্থিতি। অনেকেই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে।

 3 years ago 

আসলে ভাইয়া পরীক্ষার দিন সকালে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের এই দুঃস্বপ্নটা দেখেই ঘুম থেকে ওঠা হয়। আমিও পরীক্ষার আগে এরকম ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম তবে আমার স্বপ্নটা ছিল আমি পরীক্ষা দিতে বসেছি কিন্তু পরীক্ষা ছিল ম্যাথ আর আমি প্রিপারেশন নিয়ে ছিলাম ইংরেজির। তাই কিছু না লিখতে পারাই সাদা খাতা জমা দিয়েছি ঠিক এই দুঃস্বপ্নটাই দেখেছিলাম পরীক্ষার তিন-চার দিন আগে। তবে ভাই আপনার লেখা এই দুঃস্বপ্নের গল্পটি পড়ে বেশ ভালই লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.25
TRX 0.20
JST 0.036
BTC 96147.07
ETH 3525.13
USDT 1.00
SBD 3.45