শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর নিউমার্কেট।
আজ আমি আপনাদের সাথে আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্থান নিয়ে কিছু কথা বলব। জায়গাটি হচ্ছে আমাদের শহরের নিউ মার্কেট। নামে নিউমার্কেট হলেও স্থাপনাটি বেশ পুরাতন। ফরিদপুর নিউমার্কেট স্থাপিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। তার মানে দেশ স্বাধীন হওয়ারও নয় বছর আগে এই মার্কেটের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মার্কেট গুলোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই মার্কেটটা প্রায় আগের মতই রয়েছে। শুধু সামান্য কিছু পরিবর্তন এসেছে।
এখনো জেলার মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কেনাকাটার নির্ভরযোগ্য জায়গা হচ্ছে এই নিউমার্কেট। বিভিন্ন উপলক্ষে জেলার সমস্ত এলাকাগুলো থেকে সাধারণ মানুষজন জড়ো হয় এখানে কেনাকাটা করার জন্য। আমার এখনো মনে পড়ে অনেক ছোটবেলায় যখন প্রথম শহরে এসেছিলাম। তারপর থেকেই এই মার্কেটে যাতায়াত শুরু আমার। আমার মায়ের সঙ্গে আমি মার্কেটে আসতে শুরু করি। তবে অল্প কিছুদিনের ভেতরেই এই মার্কেট আমার ভালো লেগে যায়। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই মার্কেটের দোতালায় অবস্থিত একমাত্র খাবারের দোকানটি।
এতদিন পর আজও মার্কেটের ভেতরে সেই খাবার দোকানটি রয়েছে। যদিও এখন বাংলাদেশের সমস্ত মার্কেট গুলিতে অসংখ্য খাবারের দোকান দেখা যায়। কিন্তু আমাদের নিউমার্কেটে খাবারের দোকান বলতে এখনো সেই একটি দোকানই রয়েছে। তারা আজ থেকে আরো ৩০-৪০ বছর আগে থেকে ব্যবসা করে আসছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের খাবারের মান আগের মতই রয়েছে। বিশেষ করে তাদের দোকানের চিকেন ফ্রাই এর সাদ একদম আগের মতই রয়েছে। ছোটবেলায় যখন সেই দোকানটা থেকে চিকেন ফ্রাই খেতাম। সেই চিকেন ফ্রাই এর স্বাদ তারা এখনো ধরে রেখেছে।
তাই আমি এখনো মার্কেটে গেলে মাঝে মাঝে সেই দোকান থেকে চিকেন ফ্রাই খাই। কিছুদিন আগে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম সেই দোকানটাতে। তারপর দুজনে বসে সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া করেছি। আর আমি আমার মেয়ের কাছে আমার শৈশবের গল্প করেছি। শহরে যদিও আরো বেশ কিছু মার্কেট হয়েছে। কিন্তু কেন জানি তার কোনটাই এমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। এখনো মানুষ এই মার্কেট থেকেই কেনাকাটা করতে সচ্ছন্দ বোধ করে। এই মার্কেটে সব ধরনের ক্রেতার জন্যই পন্য সামগ্রী রয়েছে। নিম্নবিত্ত মানুষকে কেনার ব্যবস্থা যেমন এখানে আছে। তেমনি উচ্চ বিত্তদের জন্যও ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। এই মার্কেটের সাথে জড়িয়ে রয়েছে আমার অসংখ্য স্মৃতি।
যখনই আমি এই মার্কেটে যাই তখনই সে সমস্ত স্মৃতিরা উঁকি দিতে শুরু করে। আপনাদের সাথে একটি ঘটনা আর শেয়ার করি। কোন এক ঈদের সময় আমি আমার মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম ঈদের শপিং করতে। তখন আমার পছন্দ ছিল জিন্সের প্যান্ট। সেদিন গিয়েছিলাম মূলত প্যান্ট কিনতে। মার্কেটে যাওয়ার পর কয়েকটি দোকানের প্যান্ট দেখার পর একটি দোকানের প্যান্ট আমার পছন্দ হয়ে গেলো। কিন্তু এই দোকানদার প্যান্টটির দাম চাচ্ছিল অনেক বেশি। আমার মা তখন কিছুতেই এত বেশি টাকা দিয়ে সেই প্যান্টটি আমাকে কিনে দিতে চাচ্ছিল না। তারপর সমস্ত মার্কেট ঘুরে বেড়ালাম। কিন্তু আমার আর কোন প্যান্টই পছন্দ হয় না। শেষ পর্যন্ত আম্মা বাধ্য হয়ে আমাকে সেই প্যান্টটি কিনে দিলো। মার্কেটের অন্য কোন দোকানে ঐরকম প্যান্ট আর না থাকায় বিক্রেতা চালাকি করে প্যান্টটি বেশি দামে আমাদের কাছে বিক্রি করলো। দোকানদার আমাদেরকে বলল একমাত্র সেই এরকম কয়েকটি প্যান্ট এনেছে মার্কেটে। আর কারো কাছে এই প্যান্ট নেই। সেই বছর আমাদের মার্কেটে ওই প্যান্ট গুলি সবচাইতে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। বেশি দাম দিয়ে কেনা হলেও সেই প্যান্টটি ছিল আমার খুবই পছন্দের।
এমন আরো কত শত স্মৃতি জমা হয়ে আছে এই মার্কেট নিয়ে। তবে ইদানিং শুনতে পাচ্ছি এই মার্কেট ভেঙ্গে নাকি নতুন ভবন গড়ে তোলা হবে। সেখানে অত্যাধুনিক মার্কেট করা হবে। খবরটা শুনে একদিক থেকে যেমন ভালো লাগছে আবার অন্য দিক থেকে কেমন জানি মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কারণ সেই শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত এই মার্কেটে যাতায়াত করতে করতে মার্কেটটি আমাদের অতি পরিচিত একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে। এই স্থাপনাকে এখন অনেক আপন মনে হয়। এই পুরাতন স্থাপনা ভেঙে সেখানে নতুন বিল্ডিং করা হলে সেই নতুন বিল্ডিং কি আর আমাদের মাঝে সেই পুরনো আবেগ ফিরিয়ে দিতে পারবে?
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | নিউ মার্কেট |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
মার্কেট ভেঙে ফেলার কথা শুনে আমারই কেমন লাগছে। এতোদিনের স্মৃতি হারিয়ে যাবে। একটি খাবারের দোকান এতদিন আছে বুঝতেই হবে কতটা প্রাচীন এই দোকানটা এবং অবশ্যই এদের খাবারের মান এবং ব্যবহার অনেক ভালো। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এগুলো ছড়িয়ে যায়।যেমন আপনি আপনার মায়ের হাত ধরে এসছিলেন আবার আপনার মেয়ে আপনার হাত ধরে এসেছে এই মার্কেটে।।
অনেক ভালো লাগলো আপনার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর নিউমার্কেটি। পুরাতন হলেও মার্কেটে দেখতে তো ভালই লাগছে। এখন এটি একটি ফরিদপুরের ঐতিহ্য বলা চলে। এই মার্কেটে আপনার প্যান্ট কেনার স্মৃতি বিজড়িত গল্পটির বেশ ভালো লাগলো। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ভাইয়া শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত মার্কেট ভেঙে ফেলার কথা শুনলে মনটা একটু খারাপ হবেই তবে আশার কথা যে ভবনটি হয়তো আর উন্নত মানের হবে। আপনার ছোটবেলায় আপনার আম্মুর সাথে প্যান্ট কেনার ঘটনাটি পড়ে বুঝতে পারলাম প্যান্ট বিক্রেতা অনেক চালাক ছিল। নিউমার্কেটের ফটোগ্রাফি গুলো দেখতে খুবই চমৎকার লাগছে। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের উপহার দেয়ার জন্য ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।