ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভ্রমন( দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
নাস্তা শেষ করার পর আমি পুরো লঞ্চ ঘুরে দেখতে লাগলাম। এই লঞ্চে যাত্রীদের জন্য কয়েক রকমের বসার ব্যবস্থা ছিলো। নিচতলায় ছিলো কিছু চেয়ার আর দোতলায় ছিল বিভিন্ন শ্রেণীর কেবিন। তবে আমি একটি ব্যাপারে কিছুটা অবাক হয়েছি। আমরা যখন লঞ্চে উঠলাম তখন আমাদেরকে কোন টিকিট কাটতে হয়নি। আমরা খেয়াল করে দেখলাম কেউই টিকিট কাটেনি। শুধু যারা কেবিন ভাড়া করেছে তারা টিকিট কেটেছে। এমন সিস্টেম আমি আগে কোথাও দেখিনি।
আমি চিন্তা করছিলাম তাহলে এরা আমাদের কাছ থেকে ভাড়া নেবে কিভাবে? যদিও লঞ্চ থেকে যখন নামলাম তখন এদের সিস্টেম সম্বন্ধে একটা পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেলাম। সকালে যেহেতু হালকা নাস্তা করেছি তাই কিছুক্ষণের ভেতরে আমাদের আবার খুধা লেগে গেল। লঞ্চে একটি ফাস্টফুড শপ ছিলো। সেখানে বার্গার, স্যান্ডউইচ, বিস্কুট এই ধরনের খাবার ছিল।
আমরা খুজছিলাম রুটি পরোটা খিচুড়ি এই ধরনের খাবার। শেষ পর্যন্ত দেখলাম লঞ্চের একদম শেষ অংশে একটি ছোট্ট ক্যান্টিন আছে। সেখানে গিয়ে খাবারের খোঁজ করলাম। সেখানে দেখি খাবার জন্য আছে ভুনা খিচুড়ি এবং মুরগির মাংস। তাছাড়া এই লঞ্চে নাস্তা করার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। উপায়ন্তর না দেখে সেখানেই আমরা খেতে বসলাম। কারণ আমরা জানি আমাদের চাঁদপুর পৌঁছতে প্রায় এগারোটা বেজে যাবে। এখান থেকে যদি খাবার না খায় তাহলে আমাদের ততোক্ষণ না খেয়ে থাকতে হবে।
তো আমরা তিন বন্ধু খিচুড়ি আর মাংস অর্ডার করে টেবিলে বসে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমাদের সামনে গরম খিচুড়ি এবং মুরগির মাংস পরিবেশন করা হলো। খিচুড়ি সাদটা মোটামুটি ভালই ছিল। কিন্তু মুরগির মাংস ছিল একেবারে সাদহীন। যাইহোক কোনরকমে খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম। বিল দিতে গিয়ে আমরা দাম শুনে কিছুটা অবাক হলাম। কারণ এই খিচুড়ি আর মাংস খেয়ে তিনজনের ৫০০ টাকা বিল এসেছে। আমরা তখন হাসছিলাম আর বলছিলাম যে এই টাকায় এর থেকে অনেক ভাল মানের খাবার পাওয়া যায়।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আমরা স্নাক্স শপে গিয়ে চা খেলাম। চায়ের সাদ ও আমাদের ভালো লাগলো না। কারণ সেখান থেকে চায়ের কোন ফ্লেভার আমরা পাইনি। তারপর আমরা তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিতে থাকলাম। আর লঞ্চের একদম উপরের দিকে উঠে আমরা চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছিলাম। আর মাঝে মাঝেই কোন কিছু পছন্দ হলে সেটার ছবি তুলছিলাম।
যখন সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ল তখন নদীর দু'পাশে অনেক বড় বড় কল কারখানা দেখতে পেলাম। আরো একটি জিনিস খেয়াল করলাম যে এই নদীটি আসলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে প্রচুর পণ্যবাহী জাহাজ আমরা দেখতে পেলাম। যদিও মোবাইল ক্যামেরার মান খুব ভালো না হওয়ায় এই ছবিগুলো ভালোমতো ধারণ করতে পারিনি। আমরা ছবি তুলছিলাম আর গল্প করছিলাম।
এইভাবে গল্প করতে করতে একসময় আমাদের গন্তব্যের কাছে পৌঁছে গেলাম। তখনও আমরা টিকিট কাটিনি। আমি কয়েকবার আমার বন্ধুদের বলেছিলাম যে চল টিকেট কেটে নিয়ে আসি। ওরা বললো টিকিট চেক করার জন্য এখনো কেউ আসছে না। যখন আমরা চাঁদপুরের কাছাকাছি পৌঁছলাম তখন লাউডস্পিকারে ঘোষণা আসলো যারা চাঁদপুরে নামবেন তারা টিকেট সংগ্রহ করুন।
এইবার আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম। বাসে যেমন আমরা আগে টিকিট কেটে তারপর বাসে উঠি। আর এখানে লঞ্চ থেকে নামার সময় টিকিট দেখাতে হবে। এই ধরনের ব্যবস্থা আমি আগে কখনো দেখিনি। তারপর আমরা লঞ্চের নিচতলায় চলে এলাম। সেখান থেকে সাড়ে ৪৫০ টাকার বিনিময়ে তিনটি টিকিট সংগ্রহ করলাম। পরে লঞ্চঘাটে পৌঁছলো তখন আমরা সেই টিকেট দেখিয়ে লঞ্চ থেকে নামতে পারলাম।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণের তৃতীয় পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | লিংক |
খুব ঘোরাঘুরি করছেন দেখছি। নদী কেন্দ্রিক অনেক সুন্দর সুন্দর দৃশ্য তুলে ধরেছেন। তবে আপনাদের তিন জনের গরম গরম খিচুড়ি আর মুরগির মাংসের কথা শুনে আমার তো জিহ্বায় জল চলে আসছে। আপনার কাটানো সুন্দর দিন গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
আপনার এরকম ঘোরাঘুরি দেখে আমার খুব ইচ্ছে করছে এই সময়ে কোথাও ছুটে চলে যাই ঘোরাঘুরি করতে। নদীর এই প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো আমার অনেক ভালো লাগলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এরকম একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য
চেষ্টা করবেন যখনই সুযোগ পাবো ঘোরাফেরা করতে। সেটা যেখানেই হোক। আপনার বাড়ির আশেপাশে কোন জায়গা হলেও সমস্যা নেই। কারণ এটা আপনাকে মানসিক শান্তি দেবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।ঠিক বলেছেন ভ্রমণ করাটা আমাদের জন্য অনেক ভালো ।এটা আমাদের মনকে অনেক ফ্রেশ রাখে।
আপনি সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন ভাইয়া। আপনার এরকম পোস্ট গুলি আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। লঞ্চের ফটোগ্রাফি গুলো অনেক অসাধারণ হয়েছে। নদীর ফটোগ্রাফি গুলো অনেক ভালো লেগেছে। আর আপনারা তিন বন্ধু মিলে খিচুড়ি আর মাংস খেয়েছেন শুনে ভালো লাগলো। আপনার এই পোস্টটা আমি অনেক উপভোগ করলাম। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
যাত্রাপথে খাবার ভালো না লাগলে আবার খুব একটা ভালো লাগে না আমার।তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আমারও একই অবস্থা।
আমারও তাই মনে হলো ভাইয়া আমিও আজকে এরকম ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারলাম যে নামার আগে টিকিট সংগ্রহ করতে হয় । তবে লঞ্চে করে কোথাও যাওয়া হয়নি কিন্তু নৌকা দিয়ে ঘুরেছি ।
তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া ।
আমারও বড় লঞ্চে ভ্রমনের আগে কোন অভিজ্ঞতা ছিলোনা। তবে এবার নতুন একটি অভিজ্ঞতা হল।