সত্যিকারের কুরবানী(ছোট গল্প)।
সাজিদ বেশ খুশি মনে অফিস থেকে মেছে ফিরছে। আর দুদিন বাদেই ঈদের ছুটি শুরু হবে। ছুটিতে এবার সে বাড়ি যাবে। বাড়ি গিয়ে বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে দেখা করতে পারবে সে। এই খুশিতে তার আর তর সইছে না। মনে হচ্ছিলো এখনই বাড়ির পথে রওনা দিয়ে দেয়। এবার সে ঠিক করেছে কুরবানী দেবে। সাজিদ চাকরি পেয়েছে কয়েক বছর হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে কুরবানী দেয়নি। যদিও তার দেয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু সবকিছু গোছগাছ করে করতে একটু দেরি হয়ে গেলো।
কুরবানী দেয়ার সিদ্ধান্ত সে তার বাড়িতে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। সাজিদ তার চাচাতো ভাইদের সাথে কথা বলে রেখেছে। যেদিন সে বাড়িতে ফিরবে সেদিন রাতেই গরু কিনতে যাবে হাটে। কুরবানী দেয়ার জন্য সে বেশ কয়েক মাস আগে থেকে টাকা জমাচ্ছে। নিজের প্রথম কুরবানী তাই তার ভেতর এক অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করছিলো। মাঝে মাঝেই তার চাচাতো ভাইরা তার ফোনে বিভিন্ন রকম গরুর ছবি পাঠাচ্ছিলো। তার কাছে জানতে চাইছিল যে কোনটা পছন্দ হয় কিনা? বেশ কয়েকটা গরু দেখার পর সাজিদ তার চাচাতো ভাইদের কে জানিয়ে দিয়েছে এভাবে মোবাইলে দেখে খুব একটা ভালো বোঝা যাচ্ছে না। তাই সে এলাকায় ফিরে স্বচক্ষে দেখেই গরু কিনবে।
এ সমস্ত কথা চিন্তা করতে করতে সাজিদ তার মেসে প্রবেশ করলো। তারপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সে আবার বাইরে বেরিয়ে পড়লো। পরিবারের লোকজনের জন্য জামা কাপড় এখনো কেনা হয়নি। তাই সে মার্কেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে জামাকাপড় কেনার জন্য। তার কেনাকাটা শেষ করে মেসে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত বারোটা বেজে গেলো। সবার জন্য কেনাকাটার ভিতর একটা অন্যরকম মজা আছে। এটা চাকরি পাওয়ার পরে সাজিদ বেশ ভালই বুঝতে পারছে। বাড়িতে বাবা-মা আছে ছোট ভাই বোন আছে। সবার হাসিমুখের কথা চিন্তা করে তার নিজেরও খুব ভালো লাগছিলো।
সাজিদরা সবসময় অন্যের সাথে ভাগে কুরবানী দিয়েছে। কিন্তু এইবার সাজিব তার বাবাকে জানিয়ে রেখেছে তারা নিজেরাই একটা গরু কুরবানী দেবে। যাইহোক দেখতে দেখতে সেই ছুটির দিন চলে এলো। সাজিদ সেদিন মেস থেকে বের হয়েছে একবারে তৈরি হয়ে। সে চিন্তা করে রেখেছে অফিস ছুটি হলে সেখান থেকেই বাড়ির পথে রওনা দেবে। তাই একবারে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এসেছে অফিসে। সে অফিস করছিল আর বারবার ঘড়ি দেখছিলো কখন যে ছুটির সময় হবে। শেষ পর্যন্ত সে লাঞ্চ আওয়ারের কিছুক্ষণ পরে তার বসের কাছ থেকে বলে সে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো। সেখান থেকে সে সরাসরি বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসে চেপে বসলো।
রাস্তাঘাটের অনেক উন্নতি হওয়ায় খুব দ্রুতই সাজিদ তার বাড়িতে পৌঁছে গেলো। বাড়িতে পৌঁছে পরিবারের সবার জন্য কেনা জামাকাপড় তাদের হাতে তুলে দিলো। পরিবারের সবাই নতুন জামাকাপড় পেয়ে বেশ খুশি হয়েছে। এর ভেতর তার চাচাতো ভাইরা বাড়িতে হাজির। তারা এসে জানালো এখন তো বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। এখন আর হাটে গিয়ে গরু পাওয়া যাবে না। এর থেকে কালকে সকালে আমরা গরু কিনতে যাবো। সাজিদ তাদের প্রস্তাবে রাজি হল।সাজিদ অনেকদিন পর বাড়ি ফিরেছে। তাই সকলের সাথে গল্প গুজব করছিলো। পরিবারের সবাইও সাজিদকে অনেকদিন পর কাছে পেয়ে তাদের গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলো। পরিবারের সবাই মিলে এভাবে আড্ডা দিতে সাজিদের কাছে খুবই ভালো লাগছিলো।
সাজিদ তার পরিবারের সবার সাথে মিলে বাড়িতে বসে গল্প করছিলো। এর ভিতর পাশের বাড়ি থেকে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলো। সাজিদ শুনতে পেলো পাশের বাড়ির চাচি অনেক জোরে চিৎকার করতে করতে কান্না করছে। সে তাড়াতাড়ি দৌড়ে পাশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সেখানে গিয়ে দেখে ইতিমধ্যে আরো কয়েকজন লোক এসে উপস্থিত হয়েছে। সে জিজ্ঞেস করল চাচি কি হয়েছে? পাশের বাড়ির চাচি তখন তাকে বলল তোমার চাচা যেন কেমন করছে। তাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে। তখন সাজিদ আশেপাশের আরো কয়েকজন লোককে সাথে নিয়ে পাশের বাড়ির রাশেদ চাচাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ডাক্তার বেশ কয়েকটি টেস্ট লিখে দিলো। সেই কাগজ হাতে নিয়ে পাশের বাড়ির চাচি ফ্যালফ্যাল করে সাজিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাজিদ জানে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাই সাজিদ দ্রুত তার প্রতিবেশীর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিজেই টাকা পয়সা দিলো টেস্ট করার জন্য। কিছুক্ষণ পর যখন টেস্টের রিপোর্ট দিলো। তখন ডাক্তার জানালো তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এখন ইমিডিয়েট তার ট্রিটমেন্ট শুরু করতে হবে। সবাই জানে হার্টের ট্রিটমেন্ট খুবই ব্যয়বহুল। ডাক্তার বলল দ্রুত তার অপারেশন করতে হবে। না হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। সাজিব তখন ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল যে অপারেশন করতে কত টাকা লাগবে। ডাক্তার জানলো প্রায় লাখখানেক টাকা লাগবে। সাজিদের প্রতিবেশী চাচি এতো টাকার কথা শুনে আবার কান্না শুরু করলো। সে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো এখন আমি এত টাকা কোথায় পাবো? ডাক্তার তখন বলল দেখুন এখন কান্নাকাটি করার সময় না। আপনারা দ্রুত টাকা ম্যানেজ করুন। কারণ তার অপারেশন করতে দেরি হলে তিনি মারা যেতে পারেন। সাজিদ তখন তার প্রতিবেশীর অসহায়ত্ব বুঝতে পারলো।
তখন সাজিদ ডাক্তার কে বললেন ডাক্তার সাহেব আপনি অপারেশন শুরু করুন। টাকা আমি দিচ্ছি। সাজিদ সেই মুহূর্তে তার চাচাতো ভাইদের কে ফোন দিয়ে বলল কালকে আর গরু দেখতে যাওয়ার দরকার নেই। এবার আর কুরবানী দেয়া হচ্ছে না। সাজিদ দ্রুত বাড়িতে গিয়ে কুরবানী করার জন্য যে টাকাটা রেখেছিলো সেই টাকা এনে তার চাচীর হাতে দিয়ে বলল এটা দিয়ে আপনি চাচার অপারেশন করান। মহিলা টাকাটা হাতে নিয়ে সাজিদের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো। (সমাপ্ত)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
বাহ,খুবই সুন্দর গল্প লিখেছেন ভাইয়া।এটাকেই বলে আসল মানবতা।যেটা একজন মানুষের জীবন বাঁচিয়ে দিল,চাইলে এভাবেই ও সুন্দর উৎসব পালন করা যায়।মানুষের মুখের হাসিটাই ও আশীর্বাদই এখানে মুখ্য।ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন এটাই হচ্ছে আসল মানবতা।
ভোগে নয় ত্যাগেই সুখ।।
আসলে আমরা অনেক পরিকল্পনাই করি কিন্তু পরিকল্পনা অনেক সময় সার্থক হয় অনেক সময় আবার সেটার দিক পরিবর্তন হয়ে যায় সাজিদের কাহিনীটা ঠিক তেমনি খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখা গল্পটি পড়ে। মনে পড়ে গেল শুভ ভাইয়ের সেই কথাটি মানুষ তো মানুষেরই জন্য ❤️❤️
মানুষ যতই পরিকল্পনা করুক সেটার বাস্তবায়ন করতে হলে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না।
জীবনের স্বার্থকতা সেখানেই ভাইয়া। সাজিদ উত্তম একটি কাজ করেছে। যদিও সে টাকা দিয়ে গরু কুরবানী করার প্লেন করেছিল কিন্তু প্রতিবেশীর বিপদে সে তার সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল। শিক্ষণীয় একটি গল্প ছিল ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনাকে
এই ধরনের উত্তম কাজের সুযোগ আমরা যখনই পাই আমাদের সকলেরই উচিত সেই কাজে যোগদান করা।
এটাকে বলা হয় সত্যিকারের কোন একটি কোরবানি। পশু জবাই করাকে কিন্তু কোরবানির সত্যিকারের অর্থ হচ্ছে ত্যাগ। আপনি আপনার এই গল্পের সাজিদ চরিত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। জীবনের প্রথম কোরবানি কিন্তু সে জানতো পশু কোরবানি দেবার ছেলেকে মানব সেবা করাটাই মহৎ মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমি মনে করি পশু কোরবানি দেবার ফলে সাজিদ যতটা না বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারতো মানবসেবা করে সে এর থেকে বেশি সন্তুষ্টি অর্জন করেছে। এই সত্যিকারের কোরবানির গল্পটি পড়ে আমার চোখের এক কোণে পানি চলে এসেছিল।
সত্যিকারের কুরবানী তো এমনই হওয়া উচিত।
আসলে গল্পটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি শিক্ষা। একজন ভালো প্রতিবেশি যে পায় তার থেকে ভাগ্যবান আর কেউ হতে পারে না। সাজিদের কাজটা প্রশংসনীয় ছিল। কুরবানি পরের বছরেও দেওয়া যাবে কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচানো আগে। যাইহোক ভাই দারুণ ফুটিয়ে তুলেছেন গল্পটা।।
আমাদের সকলেরই উচিত আশেপাশের লোকজনের বিপদে এইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া।
এটাই হচ্ছে ত্যাগ তথা কুরবানী। মনের কামনা বাসনা রিপু ইত্যাদি দমন করার মাধ্যমে প্রকৃত ত্যাগের মহিমা ফুটে ওঠে। এই গল্পটি পড়ে আমার অন্য একটি গল্পের কথা মনে পড়ে গেল সে গল্পটি একদিন শেয়ার করব সেটি হচ্ছে হজ নিয়ে।।।
আসলে ভোগে সুখ নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।
সত্যিকার অর্থে মানুষের পাশে এভাবে দাঁড়াতে পারতাম তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কুরবানী কবুল হয়ে যেত। আল্লাহর কাছে কিন্তু কুরবানীর রক্ত মাংস এগুলো পৌঁছে না পৌঁছে মানুষেরে তাকাওয়া মনের ভেতর কি আছে তা।
একদম ঠিক বলেছেন।
কথায় আছে, ভোগে নয় ত্যাগেই সুখ। অনেক শিক্ষণীয় একটি গল্প ছিলো এটি। প্রতিবেশীর বিপদে আপদে সাহায্য করা আমাদের সকলের উচিত। আসলে গল্পটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটি শিক্ষা ও মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কিন্তু মানুষ এখন ভোগে এতটাই মত্ত হয়ে গিয়েছে যে ত্যাগের কথা শুনলেই তার বিরক্ত লাগে।