ছোট্ট কাঁধে পাহাড়সম বোঝা (প্রথম পর্ব)।
সকাল থেকে বশির তার টমটম গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্যাসেঞ্জারের আশায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন প্যাসেঞ্জারও সে পায়নি। আজকালকার মানুষ আর এই পুরনো দিনের ঘোড়ায় চালিত টমটম গাড়িতে উঠতে চায় না। আশেপাশের সকলেই ব্যস্ত। সকলেই বিভিন্ন ধরনের গাড়িতে বা মোটরসাইকেলে বা যেকোনো ধরনের ইঞ্জিন চালিত পরিবহনে চলাফেরা করছে। যার ফলে তুলনামূলক এই ধীরগতির ঘোড়ার গাড়িতে কেউই এখন উঠতে চায় না।
বশির তার বাবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে এই ঘোড়ার গাড়িটি বিক্রি করে আমরা অন্য কোন কিছু কিনি। যেটাতে সহজেই প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায়। কিন্তু তার বাবা তাদের এই পরিবারের ঐতিহ্য হিসেবে কিছুতেই ঘোড়ার গাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হয় না। তার গাড়িতে যে একেবারেই প্যাসেঞ্জার ওঠে না ব্যাপারটা তেমন নয়। দু চারজন মানুষ মাঝে মাঝে শখ করে তার গাড়িতে ওঠে। তবে এ দু চার জনের থেকে যে ভাড়া পাওয়া যায় সেটা দিয়ে তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করা খুবই দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষা করতে গিয়ে তাদের প্রায় না খেয়ে থাকার দশা হয়েছে। বশিরের এখন যে বয়স তাতে তার স্কুলে লেখাপড়া করার কথা। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করার কথা। কিন্তু তার বাবার অসুস্থতার কারণে এই বয়সেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। লেখাপড়ায় সে বেশ ভালই ছিলো। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছে সে। তারপরে হঠাৎ করে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এখন ঘোড়ার গাড়ি চালাতে হয়। বশিরের অনেক ইচ্ছা করে তার সমবয়সীদের মত ঘুরে ফিরে বেড়াতে, স্কুলে যেতে। কিন্তু সে এতদিনে এই বাস্তবতাটা বুঝতে পেরেছে যে তার জীবনটা আর পাঁচ জনের মত স্বাভাবিক জীবন নয়।
ঘরে তার অসুস্থ বাবা-মা ছোট ছোট আরো তিনটে ভাই বোন রয়েছে তার। পুরো সংসারের দায়িত্ব এখন বশিরের কাঁধে। অবশ্য বসির তার আশেপাশে এমন অনেকেই দেখতে পায় সব সময়। যাদের অবস্থা তার মতই। তাই তার মনে আফসোস থাকলেও মাঝে মাঝে সে তার সমবয়সীদের সাথে হাসিখুশিতে মেতে ওঠে। তার আশেপাশেই সে তার বয়সী অনেক হকার দেখতে পায়। যারা তার মতই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হকারি করছে।
কিন্তু বশিরের এখন মাঝে মাঝেই খুব অসহায় মনে হয়। দিনশেষে যখন বাড়িতে বাজার নিয়ে যেতে হয়। তখন দেখে তার পকেট শূন্য। বাজার করার জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার সেটা বেশিরভাগ দিনেই তার আয় হয় না। এজন্য সে ইদানিং প্রায়ই তার বাবার সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছে। বশির তার বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে এই টমটম গাড়িটি বিক্রি করলে যে টাকা পাওয়া যাবে। সে টাকা দিয়ে তারা দুটো অটোরিকশা কিনতে পারবে। সেই অটো রিক্সার ভাড়া দিয়ে তাদের সংসার বেশ ভালোভাবে চলে যাবে। কিন্তু যখনই সে তার বাবাকে টমটম গাড়িটি বিক্রির কথা বলে। তখনই তার বাবা রেগে ওঠে। বশিরের মাও তার বাবাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার বাবা এ ব্যাপারে কোন কথা শুনতে নারাজ।
বশির টমটম গাড়ি বিক্রির কথা বললেই তার বাবা তাকে বলে তোকে আর এই গাড়ি চালাতে হবে না। কাল থেকে আমিই চালাবো। আমার পরিবার তিন পুরুষ ধরে এই ঘোড়ায় চালিত টমটম গাড়ি চালিয়ে আসছে। আমি এখন তোর বুদ্ধিমত পরিবারের সেই ঐতিহ্য বিক্রি করতে পারবো না। ছোট্ট বশির তার কাঁধে এই পাহাড় সম বোঝা আর টানতে পারছে না। তাই মাঝে মাঝেই সে একা একা কান্নাকাটি করে। কখনো কখনো তার মনে হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু যখনই তার অসুস্থ বাবা-মা এবং ছোট ভাই বোন গুলোর কথা মনে পড়ে। তখন আর সে পালিয়ে যেতে পারে না। তখন তার মনে হয় যত কষ্টই হোক আমাকে এই গাড়ি চালাতেই হবে (চলবে)।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
ভাইয়া আপনার লেখা গল্প গুলো সত্যি দারুন হয়। ছোট কাঁদে পাহাড় সমান বোঝা গল্পটি শুরুটাই ছিল দারুণ। আশা করি আগামী পর্বগুলোও পড়তে পারবো। গল্প লেখার আপনার প্রতিভা অনেক এবং আপনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এখানে কাঁধে লিখতে গিয়ে কাঁদে লিখে ফেলেছেন।
আধুনিকতার ছোয়ায় ঢাকা পড়েছে ঐতিহ্য। এইরকম পারিবারিক কাজ বা ব্যবসা আছে যেগুলো আধুনিকতার জন্য বিলুপ্ত হচ্ছে। বশির পড়ছে নানান ঝামেলায়। না পাড়ছে সবকিছু ছেড়ে যেতে আবার না পারছে ঐ টমটম চালিয়ে সংসার চালাতে।
এই ধরনের দোটানায় পড়লে তখন মানুষের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই মুশকিল হয়ে যায়।
এখনো পুরান ঢাকায় গেলে এসব টমটম গাড়ি দেখা যায়। এই সমস্ত গাড়ি আগে বুনিয়াদি ছিল। বেশ লেগেছে ভাইয়া গল্পটি। আগামী পর্বগুলো পড়ে রক্ষা রইলাম।
আপু আপনি সম্ভবত এখানে অপেক্ষায় লিখতে চেয়েছিলেন।
ভাইয়া যতটুকু পড়েছি ভালো লাগলো গল্পটি।সামনে কি করবে বশির তা আপনিই ভাল জানেন।অপেক্ষায় রইলাম। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য। অনেক অভিনন্দন আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
আসলে পরিবারের বড় ছেলেদের যে কি ঝামেলা বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা বেশ ভালো জানে ৷ একদিকে পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায় আর আরেক দিকে পরিবার চালানোর কষ্ট ৷ এটা ঠিক যে ঘোড়ার গাড়ি বিক্রি করে অন্য কোনো গাড়ির নিলে বেশ ভালো চলবে ৷ কিন্তু বশির মিয়ার পূর্বপুরুষ ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালানো ৷ গ্রামের এখনো কিছু কিছু ঐতিহ্য আছে যেগুলো না চললেও ধরে রেখেছে ৷
এর থেকে বোঝা যায় যে বশির মিয়া কষ্ট করতে রাজি আছে ৷ তাও পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা করবে ৷
মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদেরকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বেশি পড়তে দেখা যায়।
ভাইয়া আপনার এই গল্প সত্যি ভালোও লেগেছে আবার কষ্টও লেগেছে। বশির ছেলেটি একমাত্র তার কষ্ট কোথায় বুঝতে পারবে। আমার নিজের চোখেও এমন অনেক ঘটনা দেখেছি। ছোট্ট কাঁধে যখন তার পরিবার চালানোর মতো বোঝা দেওয়া হয় তখন নিজেকে অনেক অসহায় লাগে। এই বয়সে যার পড়ালেখা করার কথা সে এখন পরিবারের বোঝা নিয়ে চলেছে। এত কিছুর পরও যখন তাদের মুখে হাসি দেখা যায় তখন সত্যি অনেক ভালো লাগে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আমাদের আশেপাশেই এমন অনেক বশির রয়েছে। এদের জীবনটা আসলেই কষ্টের।