উন্মাদনা পরিহার করি। সুস্থ স্বাভাবিকভাবে খেলা উপভোগ করি।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


Polish_20221122_222405177.jpg

চার বছর পর আবারো একটি বিশ্বকাপ চলে এসেছে। সারা দেশ বিশ্বকাপের উত্তেজনায় কাঁপছে। যদিও বাংলাদেশ কখনো ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু আমাদের দেখে সেটা বোঝার কোন উপায় নেই। ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলে বাংলাদেশের অবস্থা দেখে মনে হয় বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপের হট ফেভারিট। ফিফা র‍্যাংকিং এ আমাদের অবস্থান দেখলে রীতিমতো লজ্জিত হতে হয়। তবে খেলতে না পারলেও একটি জায়গায় আমরাই চ্যাম্পিয়ন। সেটা হচ্ছে খেলা নিয়ে উন্মাদনা। এই ফুটবল বিশ্বকাপ যখনই শুরু হয় তখন আমরা দেশের আনাচে-কানাচে নানা রকম অদ্ভুত ঘটনা দেখতে পাই। মাঝে মাঝে সেই অদ্ভুত ঘটনাগুলো রীতিমতো বিপর্যয়ে পরিণত হয়। কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি।

প্রথম ঘটনা

এক কৃষক তার জমির বড়ো একটি অংশ বিক্রি করে কোন এক দেশের সুবিশাল পতাকা তৈরি করেছে। শুধু সেই দেশের ফুটবল টিমের প্রতি তার ভালোবাসার নিদর্শন প্রকাশের জন্য। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে তার পরিবার নানা রকম অভাব অনটনে ডুবে রয়েছে। রীতিমতো তার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা।

দ্বিতীয় ঘটনা

এক ভ্যান চালক তার ভ্যানটি তার প্রিয় ফুটবল দলের জার্সির অনুকরণে রাঙিয়ে নিয়েছে এবং সে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে তার ভ্যানে তার দলের সমর্থকদের কেউ চরলে তাদের ভাড়া দিতে হবে না। এই সুযোগে এলাকার দুষ্ট শ্রেণীর ছেলেপেলেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে তার দলের জার্সি জোগাড় করে তার ভ্যানে করে প্রতিদিন যাওয়া আসা শুরু করেছে। সেই ভ্যান চালক সারাদিন প্যাসেঞ্জার টেনে দিন শেষে খালি হাতে বাড়িতে ফিরছে। বাড়িতে তার প্রচন্ড অভাব অনটন।

তৃতীয় ঘটনা

এক ঝাল মুড়ি বিক্রেতা ঘোষণা দিয়েছে তার প্রিয় দলের জার্সি পড়ে কেউ ঝালমুড়ি খেতে আসলে। তার কাছ থেকে সে কোন পয়সা রাখবে না। সারাদিনই তার দোকানে ঝাল মুড়ি বিক্রির ভিড় লেগে রয়েছে। কিন্তু দিন শেষে সে একটি পয়সাও বাড়ি নিয়ে যেতে পারছে না। উপরন্তু বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার করে তার প্রতিনিয়ত ঝাল মুড়ি তৈরির সরঞ্জাম কিনতে হচ্ছে। তারও বাড়িতে একই অবস্থা।

উপরের এই তিনটি ঘটনা আমাদের দেশে মোটেও অস্বাভাবিক নয়। প্রত্যেক বিশ্বকাপের সময় আমরা এমন অনেক গল্প শুনে থাকি। কিন্তু কখনো কি আমরা চিন্তা করে দেখেছি এই কাজগুলো কতটুকু সমীচীন? যেই দরিদ্র কৃষকের উচিত ছিল তার পরিবারের ভরণপোষণ কে সর্বাধিকার দেয়া। তিনি সেটা না করে তার দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে তার সহায় সম্বলটুকু বিক্রি করে দিয়েছেন। এটাকে আপনি কি বলবেন?

আবার হতদরিদ্র ভ্যানওয়ালার বাড়িতে খোঁজ নিলে জানা যাবে তার তিন বেলা খাবারই জোটে না ভালোভাবে। সেই লোক যখন মাস ব্যাপী মানুষকে ফ্রি সার্ভিস দিতে থাকবে। সেই সময়টাতে তার পরিবারের দুরবস্থার কথা কেউ কল্পনা করতে পারেন? আবার ঝালমুড়ি বিক্রেতার কথায় চিন্তা করুন। অভাব অনটনে ডুবে থাকা এই ঝাল মুড়ি বিক্রেতার পরিবারের কি ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে? পরিবারের একমাত্র উপার্জন উপার্জন কারি ব্যক্তি। তিনি তার প্রিয় দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে গিয়ে পুরো পরিবারকে চরম কষ্টে রেখেছেন। এই ধরনের উন্মাদনা আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত?

কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন। যে সমস্ত দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে তাদের কোথাও এমন নজির নেই। অথচ আমাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা রীতিমতো তাকে বাহবা দেই। সমাজের প্রত্যেকটা মানুষের উচিত এই ধরনের নির্বোধ ব্যক্তিদেরকে ভৎর্সনা করা। কারণ সে তার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে। খেলার প্রতি তার উন্মাদনা প্রকাশ করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। যদি সমাজের আমরা সবাই তাদেরকে এসব কাজে উৎসাহ না দিয়ে ধিক্কার জানাতাম। তাহলে এই ধরনের কাজ থেকে তারা সহজে বেরিয়ে আসতে পারতো।

আবার প্রতি বিশ্বকাপে বেশ কিছু সুইসাইডের ঘটনার কথা শোনা যায়। প্রিয় দল হেরে যাওয়ার কারণে অনেকে সুইসাইড করেন। কিন্তু কখনো কি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন ? যেই দলটা হেরেছে তাদের ভেতর কেউ সুইসাইড করেছে কিনা? আমাদের বোধোদয় কবে হবে? কবে আমরা এই উন্মাদনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো? আমাদেরকে বুঝতে হবে, মনে রাখতে হবে। খেলাধুলা উপভোগের জন্য, বিনোদনের জন্য। কিন্তু সেই খেলাধুলা যখন মানুষের জীবনের উপর চরম নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। তখন সেই খেলাধুলা থেকে আমাদের দূরে থাকাই শ্রেয়। যদি আপনি আপনার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে আপনি এই সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকুন। আমাদের চারপাশে হাজারো সমস্যা আছে। হাজারো অভাবী মানুষজন আছে। আমরা তাদের দিকে না তাকিয়ে শুধু নিজের উন্মাদনা প্রকাশ করার জন্য এমন সব অদ্ভুত এবং বিরক্তিকর কর্মকাণ্ড করছি।

তাই সকল ক্রীড়া প্রেমী ভাই-বোনদের কাছে আমার অনুরোধ। আপনাদের আশেপাশে যদি কেউ এমন অদ্ভুত এবং নির্বোধের মতো কাজ করে। তাহলে তাকে বোঝান। তাকে উৎসাহ না দিয়ে নিরুৎসাহিত করুন এবং অন্যদেরকেও বলেন তাকে উৎসাহ না দিতে। তাহলে একসময় এই উন্মাদনা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারবে। আবার দেশের অনেক জায়গায় এই ফুটবল খেলা নিয়ে মানুষজন রীতিমতো রক্তাক্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। যাতে ক্ষতি হয় তাদেরই যারা এই সংঘর্ষে জড়িত। কিন্তু যাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে গিয়ে আপনারা এই সংঘর্ষের জড়িয়ে পড়ছেন তাদের জীবনে সামান্যতম পরিবর্তনও আসবে না। কারণ আমাদেরকে বুঝতে হবে দিনশেষে এটি শুধু একটি খেলা। আর খেলা কখনো জীবনের থেকে বড় হতে পারে না। আসুন এবার আমরা সবাই মিলে উন্মাদনা পরিহার করে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে খেলা উপভোগ করি। আর যদি আপনি সেটা না করতে পারেন তাহলে খেলা দেখা থেকে বিরত থাকুন।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল আপনি যে দেশের কথাই বলেন না কেন তাদের দেশের পতাকাকে নিয়ে বা তাদের দেশের ফুটবলের জার্সি কিনে টাকা নষ্ট না করে সেই টাকা আমাদের দেশের গরীব মানুষের বিভিন্ন কাজে লাগাতে পারে। যেমন ধরুন এই শীতের সময় শীতের কাপড় বিতরণ করা। আমার মতে এটা পাগলামি ছাড়া অন্য কিছুই না। আপনি কৃষকের কথা বলেন বা ঝাল মুড়ি ওয়ালার কথা বলেন তারা উভয় কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 2 years ago 

এই অস্বাভাবিক উন্মাদনা আমার ব্যক্তিগত ভাবে একদমই পছন্দ না। আমার ঠাম্মা বাড়ির ছাদে আমআর খুড়তুতো ভাইরা আর্জেন্টিনার পতাকায় ভরিয়ে ফেলেছে। ওই পাড়ার সারা রাস্তা জুড়ে পতাকা লাগিয়েছে। নিজেরা পতাকা রঙ করেছে কাপড়ে। আমি এই উন্মাদনা কে একদমই সাপোর্ট করি না। তার উপর যেখানে নিজের দেশ খেলেই না।আপনি একদম ঠিক বলেছেন দাদা।

 2 years ago 

ভাই এটা শুধু এই বছর না ৷ প্রতি বছর এরকমটা ঘটে ৷ যারা দিন এনে দিন খায় তারাও মেতে ওঠে খেলায় ৷ আসলে ফুটবল খেলা তো বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ৷আর সবচেয়ে বড় হচ্ছে শখ যেটা মারাত্মক ৷ হোক সে গরিব তাতে সে ব্যাক্তি মনে করে না ৷

 2 years ago 

খুব ভাল একটা বিষয় নিয়ে আজকের পোস্ট লিখলেন ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমাদের দেশের মানুষ একবার কিছু পেলে সেখানে দলে দলে যোগ দেয়।এখন খেলা চলছে এই খোলাকে কেন্দ্র করে কত কি ই যে ঘটবে তা আল্লাহু ই ভাল জানেন।ভাল কোন কাজে দল ভারী না হলেও, এমন ঠুনকো কাজে সবাই এগিয়ে। বলে ও এদের ঠিক করা যায় না।শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 63683.34
ETH 2754.57
USDT 1.00
SBD 2.64